মানব পাচারকারী চক্রের মূলোৎপাটন করুন

লিবিয়ায় গুলিতে ২৬ বাংলাদেশি নিহত ও আরও ১১ জনের আহত হওয়ার ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রাথমিক তদন্তে ‘চাঞ্চল্যকর’ বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, লিবিয়ায় গত ২৮ মের ওই হামলায় হতাহতরা কয়েকটি চক্রের মাধ্যমে অবৈধপথে ইউরোপে পাড়ি দিতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। এ ঘটনায় দায়ের মামলায় হাজী কামালসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, যাকে ওই বাংলাদেশিদের অধিকাংশকে অবৈধপথে লিবিয়ায় পাঠানোর হোতা বলা হচ্ছে। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে মানব পাচারকারী বিভিন্ন চক্রের মদতদাতাদের সম্পর্কেও তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের খোঁজ করছে সরকারের একাধিক সংস্থা। বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় মানব পাচার ও ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় ৩৮ জনকে আসামি করে মামলাটি করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সারা দেশে যে মানব পাচারকারী ও দালাল চক্রের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে এ কথা বহুদিন ধরেই গণমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে। সংবাদেও এ নিয়ে অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু কেউ এ বিষয়ে কোনরকম কর্ণপাত করেনি। চাঞ্চল্যকর কোন পাচারের ঘটনা ঘটলে কয়েক দিন হইচই করে কিছু ‘চুনোপুঁটি’ ধরা পড়ে। কিন্তু প্রভাবশালী মানব পাচারকারী ও দালাল চক্রের সদস্যরা রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

বাস্তবিক অর্থেই বাংলাদেশে মানব পাচার রোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। মানব পাচারের মামলাগুলোর তদন্ত, অপরাধীদের আটক এবং তাদের বিচারের আওতায় আনার আইনি পদক্ষেপ খুবই দুর্বল। ফলে মানবপাচার বন্ধ হয় না। সরকার মুখে মানব পাচার রোধে অনেক পদক্ষেপের কথা বললেও বাস্তবে তার ফলাফল হতাশাব্যঞ্জক। বিদেশগামী শ্রমিকদের কাছ থেকে উচ্চ হারে টাকা আদায় করা হচ্ছে। সরকার ‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ’কে ক্রমাগতভাবে বিদেশগামী শ্রমিকদের ওপর উচ্চ হারে ফি ধার্য করার সুযোগ দিচ্ছে, যা শ্রমিকদের দারিদ্র্য ও পাচারের ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশির নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়ল। এটা ইতিবাচক যে, তদন্ত সংস্থাগুলো জড়িতদের চিহ্নিত করেছে এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা আশা করবো, এক্ষেত্রে তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন হবে এবং দোষীরা আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে।

পাচারকারী চক্রের এরাই মূল হোতা কি না সেটা এখনই নিশ্চিত করে বলার সময় আসেনি। কেননা বিষয়টি শুধু অল্প কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে। এই জালের বিস্তৃতি আরও ব্যাপক এবং গভীর হতে পারে। এর সঙ্গে বিমান পরিবহন-সংশ্লিষ্ট, মাফিয়াচক্র কিংবা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা যুক্ত থাকতে পারেন। কাজেই, বিষয়টাকে খুব সহজভাবে দেখার সুযোগ নেই। পাচারকারী চক্রের মূলোৎপাটন করতে হলে সমস্যার গভীরে প্রবেশ করতে হবে। বিদেশগামী শ্রমিকদের সমস্যাগুলো নিরসনে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে অন্যায়ভাবে ব্যবসা করে, তাদের শনাক্ত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শুধু দেশের ভেতরেই নয়, দেশের বাইরে যারা জড়িত তাদেরও শনাক্ত করা উচিত। মানব পাচারকারী চক্রের মদতদাতাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। মানব পাচার মামলার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করতে হবে।

শুক্রবার, ০৫ জুন ২০২০ , ২২ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ১২ শাওয়াল ১৪৪১

মানব পাচারকারী চক্রের মূলোৎপাটন করুন

লিবিয়ায় গুলিতে ২৬ বাংলাদেশি নিহত ও আরও ১১ জনের আহত হওয়ার ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রাথমিক তদন্তে ‘চাঞ্চল্যকর’ বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, লিবিয়ায় গত ২৮ মের ওই হামলায় হতাহতরা কয়েকটি চক্রের মাধ্যমে অবৈধপথে ইউরোপে পাড়ি দিতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। এ ঘটনায় দায়ের মামলায় হাজী কামালসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, যাকে ওই বাংলাদেশিদের অধিকাংশকে অবৈধপথে লিবিয়ায় পাঠানোর হোতা বলা হচ্ছে। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে মানব পাচারকারী বিভিন্ন চক্রের মদতদাতাদের সম্পর্কেও তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের খোঁজ করছে সরকারের একাধিক সংস্থা। বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় মানব পাচার ও ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় ৩৮ জনকে আসামি করে মামলাটি করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সারা দেশে যে মানব পাচারকারী ও দালাল চক্রের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে এ কথা বহুদিন ধরেই গণমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে। সংবাদেও এ নিয়ে অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু কেউ এ বিষয়ে কোনরকম কর্ণপাত করেনি। চাঞ্চল্যকর কোন পাচারের ঘটনা ঘটলে কয়েক দিন হইচই করে কিছু ‘চুনোপুঁটি’ ধরা পড়ে। কিন্তু প্রভাবশালী মানব পাচারকারী ও দালাল চক্রের সদস্যরা রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

বাস্তবিক অর্থেই বাংলাদেশে মানব পাচার রোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। মানব পাচারের মামলাগুলোর তদন্ত, অপরাধীদের আটক এবং তাদের বিচারের আওতায় আনার আইনি পদক্ষেপ খুবই দুর্বল। ফলে মানবপাচার বন্ধ হয় না। সরকার মুখে মানব পাচার রোধে অনেক পদক্ষেপের কথা বললেও বাস্তবে তার ফলাফল হতাশাব্যঞ্জক। বিদেশগামী শ্রমিকদের কাছ থেকে উচ্চ হারে টাকা আদায় করা হচ্ছে। সরকার ‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ’কে ক্রমাগতভাবে বিদেশগামী শ্রমিকদের ওপর উচ্চ হারে ফি ধার্য করার সুযোগ দিচ্ছে, যা শ্রমিকদের দারিদ্র্য ও পাচারের ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশির নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়ল। এটা ইতিবাচক যে, তদন্ত সংস্থাগুলো জড়িতদের চিহ্নিত করেছে এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা আশা করবো, এক্ষেত্রে তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন হবে এবং দোষীরা আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে।

পাচারকারী চক্রের এরাই মূল হোতা কি না সেটা এখনই নিশ্চিত করে বলার সময় আসেনি। কেননা বিষয়টি শুধু অল্প কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে। এই জালের বিস্তৃতি আরও ব্যাপক এবং গভীর হতে পারে। এর সঙ্গে বিমান পরিবহন-সংশ্লিষ্ট, মাফিয়াচক্র কিংবা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা যুক্ত থাকতে পারেন। কাজেই, বিষয়টাকে খুব সহজভাবে দেখার সুযোগ নেই। পাচারকারী চক্রের মূলোৎপাটন করতে হলে সমস্যার গভীরে প্রবেশ করতে হবে। বিদেশগামী শ্রমিকদের সমস্যাগুলো নিরসনে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে অন্যায়ভাবে ব্যবসা করে, তাদের শনাক্ত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শুধু দেশের ভেতরেই নয়, দেশের বাইরে যারা জড়িত তাদেরও শনাক্ত করা উচিত। মানব পাচারকারী চক্রের মদতদাতাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। মানব পাচার মামলার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করতে হবে।