চিঠিপত্র

চীনাদের জন্য বন্ধ হচ্ছে বিশ্ব শিক্ষার দুয়ার

করোনা যেন নতুন নতুন মাত্রা যোগ করছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে। শিক্ষা থেকে শুরু করে অর্থনীতি সর্বত্রই এখন ঠাণ্ডা যুদ্ধের আভাস। এতোদিন ঠাণ্ডা যুদ্ধ সীমাবদ্ধ ছিলো শুধু অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক আর রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে। এবার সেই ঠাণ্ডা যুদ্ধ গড়ালো শিক্ষাঙ্গন পর্যন্ত। প্রতিবছর লাখ লাখ চীনা পড়ুয়া উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমায় আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে প্রায় ৩ লাখ ৬৩ হাজার চীনা পড়ুয়া আমেরিকায় আছে। এছাড়ায় ২ লাখ ৫০ হাজারের মতো চীনা গবেষক আমেরিকার বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার সঙ্গে গবেষণা কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এসকল শিক্ষার্থী গবেষকদের বিরুদ্ধে এবার শিক্ষা নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন।

ট্রাম্পের অভিযোগ, ‘চীনা শিক্ষার্থীরা মার্কিন মেধাসত্ত্ব চুরি করতেই আমেরিকা পাড়ি জমায় এবং তারা এক এক জন চীনের গুপ্তচর হিসেবে মার্কিন গবেষণা ও প্রযুক্তির তথ্য হাতিয়ে নিয়ে তা চীন দেশে পাচার করে’।

শুধু সন্দেহের জেরে চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা দেবার ব্যাপারে এবার কড়াকড়ি হচ্ছে মার্কিন মুলুক। কোন চীনা শিক্ষার্থীর সঙ্গে পিপলস লিবারেশন আর্মির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক থাকলে সে কখনই মার্কিন ভিসা পাবে না। এমনকি কোন চীনা শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্য চীনা আর্মিতে চাকুরিরত থাকলে সেও পাবে না উচ্চশিক্ষার ভিসা। যাচাই বাছাই করে সীমিত চীনা পড়ুয়াকে দেয়া হবে মার্কিন ভিসা। এমনকি মার্কিন দেশে তাদের নজরবন্দীতে রাখা হবে। আমেরিকা পরিষ্কার বুঝিয়ে দিচ্ছে, তারা কোন চীনা নাগরিককে পছন্দ করে না। কোন চীনা তাদের দেশে আসুক তারা তাও চায় না। এতে অনিশ্চয়তায় পড়েছে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ।

শুধু যে মার্কিন মুলুকে চীনকে এতো বিষোদগার করা হচ্ছে তা নয়। বিভিন্ন দেশে চীনা নাগরিককে দেখলেই তারা শত্রু ভাবতে শুরু করেছে। নরওয়ে ইতোমধ্যে তাদের দেশে একটি চীনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রশাসন সেখানকার চীনা পড়ুয়াদের দেশ ত্যাগের জন্য আল্টিমেটাম দিয়ে রেখেছে। অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ২০ লাখের মতো চীনা পড়ুয়া আর গবেষক রয়েছে। শুধু এই সন্দেহের জেরে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে ৩০-৩৫ লাখ চীনা পড়ুয়া আর গবেষকের ভবিষ্যৎ। তারা জানেও না ভবিষ্যতে তারা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স সম্পন্ন করতে পারবে কিনা।

চীনের অপর শিক্ষা নিষেধাজ্ঞার ফলে যে চীন একাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে এমনটা নয়। আমেরিকার কিছু লাক্সারি বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ এতটাই আকাশচুম্বী যে তা বহন করার সামর্থ্য শুধু চীনা শিক্ষার্থীদেরই থাকে। অস্ট্রেলিয়ার বার্ষিক আয়ের ৩০ ভাগ আসে তাদের দেশে থাকা চীনা শিক্ষার্থীদের খরচ থেকে। যুক্তরাজ্যে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজারের মতো চীনা শিক্ষার্থী পাড়ি জমায়। ইউরোপে প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজারের মতো চীনা শিক্ষার্থী পাড়ি জামায়। এসব দেশের রাজস্বের বড় একটি অংশ জোগান দেয় এসব চীনা শিক্ষার্থীরা।

তাই চীনাদের উচ্চশিক্ষার দুয়ার বন্ধ করে রীতিমতো তারা তাদের বড় একটি রাজস্ব আয়ের খাত হারাতে চলেছে। এছাড়াও চীনা মেধাবীদের একটা সংকটও তৈরি হবে গোটা পৃথিবীত জুড়ে। নিঃসন্দেহে চীনারা অন্যদের তুলনায় টেকনোলজিতে বেশ এগিয়ে। এভাবে তাদের বিদেশি উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার ফল হবে ভয়াবহ ও সুদুরপ্রসারি। মানুষের তৈরি গোবাল ভিলেজে স্রেফ সন্দেহের জেরে বলির পাঠা বানানো হচ্ছে একটা দেশকে। আমেরিকা সহ তাদের দোষর দেশ গুলো চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে পেরে উঠতে না পেরে এখন শিক্ষার মতো অতি আবশ্যকীয় একটি চাহিদাকে নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে চীনাদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

ইরফান মাসুদ

শিক্ষার্থী, এআইবিএ, সিলেট

মূল্যবোধ বিকাশের শিক্ষা চাই

আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যকে জিপিএ-৫ পাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। এমনকি শিক্ষার্থী কিছু শিখুক বা না শিখুক, জিপিএ-৫ পেলেই সবাই খুশি। আর যেসব শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তারা কষ্টে, ক্ষোভে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। ফলে গৌণ থেকে যাচ্ছে প্রকৃত জ্ঞানার্জনের আকাক্সক্ষা।

শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যে জ্ঞান অর্জন করা এই বিষটা আনাদের মাথায় রাখতে হবে সর্বদা। শিক্ষা যদি শুধু মাত্র ফলাফল কেন্দ্রিক এমন ধারনা চলে আসে সবার ভিতর তাহলে সেই শিক্ষার কোন মূল্য নেই। শিক্ষাটা যদি জ্ঞান অর্জন, মূল্যবোধ অর্জন, একজন মানুষের মতো মানুষ হতে না শিখিয়ে যদি শুধু মাত্র ফলাফলের পিছে ধাপিত হওয়া শেখায়, সমাজকে ফলাফল কেন্দ্রিক করে এর ভিতরেই সীমাবদ্ধ করে রাখে তাহলে সেই শিক্ষা হবে মূল্যহীন, মানহীন। শিক্ষার মূল অর্থটাই হারিয়ে যাবে। আর মানুষ হয়ে যাবে সারশূন্য। এদিকে এসএসসি পরীক্ষায় মনোপুত ফলাফল না লাভ করায় বা জিপিএ ৫ না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠা। কিন্তু শিক্ষা এখন হয়ে উঠেছে কেবল জিপিএ ৫ এর লক্ষ্যে। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন মূল্যবোধ এবং নৈতিকতার চর্চা একেবারেই হচ্ছে না। আমাদের শিক্ষা আসলে আজকাল সার্টিফিকেটকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে যার কারনেই প্রকৃত মানুষ হবার লক্ষ্যে থেকে বিচ্যুত হয়ে আমরা হয়ে যাচ্ছি রেজাল্ট কেন্দ্রিক। আর তখনই আমরা প্রত্যাশিত ফলাফল যখন পাচ্ছি না তখন বেছে নিচ্ছি আত্মহত্যার পথ।

শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ফলাফল কেন্দ্রিক না হয়ে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যের দিক গুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ভিতর নৈতিকতা ও মানোবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। এর জন্য শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি পরিবার ও সমাজের মানুষের আরো সচেতন হতে হবে। যেনো শিক্ষার্থীদের খারাপ ফলাফলের জন্য হেয় প্রতিপন্ন না করে তাদেরকে মূল্যবোধের শিক্ষা দিয়ে থাকে। তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে। আমরাই সমাজ গড়ার কারিগর, আমরাই দেশ গড়ার কারিগর। আর তাই এই সমাজে এই দেশকে গড়তে আমার আপনার সচেষ্ট হতে হবে সবার আগে। আমার আপনার দৃষ্টিভঙি বদলাতে পারে সমাজের নিয়ম। শিক্ষা শব্দটা ফিরে পেতে পারে তার নিজস্ব সত্তা। ফলাফল বা জিপিএ ৫ নয়, শিক্ষা হোক মূল্যবোধ জাগ্রত হবার শিক্ষা হোক মনুষ্যত্ব বিকাশের, শিক্ষা হোক জ্ঞান অর্জনের।

ইমরান হুসাইন

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

তরুণদের ফেসবুক আসক্তি

দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই ছাত্রছাত্রী ও তরুণ। পারস্পরিক যোগাযোগ ও বার্তা আদান-প্রদানে ফেসবুকের জুড়ি নেই। তবে এর ব্যবহারে সুফল থাকলেও রয়েছে ভয়াবহ কুফল। সঠিক নজরদারি না থাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরাধ বাড়ছে। রাত জেগে ফেসবুকে মূল্যবান সময় নষ্ট করে নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করছে অনেকে। এতে তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ নিজেদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো, আপত্তিকর মন্তব্য প্রদান, অনলাইনে উত্ত্যক্তসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে অনেকে।

তরুণদের এই আসক্তি থেকে মুক্ত করা না গেলে জাতি বৃহদাকারে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ক্ষেত্রে পরিবারকেই সচেতন ও কঠোর হতে হবে। তার সঙ্গে সরকারকেও অবশ্য এ আসক্তি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

মো. আল-আমিন মিয়া

বাহুবল, হবিগঞ্জ।

ভূগর্ভে হোক বৈদ্যুতিক লাইন

দেশের সুনাগরিক হিসেবে কে না চায় একটি সুন্দর এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ। পরিপাটি সাজানো গোছানো দেশ সবারই কাম্য। কিন্তু নানা কারণে দেশটি সুন্দর হয়েও যেন হয়ে উঠে না। তার মধ্যে একটি অন্যতম কারণ ছড়ানো ছিটানো বৈদ্যুতিক লাইন। দেশের সর্বত্র চোখ মেললেই দেখা যায় মাকড়সার জালের মতো বৈদ্যুতিক কেবলের জঞ্জাল। সৌন্দর্যহানির পাশাপাশি এর ফলে ঘটছে নানান দুর্ঘটনা। ঝরে যাচ্ছে অনেক প্রাণ।

আবার দেখা যায় আবহাওয়ার অবস্থা খারাপ কিংবা আকাশে মেঘ দেখা দিলেই মেলে লোডশেডিং এর যন্ত্রণা। এরই ফলশ্রুতিতে প্রায় দেড় বছর আগে বৈদ্যুতিক কানেকশন আন্ডারগ্রাউন্ড কেবলের মাধ্যমে মাটির নিচ দিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছিলো সিলেটে। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্টের অর্থায়নে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগ এ প্রকল্পটি শুরু করা হয়। দেশে প্রথম নগরী হিসেবে কাজটি সিলেটে শুরু হলেও এর মধ্যে আর কোথাও এমন উদ্যোগের দেখা মেলেনি। তাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দেশ গড়তে ও দুর্ঘটনা এড়াতে সারাদেশে মাটির নিচে বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন করা জরুরি।

শ্যামলী তানজিন অনু

আরও খবর

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুন ২০২০ , ২১ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ১১ শাওয়াল ১৪৪১

চিঠিপত্র

চীনাদের জন্য বন্ধ হচ্ছে বিশ্ব শিক্ষার দুয়ার

করোনা যেন নতুন নতুন মাত্রা যোগ করছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে। শিক্ষা থেকে শুরু করে অর্থনীতি সর্বত্রই এখন ঠাণ্ডা যুদ্ধের আভাস। এতোদিন ঠাণ্ডা যুদ্ধ সীমাবদ্ধ ছিলো শুধু অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক আর রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে। এবার সেই ঠাণ্ডা যুদ্ধ গড়ালো শিক্ষাঙ্গন পর্যন্ত। প্রতিবছর লাখ লাখ চীনা পড়ুয়া উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমায় আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে প্রায় ৩ লাখ ৬৩ হাজার চীনা পড়ুয়া আমেরিকায় আছে। এছাড়ায় ২ লাখ ৫০ হাজারের মতো চীনা গবেষক আমেরিকার বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার সঙ্গে গবেষণা কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এসকল শিক্ষার্থী গবেষকদের বিরুদ্ধে এবার শিক্ষা নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন।

ট্রাম্পের অভিযোগ, ‘চীনা শিক্ষার্থীরা মার্কিন মেধাসত্ত্ব চুরি করতেই আমেরিকা পাড়ি জমায় এবং তারা এক এক জন চীনের গুপ্তচর হিসেবে মার্কিন গবেষণা ও প্রযুক্তির তথ্য হাতিয়ে নিয়ে তা চীন দেশে পাচার করে’।

শুধু সন্দেহের জেরে চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা দেবার ব্যাপারে এবার কড়াকড়ি হচ্ছে মার্কিন মুলুক। কোন চীনা শিক্ষার্থীর সঙ্গে পিপলস লিবারেশন আর্মির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক থাকলে সে কখনই মার্কিন ভিসা পাবে না। এমনকি কোন চীনা শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্য চীনা আর্মিতে চাকুরিরত থাকলে সেও পাবে না উচ্চশিক্ষার ভিসা। যাচাই বাছাই করে সীমিত চীনা পড়ুয়াকে দেয়া হবে মার্কিন ভিসা। এমনকি মার্কিন দেশে তাদের নজরবন্দীতে রাখা হবে। আমেরিকা পরিষ্কার বুঝিয়ে দিচ্ছে, তারা কোন চীনা নাগরিককে পছন্দ করে না। কোন চীনা তাদের দেশে আসুক তারা তাও চায় না। এতে অনিশ্চয়তায় পড়েছে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ।

শুধু যে মার্কিন মুলুকে চীনকে এতো বিষোদগার করা হচ্ছে তা নয়। বিভিন্ন দেশে চীনা নাগরিককে দেখলেই তারা শত্রু ভাবতে শুরু করেছে। নরওয়ে ইতোমধ্যে তাদের দেশে একটি চীনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রশাসন সেখানকার চীনা পড়ুয়াদের দেশ ত্যাগের জন্য আল্টিমেটাম দিয়ে রেখেছে। অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ২০ লাখের মতো চীনা পড়ুয়া আর গবেষক রয়েছে। শুধু এই সন্দেহের জেরে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে ৩০-৩৫ লাখ চীনা পড়ুয়া আর গবেষকের ভবিষ্যৎ। তারা জানেও না ভবিষ্যতে তারা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স সম্পন্ন করতে পারবে কিনা।

চীনের অপর শিক্ষা নিষেধাজ্ঞার ফলে যে চীন একাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে এমনটা নয়। আমেরিকার কিছু লাক্সারি বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ এতটাই আকাশচুম্বী যে তা বহন করার সামর্থ্য শুধু চীনা শিক্ষার্থীদেরই থাকে। অস্ট্রেলিয়ার বার্ষিক আয়ের ৩০ ভাগ আসে তাদের দেশে থাকা চীনা শিক্ষার্থীদের খরচ থেকে। যুক্তরাজ্যে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজারের মতো চীনা শিক্ষার্থী পাড়ি জমায়। ইউরোপে প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজারের মতো চীনা শিক্ষার্থী পাড়ি জামায়। এসব দেশের রাজস্বের বড় একটি অংশ জোগান দেয় এসব চীনা শিক্ষার্থীরা।

তাই চীনাদের উচ্চশিক্ষার দুয়ার বন্ধ করে রীতিমতো তারা তাদের বড় একটি রাজস্ব আয়ের খাত হারাতে চলেছে। এছাড়াও চীনা মেধাবীদের একটা সংকটও তৈরি হবে গোটা পৃথিবীত জুড়ে। নিঃসন্দেহে চীনারা অন্যদের তুলনায় টেকনোলজিতে বেশ এগিয়ে। এভাবে তাদের বিদেশি উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার ফল হবে ভয়াবহ ও সুদুরপ্রসারি। মানুষের তৈরি গোবাল ভিলেজে স্রেফ সন্দেহের জেরে বলির পাঠা বানানো হচ্ছে একটা দেশকে। আমেরিকা সহ তাদের দোষর দেশ গুলো চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে পেরে উঠতে না পেরে এখন শিক্ষার মতো অতি আবশ্যকীয় একটি চাহিদাকে নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে চীনাদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

ইরফান মাসুদ

শিক্ষার্থী, এআইবিএ, সিলেট

মূল্যবোধ বিকাশের শিক্ষা চাই

আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যকে জিপিএ-৫ পাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। এমনকি শিক্ষার্থী কিছু শিখুক বা না শিখুক, জিপিএ-৫ পেলেই সবাই খুশি। আর যেসব শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তারা কষ্টে, ক্ষোভে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। ফলে গৌণ থেকে যাচ্ছে প্রকৃত জ্ঞানার্জনের আকাক্সক্ষা।

শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যে জ্ঞান অর্জন করা এই বিষটা আনাদের মাথায় রাখতে হবে সর্বদা। শিক্ষা যদি শুধু মাত্র ফলাফল কেন্দ্রিক এমন ধারনা চলে আসে সবার ভিতর তাহলে সেই শিক্ষার কোন মূল্য নেই। শিক্ষাটা যদি জ্ঞান অর্জন, মূল্যবোধ অর্জন, একজন মানুষের মতো মানুষ হতে না শিখিয়ে যদি শুধু মাত্র ফলাফলের পিছে ধাপিত হওয়া শেখায়, সমাজকে ফলাফল কেন্দ্রিক করে এর ভিতরেই সীমাবদ্ধ করে রাখে তাহলে সেই শিক্ষা হবে মূল্যহীন, মানহীন। শিক্ষার মূল অর্থটাই হারিয়ে যাবে। আর মানুষ হয়ে যাবে সারশূন্য। এদিকে এসএসসি পরীক্ষায় মনোপুত ফলাফল না লাভ করায় বা জিপিএ ৫ না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠা। কিন্তু শিক্ষা এখন হয়ে উঠেছে কেবল জিপিএ ৫ এর লক্ষ্যে। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন মূল্যবোধ এবং নৈতিকতার চর্চা একেবারেই হচ্ছে না। আমাদের শিক্ষা আসলে আজকাল সার্টিফিকেটকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে যার কারনেই প্রকৃত মানুষ হবার লক্ষ্যে থেকে বিচ্যুত হয়ে আমরা হয়ে যাচ্ছি রেজাল্ট কেন্দ্রিক। আর তখনই আমরা প্রত্যাশিত ফলাফল যখন পাচ্ছি না তখন বেছে নিচ্ছি আত্মহত্যার পথ।

শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ফলাফল কেন্দ্রিক না হয়ে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যের দিক গুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ভিতর নৈতিকতা ও মানোবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। এর জন্য শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি পরিবার ও সমাজের মানুষের আরো সচেতন হতে হবে। যেনো শিক্ষার্থীদের খারাপ ফলাফলের জন্য হেয় প্রতিপন্ন না করে তাদেরকে মূল্যবোধের শিক্ষা দিয়ে থাকে। তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে। আমরাই সমাজ গড়ার কারিগর, আমরাই দেশ গড়ার কারিগর। আর তাই এই সমাজে এই দেশকে গড়তে আমার আপনার সচেষ্ট হতে হবে সবার আগে। আমার আপনার দৃষ্টিভঙি বদলাতে পারে সমাজের নিয়ম। শিক্ষা শব্দটা ফিরে পেতে পারে তার নিজস্ব সত্তা। ফলাফল বা জিপিএ ৫ নয়, শিক্ষা হোক মূল্যবোধ জাগ্রত হবার শিক্ষা হোক মনুষ্যত্ব বিকাশের, শিক্ষা হোক জ্ঞান অর্জনের।

ইমরান হুসাইন

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

তরুণদের ফেসবুক আসক্তি

দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই ছাত্রছাত্রী ও তরুণ। পারস্পরিক যোগাযোগ ও বার্তা আদান-প্রদানে ফেসবুকের জুড়ি নেই। তবে এর ব্যবহারে সুফল থাকলেও রয়েছে ভয়াবহ কুফল। সঠিক নজরদারি না থাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরাধ বাড়ছে। রাত জেগে ফেসবুকে মূল্যবান সময় নষ্ট করে নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করছে অনেকে। এতে তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ নিজেদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো, আপত্তিকর মন্তব্য প্রদান, অনলাইনে উত্ত্যক্তসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে অনেকে।

তরুণদের এই আসক্তি থেকে মুক্ত করা না গেলে জাতি বৃহদাকারে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ক্ষেত্রে পরিবারকেই সচেতন ও কঠোর হতে হবে। তার সঙ্গে সরকারকেও অবশ্য এ আসক্তি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

মো. আল-আমিন মিয়া

বাহুবল, হবিগঞ্জ।

ভূগর্ভে হোক বৈদ্যুতিক লাইন

দেশের সুনাগরিক হিসেবে কে না চায় একটি সুন্দর এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ। পরিপাটি সাজানো গোছানো দেশ সবারই কাম্য। কিন্তু নানা কারণে দেশটি সুন্দর হয়েও যেন হয়ে উঠে না। তার মধ্যে একটি অন্যতম কারণ ছড়ানো ছিটানো বৈদ্যুতিক লাইন। দেশের সর্বত্র চোখ মেললেই দেখা যায় মাকড়সার জালের মতো বৈদ্যুতিক কেবলের জঞ্জাল। সৌন্দর্যহানির পাশাপাশি এর ফলে ঘটছে নানান দুর্ঘটনা। ঝরে যাচ্ছে অনেক প্রাণ।

আবার দেখা যায় আবহাওয়ার অবস্থা খারাপ কিংবা আকাশে মেঘ দেখা দিলেই মেলে লোডশেডিং এর যন্ত্রণা। এরই ফলশ্রুতিতে প্রায় দেড় বছর আগে বৈদ্যুতিক কানেকশন আন্ডারগ্রাউন্ড কেবলের মাধ্যমে মাটির নিচ দিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছিলো সিলেটে। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্টের অর্থায়নে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগ এ প্রকল্পটি শুরু করা হয়। দেশে প্রথম নগরী হিসেবে কাজটি সিলেটে শুরু হলেও এর মধ্যে আর কোথাও এমন উদ্যোগের দেখা মেলেনি। তাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দেশ গড়তে ও দুর্ঘটনা এড়াতে সারাদেশে মাটির নিচে বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন করা জরুরি।

শ্যামলী তানজিন অনু