করোনাভাইরাস মহামারীতে বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়ন দরকার : সানেম

করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট মহামারীর মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়ন হওয়া দরকার বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। পাশাপাশি বাজেটের মাসভিত্তিক মূল্যায়ন ও মনিটরিং ব্যবস্থা কার্যকর করারও প্রস্তাব করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সানেম নেটিজেন ফোরামের সপ্তম আলোচনা পর্বে এ প্রস্তাবের বিষয়ে বলা হয়েছে।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হানের পরিচালনায় আলোচনায় জুম প্লাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন অঙ্গনের প্রায় ৫০ জন ব্যক্তি এ পর্বে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া সানেম টিমে ছিলেন সানেমের গবেষণা পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক ও সানেমের রিসার্চ ফেলো মাহতাব উদ্দিন, রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ইশরাত শারমীন, রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মীর আশরাফুন নাহার, রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ফাবিহা বুশরা। সূচনা বক্তব্যে ড. সেলিম রায়হান প্রথমেই বাংলাদেশে লকডাউন শিথিল করার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, লকডাউন তুলে দেয়ার সিদ্ধান্তটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার অধীনে করা হয়নি। প্রতিদিন যখন সংক্রমণের এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, তখন লকডাউন শিথিল করা কোন ভালো ফল বয়ে আনবে না। লকডাউন শিথিল করার ফলে করোনাভাইরাস রোগের বিস্তার ঘটলে যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতি হবে, সেটি অর্থনীতি পুনরায় চালু করে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। উল্টো পরে আরো কঠোর লকডাউন আরোপ করতে হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সংকটের ফলে এটি স্পষ্ট যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তার মতো খাতগুলোতে আমাদের সরকারি ব্যয় অনেক বেশি বাড়াতে হবে। আগামী বাজেটে প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন ও এটি মনিটরিং করার প্রক্রিয়া স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। এটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে দরিদ্র জনগোষ্ঠী যাতে এ প্রণোদনা প্যাকেজের সুফল পায়। দেখা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটের শুধু ৭৭-৭৮ শতাংশ বাস্তবায়িত হয় এবং এ সংক্রান্ত তথ্য বাজেটের এক থেকে দেড় বছর পরে পাওয়া যায়। এক দশক ধরে বাজেটে মাত্র ৪-৫ শতাংশ ঘাটতি বজায় রাখা গিয়েছে। তার অন্যতম কারণ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে খুবই সামান্য বরাদ্দ করা হয়েছে। আসন্ন বাজেটে এই ধারা অনুসরণ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নেটিজেন ফোরামে সভায় অংশগ্রহণকারীরা সানেমের করা বেশকিছু প্রস্তাবের ওপর বিস্তারিত আলোচনা করেন। যার প্রথমে রয়েছে জীবন বনাম জীবিকা বিতর্ক। এ বিষয়টিতে জীবনের গুরুত্বকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে বলে মনে করে সানেম। তারা জানিয়েছে, জীবন ও জীবিকা উভয়কেই কীভাবে রক্ষা করা সম্ভব, সেটি নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। সমাজের স্বচ্ছল মানুষরা ঘরে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারলেও জীবিকার জন্য দরিদ্রদের ঘরের বাইরে বের হতে বাধ্য হতে হয়। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের কর্মজীবী সদস্য সংক্রমিত হলে এবং পরবর্তী সময়ে মৃত্যুবরণ করলে ওই পরিবারে প্রজন্মব্যাপী দরিদ্র তৈরি হতে পারে। ফলে দরিদ্রদের জীবন ও জীবিকা উভয়ই রক্ষায় সচেষ্ট হওয়া দরকার।

আগামী বাজেটের বিষয়ও উঠে এসেছে সানেমের প্রস্তাবে। বাজেটের মাসভিত্তিক মূল্যায়ন ও মনিটরিং ব্যবস্থার সূচনা করা দরকার। বাজেট কোভিড-১৯ কেন্দ্রিক হচ্ছে কিনা সেটি বিবেচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে বাজেটের গুরুত্ব দেয়া উচিত দরিদ্র, বস্তিবাসী, যুব, নারী, অবহেলিত সম্প্রদায় ও ছোট-মাঝারি উদ্যোগগুলোর ওপর।

শুক্রবার, ০৫ জুন ২০২০ , ২২ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ১২ শাওয়াল ১৪৪১

করোনাভাইরাস মহামারীতে বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়ন দরকার : সানেম

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট মহামারীর মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়ন হওয়া দরকার বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। পাশাপাশি বাজেটের মাসভিত্তিক মূল্যায়ন ও মনিটরিং ব্যবস্থা কার্যকর করারও প্রস্তাব করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সানেম নেটিজেন ফোরামের সপ্তম আলোচনা পর্বে এ প্রস্তাবের বিষয়ে বলা হয়েছে।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হানের পরিচালনায় আলোচনায় জুম প্লাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন অঙ্গনের প্রায় ৫০ জন ব্যক্তি এ পর্বে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া সানেম টিমে ছিলেন সানেমের গবেষণা পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক ও সানেমের রিসার্চ ফেলো মাহতাব উদ্দিন, রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ইশরাত শারমীন, রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মীর আশরাফুন নাহার, রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ফাবিহা বুশরা। সূচনা বক্তব্যে ড. সেলিম রায়হান প্রথমেই বাংলাদেশে লকডাউন শিথিল করার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, লকডাউন তুলে দেয়ার সিদ্ধান্তটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার অধীনে করা হয়নি। প্রতিদিন যখন সংক্রমণের এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, তখন লকডাউন শিথিল করা কোন ভালো ফল বয়ে আনবে না। লকডাউন শিথিল করার ফলে করোনাভাইরাস রোগের বিস্তার ঘটলে যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতি হবে, সেটি অর্থনীতি পুনরায় চালু করে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। উল্টো পরে আরো কঠোর লকডাউন আরোপ করতে হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সংকটের ফলে এটি স্পষ্ট যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তার মতো খাতগুলোতে আমাদের সরকারি ব্যয় অনেক বেশি বাড়াতে হবে। আগামী বাজেটে প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন ও এটি মনিটরিং করার প্রক্রিয়া স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। এটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে দরিদ্র জনগোষ্ঠী যাতে এ প্রণোদনা প্যাকেজের সুফল পায়। দেখা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটের শুধু ৭৭-৭৮ শতাংশ বাস্তবায়িত হয় এবং এ সংক্রান্ত তথ্য বাজেটের এক থেকে দেড় বছর পরে পাওয়া যায়। এক দশক ধরে বাজেটে মাত্র ৪-৫ শতাংশ ঘাটতি বজায় রাখা গিয়েছে। তার অন্যতম কারণ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে খুবই সামান্য বরাদ্দ করা হয়েছে। আসন্ন বাজেটে এই ধারা অনুসরণ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নেটিজেন ফোরামে সভায় অংশগ্রহণকারীরা সানেমের করা বেশকিছু প্রস্তাবের ওপর বিস্তারিত আলোচনা করেন। যার প্রথমে রয়েছে জীবন বনাম জীবিকা বিতর্ক। এ বিষয়টিতে জীবনের গুরুত্বকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে বলে মনে করে সানেম। তারা জানিয়েছে, জীবন ও জীবিকা উভয়কেই কীভাবে রক্ষা করা সম্ভব, সেটি নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। সমাজের স্বচ্ছল মানুষরা ঘরে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারলেও জীবিকার জন্য দরিদ্রদের ঘরের বাইরে বের হতে বাধ্য হতে হয়। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের কর্মজীবী সদস্য সংক্রমিত হলে এবং পরবর্তী সময়ে মৃত্যুবরণ করলে ওই পরিবারে প্রজন্মব্যাপী দরিদ্র তৈরি হতে পারে। ফলে দরিদ্রদের জীবন ও জীবিকা উভয়ই রক্ষায় সচেষ্ট হওয়া দরকার।

আগামী বাজেটের বিষয়ও উঠে এসেছে সানেমের প্রস্তাবে। বাজেটের মাসভিত্তিক মূল্যায়ন ও মনিটরিং ব্যবস্থার সূচনা করা দরকার। বাজেট কোভিড-১৯ কেন্দ্রিক হচ্ছে কিনা সেটি বিবেচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে বাজেটের গুরুত্ব দেয়া উচিত দরিদ্র, বস্তিবাসী, যুব, নারী, অবহেলিত সম্প্রদায় ও ছোট-মাঝারি উদ্যোগগুলোর ওপর।