জড়িত ৪ পুলিশের বিরুদ্ধেই আনা হলো অভিযোগ

যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের প্রধান শহর মিনেপোলিসে পুলিশ হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহভাজন চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।

তদন্ত শেষে গত বুধবার ওই চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই অপরাধের অভিযোগ এনেছেন সরকারি কৌঁসুলিরা। শভিন ছাড়া বাকি তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিরস্ত্র ফ্লয়েডকে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। গত ২৫ মে মিনেপোলিসের স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার চলাকালে ৪৬ বছর বয়সী ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু দিয়ে রাস্তার সঙ্গে প্রায় ৮মিনিট ৪৬ সেকেন্ড ধরে চেপে ধরে রাখেন শ্বেতাঙ্গ এক পুলিশ কর্মকর্তা। প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণ করা ভিডিওতে ঘটনাটি ধরা পড়ে। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শুরু হওয়া প্রতিবাদ নয় দিন ধরে অব্যাহত আছে।

প্রায় ৯ মিনিট ধরে রাস্তার সঙ্গে ঘাড় চেপে রাখায় অচেতন হয়ে পড়া ফ্লয়েডকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ হত্যাকাণ্ডের পরদিনই জড়িত চার পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। এদের মধ্যে ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু তুলে দেয়া ৪৪ বছর বয়সী ডেরেক শভিনও আছেন। শভিনকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। এরই ধারবাহিকতায় অপর তিন পুলিশ কর্মকর্তা, টমাস লেইন, জে. আলেকজান্ডার কুয়ং ও টু থাও-য়ের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়।

কিন্তু প্রতিবাদকারীরা এতে সন্তুষ্ট হয়নি। চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনার দাবি তুলে বিক্ষোভ চালিয়ে আসছিল তারা।

আদালতে পেশ করা মামলার নথির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শভিনের বিরুদ্ধে মিনেসোটা রাজ্য আইনে খুনের তিনটি ধারার মধ্যে সবচেয়ে কম গুরুতর থার্ড-ডিগ্রি মার্ডার ও পরিস্থিতির দাবি ছাড়াই মানব হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছিল, কিন্তু নতুন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আরও গুরুতর সেকেন্ড-ডিগ্রি মার্ডারের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ অভিযোগ প্রমাণিত হলে শভিনের সর্বোচ্চ ৪০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। এই সাজার মেয়াদ থার্ড-ডিগ্রি সাজার মেয়াদ থেকে ১৫ বছর বেশি। শভিনের সঙ্গে থাকা অপর তিন পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সেকেন্ড-ডিগ্রি মার্ডারে সহযোগিতা ও পরিস্থিতির দাবি ছাড়াই মানব হত্যায় সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদেরও সর্বোচ্চ ৪০ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।ফ্লয়েডের পরিবারের আইনজীবী বেনজামিন ক্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ন্যায়বিচারের পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জর্জ ফ্লয়েডের দেহ সমাহিত করার আগেই গুরুত্বপূর্ণ এই পদক্ষেপ নেয়ার আমার সন্তুষ্ট।’

ফ্লয়েডের মৃত্যুর দিন রাতেই মিনিয়াপোলিসজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। পরে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পুরো যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই উত্তাল বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। দেশটির ছোট-বড় বহু শহরে চলা বিক্ষোভের সময় সহিংতা, কোথাও কোথাও লুটপাটের মতো ঘটনাও ঘটে।

শুক্রবার, ০৫ জুন ২০২০ , ২২ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ১২ শাওয়াল ১৪৪১

ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ড

জড়িত ৪ পুলিশের বিরুদ্ধেই আনা হলো অভিযোগ

সংবাদ ডেস্ক |

যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের প্রধান শহর মিনেপোলিসে পুলিশ হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহভাজন চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।

তদন্ত শেষে গত বুধবার ওই চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই অপরাধের অভিযোগ এনেছেন সরকারি কৌঁসুলিরা। শভিন ছাড়া বাকি তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিরস্ত্র ফ্লয়েডকে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। গত ২৫ মে মিনেপোলিসের স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার চলাকালে ৪৬ বছর বয়সী ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু দিয়ে রাস্তার সঙ্গে প্রায় ৮মিনিট ৪৬ সেকেন্ড ধরে চেপে ধরে রাখেন শ্বেতাঙ্গ এক পুলিশ কর্মকর্তা। প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণ করা ভিডিওতে ঘটনাটি ধরা পড়ে। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শুরু হওয়া প্রতিবাদ নয় দিন ধরে অব্যাহত আছে।

প্রায় ৯ মিনিট ধরে রাস্তার সঙ্গে ঘাড় চেপে রাখায় অচেতন হয়ে পড়া ফ্লয়েডকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ হত্যাকাণ্ডের পরদিনই জড়িত চার পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। এদের মধ্যে ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু তুলে দেয়া ৪৪ বছর বয়সী ডেরেক শভিনও আছেন। শভিনকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। এরই ধারবাহিকতায় অপর তিন পুলিশ কর্মকর্তা, টমাস লেইন, জে. আলেকজান্ডার কুয়ং ও টু থাও-য়ের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়।

কিন্তু প্রতিবাদকারীরা এতে সন্তুষ্ট হয়নি। চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনার দাবি তুলে বিক্ষোভ চালিয়ে আসছিল তারা।

আদালতে পেশ করা মামলার নথির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শভিনের বিরুদ্ধে মিনেসোটা রাজ্য আইনে খুনের তিনটি ধারার মধ্যে সবচেয়ে কম গুরুতর থার্ড-ডিগ্রি মার্ডার ও পরিস্থিতির দাবি ছাড়াই মানব হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছিল, কিন্তু নতুন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আরও গুরুতর সেকেন্ড-ডিগ্রি মার্ডারের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ অভিযোগ প্রমাণিত হলে শভিনের সর্বোচ্চ ৪০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। এই সাজার মেয়াদ থার্ড-ডিগ্রি সাজার মেয়াদ থেকে ১৫ বছর বেশি। শভিনের সঙ্গে থাকা অপর তিন পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সেকেন্ড-ডিগ্রি মার্ডারে সহযোগিতা ও পরিস্থিতির দাবি ছাড়াই মানব হত্যায় সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদেরও সর্বোচ্চ ৪০ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।ফ্লয়েডের পরিবারের আইনজীবী বেনজামিন ক্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ন্যায়বিচারের পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জর্জ ফ্লয়েডের দেহ সমাহিত করার আগেই গুরুত্বপূর্ণ এই পদক্ষেপ নেয়ার আমার সন্তুষ্ট।’

ফ্লয়েডের মৃত্যুর দিন রাতেই মিনিয়াপোলিসজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। পরে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পুরো যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই উত্তাল বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। দেশটির ছোট-বড় বহু শহরে চলা বিক্ষোভের সময় সহিংতা, কোথাও কোথাও লুটপাটের মতো ঘটনাও ঘটে।