ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ড

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ-সহিংসতায় নিহত ১১

মার্কিন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার হাতে নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের কমপক্ষে ১৪০টি শহরে টানা নয় দিন ধরে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ এখনও অব্যাহত রয়েছে। এতে সহিংসতায় এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন। গত বুধবার (৩ রুশ বার্তাসংস্থা তাস-এর বরাতে এ তথ্য জানা যায়। এদিকে গত মঙ্গলাবার পর্যন্ত এ বিক্ষোভ থেকে ১০ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যম এপি জানিয়েছে। সিএনএন, রয়টার্স, তাস, এপি।

ফ্লয়েডের মৃত্যুর দিন রাতেই (২৫ মে) মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের প্রধান শহর মিনেপোলিসজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পুরো উত্তাল এ বিক্ষোভ বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। টানা ৯ দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ করেছে কয়েক হাজার মানুষ। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সহিংসতা কিছুটা কমে এলেও বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে। কিছু জায়গায় বিক্ষোভকারীরা কারফিউও ভঙ্গ করেছে। ফ্লয়েডের বাড়ি টেক্সাসের হিউস্টোনে বড় ধরনের বিক্ষোভ ও শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা হয়। তাতে অংশ নেয় ফ্লয়েডের স্বজনরাও। কোথাও কোথাও বিক্ষোভে সহিংসতা হওয়ায় বিভিন্ন শহরে কারফিউ জারি করা হয়। বুধবার কিছু কিছু শহরে কারফিউ বাড়ানো হয়েছে।

টানা নয় দিনের এ বিক্ষোভে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে শিকাগো, ডেট্রয়েট, ওমাহা, ডেভেনপোর্ট, ওকল্যান্ড, ল্যুইভিলের বাসিন্দা রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিনী (আফ্রিকান আমেরিকান)। ওকল্যান্ডে ফেডারেল প্রোটেকটিভ সার্ভিস কর্মকর্তা ৫৩ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ ডেভ প্যাট্রিক আন্ডারউড গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এ সময় আরেকজন কর্মকর্তা গুরুতর আহত হন। ওমাহায় ২২ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ জেমস স্কারলক নিহত হয়েছেন। তিনি ও তার দল একজন শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিকে মারধর করছিলেন। এ সময় ওই ব্যক্তি স্কারলককে লক্ষ্য করে গুলি করলে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া, বিক্ষোভে সহিংসতায় যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকশ’ মানুষ আহত হলেও তাদের সঠিক সংখ্যা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

জ্ঞাত গ্রেফতারকৃতদের তথ্য অনুযায়ী সংবাদমাধ্যম এপির সর্বশেষ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলমান এ বিক্ষোভ থেকে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত কয়েক দিনের বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪ হাজার ৪শ’ মানুষকে আটক করা হয়। তাদের বেশিরভাগই লুট, কারফিউ ভঙ্গ এবং সড়কে ব্যারিকেড দেয়ার অপরাধে আটক হয়েছেন। বিক্ষোভ দমনে ওয়াশিংটন, লস এঞ্জেলেস, নিউইয়র্কসহ ৪০টিরও বেশি শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

‘ট্রাম্প আমাদের বিভক্ত করার চেষ্টা করছে’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস অভিযোগ করে বলেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের কর্তৃত্বের অপব্যবহার করে আমেরিকাকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছেন। এদিকে ধারাবাহিক কয়েকটি টুইটার বার্তায় এর জবাব দিয়ে ম্যাটিসকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে অতিমূল্যায়িত জেনারেল’ বলে অভিহিত করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন একজন প্রেসিডেন্টকে স্পষ্টভাবে সমালোচনা করার বিষয়টি দীর্ঘদিন এড়িয়ে গেছেন বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক এই শীর্ষ কর্মকর্তা। তবে গত বুধবার আর কোন রাখঢাক না রেখেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশে চলমান বিক্ষোভ দমাতে সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে চাওয়ায় তার নিন্দা জানিয়েছেন ম্যাটিস।

রয়টার্সেও প্রতিবেদন মতে, নীতিগত বিরোধের কারণে ২০১৮ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেয়া সাবেক প্রভাবশালী মেরিন জেনারেল ম্যাটিস, পেন্টাগনের সাবেক নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে কঠোর ভাষায় জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার বিষয়ে ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়ার নিন্দা জানিয়েছেন।

আটলান্টিক সাময়ীকিতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ম্যাটিস বলেন, ‘আমার জীবদ্দশায় প্রথম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি মার্কিন জনগণকে একতাবদ্ধ করার চেষ্টা করেননি। এমনকি চেষ্টা করার ভানটুকুও পর্যন্ত করেননি।

‘তার পরিবর্তে তিনি আমাদের বিভক্ত করার চেষ্টা করছেন। তিন বছরের এ সচেতন প্রচেষ্টার পরিণতি এখন প্রত্যক্ষ করছি আমরা। তিন বছর ধরে পরিণত নেতৃত্ব না থাকার ফলাফল দেখছি আমরা।’

এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ফ্লয়েডকে হত্যা করার পর পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হলে তা দমনে সামরিক বাহিনী ব্যবহারের হুমকি দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের গভর্নরদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তিনি এমন পদক্ষেপ নেয়ার অভিপ্রায় জানান।

ট্রাম্পের এমন বক্তব্যে বর্তমান ও সাবেক অনেক মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা শঙ্কিত হয়ে ওঠেন। প্রেসিডেন্টের এমন পদক্ষেপের বিষয়ে সামরিক বাহিনীর অনেক কর্মকর্তা ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন ও এতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তারা।

ম্যাটিস লিখেছেন, ‘ওয়াশিংটন ডিসিতে আমরা যেমনটি প্রত্যক্ষ করেছি, সামরিক বাহিনী নামানোতে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক সমাজের মধ্যে।’

ম্যাটিসের এমন বিবৃতির পর ধারাবাহিক কয়েকটি টুইটার বার্তায়-এর জবাব দেন ট্রাম্প। ম্যাটিসকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে অতিমূল্যায়িত জেনারেল’ বলে অভিহিত করেন। তিনি লিখেন, ‘আমি তার ‘নেতৃত্বের’ ধরন পছন্দ করতাম না, তার অনেক কিছুই পছন্দ করতাম না, আমার সঙ্গে অনেকেই একমত। খুশি যে সে চলে গেছে!’

‘ফ্লয়েড করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন’

অপরদিকে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যাওয়া কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন বলে মৃত্যুর পর করা পরীক্ষায় দেখা গেছে। মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের হেনিপিন কাউন্টির প্রকাশ করা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ফ্লয়েডের সংক্রমণের বিষয়টি ওঠে এসেছে।

ময়নাতদন্তে ফ্লয়েডের নাক থেকে নেয়া নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাতে তার করোনাভাইরাস ‘পজিটিভি’ এসেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। হেনিপিন কাউন্টির প্রধান মেডিকেল এক্সামিনার ডা. এন্ড্রু বেইকার জানিয়েছেন, ফ্লয়েডের নমুনার পিসিআর পরীক্ষায় তারা এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন।

বেইকার বলেন, ময়নাতদন্তের যে ফলাফল পাওয়া গেছে তাতে ফ্লয়েড করোনাভাইরাসের উপসর্গহীন বাহক ছিলেন বলেই মনে হয়েছে। তার মৃত্যুতে ভাইরাসের ‘জ্ঞাত কোন ভূমিকা’ ছিল না।

এর আগে গত ২ জুন প্রাথমিক ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যেভাবে ফ্লয়েডে মৃত্যু হয়েছে, সেটা ‘হত্যাকাণ্ড’। ওই ঘটনায় জড়িত চার পুলিশ কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও দায়ের করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ মে থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ছোট-বড় বহু শহরে চলা এ বিক্ষোভের সময় সহিংতা, কোথাও কোথাও লুটপাটের মতো ঘটনাও ঘটে। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভের সময় জনতা মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের সঙ্গে দাঙ্গায় জড়ালে কিছুক্ষণের জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। দেশটির ৪০টির মতো শহরে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ চালিয়ে যায় ক্ষুব্ধ প্রতিবাদকারীরা। তাদের দমাতে কাঁদুনে গ্যাস, পেপার স্প্রে ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে পুলিশ। আইন প্রয়োগকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যে ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েন করা হয়।

শুক্রবার, ০৫ জুন ২০২০ , ২২ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ১২ শাওয়াল ১৪৪১

ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ড

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ-সহিংসতায় নিহত ১১

সংবাদ ডেস্ক |

image

মার্কিন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার হাতে নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের কমপক্ষে ১৪০টি শহরে টানা নয় দিন ধরে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ এখনও অব্যাহত রয়েছে। এতে সহিংসতায় এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন। গত বুধবার (৩ রুশ বার্তাসংস্থা তাস-এর বরাতে এ তথ্য জানা যায়। এদিকে গত মঙ্গলাবার পর্যন্ত এ বিক্ষোভ থেকে ১০ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যম এপি জানিয়েছে। সিএনএন, রয়টার্স, তাস, এপি।

ফ্লয়েডের মৃত্যুর দিন রাতেই (২৫ মে) মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের প্রধান শহর মিনেপোলিসজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পুরো উত্তাল এ বিক্ষোভ বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। টানা ৯ দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ করেছে কয়েক হাজার মানুষ। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সহিংসতা কিছুটা কমে এলেও বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে। কিছু জায়গায় বিক্ষোভকারীরা কারফিউও ভঙ্গ করেছে। ফ্লয়েডের বাড়ি টেক্সাসের হিউস্টোনে বড় ধরনের বিক্ষোভ ও শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা হয়। তাতে অংশ নেয় ফ্লয়েডের স্বজনরাও। কোথাও কোথাও বিক্ষোভে সহিংসতা হওয়ায় বিভিন্ন শহরে কারফিউ জারি করা হয়। বুধবার কিছু কিছু শহরে কারফিউ বাড়ানো হয়েছে।

টানা নয় দিনের এ বিক্ষোভে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে শিকাগো, ডেট্রয়েট, ওমাহা, ডেভেনপোর্ট, ওকল্যান্ড, ল্যুইভিলের বাসিন্দা রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিনী (আফ্রিকান আমেরিকান)। ওকল্যান্ডে ফেডারেল প্রোটেকটিভ সার্ভিস কর্মকর্তা ৫৩ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ ডেভ প্যাট্রিক আন্ডারউড গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এ সময় আরেকজন কর্মকর্তা গুরুতর আহত হন। ওমাহায় ২২ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ জেমস স্কারলক নিহত হয়েছেন। তিনি ও তার দল একজন শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিকে মারধর করছিলেন। এ সময় ওই ব্যক্তি স্কারলককে লক্ষ্য করে গুলি করলে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া, বিক্ষোভে সহিংসতায় যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকশ’ মানুষ আহত হলেও তাদের সঠিক সংখ্যা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

জ্ঞাত গ্রেফতারকৃতদের তথ্য অনুযায়ী সংবাদমাধ্যম এপির সর্বশেষ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলমান এ বিক্ষোভ থেকে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত কয়েক দিনের বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪ হাজার ৪শ’ মানুষকে আটক করা হয়। তাদের বেশিরভাগই লুট, কারফিউ ভঙ্গ এবং সড়কে ব্যারিকেড দেয়ার অপরাধে আটক হয়েছেন। বিক্ষোভ দমনে ওয়াশিংটন, লস এঞ্জেলেস, নিউইয়র্কসহ ৪০টিরও বেশি শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

‘ট্রাম্প আমাদের বিভক্ত করার চেষ্টা করছে’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস অভিযোগ করে বলেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের কর্তৃত্বের অপব্যবহার করে আমেরিকাকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছেন। এদিকে ধারাবাহিক কয়েকটি টুইটার বার্তায় এর জবাব দিয়ে ম্যাটিসকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে অতিমূল্যায়িত জেনারেল’ বলে অভিহিত করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন একজন প্রেসিডেন্টকে স্পষ্টভাবে সমালোচনা করার বিষয়টি দীর্ঘদিন এড়িয়ে গেছেন বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক এই শীর্ষ কর্মকর্তা। তবে গত বুধবার আর কোন রাখঢাক না রেখেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশে চলমান বিক্ষোভ দমাতে সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে চাওয়ায় তার নিন্দা জানিয়েছেন ম্যাটিস।

রয়টার্সেও প্রতিবেদন মতে, নীতিগত বিরোধের কারণে ২০১৮ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেয়া সাবেক প্রভাবশালী মেরিন জেনারেল ম্যাটিস, পেন্টাগনের সাবেক নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে কঠোর ভাষায় জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার বিষয়ে ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়ার নিন্দা জানিয়েছেন।

আটলান্টিক সাময়ীকিতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ম্যাটিস বলেন, ‘আমার জীবদ্দশায় প্রথম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি মার্কিন জনগণকে একতাবদ্ধ করার চেষ্টা করেননি। এমনকি চেষ্টা করার ভানটুকুও পর্যন্ত করেননি।

‘তার পরিবর্তে তিনি আমাদের বিভক্ত করার চেষ্টা করছেন। তিন বছরের এ সচেতন প্রচেষ্টার পরিণতি এখন প্রত্যক্ষ করছি আমরা। তিন বছর ধরে পরিণত নেতৃত্ব না থাকার ফলাফল দেখছি আমরা।’

এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ফ্লয়েডকে হত্যা করার পর পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হলে তা দমনে সামরিক বাহিনী ব্যবহারের হুমকি দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের গভর্নরদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তিনি এমন পদক্ষেপ নেয়ার অভিপ্রায় জানান।

ট্রাম্পের এমন বক্তব্যে বর্তমান ও সাবেক অনেক মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা শঙ্কিত হয়ে ওঠেন। প্রেসিডেন্টের এমন পদক্ষেপের বিষয়ে সামরিক বাহিনীর অনেক কর্মকর্তা ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন ও এতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তারা।

ম্যাটিস লিখেছেন, ‘ওয়াশিংটন ডিসিতে আমরা যেমনটি প্রত্যক্ষ করেছি, সামরিক বাহিনী নামানোতে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক সমাজের মধ্যে।’

ম্যাটিসের এমন বিবৃতির পর ধারাবাহিক কয়েকটি টুইটার বার্তায়-এর জবাব দেন ট্রাম্প। ম্যাটিসকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে অতিমূল্যায়িত জেনারেল’ বলে অভিহিত করেন। তিনি লিখেন, ‘আমি তার ‘নেতৃত্বের’ ধরন পছন্দ করতাম না, তার অনেক কিছুই পছন্দ করতাম না, আমার সঙ্গে অনেকেই একমত। খুশি যে সে চলে গেছে!’

‘ফ্লয়েড করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন’

অপরদিকে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যাওয়া কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন বলে মৃত্যুর পর করা পরীক্ষায় দেখা গেছে। মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের হেনিপিন কাউন্টির প্রকাশ করা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ফ্লয়েডের সংক্রমণের বিষয়টি ওঠে এসেছে।

ময়নাতদন্তে ফ্লয়েডের নাক থেকে নেয়া নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাতে তার করোনাভাইরাস ‘পজিটিভি’ এসেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। হেনিপিন কাউন্টির প্রধান মেডিকেল এক্সামিনার ডা. এন্ড্রু বেইকার জানিয়েছেন, ফ্লয়েডের নমুনার পিসিআর পরীক্ষায় তারা এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন।

বেইকার বলেন, ময়নাতদন্তের যে ফলাফল পাওয়া গেছে তাতে ফ্লয়েড করোনাভাইরাসের উপসর্গহীন বাহক ছিলেন বলেই মনে হয়েছে। তার মৃত্যুতে ভাইরাসের ‘জ্ঞাত কোন ভূমিকা’ ছিল না।

এর আগে গত ২ জুন প্রাথমিক ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যেভাবে ফ্লয়েডে মৃত্যু হয়েছে, সেটা ‘হত্যাকাণ্ড’। ওই ঘটনায় জড়িত চার পুলিশ কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও দায়ের করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ মে থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ছোট-বড় বহু শহরে চলা এ বিক্ষোভের সময় সহিংতা, কোথাও কোথাও লুটপাটের মতো ঘটনাও ঘটে। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভের সময় জনতা মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের সঙ্গে দাঙ্গায় জড়ালে কিছুক্ষণের জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। দেশটির ৪০টির মতো শহরে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ চালিয়ে যায় ক্ষুব্ধ প্রতিবাদকারীরা। তাদের দমাতে কাঁদুনে গ্যাস, পেপার স্প্রে ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে পুলিশ। আইন প্রয়োগকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যে ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েন করা হয়।