বজ্রপাত : এক প্রাকৃতিক ঘাতক

নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মানুষের যুদ্ধ আদিম যুগ থেকেই চলে আসছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আধুনিক স্পর্শহীন সময়ে ছোট বা বড়ো যে কোনো দুর্যোগে মানুষের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হলেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নয়নের বদৌলতে স্বাভাবিকভাবেই পরিবর্তন এসেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার কৌশলে। বন্যা, ঝড়, জ্বলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সংবাদ প্রাপ্তির ফলে মানুষ নিরাপদ অবস্থানে সরে যেতে পারে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের জানমালের জন্য ভয়াবহ হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে তার নাম ‘বজ্রপাত’। বর্তমানে প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে বজ্রপাতেই বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে।

সতর্কতা এবং সচেতনতা বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম। পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর আকাশে মেঘের গর্জন শুনলেই নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়া এবং কোনো অবস্থাতেই তখন খোলা জায়গা যেমন মাঠ, রাস্তাঘাট, নদী, সাগর ইত্যাদিতে অবস্থান না করার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। সামান্য বৃষ্টি ও হালকা বিদ্যুৎ চমকের সময় যদি মানুষ সচেতন হয় তবে মৃত্যু ঝুঁকি কমানো সম্ভব। তাছাড়া, পানি বিদ্যুত পরিবাহী বলে বজ্রপাতের সময় পানির সংস্পর্শে থাকাটা অনেকটা আত্মহত্যার শামিল। এসব প্রয়োজনীয় সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও বজ্রপাত সংক্রান্ত সচেতনতা ও সতর্কতা বিস্তৃত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেব বিবেচনার পরপরই সারা দেশে ব্যাপক হারে তালগাছ লাগানোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। তবে আমাদের দেশে বেশিরভাগ গাছ লাগানো হয় সড়কের পাশে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে বজ্রপাতে মানুষের আঘাতের সম্ভাবনা খুব একটা কমে না। তাই তারা খোলা মাঠে বা কৃষি জমির আলে গাছ লাগানোর কথা বলেন। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে টেকসই পরিকল্পনার ভিত্তিতে লম্বা গাছ লাগানো দরকার। বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় বজ্রপাত পূর্বাভাস যন্ত্র স্থাপনে সরকারি উদ্যোগ সময়ের দাবি। পাশাপাশি বজ্রপাতপ্রবণ অঞ্চলের মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের টাওয়ারগুলোতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে বজ্রপাতে প্রাণহানির ঝুঁকি হ্রাসে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে, দেশের কৃষক, জেলে ও অন্যান্য যারা খোলা ময়দানে কাজ করে তাদের মূল্যবান প্রাণ রক্ষার্থে সর্বস্তরের মানুষদের বজ্রপাত ও এর থেকে সুরক্ষিত থাকার সম্ভাব্য সকল উপায় সম্পর্কে সচেতন করার বিকল্প নেই। তবেই কমবে প্রাকৃতিক ঘাতক ‘বজ্রপাত’-এর শিকার।

আবু ফারুক

সদর, বান্দরবান।

শনিবার, ১৩ জুন ২০২০ , ৩০ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ২০ শাওয়াল ১৪৪১

বজ্রপাত : এক প্রাকৃতিক ঘাতক

নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মানুষের যুদ্ধ আদিম যুগ থেকেই চলে আসছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আধুনিক স্পর্শহীন সময়ে ছোট বা বড়ো যে কোনো দুর্যোগে মানুষের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হলেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নয়নের বদৌলতে স্বাভাবিকভাবেই পরিবর্তন এসেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার কৌশলে। বন্যা, ঝড়, জ্বলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সংবাদ প্রাপ্তির ফলে মানুষ নিরাপদ অবস্থানে সরে যেতে পারে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের জানমালের জন্য ভয়াবহ হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে তার নাম ‘বজ্রপাত’। বর্তমানে প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে বজ্রপাতেই বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে।

সতর্কতা এবং সচেতনতা বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম। পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর আকাশে মেঘের গর্জন শুনলেই নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়া এবং কোনো অবস্থাতেই তখন খোলা জায়গা যেমন মাঠ, রাস্তাঘাট, নদী, সাগর ইত্যাদিতে অবস্থান না করার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। সামান্য বৃষ্টি ও হালকা বিদ্যুৎ চমকের সময় যদি মানুষ সচেতন হয় তবে মৃত্যু ঝুঁকি কমানো সম্ভব। তাছাড়া, পানি বিদ্যুত পরিবাহী বলে বজ্রপাতের সময় পানির সংস্পর্শে থাকাটা অনেকটা আত্মহত্যার শামিল। এসব প্রয়োজনীয় সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও বজ্রপাত সংক্রান্ত সচেতনতা ও সতর্কতা বিস্তৃত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেব বিবেচনার পরপরই সারা দেশে ব্যাপক হারে তালগাছ লাগানোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। তবে আমাদের দেশে বেশিরভাগ গাছ লাগানো হয় সড়কের পাশে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে বজ্রপাতে মানুষের আঘাতের সম্ভাবনা খুব একটা কমে না। তাই তারা খোলা মাঠে বা কৃষি জমির আলে গাছ লাগানোর কথা বলেন। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে টেকসই পরিকল্পনার ভিত্তিতে লম্বা গাছ লাগানো দরকার। বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় বজ্রপাত পূর্বাভাস যন্ত্র স্থাপনে সরকারি উদ্যোগ সময়ের দাবি। পাশাপাশি বজ্রপাতপ্রবণ অঞ্চলের মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের টাওয়ারগুলোতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে বজ্রপাতে প্রাণহানির ঝুঁকি হ্রাসে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে, দেশের কৃষক, জেলে ও অন্যান্য যারা খোলা ময়দানে কাজ করে তাদের মূল্যবান প্রাণ রক্ষার্থে সর্বস্তরের মানুষদের বজ্রপাত ও এর থেকে সুরক্ষিত থাকার সম্ভাব্য সকল উপায় সম্পর্কে সচেতন করার বিকল্প নেই। তবেই কমবে প্রাকৃতিক ঘাতক ‘বজ্রপাত’-এর শিকার।

আবু ফারুক

সদর, বান্দরবান।