গোয়ালন্দে ভাঙন আতঙ্কে পদ্মা পাড়ের হাজারো পরিবার

চরম নদী ভাঙনের আশঙ্কায় পড়েছে গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা পাড়ের হাজার হাজার পরিবার ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট। ফেরি ঘাট রক্ষায় কাজ শুরু হলেও অরক্ষিত রয়েছে এর বাইরের এলাকা। এসকল এলাকায় ভাঙন শুরু হলে শত চেষ্টা করেও ফেরি ঘাট রক্ষা করা যাবে না বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয়দের। জানা যায়, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মা নদীর ব্যাপক তান্ডব চলছে গত কয়েক বছর ধরে। ইতিমধ্যে গ্রামের পর গ্রাম, ফসলী জমি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে কয়েক হাজার পরিবার। শুধু গতবছরের ভাঙনেই গৃহহীন হয়েছেন ১২শতাধিক পরিবার। ভাঙন ঠেকাতে অনেক আকুতি, মানববন্ধন, স্মারকলিপি পেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হলেও কার্যত তাতে কোন কাজ হয়নি। এবারো ঝুঁকিতে রয়েছে অন্তত এক হাজার পরিবার এবং দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরি ঘাট। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট থেকে উজানে দেবগ্রাম ইউনিয়নের অন্তার মোড় পর্যন্ত ৪ কি.মি. এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ্য করে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর একাধিক পত্র দেয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদী ভাঙন হতে শুধুমাত্র দৌলতদিয়া ফেরিঘাটগুলোকে রক্ষা করতে ঘাট এলাকায় বিআইডব্লিউটিএ’র তত্ত্বাবধানে জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর বাইরে ঘাটের উজানে নদীতে বিলীন হওয়ার পর অবশিষ্ট থাকা দেবগ্রাম ইউনিয়নের কাওয়ালজানি ও মধ্য কাওয়ালজানি পাড়া, দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ১নং ব্যাপারী পাড়া, সাহাজদ্দিন ব্যাপারী পাড়া, লালু ম-ল পাড়া, নতুন পাড়া, ফেরি ঘাটের ভাটিতে বাহির চরের সাত্তার ফকির পাড়া এবং ঘাট এলাকার সিদ্দিক কাজীর পাড়া ও সাহাদত মেম্বর পাড়ার অন্তত এক হাজার পরিবার এখনো প্রচন্ড ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা এবারের ভাঙনে এই গ্রামগুলো বিলীন হয়ে যাবে। সেই ক্ষেত্রে শত চেষ্টা করেও লঞ্চ ও ফেরিঘাটকে রক্ষা করা যাবে না। দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ১নং ব্যাপারী পাড়ার বাসিন্দা হতদরিদ্র বাদল ম-ল (৮০) বলেন, গতবারের ভাঙনে আমাদের এই গ্রামের বেশীর ভাগ অংশ বিলীন হয়ে গেছে। গত কয়েকদিনে নদীর পারে থাকা ১৪-১৫টি পরিবার তাদের বাড়ি ঘর ভেঙে অন্যত্র চলে গেছে। আরো অনেকেই যাওয়ার জন্য বাড়ী ঘর ভাঙতে শুরু করেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. পান্নু মোল্লা বলেন, আরো অনেকের মতো আমিও আমার ঘরবাড়ী ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিতে ভাঙতে শুরু করেছি। এমনও অনেক পরিবার আছে যাদের সরে যাওয়ার মতো কোন জায়গা বা আর্থিক সঙ্গতি নেই। আমি সাধ্যমতো তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। নদী ভাঙন ঠেকানোর কথা বহু আগে থেকে শুনে আসলেও এখনো পর্যন্ত কিছুই হলো না। এবারের তান্ডবে হয়তো কিছুই থাকবে না। দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম জানান, নদী ভাঙনে তার ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা ইতোমধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এবারো ৪, ৫ ও ২নং ওয়ার্ডের আংশিক এলাকা হুমকির মুখে রয়েছে। আমরা বহুবার নদী ভাঙন রোধে স্থানীয় এমপি, প্রশাসন ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আবেদন নিবেদন করেছি। কিন্তু কোন ফল পাইনি। এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবায়েত হায়াত শিপলু সাংবাদিকদের জানান, গত বছরের ভয়াবহ নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ১২শ এর অধিক পরিবার সর্বশান্ত হন। এবারো চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাটসহ অন্তত ১ হাজার পরিবার। ঘাট এলাকায় বিআইডব্লিউটিএ’র তত্ত্বাবধানে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। এর বাইরে ঘাট থেকে উজানে সাড়ে ৪ কি.মি. এলাকাকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ্য করে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।

রবিবার, ১৪ জুন ২০২০ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২১ শাওয়াল ১৪৪

গোয়ালন্দে ভাঙন আতঙ্কে পদ্মা পাড়ের হাজারো পরিবার

শেখ রাজীব, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)

image

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) : বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই এভাবে ভাঙছে নদীর পাড় -সংবাদ

চরম নদী ভাঙনের আশঙ্কায় পড়েছে গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা পাড়ের হাজার হাজার পরিবার ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট। ফেরি ঘাট রক্ষায় কাজ শুরু হলেও অরক্ষিত রয়েছে এর বাইরের এলাকা। এসকল এলাকায় ভাঙন শুরু হলে শত চেষ্টা করেও ফেরি ঘাট রক্ষা করা যাবে না বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয়দের। জানা যায়, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মা নদীর ব্যাপক তান্ডব চলছে গত কয়েক বছর ধরে। ইতিমধ্যে গ্রামের পর গ্রাম, ফসলী জমি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে কয়েক হাজার পরিবার। শুধু গতবছরের ভাঙনেই গৃহহীন হয়েছেন ১২শতাধিক পরিবার। ভাঙন ঠেকাতে অনেক আকুতি, মানববন্ধন, স্মারকলিপি পেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হলেও কার্যত তাতে কোন কাজ হয়নি। এবারো ঝুঁকিতে রয়েছে অন্তত এক হাজার পরিবার এবং দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরি ঘাট। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট থেকে উজানে দেবগ্রাম ইউনিয়নের অন্তার মোড় পর্যন্ত ৪ কি.মি. এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ্য করে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর একাধিক পত্র দেয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদী ভাঙন হতে শুধুমাত্র দৌলতদিয়া ফেরিঘাটগুলোকে রক্ষা করতে ঘাট এলাকায় বিআইডব্লিউটিএ’র তত্ত্বাবধানে জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর বাইরে ঘাটের উজানে নদীতে বিলীন হওয়ার পর অবশিষ্ট থাকা দেবগ্রাম ইউনিয়নের কাওয়ালজানি ও মধ্য কাওয়ালজানি পাড়া, দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ১নং ব্যাপারী পাড়া, সাহাজদ্দিন ব্যাপারী পাড়া, লালু ম-ল পাড়া, নতুন পাড়া, ফেরি ঘাটের ভাটিতে বাহির চরের সাত্তার ফকির পাড়া এবং ঘাট এলাকার সিদ্দিক কাজীর পাড়া ও সাহাদত মেম্বর পাড়ার অন্তত এক হাজার পরিবার এখনো প্রচন্ড ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা এবারের ভাঙনে এই গ্রামগুলো বিলীন হয়ে যাবে। সেই ক্ষেত্রে শত চেষ্টা করেও লঞ্চ ও ফেরিঘাটকে রক্ষা করা যাবে না। দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ১নং ব্যাপারী পাড়ার বাসিন্দা হতদরিদ্র বাদল ম-ল (৮০) বলেন, গতবারের ভাঙনে আমাদের এই গ্রামের বেশীর ভাগ অংশ বিলীন হয়ে গেছে। গত কয়েকদিনে নদীর পারে থাকা ১৪-১৫টি পরিবার তাদের বাড়ি ঘর ভেঙে অন্যত্র চলে গেছে। আরো অনেকেই যাওয়ার জন্য বাড়ী ঘর ভাঙতে শুরু করেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. পান্নু মোল্লা বলেন, আরো অনেকের মতো আমিও আমার ঘরবাড়ী ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিতে ভাঙতে শুরু করেছি। এমনও অনেক পরিবার আছে যাদের সরে যাওয়ার মতো কোন জায়গা বা আর্থিক সঙ্গতি নেই। আমি সাধ্যমতো তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। নদী ভাঙন ঠেকানোর কথা বহু আগে থেকে শুনে আসলেও এখনো পর্যন্ত কিছুই হলো না। এবারের তান্ডবে হয়তো কিছুই থাকবে না। দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম জানান, নদী ভাঙনে তার ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা ইতোমধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এবারো ৪, ৫ ও ২নং ওয়ার্ডের আংশিক এলাকা হুমকির মুখে রয়েছে। আমরা বহুবার নদী ভাঙন রোধে স্থানীয় এমপি, প্রশাসন ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আবেদন নিবেদন করেছি। কিন্তু কোন ফল পাইনি। এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবায়েত হায়াত শিপলু সাংবাদিকদের জানান, গত বছরের ভয়াবহ নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ১২শ এর অধিক পরিবার সর্বশান্ত হন। এবারো চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাটসহ অন্তত ১ হাজার পরিবার। ঘাট এলাকায় বিআইডব্লিউটিএ’র তত্ত্বাবধানে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। এর বাইরে ঘাট থেকে উজানে সাড়ে ৪ কি.মি. এলাকাকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ্য করে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।