মোবাইলে কথা বলা এবং ইন্টারনেটের খরচ কমাতে হবে

২০২০-২১ অর্থবছরে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ বাড়তে যাচ্ছে। বাজেটে মোবাইল সেবার ওপর কর আরেক দফা বাড়িয়েছে সরকার। বাজেটে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা গত বছরও একই হারে বাড়ানো হয়েছিল। ফলে মোবাইল ফোনে কথা বলা, এসএমএস পাঠানো এবং ডাটা ব্যবহারের খরচও বেড়ে যাবে।

বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের যে বাজেট ঘোষণা করেন, এতে এ নতুন করে এ কর বাড়ানো হয়। বাজেটের কর প্রস্তাব ঘোষণার পরপরই কার্যকর হয়। ফলে বাড়তি কর টেলিযোগাযোগ কোম্পানি নিজেরা বহন না করলে গ্রাহকের ওপর চাপবে। নতুন করহারে মোবাইল সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ, সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ ও সারচার্জ ১ শতাংশ। ফলে মোট করভার দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়লে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কেউ যদি ১০০ টাকার সেবা নিতে চান, তাহলে ৭৫ দশমিক শূন্য ৩ টাকার সেবা নিতে পারবেন। ২৪ দশমিক ৯৭ টাকা যাবে সরকারের পকেটে।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এমনিতেই মানুষদের মধ্যে যখন নাভিশ্বাস উঠেছে, মোবাইল মাধ্যম হয়ে উঠেছে সব যোগাযোগের মূল চালিকা ও দেশ ডিজিটাল ইকনোমির দিকে এগিয়ে চলছে; ঠিক সে সময় এ ধরনের করের বোঝা কোনভাবেই দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক হবে না। এ বোঝা দরিদ্র মানুষের জন্য অসহনীয় হয়ে পড়বে। এর ফলে বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের অংশগ্রহণ সীমিত হয়ে পড়বে।

এটা ঠিক যে, সরকারের এখন অতিরিক্ত অর্থের দরকার। করোনার কারণে দেশের অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়েছে, বাজেটে অর্থায়ন কঠিন হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি পরিবর্তনের স্বার্থে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। কিন্তু এর জন্য মোবাইল ফোনে কথা বলা কিংবা ইন্টারনেটের খরচ বাড়ানো কোনভাবেই সমীচীন নয়। এটা মনে রাখতে হবে যে, মোবাইল এখন শুধু ধনী লোকদের বিলাস দ্রব্য নয়, মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত এমনকি খেটে খাওয়া মানুষদের জন্যও অত্যাবশ্যকীয় অনুষঙ্গ। করোনার দুঃসময়ে এর আরও বেশি প্রয়োজন সবার। কাজেই এ সময়ে মোবাইলে করের বোঝা চাপানো কোনভাবেই যুক্তিযুক্ত হবে না। বরং এ সিদ্ধান্তটি হঠকারী এবং গণবিরোধী হিসেবেই বিবেচিত হবে।

করোনা মহামারীর বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের একটি বড় অংশ এখন ইন্টারনেটভিত্তিক ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন, ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এ ধারাতেও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকারের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সেখানে গু-ত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলা টেলিযোগাযোগ খাতের সমস্যাগুলো প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত থেকে গেছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এতে মোবাইল শিল্প খাত আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বল হবে।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ওপর করোনা মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাবের কথা বিবেচনা করে আমরা মোবাইলে কথা বলা এবং ইন্টারনেটের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ, যারা এমনিতেই করোনার দুর্যোগে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সরকার মানুষের জীবন ও জীবিকার কথা প্রায়ই বলে। এটাও তাদের ভাবতে হবে যে, মোবাইল ছাড়া এখন জীবন ও জীবিকার প্রাসঙ্গিকতা কল্পনাও করা যায় না।

শনিবার, ১৩ জুন ২০২০ , ৩০ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ২০ শাওয়াল ১৪৪১

মোবাইলে কথা বলা এবং ইন্টারনেটের খরচ কমাতে হবে

২০২০-২১ অর্থবছরে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ বাড়তে যাচ্ছে। বাজেটে মোবাইল সেবার ওপর কর আরেক দফা বাড়িয়েছে সরকার। বাজেটে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা গত বছরও একই হারে বাড়ানো হয়েছিল। ফলে মোবাইল ফোনে কথা বলা, এসএমএস পাঠানো এবং ডাটা ব্যবহারের খরচও বেড়ে যাবে।

বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের যে বাজেট ঘোষণা করেন, এতে এ নতুন করে এ কর বাড়ানো হয়। বাজেটের কর প্রস্তাব ঘোষণার পরপরই কার্যকর হয়। ফলে বাড়তি কর টেলিযোগাযোগ কোম্পানি নিজেরা বহন না করলে গ্রাহকের ওপর চাপবে। নতুন করহারে মোবাইল সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ, সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ ও সারচার্জ ১ শতাংশ। ফলে মোট করভার দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়লে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কেউ যদি ১০০ টাকার সেবা নিতে চান, তাহলে ৭৫ দশমিক শূন্য ৩ টাকার সেবা নিতে পারবেন। ২৪ দশমিক ৯৭ টাকা যাবে সরকারের পকেটে।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এমনিতেই মানুষদের মধ্যে যখন নাভিশ্বাস উঠেছে, মোবাইল মাধ্যম হয়ে উঠেছে সব যোগাযোগের মূল চালিকা ও দেশ ডিজিটাল ইকনোমির দিকে এগিয়ে চলছে; ঠিক সে সময় এ ধরনের করের বোঝা কোনভাবেই দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক হবে না। এ বোঝা দরিদ্র মানুষের জন্য অসহনীয় হয়ে পড়বে। এর ফলে বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের অংশগ্রহণ সীমিত হয়ে পড়বে।

এটা ঠিক যে, সরকারের এখন অতিরিক্ত অর্থের দরকার। করোনার কারণে দেশের অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়েছে, বাজেটে অর্থায়ন কঠিন হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি পরিবর্তনের স্বার্থে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। কিন্তু এর জন্য মোবাইল ফোনে কথা বলা কিংবা ইন্টারনেটের খরচ বাড়ানো কোনভাবেই সমীচীন নয়। এটা মনে রাখতে হবে যে, মোবাইল এখন শুধু ধনী লোকদের বিলাস দ্রব্য নয়, মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত এমনকি খেটে খাওয়া মানুষদের জন্যও অত্যাবশ্যকীয় অনুষঙ্গ। করোনার দুঃসময়ে এর আরও বেশি প্রয়োজন সবার। কাজেই এ সময়ে মোবাইলে করের বোঝা চাপানো কোনভাবেই যুক্তিযুক্ত হবে না। বরং এ সিদ্ধান্তটি হঠকারী এবং গণবিরোধী হিসেবেই বিবেচিত হবে।

করোনা মহামারীর বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের একটি বড় অংশ এখন ইন্টারনেটভিত্তিক ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন, ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এ ধারাতেও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকারের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সেখানে গু-ত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলা টেলিযোগাযোগ খাতের সমস্যাগুলো প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত থেকে গেছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এতে মোবাইল শিল্প খাত আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বল হবে।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ওপর করোনা মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাবের কথা বিবেচনা করে আমরা মোবাইলে কথা বলা এবং ইন্টারনেটের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ, যারা এমনিতেই করোনার দুর্যোগে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সরকার মানুষের জীবন ও জীবিকার কথা প্রায়ই বলে। এটাও তাদের ভাবতে হবে যে, মোবাইল ছাড়া এখন জীবন ও জীবিকার প্রাসঙ্গিকতা কল্পনাও করা যায় না।