নিয়মবহির্ভূত সিনেট অধিবেশন ডাকার অভিযোগ

নিয়মের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি : উপাচার্য

উপাচার্যের একক সিদ্ধান্তে সিনেট অধিবেশন আহ্বান করাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসনে অস্থিরতা চলছে। আজ অনুষ্ঠিতব্য সিনেট অধিবেশনে দুই উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারসহ অনেক সদস্যই যোগ না দেয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, পছন্দের কয়েকজন সিনেট সদস্যকে সিন্ডিকেটে মনোনয়ন দিতেই তড়িঘড়ি করে উপাচার্য তার একক সিদ্ধান্তে এ অধিবেশন ডেকেছেন। এছাড়া সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট ও ডিনস কমিটির সভায় দুই উপ-উপাচার্যসহ অনেক সদস্যই উপস্থিত ছিলেন না।

সূত্র জানায়, প্রতিবছর জুন মাসের শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের অধিবেশন ডাকা হয়। এ অধিবেশনের অন্যতম আলোচ্যসূচি থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেট উত্থাপন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয় সিনেট অধিবেশনে। এ বছর সিনেট অধিবেশন ডাকা হয়েছে আজ। যদিও এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট প্রণয়ন হয়নি। এছাড়া বাজেট প্রণয়নের পর সেটি ফাইন্যান্স কমিটি (এফসি) ও সিন্ডিকেটে অনুমোদনের পর সিনেটে উত্থাপন করা হয়। যদিও গত বুধবার অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় বাজেট উত্থাপন করা হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারসহ অধিবেশনে যোগ না দেয়াদের অভিযোগ, আজ অনুষ্ঠিতব্য সিনেট অধিবেশনে তিনজন সিন্ডিকেট সদস্য মনোনয়নের এজেন্ডা রয়েছে। সিনেটের ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধিদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৬ জুন। তাই ১৬ তারিখের পর সভা ডাকলে উপাচার্য তার পছন্দের কয়েকজন ব্যক্তিকে সিনেট থেকে সিন্ডিকেটে মনোনয়ন দিতে পারবেন না। কেউ কেউ বলছেন, গত সিনেট (২০১৯ সালের ৩১ জুলাই) অধিবেশনে উপাচার্য নির্বাচনের বিতর্কিত প্যানেল গঠনের কার্যবিবরণী অনুমোদন এবং করোনা শনাক্তকরণ কমিটি গঠনসহ কিছু বিষয়ে উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে কেউ যাতে সিনেটে প্রশ্ন তুলতে বা আলোচনা করতে না পারে; সেজন্য অনুগত স্বল্প সংখ্যক সিনেট সদস্যের উপস্থিতিতে সিনেট অধিবেশন সম্পন্ন করতে চান উপাচার্য।

চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সভায় অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ। তিনি সংবাদকে বলেন, এ অধিবেশনটি বাজেট নিয়ে হওয়ার কথা ছিল। অথচ এখনও বাজেট প্রণয়নই হয়নি। বাজেট ছাড়া এই সিন্ডিকেটের কোন কার্যকারিতা নেই। এছাড়া, উপাচার্য এ অধিবেশন ডাকার বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনাও করেনি। তার মানে সবকিছুতেই গণ্ডগোল, তারপরও তিনি এটা করছেন। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোন কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, উপাচার্যের মূল উদ্দেশ্যই হলো- শিক্ষক ক্যাটাগরি ও বিশিষ্ট নাগরিক ক্যাটাগরিতে তার পছন্দের লোককে সিন্ডিকেটে মনোনয়ন দেয়া। যাতে সিন্ডিকেটে তার লোক থাকে, তিনি নিজের মতো করে কথা বলতে পারেন। এটাই হয়তো উনি চান।

একইভাবে চিঠি দিয়ে সভায় অংশ না নেয়ার কথা জানিয়েছেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। তিনি সংবাদকে বলেন, সিনেট অধিবেশন আহ্বানের পর সাপ্তাহিক ছুটিসহ যেকোন ছুটি বাদে ২১ দিন গণনা করতে হয়। সেটা মানা হয়নি। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে এটা বিধিসম্মত হয়নি। বিধিগত ব্যাপারে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পদে আসীন যারা, বিধি-বিধানের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ থাকা দরকার। তিনি বলেন, এটা মূলত বাজেট অধিবেশন। নিয়ম অনুযায়ী, বাজেট তৈরি করে ট্রেজারার ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে পাঠান। এরপর তিনি সভা আহ্বান করেন। সভায় তিন-চার ঘণ্টা ধরে বাজেট নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। যেহেতু এবার বাজেট তৈরিই হয়নি, তাই এবার সিন্ডিকেটে বাজেট উপস্থাপন করা হয়নি। তাই আমি মনে করি, বাজেট না থাকায় এই সিনেটের কোন গুরুত্ব নেই। ঢাবি উপ-উপাচার্য বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে বর্তমানে শতাধিক সদস্য রয়েছেন। করোনার প্রকোপের এই সময়ে অধিবেশন ডাকায় অনেক সিনেট সদস্যই বেকায়দায় পড়েছেন। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল মেডিকেল কলেজসহ সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা অনেক সদস্যেরই অধিবেশনে যোগ দেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, রেওয়াজ ভঙ্গ করে করোনার এই দুর্যোগের সময় সভা আহ্বান করায় আজকের সিনেট অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামালও। তিনি করোনার এই সংকটের সময় সিনেট অধিবেশন আহ্বান করারও কড়া সমালোচনা করেছেন।

এদিকে, উপাচার্যের পছন্দের সিনেট সদস্যদের বিষয়ে জানতে চাইলে কেউ নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তাদের অধিকাংশই জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামকে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ক্যাটাগরিতে সিন্ডিকেটে মনোনয়ন দিতেই উপাচার্য তড়িঘড়ি করে ১৪ জুন সিনেট অধিবেশন আহ্বান করেছেন। এ বিষয়ে একজন সিনেট সদস্য সংবাদকে বলেন, শিবলী রুবাইয়াতের মেয়াদ শেষ হবে ১৬ জুন। এরপর তাকে সিনেট থেকে মনোনয়ন দেয়া সম্ভব নয়। গত বছরও তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। যদিও শিক্ষাবিদ ক্যাটাগরিতে সিন্ডিকেটে যাওয়া শিবলী রুবাইয়াতের পিএইচডি ডিগ্রিও নেই। উপাচার্য একজন ব্যক্তিকে সিন্ডিকেটে আনতে সব সিনেট সদস্যকে কোভিড-১৯ তথা মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলছেন।

সব ধরনের নিয়ম-নীতি মেনেই সিনেটের অধিবেশন ডাকা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, সিনেটের সভা আহ্বান করার নির্দিষ্ট বিধি-বিধান আছে। সেই মোতাবেকই সিনেট অধিবেশন ডাকা হয়েছে। এক্ষেত্রে নিয়মের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। এটা হল সিনেটের বার্ষিক অধিবেশন। বার্ষিক অধিবেশনের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডার অন্যতম হলো বাজেট। এখনও বাজেট তৈরি করা হয়নি। তাই এই অধিবেশনে না হলে পরবর্তী অধিবেশনে সেটি উপস্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, একটি গ্রুপ সিনেটের অধিবেশন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা বলছে, সিনেট কেন আগে ডাকা হল। অধিবেশনটি সাধারণত বিশ তারিখের পর হয়। এ বছর এগিয়ে আনার একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। প্রথমবারের মতো এটা পূর্ণাঙ্গ সিনেট। ১৬ তারিখের পর থেকে সেই পূর্ণাঙ্গ সিনেট অপূর্ণাঙ্গ হয়ে যাবে। আমরা যাতে পূর্ণাঙ্গ সিনেটে বসতে পারি, সেই সৎ উদ্দেশ্যে বার্ষিক সিনেট অধিবেশন ১৪ তারিখে ডাকা হয়েছে। সিনেটের ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধিদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৬ জুন। এরপর সভা হলে আমরা তাদের সম্মান জানাতে পারব না, ধন্যবাদ দিতেও পারব না। তাই সহকর্মীদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান জানাতেই অধিবেশন এগিয়ে আনা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বছর ২৬ জুন, ২০১৮ সালে ২৫ জুন, ২০১৭ সালে ১৭ জুন এবং ২০১৬ সালে ২৩ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছিল।

রবিবার, ১৪ জুন ২০২০ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২১ শাওয়াল ১৪৪

ঢাবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে

নিয়মবহির্ভূত সিনেট অধিবেশন ডাকার অভিযোগ

নিয়মের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি : উপাচার্য

আবদুল্লাহ আল জোবায়ের

উপাচার্যের একক সিদ্ধান্তে সিনেট অধিবেশন আহ্বান করাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসনে অস্থিরতা চলছে। আজ অনুষ্ঠিতব্য সিনেট অধিবেশনে দুই উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারসহ অনেক সদস্যই যোগ না দেয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, পছন্দের কয়েকজন সিনেট সদস্যকে সিন্ডিকেটে মনোনয়ন দিতেই তড়িঘড়ি করে উপাচার্য তার একক সিদ্ধান্তে এ অধিবেশন ডেকেছেন। এছাড়া সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট ও ডিনস কমিটির সভায় দুই উপ-উপাচার্যসহ অনেক সদস্যই উপস্থিত ছিলেন না।

সূত্র জানায়, প্রতিবছর জুন মাসের শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের অধিবেশন ডাকা হয়। এ অধিবেশনের অন্যতম আলোচ্যসূচি থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেট উত্থাপন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয় সিনেট অধিবেশনে। এ বছর সিনেট অধিবেশন ডাকা হয়েছে আজ। যদিও এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট প্রণয়ন হয়নি। এছাড়া বাজেট প্রণয়নের পর সেটি ফাইন্যান্স কমিটি (এফসি) ও সিন্ডিকেটে অনুমোদনের পর সিনেটে উত্থাপন করা হয়। যদিও গত বুধবার অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় বাজেট উত্থাপন করা হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারসহ অধিবেশনে যোগ না দেয়াদের অভিযোগ, আজ অনুষ্ঠিতব্য সিনেট অধিবেশনে তিনজন সিন্ডিকেট সদস্য মনোনয়নের এজেন্ডা রয়েছে। সিনেটের ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধিদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৬ জুন। তাই ১৬ তারিখের পর সভা ডাকলে উপাচার্য তার পছন্দের কয়েকজন ব্যক্তিকে সিনেট থেকে সিন্ডিকেটে মনোনয়ন দিতে পারবেন না। কেউ কেউ বলছেন, গত সিনেট (২০১৯ সালের ৩১ জুলাই) অধিবেশনে উপাচার্য নির্বাচনের বিতর্কিত প্যানেল গঠনের কার্যবিবরণী অনুমোদন এবং করোনা শনাক্তকরণ কমিটি গঠনসহ কিছু বিষয়ে উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে কেউ যাতে সিনেটে প্রশ্ন তুলতে বা আলোচনা করতে না পারে; সেজন্য অনুগত স্বল্প সংখ্যক সিনেট সদস্যের উপস্থিতিতে সিনেট অধিবেশন সম্পন্ন করতে চান উপাচার্য।

চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সভায় অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ। তিনি সংবাদকে বলেন, এ অধিবেশনটি বাজেট নিয়ে হওয়ার কথা ছিল। অথচ এখনও বাজেট প্রণয়নই হয়নি। বাজেট ছাড়া এই সিন্ডিকেটের কোন কার্যকারিতা নেই। এছাড়া, উপাচার্য এ অধিবেশন ডাকার বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনাও করেনি। তার মানে সবকিছুতেই গণ্ডগোল, তারপরও তিনি এটা করছেন। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোন কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, উপাচার্যের মূল উদ্দেশ্যই হলো- শিক্ষক ক্যাটাগরি ও বিশিষ্ট নাগরিক ক্যাটাগরিতে তার পছন্দের লোককে সিন্ডিকেটে মনোনয়ন দেয়া। যাতে সিন্ডিকেটে তার লোক থাকে, তিনি নিজের মতো করে কথা বলতে পারেন। এটাই হয়তো উনি চান।

একইভাবে চিঠি দিয়ে সভায় অংশ না নেয়ার কথা জানিয়েছেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। তিনি সংবাদকে বলেন, সিনেট অধিবেশন আহ্বানের পর সাপ্তাহিক ছুটিসহ যেকোন ছুটি বাদে ২১ দিন গণনা করতে হয়। সেটা মানা হয়নি। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে এটা বিধিসম্মত হয়নি। বিধিগত ব্যাপারে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পদে আসীন যারা, বিধি-বিধানের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ থাকা দরকার। তিনি বলেন, এটা মূলত বাজেট অধিবেশন। নিয়ম অনুযায়ী, বাজেট তৈরি করে ট্রেজারার ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে পাঠান। এরপর তিনি সভা আহ্বান করেন। সভায় তিন-চার ঘণ্টা ধরে বাজেট নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। যেহেতু এবার বাজেট তৈরিই হয়নি, তাই এবার সিন্ডিকেটে বাজেট উপস্থাপন করা হয়নি। তাই আমি মনে করি, বাজেট না থাকায় এই সিনেটের কোন গুরুত্ব নেই। ঢাবি উপ-উপাচার্য বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে বর্তমানে শতাধিক সদস্য রয়েছেন। করোনার প্রকোপের এই সময়ে অধিবেশন ডাকায় অনেক সিনেট সদস্যই বেকায়দায় পড়েছেন। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল মেডিকেল কলেজসহ সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা অনেক সদস্যেরই অধিবেশনে যোগ দেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, রেওয়াজ ভঙ্গ করে করোনার এই দুর্যোগের সময় সভা আহ্বান করায় আজকের সিনেট অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামালও। তিনি করোনার এই সংকটের সময় সিনেট অধিবেশন আহ্বান করারও কড়া সমালোচনা করেছেন।

এদিকে, উপাচার্যের পছন্দের সিনেট সদস্যদের বিষয়ে জানতে চাইলে কেউ নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তাদের অধিকাংশই জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামকে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ক্যাটাগরিতে সিন্ডিকেটে মনোনয়ন দিতেই উপাচার্য তড়িঘড়ি করে ১৪ জুন সিনেট অধিবেশন আহ্বান করেছেন। এ বিষয়ে একজন সিনেট সদস্য সংবাদকে বলেন, শিবলী রুবাইয়াতের মেয়াদ শেষ হবে ১৬ জুন। এরপর তাকে সিনেট থেকে মনোনয়ন দেয়া সম্ভব নয়। গত বছরও তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। যদিও শিক্ষাবিদ ক্যাটাগরিতে সিন্ডিকেটে যাওয়া শিবলী রুবাইয়াতের পিএইচডি ডিগ্রিও নেই। উপাচার্য একজন ব্যক্তিকে সিন্ডিকেটে আনতে সব সিনেট সদস্যকে কোভিড-১৯ তথা মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলছেন।

সব ধরনের নিয়ম-নীতি মেনেই সিনেটের অধিবেশন ডাকা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, সিনেটের সভা আহ্বান করার নির্দিষ্ট বিধি-বিধান আছে। সেই মোতাবেকই সিনেট অধিবেশন ডাকা হয়েছে। এক্ষেত্রে নিয়মের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। এটা হল সিনেটের বার্ষিক অধিবেশন। বার্ষিক অধিবেশনের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডার অন্যতম হলো বাজেট। এখনও বাজেট তৈরি করা হয়নি। তাই এই অধিবেশনে না হলে পরবর্তী অধিবেশনে সেটি উপস্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, একটি গ্রুপ সিনেটের অধিবেশন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা বলছে, সিনেট কেন আগে ডাকা হল। অধিবেশনটি সাধারণত বিশ তারিখের পর হয়। এ বছর এগিয়ে আনার একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। প্রথমবারের মতো এটা পূর্ণাঙ্গ সিনেট। ১৬ তারিখের পর থেকে সেই পূর্ণাঙ্গ সিনেট অপূর্ণাঙ্গ হয়ে যাবে। আমরা যাতে পূর্ণাঙ্গ সিনেটে বসতে পারি, সেই সৎ উদ্দেশ্যে বার্ষিক সিনেট অধিবেশন ১৪ তারিখে ডাকা হয়েছে। সিনেটের ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধিদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৬ জুন। এরপর সভা হলে আমরা তাদের সম্মান জানাতে পারব না, ধন্যবাদ দিতেও পারব না। তাই সহকর্মীদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান জানাতেই অধিবেশন এগিয়ে আনা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বছর ২৬ জুন, ২০১৮ সালে ২৫ জুন, ২০১৭ সালে ১৭ জুন এবং ২০১৬ সালে ২৩ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছিল।