রোগীদের ভোগান্তি বন্ধে আইনের প্রয়োগ করুন

চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে সেবার মান নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কাটাচ্ছে নগরবাসী। কোভিড-১৯ মহামারীর এ সময়ে চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি না করায় চিকিৎসা না পেয়ে একের পর এক মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। এ অবস্থা শুধু চট্টগ্রামেই নয়, বরং দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই সাধারণ রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা। সিলেটের বেসরকারি হাসপাতালগুলো সরকারি নির্দেশ অমান্য করে জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে না। কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রেও এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। চিকিৎসক না পেয়ে প্রতিদিন বহু মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সেই সঙ্গে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘোরার ভোগান্তি কমেনি। বরং অনেক ক্ষেত্রেই এটা বেড়েছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক ঘটনা জানা যাচ্ছে, যা আমাদের হতবিহ্বল করে দিচ্ছে। একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রসবজনিত সমস্যায় আক্রান্ত রোগী খাদিজা আক্তার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা না পেয়ে ঢাকার কিডনি হাসপাতালে আসেন, সেখান থেকে সুপারিশ করা হয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজের এবং ঢাকা মেডিকেলে এলে তাকে জানানো হয়, ডাইলাইসিস দরকার কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি করা সম্ভব নয়।

সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা না পাওয়ার খবরটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি আরও দুর্ভাগ্যের এ জন্য যে, অনেকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলেও বেসরকারি হাসপাতাল তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে এবং এ হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে যাতায়াত করে শেষপর্যন্ত কোনরকম চিকিৎসা ছাড়াই সাধারণ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গোটা দেশে একই চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। কোভিড-১৯ টেস্টের রিপোর্ট সঙ্গে না থাকায় হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা না দিয়ে রোগীকে ফিরিয়ে দেয়া, রাস্তায় অজানা গন্তব্যে ঠেলে দেয়া, অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালের পর হাসপাতাল ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার ঘটনা এখন নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, হাসপাতালকেন্দ্রিক সরকারি সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, সরকারি ও বেসরকারি নির্বিশেষে প্রতিটি হাসপাতালকে কোভিড এবং নন-কোভিডে ভাগ করতে বলা হয়েছে। সরকার আশা করছে, এর মাধ্যমে কোভিড রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাদান সম্ভব হবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যথারীতি ঢিমেতালে চলছে। সরকারি হাসপাতালগুলোও এ ভাগ করার নীতি মেনে চলার ক্ষেত্রে শৈথিল্য দেখিয়ে চলেছে। কোভিড হাসপাতালগুলো কোভিড টেস্টের পজিটিভ রিপোর্ট ছাড়া লক্ষণ ও উপসর্গ আছে এমন রোগীদেরও ফিরিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে নন-কোভিড হাসপাতালগুলো কোভিড টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট ছাড়া সাধারণ রোগীদের সেবা দিচ্ছে না। অথচ এর আগে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর থেকে সব ধরনের রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে দেশের সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে কোনো নির্দেশনাই কাজে আসছে না। এর কারণ নির্দেশনায় কঠোর শাস্তির কথা বলা হলেও কার্যত এর কোন প্রয়োগ নেই। অর্থাৎ এ ধরনের অপকর্মে কোন বেসরকারি হাসপাতাল শাস্তি পেয়েছে, তাদের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে- এমন উদাহরণ দৃশ্যমান হয়নি। ফলে হাসপাতালগুলো মনে করছে, সাধারণ রোগীদের সেবা না দিলেও তাদের কোনোরকম শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে না। আর এমনটা বুঝেই হাসপাতালগুলো নিজেদের সুবিধামতো সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

দেশজুড়ে করোনাবহির্ভূত লাখ লাখ রোগী রয়েছেন। যাদের অনেকের অবস্থা এতটা গুরুতর যে, শুধু ডাক্তারের সঙ্গে ফোনালাপ করে ওষুধ দেয়া সম্ভব না। বিশেষত হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, পক্ষাঘাত, হাঁপানি-শ্বাসকষ্ট, লিভার, কিডনি, দাঁত ও চোখের রোগ নিয়ে যারা দীর্ঘমেয়াদি রোগ-ব্যাধিতে ভুগছেন তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেড়েছে। অনেকের জরুরি অপারেশন করার বিষয় রয়েছে; কিন্তু বাস্তবতা হলো- এসব বিষয় নিশ্চিত করার কার্যত যেন কেউ নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রতিনিয়ত বলা হচ্ছে, যদি কোন হাসপাতাল রোগীকে ভর্তি না করে, তাহলে তারা সমাধান করবে। তাদের এ সমাধানকরণ ব্যবস্থা কবে থেকে শুরু হবে সেটাই প্রশ্ন? আমরা জানতে চাই, সাধারণ মানুষদের আর কতদিন চিকিৎসাবিহীন হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে?

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয় মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য, মানুষকে সেবা না দিয়ে হাসপাতাল যদি হাত গুটিয়ে নেয়, সেটিকে তখন আর হাসপাতাল বলা যায় না। দেশে সরকার আছে, সরকারের আইনকানুনও আছে; অথচ হাসপাতালগুলো সরকারের নির্দেশনা মানছে না। কোন সভ্য রাষ্ট্রে এমন যথেচ্ছাচার কী করে সম্ভব? আমরা জানতে চাই, তাহলে তাদের হাসপাতাল চালানোর লাইসেন্স কেন বহাল আছে? যারা এ সময়ে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে পিছপা হচ্ছে এবং তাদের অবহেলার কারণে রোগীরা মৃত্যুবরণ করছে, তাদের বিরুদ্ধে শুধু হুঁশিয়ারি নয়, বরং যত দ্রুত সম্ভব দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া বাঞ্ছনীয়। কেউ রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে অবহেলা করলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। করোনার জন্য সাধারণ রোগীদের চিকিৎসায় যেন গাফিলতি না হয় সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।

রবিবার, ১৪ জুন ২০২০ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২১ শাওয়াল ১৪৪

সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সংকট দূর করুন

রোগীদের ভোগান্তি বন্ধে আইনের প্রয়োগ করুন

চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে সেবার মান নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কাটাচ্ছে নগরবাসী। কোভিড-১৯ মহামারীর এ সময়ে চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি না করায় চিকিৎসা না পেয়ে একের পর এক মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। এ অবস্থা শুধু চট্টগ্রামেই নয়, বরং দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই সাধারণ রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা। সিলেটের বেসরকারি হাসপাতালগুলো সরকারি নির্দেশ অমান্য করে জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে না। কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রেও এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। চিকিৎসক না পেয়ে প্রতিদিন বহু মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সেই সঙ্গে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘোরার ভোগান্তি কমেনি। বরং অনেক ক্ষেত্রেই এটা বেড়েছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক ঘটনা জানা যাচ্ছে, যা আমাদের হতবিহ্বল করে দিচ্ছে। একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রসবজনিত সমস্যায় আক্রান্ত রোগী খাদিজা আক্তার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা না পেয়ে ঢাকার কিডনি হাসপাতালে আসেন, সেখান থেকে সুপারিশ করা হয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজের এবং ঢাকা মেডিকেলে এলে তাকে জানানো হয়, ডাইলাইসিস দরকার কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি করা সম্ভব নয়।

সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা না পাওয়ার খবরটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি আরও দুর্ভাগ্যের এ জন্য যে, অনেকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলেও বেসরকারি হাসপাতাল তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে এবং এ হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে যাতায়াত করে শেষপর্যন্ত কোনরকম চিকিৎসা ছাড়াই সাধারণ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গোটা দেশে একই চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। কোভিড-১৯ টেস্টের রিপোর্ট সঙ্গে না থাকায় হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা না দিয়ে রোগীকে ফিরিয়ে দেয়া, রাস্তায় অজানা গন্তব্যে ঠেলে দেয়া, অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালের পর হাসপাতাল ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার ঘটনা এখন নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, হাসপাতালকেন্দ্রিক সরকারি সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, সরকারি ও বেসরকারি নির্বিশেষে প্রতিটি হাসপাতালকে কোভিড এবং নন-কোভিডে ভাগ করতে বলা হয়েছে। সরকার আশা করছে, এর মাধ্যমে কোভিড রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাদান সম্ভব হবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যথারীতি ঢিমেতালে চলছে। সরকারি হাসপাতালগুলোও এ ভাগ করার নীতি মেনে চলার ক্ষেত্রে শৈথিল্য দেখিয়ে চলেছে। কোভিড হাসপাতালগুলো কোভিড টেস্টের পজিটিভ রিপোর্ট ছাড়া লক্ষণ ও উপসর্গ আছে এমন রোগীদেরও ফিরিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে নন-কোভিড হাসপাতালগুলো কোভিড টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট ছাড়া সাধারণ রোগীদের সেবা দিচ্ছে না। অথচ এর আগে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর থেকে সব ধরনের রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে দেশের সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে কোনো নির্দেশনাই কাজে আসছে না। এর কারণ নির্দেশনায় কঠোর শাস্তির কথা বলা হলেও কার্যত এর কোন প্রয়োগ নেই। অর্থাৎ এ ধরনের অপকর্মে কোন বেসরকারি হাসপাতাল শাস্তি পেয়েছে, তাদের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে- এমন উদাহরণ দৃশ্যমান হয়নি। ফলে হাসপাতালগুলো মনে করছে, সাধারণ রোগীদের সেবা না দিলেও তাদের কোনোরকম শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে না। আর এমনটা বুঝেই হাসপাতালগুলো নিজেদের সুবিধামতো সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

দেশজুড়ে করোনাবহির্ভূত লাখ লাখ রোগী রয়েছেন। যাদের অনেকের অবস্থা এতটা গুরুতর যে, শুধু ডাক্তারের সঙ্গে ফোনালাপ করে ওষুধ দেয়া সম্ভব না। বিশেষত হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, পক্ষাঘাত, হাঁপানি-শ্বাসকষ্ট, লিভার, কিডনি, দাঁত ও চোখের রোগ নিয়ে যারা দীর্ঘমেয়াদি রোগ-ব্যাধিতে ভুগছেন তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেড়েছে। অনেকের জরুরি অপারেশন করার বিষয় রয়েছে; কিন্তু বাস্তবতা হলো- এসব বিষয় নিশ্চিত করার কার্যত যেন কেউ নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রতিনিয়ত বলা হচ্ছে, যদি কোন হাসপাতাল রোগীকে ভর্তি না করে, তাহলে তারা সমাধান করবে। তাদের এ সমাধানকরণ ব্যবস্থা কবে থেকে শুরু হবে সেটাই প্রশ্ন? আমরা জানতে চাই, সাধারণ মানুষদের আর কতদিন চিকিৎসাবিহীন হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে?

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয় মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য, মানুষকে সেবা না দিয়ে হাসপাতাল যদি হাত গুটিয়ে নেয়, সেটিকে তখন আর হাসপাতাল বলা যায় না। দেশে সরকার আছে, সরকারের আইনকানুনও আছে; অথচ হাসপাতালগুলো সরকারের নির্দেশনা মানছে না। কোন সভ্য রাষ্ট্রে এমন যথেচ্ছাচার কী করে সম্ভব? আমরা জানতে চাই, তাহলে তাদের হাসপাতাল চালানোর লাইসেন্স কেন বহাল আছে? যারা এ সময়ে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে পিছপা হচ্ছে এবং তাদের অবহেলার কারণে রোগীরা মৃত্যুবরণ করছে, তাদের বিরুদ্ধে শুধু হুঁশিয়ারি নয়, বরং যত দ্রুত সম্ভব দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া বাঞ্ছনীয়। কেউ রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে অবহেলা করলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। করোনার জন্য সাধারণ রোগীদের চিকিৎসায় যেন গাফিলতি না হয় সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।