যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু প্রসঙ্গে

পুলিশি হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণবিক্ষোভ অব্যাহত আছে। দেশটির বেশ কয়েকটি শহরে কারফিউ জারি করেও বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশি হামলার অভিযোগ মিলেছে। কোথাও কোথাও বিক্ষোভ সহিংস রূপ ধারণ করেছে। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য প্রয়োজনে ন্যাশনাল গার্ডের সেনাদের ব্যবহারের কথা বলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার কঠোর মনোভাবের সমালোচনা করেছেন বিরোধীদলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। উল্লেখ্য গত ২৫ মে আফ্রিকান-আমেরিকান নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর একজন পুলিশ হাঁটু গেড়ে বসলে উক্ত ব্যক্তি মারা যান।

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের হাতে যে কোন নাগরিকের মৃত্যু অনাকাক্সিক্ষত। মার্কিন য্ক্তুরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক হত্যার ঘটনায় গণবিক্ষোভের পেছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কেবল ফ্লয়েডের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এই বিক্ষোভ তৈরি হয়নি। বরং তার মৃত্যু বিক্ষোভের একটি উপলক্ষ মাত্র। দেশটিতে বহুদিন ধরে সেখানকার নাগরিকরা বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকরা পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অনেক কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক পুলিশি নির্যাতনে প্রাণ হারিয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন সময় সেখানে জনবিক্ষোভও হয়েছে। সেসব জনবিক্ষোভে যে দেশটিতে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকদের ভাগ্য বদলায়নি সেটার প্রমাণ ফ্লয়েডের মৃত্যু। আমরা তার মৃত্যুতে গভীর বেদনা প্রকাশ করছি।

জনবিক্ষোভ প্রশমনে বর্তমান মার্কিন প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ নিতে পেয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে। দেশটির অভ্যন্তরেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমালোচনা হচ্ছে। মার্কিন মুলুকে অতীতেও জনবিক্ষোভ সহিংস রূপ ধারণ করেছে। আমরা বলতে চাই, জনতার শক্তিকে বল প্রয়োগ করে দাবিয়ে রাখা যায় না। জনতার ক্ষোভ প্রশমনের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। বুলেট বা লাঠি দিয়ে ক্ষোভ প্রশমন করা যায় না বরং ক্ষোভের আগুনে ঘিই ঢালা হয়। এই কথা সব দেশের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময় পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। পুলিশি নির্যাতনে অনেক নাগরিক মারাও গেছে। এখানেও পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন-প্রতিবাদ হয়। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, আন্দোলন-প্রতিবাদ এক সময় স্তিমিত হয়ে যায়, পুলিশি নির্যাতনের অবসান হয় না।

আমরা আশা করব ফ্লয়েড হত্যার বিচার হবে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দেশটির সরকার ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন বিষয়টি আদালতের হাতে। তবে নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান, অধিকার রক্ষা বা বৈষম্য নিরসনের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিবাচক শিক্ষা নেবে, অন্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোও শিখবে সেটা আমাদের প্রত্যাশা। যুক্তরাষ্ট্রে যারা ফ্লয়েড হত্যার বিচার চান, নাগরিক অধিকার বা মর্যাদা ফিরে পেতে চান তাদের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তবে বিক্ষোভের নামে সহিংসতা বা লুটপাট কাম্য নয়। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পথ অবলম্বন করে সৃষ্ট সংকটের সমাধান কাম্য।

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুন ২০২০ , ২১ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ১১ শাওয়াল ১৪৪১

যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু প্রসঙ্গে

পুলিশি হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণবিক্ষোভ অব্যাহত আছে। দেশটির বেশ কয়েকটি শহরে কারফিউ জারি করেও বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশি হামলার অভিযোগ মিলেছে। কোথাও কোথাও বিক্ষোভ সহিংস রূপ ধারণ করেছে। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য প্রয়োজনে ন্যাশনাল গার্ডের সেনাদের ব্যবহারের কথা বলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার কঠোর মনোভাবের সমালোচনা করেছেন বিরোধীদলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। উল্লেখ্য গত ২৫ মে আফ্রিকান-আমেরিকান নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর একজন পুলিশ হাঁটু গেড়ে বসলে উক্ত ব্যক্তি মারা যান।

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের হাতে যে কোন নাগরিকের মৃত্যু অনাকাক্সিক্ষত। মার্কিন য্ক্তুরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক হত্যার ঘটনায় গণবিক্ষোভের পেছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কেবল ফ্লয়েডের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এই বিক্ষোভ তৈরি হয়নি। বরং তার মৃত্যু বিক্ষোভের একটি উপলক্ষ মাত্র। দেশটিতে বহুদিন ধরে সেখানকার নাগরিকরা বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকরা পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অনেক কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক পুলিশি নির্যাতনে প্রাণ হারিয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন সময় সেখানে জনবিক্ষোভও হয়েছে। সেসব জনবিক্ষোভে যে দেশটিতে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকদের ভাগ্য বদলায়নি সেটার প্রমাণ ফ্লয়েডের মৃত্যু। আমরা তার মৃত্যুতে গভীর বেদনা প্রকাশ করছি।

জনবিক্ষোভ প্রশমনে বর্তমান মার্কিন প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ নিতে পেয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে। দেশটির অভ্যন্তরেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমালোচনা হচ্ছে। মার্কিন মুলুকে অতীতেও জনবিক্ষোভ সহিংস রূপ ধারণ করেছে। আমরা বলতে চাই, জনতার শক্তিকে বল প্রয়োগ করে দাবিয়ে রাখা যায় না। জনতার ক্ষোভ প্রশমনের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। বুলেট বা লাঠি দিয়ে ক্ষোভ প্রশমন করা যায় না বরং ক্ষোভের আগুনে ঘিই ঢালা হয়। এই কথা সব দেশের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময় পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। পুলিশি নির্যাতনে অনেক নাগরিক মারাও গেছে। এখানেও পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন-প্রতিবাদ হয়। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, আন্দোলন-প্রতিবাদ এক সময় স্তিমিত হয়ে যায়, পুলিশি নির্যাতনের অবসান হয় না।

আমরা আশা করব ফ্লয়েড হত্যার বিচার হবে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দেশটির সরকার ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন বিষয়টি আদালতের হাতে। তবে নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান, অধিকার রক্ষা বা বৈষম্য নিরসনের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিবাচক শিক্ষা নেবে, অন্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোও শিখবে সেটা আমাদের প্রত্যাশা। যুক্তরাষ্ট্রে যারা ফ্লয়েড হত্যার বিচার চান, নাগরিক অধিকার বা মর্যাদা ফিরে পেতে চান তাদের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তবে বিক্ষোভের নামে সহিংসতা বা লুটপাট কাম্য নয়। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পথ অবলম্বন করে সৃষ্ট সংকটের সমাধান কাম্য।