কৃষি খাতের বিপুল ক্ষতি প্রসঙ্গে

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেড় মাসে কৃষি খাতে ৫৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার উক্ত সংস্থা এ সংক্রান্ত দুটি সমীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে। সমীক্ষার ফল থেকে জানা গেছে, বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাবে শস্য খাতে প্রায় ১৫ হাজার কোটি এবং মৎস্য খাতে ৩৯ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে গড়ে প্রতিজন কৃষক প্রায় ২ লাখ ৭ হাজার টাকা ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে গতকাল বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

কৃষি খাতে ক্ষতির তথ্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই ক্ষতি পোশাক খাতের তুলনায় অনেক বেশি। পোশাক খাতে যেখানে ৩ মাসে ৩৮ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে, কৃষি খাতে সেখানে দেড় মাসে ক্ষতি হয়েছে ৫৬ হাজার কোটি টাকা। অথচ পোশাক খাতের ক্ষতি নিয়ে যত মাতামাতি হয়, কৃষি খাতের ক্ষতি নিয়ে তত কথা হয় না। নীতি-নির্ধারকদেরও দেখা যায়, পোশাক খাতের মালিকদের জন্য প্রণোদনার ডালি সাজিয়ে বসে থাকেন। সবার আগে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পোশাক খাতকে দিতে পারলেই যেন তারা বর্তে যান। অথচ বৈশ্বিক মহামারী সামাল দেয়া হচ্ছে কৃষি খাতের ওপর ভর করে। রেমিট্যান্সও এখন পর্যন্ত দেশের অর্থনীতিতে সঞ্জীবনী ভূমিকা রেখে চলেছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের জন্য কার্যকর তেমন কিছু করা হয়নি। কৃষকরা দেশে আর প্রবাসী শ্রমিকরা ভিন দেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতি সচল রেখেছেন। পোশাক খাতে হাড়ভাঙা খাটুনি খাটছেন শ্রমিকরা। এর বিপরীতে পোশাক কারখানার একশ্রেণীর মালিক বিদেশে অর্থ পাচার করছেন, বাড়ি করছেন, ঋণ খেলাপি হচ্ছেন।

আমরা বলতে চাই, বৈশ্বিক মহামারীর ফলে কৃষিসহ দেশের বিভিন্ন খাতের প্রকৃত ক্ষতি নিরূপণ করে সে অনুযায়ী প্রণোদনা দিতে হবে। প্রণোদনার নামে বিশেষ কোন খাতকে অতিরিক্ত সুবিধা দেয়া চলবে না। মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কৃষি খাত সবচেয়ে বড় ভরসা। এ খাতে প্রণোদনা আরো বাড়াতে হবে। কৃষি খাতে বিনাসুদে বা আরো কম সুদে ঋণ দেয়া যায় কিনা সেটা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে হবে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের কাছে যেন প্রণোদনার অর্থ যথাযথভাবে পৌঁছায় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।

শনিবার, ০৬ জুন ২০২০ , ২৩ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ১৩ শাওয়াল ১৪৪১

কৃষি খাতের বিপুল ক্ষতি প্রসঙ্গে

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেড় মাসে কৃষি খাতে ৫৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার উক্ত সংস্থা এ সংক্রান্ত দুটি সমীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে। সমীক্ষার ফল থেকে জানা গেছে, বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাবে শস্য খাতে প্রায় ১৫ হাজার কোটি এবং মৎস্য খাতে ৩৯ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে গড়ে প্রতিজন কৃষক প্রায় ২ লাখ ৭ হাজার টাকা ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে গতকাল বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

কৃষি খাতে ক্ষতির তথ্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই ক্ষতি পোশাক খাতের তুলনায় অনেক বেশি। পোশাক খাতে যেখানে ৩ মাসে ৩৮ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে, কৃষি খাতে সেখানে দেড় মাসে ক্ষতি হয়েছে ৫৬ হাজার কোটি টাকা। অথচ পোশাক খাতের ক্ষতি নিয়ে যত মাতামাতি হয়, কৃষি খাতের ক্ষতি নিয়ে তত কথা হয় না। নীতি-নির্ধারকদেরও দেখা যায়, পোশাক খাতের মালিকদের জন্য প্রণোদনার ডালি সাজিয়ে বসে থাকেন। সবার আগে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পোশাক খাতকে দিতে পারলেই যেন তারা বর্তে যান। অথচ বৈশ্বিক মহামারী সামাল দেয়া হচ্ছে কৃষি খাতের ওপর ভর করে। রেমিট্যান্সও এখন পর্যন্ত দেশের অর্থনীতিতে সঞ্জীবনী ভূমিকা রেখে চলেছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের জন্য কার্যকর তেমন কিছু করা হয়নি। কৃষকরা দেশে আর প্রবাসী শ্রমিকরা ভিন দেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতি সচল রেখেছেন। পোশাক খাতে হাড়ভাঙা খাটুনি খাটছেন শ্রমিকরা। এর বিপরীতে পোশাক কারখানার একশ্রেণীর মালিক বিদেশে অর্থ পাচার করছেন, বাড়ি করছেন, ঋণ খেলাপি হচ্ছেন।

আমরা বলতে চাই, বৈশ্বিক মহামারীর ফলে কৃষিসহ দেশের বিভিন্ন খাতের প্রকৃত ক্ষতি নিরূপণ করে সে অনুযায়ী প্রণোদনা দিতে হবে। প্রণোদনার নামে বিশেষ কোন খাতকে অতিরিক্ত সুবিধা দেয়া চলবে না। মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কৃষি খাত সবচেয়ে বড় ভরসা। এ খাতে প্রণোদনা আরো বাড়াতে হবে। কৃষি খাতে বিনাসুদে বা আরো কম সুদে ঋণ দেয়া যায় কিনা সেটা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে হবে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের কাছে যেন প্রণোদনার অর্থ যথাযথভাবে পৌঁছায় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।