এর প্রয়োগ ঘটান, মেনে চলুন

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা দিয়ে গত ৩১ মে থেকে সরকারি অফিসগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে লঞ্চ, ট্রেন, বাস চালু করা হয়েছে। সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার আগেই হাজারও কল-কারখানা ও দোকানপাট খোলা হয়েছে, উন্মুক্ত করা হয়েছে মসজিদ। ঈদে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়ার অনুমতিও মিলেছে। উল্লিখিত সব ক্ষেত্রেই সরকার কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্ত আরোপ করেছে। বাস্তবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ মিলেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, দিন যত গড়াচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি ততই অকার্যকর হয়ে পড়ছে। সীমিত পরিসর বলেও কিছু নেই। মসজিদ থেকে শুরু করে অফিস, ব্যক্তিগত যান থেকে শুরু করে গণপরিবহন কোনটার পরিসরই সীমিত নেই। সামাজিক দূরত্বের নিয়মও মানা হচ্ছে না। লঞ্চগুলো চলছে যাত্রী বোঝাই করে। মসজিদে ভিড় হচ্ছে। কারখানাগুলো কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছে না। ব্যক্তিপর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মানায় ঔদাসীন্য রয়েছে। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি অনেকেই মানছেন না। এ নিয়ে গণমাধ্যমগুলো বিভিন্ন সময় প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

স্বাস্থ্যবিধির প্রয়োগ নিশ্চিত করার দায় সরকার এড়াতে পারে না। ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উভয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা সেটা দেখভাল করতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ কম, স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগের উদ্যোগ আরও কম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ভাটা পড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের হাজারও ঘটনার কথা জানা যায়। এর বিপরীতে হাতেগোনা দু-একটি আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানা যায়। সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর গাছাড়া ভাব এবং নাগরিকদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশের উদাসীনতার মহামারী নভেল করোনাভাইরাস দেশে দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। এ মহামারী কোথায় গিয়ে থামবে সেটা কোন বিশেষজ্ঞই বলতে পারেননি। বাংলাদেশে যেভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণের চূড়ার সন্ধান পাওয়ার আগেই সবকিছু উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে তাতে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে না মানলে সামনে আরও ভয়াবহ কিছু ঘটতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। কর্তৃপক্ষ উদাসীন হলে একটি দেশ করোনাভাইরাস কতটা বিপর্যস্ত হতে পারে তার সাম্প্রতিক নজির ব্রাজিল।

দেশের কলকারখানা, অফিস, পরিবহন প্রভৃতি আরও কিছু দিন পর উন্মুক্ত করলে ভালো হতো বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। আমরা বলতে চাই, প্রয়োজন হলে আবারও কঠোর লকডাউনে ফিরে যতে হবে। আর সব কিছু যদি খোলা রাখতেই হয় তাহলে স্বাস্থ্যবিধির কঠোর প্রয়োগ ঘটাতে হবে। যে বা যারা স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করবে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি শুধু কাগজে আটকে থাকলে হবে না, দেশের প্রতিটি মানুষ যেন এর চর্চা করে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। একাজে বড় দায়িত্ব সরকারের। তবে বেসরকারি পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও দায়িত্ব নিতে হবে। পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে প্রতিটি মানুষকে তার নিজের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে। এটাই এখন কঠোর বাস্তবতা।

বুধবার, ০৩ জুন ২০২০ , ২০ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ১০ শাওয়াল ১৪৪১

কাগজে আবদ্ধ স্বাস্থ্যবিধি

এর প্রয়োগ ঘটান, মেনে চলুন

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা দিয়ে গত ৩১ মে থেকে সরকারি অফিসগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে লঞ্চ, ট্রেন, বাস চালু করা হয়েছে। সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার আগেই হাজারও কল-কারখানা ও দোকানপাট খোলা হয়েছে, উন্মুক্ত করা হয়েছে মসজিদ। ঈদে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়ার অনুমতিও মিলেছে। উল্লিখিত সব ক্ষেত্রেই সরকার কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্ত আরোপ করেছে। বাস্তবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ মিলেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, দিন যত গড়াচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি ততই অকার্যকর হয়ে পড়ছে। সীমিত পরিসর বলেও কিছু নেই। মসজিদ থেকে শুরু করে অফিস, ব্যক্তিগত যান থেকে শুরু করে গণপরিবহন কোনটার পরিসরই সীমিত নেই। সামাজিক দূরত্বের নিয়মও মানা হচ্ছে না। লঞ্চগুলো চলছে যাত্রী বোঝাই করে। মসজিদে ভিড় হচ্ছে। কারখানাগুলো কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছে না। ব্যক্তিপর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মানায় ঔদাসীন্য রয়েছে। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি অনেকেই মানছেন না। এ নিয়ে গণমাধ্যমগুলো বিভিন্ন সময় প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

স্বাস্থ্যবিধির প্রয়োগ নিশ্চিত করার দায় সরকার এড়াতে পারে না। ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উভয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা সেটা দেখভাল করতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ কম, স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগের উদ্যোগ আরও কম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ভাটা পড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের হাজারও ঘটনার কথা জানা যায়। এর বিপরীতে হাতেগোনা দু-একটি আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানা যায়। সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর গাছাড়া ভাব এবং নাগরিকদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশের উদাসীনতার মহামারী নভেল করোনাভাইরাস দেশে দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। এ মহামারী কোথায় গিয়ে থামবে সেটা কোন বিশেষজ্ঞই বলতে পারেননি। বাংলাদেশে যেভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণের চূড়ার সন্ধান পাওয়ার আগেই সবকিছু উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে তাতে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে না মানলে সামনে আরও ভয়াবহ কিছু ঘটতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। কর্তৃপক্ষ উদাসীন হলে একটি দেশ করোনাভাইরাস কতটা বিপর্যস্ত হতে পারে তার সাম্প্রতিক নজির ব্রাজিল।

দেশের কলকারখানা, অফিস, পরিবহন প্রভৃতি আরও কিছু দিন পর উন্মুক্ত করলে ভালো হতো বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। আমরা বলতে চাই, প্রয়োজন হলে আবারও কঠোর লকডাউনে ফিরে যতে হবে। আর সব কিছু যদি খোলা রাখতেই হয় তাহলে স্বাস্থ্যবিধির কঠোর প্রয়োগ ঘটাতে হবে। যে বা যারা স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করবে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি শুধু কাগজে আটকে থাকলে হবে না, দেশের প্রতিটি মানুষ যেন এর চর্চা করে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। একাজে বড় দায়িত্ব সরকারের। তবে বেসরকারি পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও দায়িত্ব নিতে হবে। পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে প্রতিটি মানুষকে তার নিজের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে। এটাই এখন কঠোর বাস্তবতা।