গার্মেন্ট কর্মী শারমিনকে ধর্ষণ ও হত্যা করে ৪ জন

গার্মেন্ট কর্মী শারমিনকে প্রথমে গণধর্ষণ এবং পরে জবাই করা হয়েছে। হত্যার নেতৃত্ব দেন উত্তরখান এলাকায় রংবাজ হিসেবে পরিচিত মাসুদ। তার সঙ্গে ফুরকান, আনোয়ার এবং সাইফুল মিলেই ওই গার্মেন্ট কর্মীকে প্রথমে ধর্ষণ এবং পরে হত্যা করে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার ৪ জনের মধ্যে ফুরকান এবং সাইফুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গত ৫ জুন শারমিনকে গণধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। ৬ জুন অজ্ঞাত হিসেবে শারমিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রযুক্তির সহযোগিতায় পরিচয় উদ্ধারের পর এ ঘটনায় মামলা হলেও হত্যার কারণ ছিল ক্লুলেস। পরে পুলিশ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে এবং গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে জামালপুরের বকশীগঞ্জ থেকে ফুরকানকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যে উত্তরখানের বিভিন্ন জায়গা থেকে মাসুদ, সাইফুল ও আনোয়ারকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার হাফিজুর রহমান রিয়েল জানান, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে মাসুদ ও আনোয়ার এখনও রিমান্ড হেফাজতে রয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তিনি বলেন, গার্মেন্ট কর্মী শারমিনের স্বামী ছিল শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। তাদের ৩ বছরের একটি কন্যা সন্তানও ছিল। গাজীপুরের কালীগঞ্জ এলাকায় থাকত। কিন্তু স্বামীকে নিয়ে সুখী না হওয়ায় স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে উত্তরখান এলাকায় এসে বাসা বাড়া নেয় শারমিন। এখানে ছেলে এবং মা বাবাকে নিয়ে থাকত শারমিন। সংসার চালানোর প্রয়োজনে শারমিন একটি মাস্ক তৈরির কারখানায় চাকরি নেয়। ভাড়া থাকার সুবাধে পাশের বাসার বাসিন্দা ফুরকানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ফুরকানের স্ত্রী ও সন্তান ছিল। কিন্তু ফুরকান শারমিনের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে শারমিনকে পছন্দ করত মাসুদ, সাইফুল এবং আনোয়ার। এদের মধ্যে মাসুদ উত্তরখান এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। সবাই তাকে ভয় পেত। ফুরকান জানতে পারে শারমিন তাকে ছাড়াও মাসুদ, সাইফুল এবং আনোয়ারের সঙ্গে সম্পর্ক জড়িয়েছে। এতে ফুরকান শারমিনের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। শারমিনকে এ বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও ফুরকান মাসুদের সঙ্গে দেখা করে। সেখানে শারমিনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তাদের মধ্যে কথা। তখন মাসুদও জানায়, তার সঙ্গেও শারমিনের সম্পর্ক রয়েছে। ওইসময় সাইফুল ও আনোয়ার নামে আরও দু’জন মাসুদকে জানায়, প্রেমে জড়িয়ে তারাও বিভিন্ন সময়ে শারমিনকে টাকা-পয়সা দিয়েছে। কিন্তু শারমিন তাদের কাছে ধরা দিচ্ছে না। এক পর্যায়ে তারা ৪ জন মিলে পরিকল্পনা করে তারা শারমিনকে শায়েস্তা করবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৫ জুন ফুরকান শারমিনকে তার সঙ্গে দেখা করতে বলে। ফুরকানের কথায় শারমিন দেখা করতে গেলে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে শারমিন মাসুদ, সাইফুল এবং আনোয়ারকেও দেখতে পায়। শুরুতে তাদের দেখে ভয় পেয়ে গেলেও ধীরে ধীরে সে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে ওই ৪ জন মিলে শারমিনকে ধর্ষণ করে। পরে তারা শারমিনকে হাত-পা বেঁধে জবাই করে। এরপর লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

পুলিশ জানায়, উত্তরখানের সিদ্ধিরটেক এলাকায় হাজী মাহতাবের ভাড়া বাড়িতে পাশাপাশি রুমে চারটি পরিবার ভাড়া থাকে। ভিকটিম শারমিন তার বাবা-মা আর একমাত্র মেয়ে কুলসুমকে নিয়ে ছিল। এক সময় পাশের রুমের বিবাহিত ফুরকানের সঙ্গে তার প্রথম পরিচয় হয়। ফুরকানই এলাকার টেরর মাসুদের সঙ্গে শারমিনের পরিচয় করিয়ে দেয়। এভাবে সাইফুল এবং আনোয়ারের সঙ্গেও শারমিনের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। অবৈধ সম্পর্কে জড়াতে মাসুদ, আনোয়ার এবং সাইফুল বিভিন্ন সময়ে শারমিনকে টাকা-পয়সা দিয়ে লোভ দেখাত। অভাবের কারণে শারমিন তাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিত। কিন্তু কারও সঙ্গে শারমিন সম্পর্কে জড়ায়নি। কিন্তু ফুরকান সন্দেহ করে সে ছাড়াও শারমিন মাসুদ, সাইফুল এবং আনোয়ারের সঙ্গে মেলামেশা করে। এ কারণেই তারা একত্রিত হয়ে শারমিনকে ধর্ষণ এবং হত্যার পরিকল্পনা করে।

রবিবার, ১৪ জুন ২০২০ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২১ শাওয়াল ১৪৪

উত্তরখানে নারীর লাশ

গার্মেন্ট কর্মী শারমিনকে ধর্ষণ ও হত্যা করে ৪ জন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

গার্মেন্ট কর্মী শারমিনকে প্রথমে গণধর্ষণ এবং পরে জবাই করা হয়েছে। হত্যার নেতৃত্ব দেন উত্তরখান এলাকায় রংবাজ হিসেবে পরিচিত মাসুদ। তার সঙ্গে ফুরকান, আনোয়ার এবং সাইফুল মিলেই ওই গার্মেন্ট কর্মীকে প্রথমে ধর্ষণ এবং পরে হত্যা করে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার ৪ জনের মধ্যে ফুরকান এবং সাইফুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গত ৫ জুন শারমিনকে গণধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। ৬ জুন অজ্ঞাত হিসেবে শারমিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রযুক্তির সহযোগিতায় পরিচয় উদ্ধারের পর এ ঘটনায় মামলা হলেও হত্যার কারণ ছিল ক্লুলেস। পরে পুলিশ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে এবং গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে জামালপুরের বকশীগঞ্জ থেকে ফুরকানকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যে উত্তরখানের বিভিন্ন জায়গা থেকে মাসুদ, সাইফুল ও আনোয়ারকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার হাফিজুর রহমান রিয়েল জানান, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে মাসুদ ও আনোয়ার এখনও রিমান্ড হেফাজতে রয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তিনি বলেন, গার্মেন্ট কর্মী শারমিনের স্বামী ছিল শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। তাদের ৩ বছরের একটি কন্যা সন্তানও ছিল। গাজীপুরের কালীগঞ্জ এলাকায় থাকত। কিন্তু স্বামীকে নিয়ে সুখী না হওয়ায় স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে উত্তরখান এলাকায় এসে বাসা বাড়া নেয় শারমিন। এখানে ছেলে এবং মা বাবাকে নিয়ে থাকত শারমিন। সংসার চালানোর প্রয়োজনে শারমিন একটি মাস্ক তৈরির কারখানায় চাকরি নেয়। ভাড়া থাকার সুবাধে পাশের বাসার বাসিন্দা ফুরকানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ফুরকানের স্ত্রী ও সন্তান ছিল। কিন্তু ফুরকান শারমিনের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে শারমিনকে পছন্দ করত মাসুদ, সাইফুল এবং আনোয়ার। এদের মধ্যে মাসুদ উত্তরখান এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। সবাই তাকে ভয় পেত। ফুরকান জানতে পারে শারমিন তাকে ছাড়াও মাসুদ, সাইফুল এবং আনোয়ারের সঙ্গে সম্পর্ক জড়িয়েছে। এতে ফুরকান শারমিনের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। শারমিনকে এ বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও ফুরকান মাসুদের সঙ্গে দেখা করে। সেখানে শারমিনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তাদের মধ্যে কথা। তখন মাসুদও জানায়, তার সঙ্গেও শারমিনের সম্পর্ক রয়েছে। ওইসময় সাইফুল ও আনোয়ার নামে আরও দু’জন মাসুদকে জানায়, প্রেমে জড়িয়ে তারাও বিভিন্ন সময়ে শারমিনকে টাকা-পয়সা দিয়েছে। কিন্তু শারমিন তাদের কাছে ধরা দিচ্ছে না। এক পর্যায়ে তারা ৪ জন মিলে পরিকল্পনা করে তারা শারমিনকে শায়েস্তা করবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৫ জুন ফুরকান শারমিনকে তার সঙ্গে দেখা করতে বলে। ফুরকানের কথায় শারমিন দেখা করতে গেলে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে শারমিন মাসুদ, সাইফুল এবং আনোয়ারকেও দেখতে পায়। শুরুতে তাদের দেখে ভয় পেয়ে গেলেও ধীরে ধীরে সে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে ওই ৪ জন মিলে শারমিনকে ধর্ষণ করে। পরে তারা শারমিনকে হাত-পা বেঁধে জবাই করে। এরপর লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

পুলিশ জানায়, উত্তরখানের সিদ্ধিরটেক এলাকায় হাজী মাহতাবের ভাড়া বাড়িতে পাশাপাশি রুমে চারটি পরিবার ভাড়া থাকে। ভিকটিম শারমিন তার বাবা-মা আর একমাত্র মেয়ে কুলসুমকে নিয়ে ছিল। এক সময় পাশের রুমের বিবাহিত ফুরকানের সঙ্গে তার প্রথম পরিচয় হয়। ফুরকানই এলাকার টেরর মাসুদের সঙ্গে শারমিনের পরিচয় করিয়ে দেয়। এভাবে সাইফুল এবং আনোয়ারের সঙ্গেও শারমিনের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। অবৈধ সম্পর্কে জড়াতে মাসুদ, আনোয়ার এবং সাইফুল বিভিন্ন সময়ে শারমিনকে টাকা-পয়সা দিয়ে লোভ দেখাত। অভাবের কারণে শারমিন তাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিত। কিন্তু কারও সঙ্গে শারমিন সম্পর্কে জড়ায়নি। কিন্তু ফুরকান সন্দেহ করে সে ছাড়াও শারমিন মাসুদ, সাইফুল এবং আনোয়ারের সঙ্গে মেলামেশা করে। এ কারণেই তারা একত্রিত হয়ে শারমিনকে ধর্ষণ এবং হত্যার পরিকল্পনা করে।