অসহায়দের পাশে মানবিক পুলিশ

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের সিনিয়র স্টাফ নার্স কাকলী বেগম ঢাকার একটি হাসপাতালে ২২ দিন আগে মেয়ে সন্তান জন্ম দেয়ার তিন দিন পরেই মারা যান। এর ক’দিন পরেই ঈদুল ফিতরের দিনে তার স্বামী মোবারক হোসেনের করোনা ধরা পড়ে। বর্তমানে তিনি আইসোলেশনে রয়েছেন। সদ্যজাত এই দুধের শিশু এখন প্রতিপালন হচ্ছে বৃদ্ধা দাদির কোলে। পুরো বাড়িতে চলছে শোকের পাশাপাশি করোনার থাবা। এবিষয়টি জানতে পেরে তাদের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ফরিদপুরের পুলিশ প্রশাসন। দুগ্ধজাত এই শিশু ও তার পরিবারের এ খবরটি জানতে পেরে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে নিযুক্ত করে রেখেছেন তাদের সার্বক্ষণিক খবর নিতে। তাদের জন্য ফলফলাদিসহ উপহার পাঠিয়ে আশ^স্ত করেছেন যেনো মনোবল না হারায় তারা। মোবারক হোসেন বলেন, এসপি স্যারের এই মহানুভবতায় নিদারুণ কষ্টের মাঝেও একটু সান্তনা পেয়েছি। আশার আলো দেখছি।

শুধু মোবারক হোসেনের পরিবারেই নয়, সাম্প্রতিক করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ফরিদপুরের পুলিশ প্রশাসনের নানা মানবিক কার্যক্রম অসংখ্য অসহায় পরিবারে স্বস্তি এনেছে। ফরিদপুরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার কমলেশ চক্রবর্তীর সৎকারে কেউ এগিয়ে না আসায় পুলিশ সদস্যরাই চিতার জ¦ালানি খড়ি সংগ্রহ করে চিতা সাজিয়ে তাকে দাহ করে। বিষয়টি জনমনে ব্যাপক নাড়া দিয়েছে।

ফরিদপুরের পুলিশ সদস্যরা তাদের বেতনের টাকার একটি অংশ দিয়ে চলছে নিয়মিত এ সহায়তা কার্যক্রম। জানা গেছে, এ পর্যন্ত ফরিদপুর পুলিশ সদস্যদের বেতন থেকে সাড়ে ১২ লাখ টাকা সংগ্রহ করে ফরিদপুরের অসংখ্য অসহায় পরিবারে মানবিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপারের আহবানে জেলা পুলিশের ১৫৫০ জন সদস্যের বেতনের টাকার একটি অংশ মানবিক সহায়তা হিসেবে প্রতি মাসে যুক্ত হচ্ছে এই তহবিলে। সকল সদস্যরা সেচ্ছায় এগিয়ে আসে এই কাজে। ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম বলেন, ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান (পিপিএম সেবা) এর চৌকস নেতৃত্ব ও আন্তরিকতার কারণেই আমরা এই দুর্যোগকালে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি। তার আহ্বানে সকল পুলিশ সদস্য বেতনের একটি অংশ ত্রাণ তহবিলে দিচ্ছেন। বড় কথা, তিনি আমাদের সঙ্গে খুবই বন্ধুবৎসল। সবকথাই আমরা তার সঙ্গে শেয়ার করতে পারি।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান বলেন, সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বের বিষয়টি পুলিশ সদস্যদের জানানোর পরে তারা স্বেচ্ছায় নিজেদের বেতনের একটি অংশ দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরাও এই সমাজেরই অংশ। সাধারণ মানুষের পাশে দাড়িয়ে তাদের সুখ-দুঃখের অংশীদার হতে। তিনি করোনাকালে সাধারণ মানুষের জন্য পুলিশ সদস্যগণ যেই ত্যাগ স্বীকার করেছেন তার জন্যই তাদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান।

শনিবার, ০৬ জুন ২০২০ , ২৩ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ১৩ শাওয়াল ১৪৪১

অসহায়দের পাশে মানবিক পুলিশ

প্রতিনিধি, ফরিদপুর

image

ফরিদপুর : পুলিশের পক্ষ থেকে তৈরি খাদ্য বিতরণ করা হচ্ছে -সংবাদ

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের সিনিয়র স্টাফ নার্স কাকলী বেগম ঢাকার একটি হাসপাতালে ২২ দিন আগে মেয়ে সন্তান জন্ম দেয়ার তিন দিন পরেই মারা যান। এর ক’দিন পরেই ঈদুল ফিতরের দিনে তার স্বামী মোবারক হোসেনের করোনা ধরা পড়ে। বর্তমানে তিনি আইসোলেশনে রয়েছেন। সদ্যজাত এই দুধের শিশু এখন প্রতিপালন হচ্ছে বৃদ্ধা দাদির কোলে। পুরো বাড়িতে চলছে শোকের পাশাপাশি করোনার থাবা। এবিষয়টি জানতে পেরে তাদের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ফরিদপুরের পুলিশ প্রশাসন। দুগ্ধজাত এই শিশু ও তার পরিবারের এ খবরটি জানতে পেরে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে নিযুক্ত করে রেখেছেন তাদের সার্বক্ষণিক খবর নিতে। তাদের জন্য ফলফলাদিসহ উপহার পাঠিয়ে আশ^স্ত করেছেন যেনো মনোবল না হারায় তারা। মোবারক হোসেন বলেন, এসপি স্যারের এই মহানুভবতায় নিদারুণ কষ্টের মাঝেও একটু সান্তনা পেয়েছি। আশার আলো দেখছি।

শুধু মোবারক হোসেনের পরিবারেই নয়, সাম্প্রতিক করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ফরিদপুরের পুলিশ প্রশাসনের নানা মানবিক কার্যক্রম অসংখ্য অসহায় পরিবারে স্বস্তি এনেছে। ফরিদপুরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার কমলেশ চক্রবর্তীর সৎকারে কেউ এগিয়ে না আসায় পুলিশ সদস্যরাই চিতার জ¦ালানি খড়ি সংগ্রহ করে চিতা সাজিয়ে তাকে দাহ করে। বিষয়টি জনমনে ব্যাপক নাড়া দিয়েছে।

ফরিদপুরের পুলিশ সদস্যরা তাদের বেতনের টাকার একটি অংশ দিয়ে চলছে নিয়মিত এ সহায়তা কার্যক্রম। জানা গেছে, এ পর্যন্ত ফরিদপুর পুলিশ সদস্যদের বেতন থেকে সাড়ে ১২ লাখ টাকা সংগ্রহ করে ফরিদপুরের অসংখ্য অসহায় পরিবারে মানবিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপারের আহবানে জেলা পুলিশের ১৫৫০ জন সদস্যের বেতনের টাকার একটি অংশ মানবিক সহায়তা হিসেবে প্রতি মাসে যুক্ত হচ্ছে এই তহবিলে। সকল সদস্যরা সেচ্ছায় এগিয়ে আসে এই কাজে। ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম বলেন, ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান (পিপিএম সেবা) এর চৌকস নেতৃত্ব ও আন্তরিকতার কারণেই আমরা এই দুর্যোগকালে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি। তার আহ্বানে সকল পুলিশ সদস্য বেতনের একটি অংশ ত্রাণ তহবিলে দিচ্ছেন। বড় কথা, তিনি আমাদের সঙ্গে খুবই বন্ধুবৎসল। সবকথাই আমরা তার সঙ্গে শেয়ার করতে পারি।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান বলেন, সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বের বিষয়টি পুলিশ সদস্যদের জানানোর পরে তারা স্বেচ্ছায় নিজেদের বেতনের একটি অংশ দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরাও এই সমাজেরই অংশ। সাধারণ মানুষের পাশে দাড়িয়ে তাদের সুখ-দুঃখের অংশীদার হতে। তিনি করোনাকালে সাধারণ মানুষের জন্য পুলিশ সদস্যগণ যেই ত্যাগ স্বীকার করেছেন তার জন্যই তাদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান।