দুই হাজার কোটি টাকা বাজার মূলধন হারালো ডিএসই

করোনাভাইরাসের কারণে ৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৩১ মে থেকে দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু হয়েছে। লেনদেন চালু হলেও এক সপ্তাহের মধ্যে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বাজার মূলধন হারিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জ (ডিএসই)। ডিএসই’র সাপ্তাহিক লেনদেন তথ্য পর্যালোচনা করে এই তথ্য জানা গেছে।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলার অংশ হিসেবে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে গত ২৬ মার্চ থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ করে দেয়া হয়। সরকার ছুটি বাড়ালে তার সঙ্গে তালমিলিয়ে শেয়ারবাজারও বন্ধ রাখার সময় বাড়ানো হয়। এতে ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকে শেয়ারবাজার। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত ২৮ মে শেয়ারবাজারে আবার লেনদেন চালুর অনুমতি দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি পেয়ে ৩১ মে থেকে আবার শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)।

লেনদেন শুরুর প্রথমদিনই দুই বাজারে মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়। এতে বিনিয়োগকারীরা ভালো বাজারের স্বপ্ন দেখতে থাকেন। কিন্তু পরের দিনই পতনের কবলে পড়ে শেয়ারবাজার, যা সপ্তাহের পরের তিন কার্যদিবসও অব্যাহত থাকে। এতে সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসেই দরপতন হয়। এই দরপতনের কবলে পড়ে সপ্তাহটিতে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ২ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। বাজার মূলধন কমার অর্থ হলো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ওই পরিমাণ কমেছে। অর্থাৎ শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার কারণে বিনিয়োগকারীদের সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ লোকসান হয়েছে।

এদিকে বিনিয়োগকারীরা বড় অঙ্কের অর্থ হারানোর পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৫৫ পয়েন্ট। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৯ পয়েন্ট এবং ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ৫ পয়েন্ট কমেছে। সব সূচকের পতনের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে লেনদেন খরা। সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৬৯১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এতে প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয় ১৩৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ হওয়ার আগে শেষ সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ৮৮৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এতে গড়ে প্রতি কার্যদিবস লেনদন হয় ২২১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ৩৫ শতাংশ কমেছে।

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস (দাম কমার সর্বনিম্ন সীমা) নির্ধারণ করে দেয়ার কারণে এই লেনদেন খরা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসের কাছাকাছি রয়েছে। এতে দাম কমার সুযোগ না থাকায় ওসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হচ্ছে না। ফলে সার্বিকভাবে বাজারে লেনদেন কম হচ্ছে। অবশ্য এই ফ্লোর প্রাইসের কারণে বড় ধসের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে বাজার।

এ বিষয়ে ডিএসইর একজন সদস্য বলেন, ফ্লোর প্রাইস না থাকলে সপ্তাহের প্রতিটি কার্যদিবসে শেয়ারবাজারে বড় ধস নামতো। ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করার পরও বাজারের দরপতন ঠেকানো যায়নি। গত সপ্তাহে বাজার মূলধন দুই হাজার কোটি টাকা কমেছে। ফ্লোর প্রাইস না থাকলে এর পরিমাণ ১০-২০ হাজার কোটি টাকা হতো। ফ্লোর প্রাইসের কারণে বাজার বড় পতনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু এই ফ্লোর প্রাইসের কারণে লেনদেন খরাও দেখা দিয়েছে। কারণ, কোন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম ফ্লোর প্রাইসের নিচে নামার সুযোগ নেই। এতে প্রতিদিনই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের যে দাম রয়েছে ওই দামে বিনিয়োগকারীরা কিনতে চাচ্ছেন না। আবার ফ্লোর প্রাইসের কারণে কম দামে কেনারও সুযোগ পাচ্ছেন না। লেনদেনে খরা দেখা দিলেও আপাতত ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া ঠিক হবে না। এতে বাজারে বড় ধস নামতে পারে। ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। মহামারী করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নেয়া উচিত।

শনিবার, ০৬ জুন ২০২০ , ২৩ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ১৩ শাওয়াল ১৪৪১

দুই হাজার কোটি টাকা বাজার মূলধন হারালো ডিএসই

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

করোনাভাইরাসের কারণে ৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৩১ মে থেকে দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু হয়েছে। লেনদেন চালু হলেও এক সপ্তাহের মধ্যে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বাজার মূলধন হারিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জ (ডিএসই)। ডিএসই’র সাপ্তাহিক লেনদেন তথ্য পর্যালোচনা করে এই তথ্য জানা গেছে।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলার অংশ হিসেবে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে গত ২৬ মার্চ থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ করে দেয়া হয়। সরকার ছুটি বাড়ালে তার সঙ্গে তালমিলিয়ে শেয়ারবাজারও বন্ধ রাখার সময় বাড়ানো হয়। এতে ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকে শেয়ারবাজার। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত ২৮ মে শেয়ারবাজারে আবার লেনদেন চালুর অনুমতি দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি পেয়ে ৩১ মে থেকে আবার শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)।

লেনদেন শুরুর প্রথমদিনই দুই বাজারে মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়। এতে বিনিয়োগকারীরা ভালো বাজারের স্বপ্ন দেখতে থাকেন। কিন্তু পরের দিনই পতনের কবলে পড়ে শেয়ারবাজার, যা সপ্তাহের পরের তিন কার্যদিবসও অব্যাহত থাকে। এতে সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসেই দরপতন হয়। এই দরপতনের কবলে পড়ে সপ্তাহটিতে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ২ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। বাজার মূলধন কমার অর্থ হলো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ওই পরিমাণ কমেছে। অর্থাৎ শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার কারণে বিনিয়োগকারীদের সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ লোকসান হয়েছে।

এদিকে বিনিয়োগকারীরা বড় অঙ্কের অর্থ হারানোর পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৫৫ পয়েন্ট। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৯ পয়েন্ট এবং ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ৫ পয়েন্ট কমেছে। সব সূচকের পতনের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে লেনদেন খরা। সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৬৯১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এতে প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয় ১৩৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ হওয়ার আগে শেষ সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ৮৮৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এতে গড়ে প্রতি কার্যদিবস লেনদন হয় ২২১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ৩৫ শতাংশ কমেছে।

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস (দাম কমার সর্বনিম্ন সীমা) নির্ধারণ করে দেয়ার কারণে এই লেনদেন খরা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসের কাছাকাছি রয়েছে। এতে দাম কমার সুযোগ না থাকায় ওসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হচ্ছে না। ফলে সার্বিকভাবে বাজারে লেনদেন কম হচ্ছে। অবশ্য এই ফ্লোর প্রাইসের কারণে বড় ধসের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে বাজার।

এ বিষয়ে ডিএসইর একজন সদস্য বলেন, ফ্লোর প্রাইস না থাকলে সপ্তাহের প্রতিটি কার্যদিবসে শেয়ারবাজারে বড় ধস নামতো। ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করার পরও বাজারের দরপতন ঠেকানো যায়নি। গত সপ্তাহে বাজার মূলধন দুই হাজার কোটি টাকা কমেছে। ফ্লোর প্রাইস না থাকলে এর পরিমাণ ১০-২০ হাজার কোটি টাকা হতো। ফ্লোর প্রাইসের কারণে বাজার বড় পতনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু এই ফ্লোর প্রাইসের কারণে লেনদেন খরাও দেখা দিয়েছে। কারণ, কোন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম ফ্লোর প্রাইসের নিচে নামার সুযোগ নেই। এতে প্রতিদিনই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের যে দাম রয়েছে ওই দামে বিনিয়োগকারীরা কিনতে চাচ্ছেন না। আবার ফ্লোর প্রাইসের কারণে কম দামে কেনারও সুযোগ পাচ্ছেন না। লেনদেনে খরা দেখা দিলেও আপাতত ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া ঠিক হবে না। এতে বাজারে বড় ধস নামতে পারে। ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। মহামারী করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নেয়া উচিত।