এক ভ্যাকসিনেই ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধের উদ্যোগ

করোনাভাইরাস মহামারীর দাপটে বিধ্বস্ত বিশ্বে এখনও সম্পূর্ণভাবে কার্যকর কোন ভ্যাকসিনের সন্ধান মেলেনি। এর মধ্যেই মার্কিন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের বিজ্ঞানী ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ জেসিকা ম্যানিং এমন এক ভ্যাকসিন তৈরির কথা শোনালেন; যা ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া-চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহিত যে কোন সংক্রামক রোগ বা মহামারীর প্রকোপ রুখে দিতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, মশাবাহিত জীবাণু নয়, সরাসরি মশার লালা থেকেই ভ্যাকসিন তৈরির ওই উদ্যোগ মানুষের শরীরে পরীক্ষার (হিউম্যান ট্রায়াল) প্রথম পর্যায়ে রয়েছে। রয়টার্স।

বিশ্বব্যাপী সংক্রামক রোগের একটা বড় ক্ষেত্র হলো মশাবাহিত রোগজীবাণু। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, শুধু ম্যালেরিয়াতেই প্রতি বছর ৪ লাখ লোক মারা যায়। এই মৃত্যুর বেশিরভাগ দরিদ্র দেশগুলোতে ঘটে থাকে। এছাড়া মশাবাহিত ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা, ইয়োলো ফিভার, মায়ারো ভাইরাসের কারণেও প্রতিবছর অনেক মানুষ প্রাণ হারায়। মশাবাহিত এসব রোগের জন্য আজ পর্যন্ত কার্যকর কোন ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়নি। তবে সহকর্মী ও অন্যান্য বিজ্ঞানীদের কাজের ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় অ্যালার্জি এবং সংক্রামক রোগের ক্লিনিক্যাল গবেষক ম্যানিং এ ব্যাপারে নতুন করে ভাবতে শুরু করেন। মূলত ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের চিন্তা থেকেই মশার লালা থেকে মশাবাহিত সকল রোগের জন্য সর্বজনীন একটা ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু করতে সক্ষম হন তিনি। এজন্য মশার লালা থেকে পাওয়া প্রোটিন ব্যবহার করেছেন ম্যানিং ও তার দল।

গত বৃহস্পতিবারের এক প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে, অন্যসব ভ্যাকসিনের বেলায় যেমন করে জীবাণুকেই উপজীব্য করা হয়, এখানে তা হয়নি। এই পরীক্ষায় ভেক্টর (ঠবপঃড়ৎ) বা জীবসত্তাকেই হাতিয়ার করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা যখন জানেন যে মশার লালা থেকেও মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে তখন তারা সেই লালাকেই ভ্যাকসিন তৈরির কাজে ব্যবহারের উদ্যোগ নেন। পাঁচ বছর আগে নিজের অফিস কক্ষের বাইরে দৈত্যকায় মশার মডেল থেকেই মাথায় এসেছিল আইডিয়াটা। এরপর বছরের পর বছর কেটেছে মাথায় আসা চিন্তাকে বাস্তব রূপ দিতে। জেসিকা আশাবাদী, তাদের এই ভ্যাকসিন শরীরে গিয়ে এমন অ্যান্টিবডি তৈরি করবে যা মশাবাহিত যে কোন সংক্রমণ আটকাতে পারবে। এই গবেষণা সফল হলে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা, হলুদ জ্বর, পশ্চিম নাইল বা মেয়ারোর মতো ভাইরাসকে প্রতিরোধ করা যাবে। বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা জার্নাল দ্য ল্যানচেটে জেসিকা ও তার সহকর্মীদের গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, একটি অ্যানোফিলিস মশার লালা থেকে তৈরি করা ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে। ৪৯ জন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ ব্যক্তির শরীরে এই ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। দেখা গেছে, এটি নিরাপদ এবং অ্যান্টিবডি এবং মানুষের কোষের প্রতিক্রিয়াকে বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম। প্রথমে দুটি ডোজে এই ভ্যাকসিন দেয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে ব্যক্তিকে মশার কামড় খাইয়ে দেখা হবে শরীরে কতটা অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। মশার কামড়ের পর যদি দেখা যায় ব্যক্তির শরীরে কোন সংক্রমণ ঘটেনি, তাহলে আরও কয়েকবার মশার কামড় দেয়া হবে। তারপরও সুস্থ থাকলে বুঝতে হবে রোগ প্রতিরোধকারী শক্তিশালী অ্যান্টিবডি তৈরিতে সক্ষম এই ভ্যাকসিন।

মার্কিন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের বিজ্ঞানী জেসিকা ম্যানিং ও তার টিমের দাবি আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটাই হবে সবথেকে বড় আবিষ্কার। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভ্যাকসিন নিয়ে আরও অনেক গবেষণা বাকি। হিউম্যান ট্রায়ালের প্রথম ধাপে রয়েছে এটি। গবেষক মাইকেল ম্যাকক্র্যাকেন এ গবেষণায় জড়িত নন। তবে এই প্রাথমিক ফলাফলকে ‘মৌলিক’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।

মেরিল্যান্ডের ওয়াল্টার রিড আর্মি ইনস্টিটিউট অফ রিসার্চ-এ মশাবাহিত ভাইরাসের প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কে অধ্যয়নরত ম্যাকক্র্যাকেন বলেন, ‘এটি বড় ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মশা নিঃসন্দেহেই পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক প্রাণী।’

রবিবার, ১৪ জুন ২০২০ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২১ শাওয়াল ১৪৪

এক ভ্যাকসিনেই ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধের উদ্যোগ

সংবাদ ডেস্ক |

করোনাভাইরাস মহামারীর দাপটে বিধ্বস্ত বিশ্বে এখনও সম্পূর্ণভাবে কার্যকর কোন ভ্যাকসিনের সন্ধান মেলেনি। এর মধ্যেই মার্কিন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের বিজ্ঞানী ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ জেসিকা ম্যানিং এমন এক ভ্যাকসিন তৈরির কথা শোনালেন; যা ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া-চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহিত যে কোন সংক্রামক রোগ বা মহামারীর প্রকোপ রুখে দিতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, মশাবাহিত জীবাণু নয়, সরাসরি মশার লালা থেকেই ভ্যাকসিন তৈরির ওই উদ্যোগ মানুষের শরীরে পরীক্ষার (হিউম্যান ট্রায়াল) প্রথম পর্যায়ে রয়েছে। রয়টার্স।

বিশ্বব্যাপী সংক্রামক রোগের একটা বড় ক্ষেত্র হলো মশাবাহিত রোগজীবাণু। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, শুধু ম্যালেরিয়াতেই প্রতি বছর ৪ লাখ লোক মারা যায়। এই মৃত্যুর বেশিরভাগ দরিদ্র দেশগুলোতে ঘটে থাকে। এছাড়া মশাবাহিত ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা, ইয়োলো ফিভার, মায়ারো ভাইরাসের কারণেও প্রতিবছর অনেক মানুষ প্রাণ হারায়। মশাবাহিত এসব রোগের জন্য আজ পর্যন্ত কার্যকর কোন ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়নি। তবে সহকর্মী ও অন্যান্য বিজ্ঞানীদের কাজের ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় অ্যালার্জি এবং সংক্রামক রোগের ক্লিনিক্যাল গবেষক ম্যানিং এ ব্যাপারে নতুন করে ভাবতে শুরু করেন। মূলত ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের চিন্তা থেকেই মশার লালা থেকে মশাবাহিত সকল রোগের জন্য সর্বজনীন একটা ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু করতে সক্ষম হন তিনি। এজন্য মশার লালা থেকে পাওয়া প্রোটিন ব্যবহার করেছেন ম্যানিং ও তার দল।

গত বৃহস্পতিবারের এক প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে, অন্যসব ভ্যাকসিনের বেলায় যেমন করে জীবাণুকেই উপজীব্য করা হয়, এখানে তা হয়নি। এই পরীক্ষায় ভেক্টর (ঠবপঃড়ৎ) বা জীবসত্তাকেই হাতিয়ার করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা যখন জানেন যে মশার লালা থেকেও মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে তখন তারা সেই লালাকেই ভ্যাকসিন তৈরির কাজে ব্যবহারের উদ্যোগ নেন। পাঁচ বছর আগে নিজের অফিস কক্ষের বাইরে দৈত্যকায় মশার মডেল থেকেই মাথায় এসেছিল আইডিয়াটা। এরপর বছরের পর বছর কেটেছে মাথায় আসা চিন্তাকে বাস্তব রূপ দিতে। জেসিকা আশাবাদী, তাদের এই ভ্যাকসিন শরীরে গিয়ে এমন অ্যান্টিবডি তৈরি করবে যা মশাবাহিত যে কোন সংক্রমণ আটকাতে পারবে। এই গবেষণা সফল হলে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা, হলুদ জ্বর, পশ্চিম নাইল বা মেয়ারোর মতো ভাইরাসকে প্রতিরোধ করা যাবে। বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা জার্নাল দ্য ল্যানচেটে জেসিকা ও তার সহকর্মীদের গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, একটি অ্যানোফিলিস মশার লালা থেকে তৈরি করা ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে। ৪৯ জন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ ব্যক্তির শরীরে এই ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। দেখা গেছে, এটি নিরাপদ এবং অ্যান্টিবডি এবং মানুষের কোষের প্রতিক্রিয়াকে বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম। প্রথমে দুটি ডোজে এই ভ্যাকসিন দেয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে ব্যক্তিকে মশার কামড় খাইয়ে দেখা হবে শরীরে কতটা অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। মশার কামড়ের পর যদি দেখা যায় ব্যক্তির শরীরে কোন সংক্রমণ ঘটেনি, তাহলে আরও কয়েকবার মশার কামড় দেয়া হবে। তারপরও সুস্থ থাকলে বুঝতে হবে রোগ প্রতিরোধকারী শক্তিশালী অ্যান্টিবডি তৈরিতে সক্ষম এই ভ্যাকসিন।

মার্কিন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের বিজ্ঞানী জেসিকা ম্যানিং ও তার টিমের দাবি আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটাই হবে সবথেকে বড় আবিষ্কার। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভ্যাকসিন নিয়ে আরও অনেক গবেষণা বাকি। হিউম্যান ট্রায়ালের প্রথম ধাপে রয়েছে এটি। গবেষক মাইকেল ম্যাকক্র্যাকেন এ গবেষণায় জড়িত নন। তবে এই প্রাথমিক ফলাফলকে ‘মৌলিক’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।

মেরিল্যান্ডের ওয়াল্টার রিড আর্মি ইনস্টিটিউট অফ রিসার্চ-এ মশাবাহিত ভাইরাসের প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কে অধ্যয়নরত ম্যাকক্র্যাকেন বলেন, ‘এটি বড় ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মশা নিঃসন্দেহেই পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক প্রাণী।’