সীতাকুণ্ডে আইনশৃঙ্খলার অবনতি : ১০ মাসে ১০ খুন

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে হঠাৎ খুন-খারাপী বেড়ে গেছে। এলাকার বখাটে প্রকৃতির কিশোর-যুবকরা তুচ্ছ বিষয়েও খুনের মতো ঘটনা ঘটিয়ে বসতে পিছপা হচ্ছে না। এভাবে গত ১০ মাসে এখানে অন্তত ১০টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে আছে ডাবল মার্ডারও। ফলে উদ্বেগ বাড়ছে সচেতন মহলে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে সীতাকুণ্ডে আইনশৃঙ্খলার ক্রমশ অবনতি ঘটতে শুরু করেছে। চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা তো আছেই। কিন্তু এলাকাবাসীকে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন করে তুলেছে একের পর এক খুনের ঘটনা।

থানায় মামলা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় গত ১০ মাসে হত্যার ঘটনা ঘটেছে ১০টি! অর্থাৎ গড়ে প্রতি মাসে কমপক্ষে একটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এলাকাবাসী জানায়, গত বছরের ২৮ আগস্ট সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট এলাকায় স্থানীয় এমপি’র মালিকানাধীন একটি ডিপোতে তাদেরই এক লরি চালককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে মো. মাসুম নামক এক ব্যক্তি। এর একদিন পর ৩০ আগষ্ট পৌর সদরের চৌধুরী পাড়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পৌরসদরের চৌধুরী পাড়ায় রেজাউল করিম (২৫) নামক এক যুবক খুন হয়। এরপর ১৮ অক্টোবর ঘটে গত বছরের সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকাণ্ড। সেদিন ছোটকুমিরা বাইপাস এলাকায় গাড়ির চালক-হেল্পারের হাতে নির্মমভাবে খুন হন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. শাহ আলম। এ ঘটনার তিন দিন পর ২১ অক্টোবর পৌরসদরের প্রেমতলা এলাকার মিতু রানী নাথ (২১) নামক এক প্রতিবন্ধী গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরদিন ভাটিয়ারী কলেজ পাড়ায় এজাহার মিয়া (২৭) নামক এক যুবককে রাতভর পিটিয়ে হত্যা করা হয়। চলতি বছরের প্রথম খুন গত ৭ জানুয়ারি। এদিন সলিমপুর ইউনিয়নের ফৌজদারহাট এলাকায় এক নারীকে ধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এরপর গত ২২ এপ্রিল লকডাউনের মধ্যেই পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের ভূঁইয়াপাড়ায় সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ার তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হয় মো. জাহিদ (২৪) ও মো. শাহীন (২২) নামক দুই বন্ধু। এরপর ২১ মে সোনাইছড়ি ইউনিয়নের শীতলপুর পাহাড়ের তলদেশ থেকে এক অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের (২৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর সর্বশেষ খুনটি ঘটে উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মীর হোসেন সেরাং বাড়ির রহুল আমিন (৭০) নামক এক বৃদ্ধ। এভাবে এখানে গত ১০ মাসে অন্তত ১০টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ভুক্তভোগী স্বজনহারা মানুষ তাদের প্রিয়জনকে চিরতরে হারিয়ে ক্ষুব্ধ। অনেকেই সুবিচার না পেয়ে নির্বাক হয়ে আছেন। তাদের অভিযোগ, কোন খুনিরই দৃষ্টান্তমূলক সাজা হচ্ছে না বলেই এভাবে খুন করতে সাহস পাচ্ছে বখাটেরা।

সীতাকুণ্ড থানার ওসি (তদন্ত) শামীম শেখ সাংবাদিকদের বলেন, আসলে এখানে যেসব খুন হচ্ছে সেগুলো বড় ধরনের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড না। এগুলোর বেশিরভাগই জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে উত্তেজিত হয়ে খুন করেছে তারা। আমরা অধিকাংশ আসামিই গ্রেপ্তার করেছি। তবুও মাঝে মাঝে হয়ে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। আশা করছি এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে পারব।

রবিবার, ০৭ জুন ২০২০ , ২৪ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ১৪ শাওয়াল ১৪৪১

সীতাকুণ্ডে আইনশৃঙ্খলার অবনতি : ১০ মাসে ১০ খুন

প্রতিনিধি, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে হঠাৎ খুন-খারাপী বেড়ে গেছে। এলাকার বখাটে প্রকৃতির কিশোর-যুবকরা তুচ্ছ বিষয়েও খুনের মতো ঘটনা ঘটিয়ে বসতে পিছপা হচ্ছে না। এভাবে গত ১০ মাসে এখানে অন্তত ১০টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে আছে ডাবল মার্ডারও। ফলে উদ্বেগ বাড়ছে সচেতন মহলে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে সীতাকুণ্ডে আইনশৃঙ্খলার ক্রমশ অবনতি ঘটতে শুরু করেছে। চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা তো আছেই। কিন্তু এলাকাবাসীকে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন করে তুলেছে একের পর এক খুনের ঘটনা।

থানায় মামলা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় গত ১০ মাসে হত্যার ঘটনা ঘটেছে ১০টি! অর্থাৎ গড়ে প্রতি মাসে কমপক্ষে একটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এলাকাবাসী জানায়, গত বছরের ২৮ আগস্ট সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট এলাকায় স্থানীয় এমপি’র মালিকানাধীন একটি ডিপোতে তাদেরই এক লরি চালককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে মো. মাসুম নামক এক ব্যক্তি। এর একদিন পর ৩০ আগষ্ট পৌর সদরের চৌধুরী পাড়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পৌরসদরের চৌধুরী পাড়ায় রেজাউল করিম (২৫) নামক এক যুবক খুন হয়। এরপর ১৮ অক্টোবর ঘটে গত বছরের সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকাণ্ড। সেদিন ছোটকুমিরা বাইপাস এলাকায় গাড়ির চালক-হেল্পারের হাতে নির্মমভাবে খুন হন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. শাহ আলম। এ ঘটনার তিন দিন পর ২১ অক্টোবর পৌরসদরের প্রেমতলা এলাকার মিতু রানী নাথ (২১) নামক এক প্রতিবন্ধী গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরদিন ভাটিয়ারী কলেজ পাড়ায় এজাহার মিয়া (২৭) নামক এক যুবককে রাতভর পিটিয়ে হত্যা করা হয়। চলতি বছরের প্রথম খুন গত ৭ জানুয়ারি। এদিন সলিমপুর ইউনিয়নের ফৌজদারহাট এলাকায় এক নারীকে ধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এরপর গত ২২ এপ্রিল লকডাউনের মধ্যেই পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের ভূঁইয়াপাড়ায় সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ার তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হয় মো. জাহিদ (২৪) ও মো. শাহীন (২২) নামক দুই বন্ধু। এরপর ২১ মে সোনাইছড়ি ইউনিয়নের শীতলপুর পাহাড়ের তলদেশ থেকে এক অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের (২৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর সর্বশেষ খুনটি ঘটে উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মীর হোসেন সেরাং বাড়ির রহুল আমিন (৭০) নামক এক বৃদ্ধ। এভাবে এখানে গত ১০ মাসে অন্তত ১০টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ভুক্তভোগী স্বজনহারা মানুষ তাদের প্রিয়জনকে চিরতরে হারিয়ে ক্ষুব্ধ। অনেকেই সুবিচার না পেয়ে নির্বাক হয়ে আছেন। তাদের অভিযোগ, কোন খুনিরই দৃষ্টান্তমূলক সাজা হচ্ছে না বলেই এভাবে খুন করতে সাহস পাচ্ছে বখাটেরা।

সীতাকুণ্ড থানার ওসি (তদন্ত) শামীম শেখ সাংবাদিকদের বলেন, আসলে এখানে যেসব খুন হচ্ছে সেগুলো বড় ধরনের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড না। এগুলোর বেশিরভাগই জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে উত্তেজিত হয়ে খুন করেছে তারা। আমরা অধিকাংশ আসামিই গ্রেপ্তার করেছি। তবুও মাঝে মাঝে হয়ে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। আশা করছি এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে পারব।