সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে আলোচনায় বসছে চীন-ভারত

গত মাসের শুরুর দিকে লাদাখ নিয়ে সৃষ্ট সংকট কাটতে না কাটতেই চীন-ভারতের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় আলোচনার টেবিলে বসতে যাচ্ছে বেইজিং ও নয়াদিল্লি। আগামী ২২ জুন এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে দেশ দুটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভও এতে অংশ নেবেন। এদিকে চীনের সঙ্গে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে বলে দাবি করেছেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নরবণে। আনন্দবাজার, এনডিটিভি।

দেশটির সংবাদ মাধ্যমটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মহামারী করোনার সংক্রমণ নিয়ে বিপর্যস্ত ভারত। এ মহামারী মোকাবিলার কৌশল নিয়ে ত্রিপাক্ষিক আলোচনার (ভারত-চীন-রাশিয়া) কথা বলা হচ্ছে। এরই মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে বেইজিং-নয়াদিল্লির মধ্যকার উত্তেজনা নতুন চাপ তৈরি করেছে ভারতের জন্য। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাইে দিল্লির পক্ষ থেকে আসন্ন বৈঠকে একটি আস্থার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা থাকবে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো। বেশ কিছু দিন ধরেই রাশিয়ার পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, তারা চায় চীন-ভারত উত্তেজনা নিরসন হোক। দিল্লিও বিষয়টি নিয়ে মস্কোর সঙ্গে কথা বলেছে। ফলে সরাসরি মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা না নিলেও রাশিয়া যে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিচ্ছে তা এ বৈঠকের উদ্যোগেই স্পষ্ট। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, দিল্লি যাতে ওয়াশিংটনের দিকে বেশি ঝুঁকে না পড়ে- এ বিষয়েই অগ্রাধিকার দিচ্ছে মস্কো।

এদিকে গত শনিবার দেশটির সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, লাদাখে চীনের সঙ্গে ভারতীয় সেনাদের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। দেশ দুটির সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তা মেটানোর জোর চেষ্টাও চলছে। এরই অংশ হিসেবে গত ৫ জুন কোর কমান্ডার স্তরে বৈঠক হয়েছে। তারপর এ প্রথম বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন ভারতের সেনাপ্রধান। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘চীনের সঙ্গে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নিরন্তর আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য মিটিয়ে ফেলা যাবে বলে তিনি আশাবাদী।’

ভারতীয় এ সংবাদ মাধ্যটির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান জেনারেল এমএম নারাভানে বলেছেন, জেনারেল এমএম নারাভানে বলেন, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দুই দেশেরই জ্যেষ্ঠ মিলিটারি কমান্ডারদের মধ্যে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। তার ফলে যে যে বিষয়ে মতবিরোধ ছিল তা আপাতত সমঝোতা করে একটা ফয়সালায় আসা গেছে। আমি সবাইকে একথা বলে আশ্বস্ত করতে চাই, চীনের সঙ্গে আমাদের সীমান্তের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা একাধিক বার আলোচনা করেছি, কর্পস কমান্ডার স্তরের সঙ্গে কথা থেকে শুরু করে সমমানের কমান্ডারদের মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ইদানীং বেশ কয়েকটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। আমরা আশাবাদী যে, এই চলতি সংলাপের মধ্য দিয়ে আমাদের (ভারত ও চীন) সমস্যাগুলোর উত্তরণ ঘটবে।’

শুক্রবার উভয় দেশের মধ্যে মেজর জেনারেল পর্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। মে মাসের শুরুর দিকে লাদাখের প্যানগং লেক অঞ্চলে চীনা হেলিকপ্টার উড্ডয়নের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। তারপরই সমাধান খুঁজতে বৈঠকে বসে দুই দেশ। সরকারি সূত্রের বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে, লাদাখের কিছু অংশে ভারতীয় ও চীনা সেনারা পারস্পরিক নিষ্পত্তির পথে হেঁটেছে। একটি ‘উল্লেখযোগ্য’ সমাধানের লক্ষ্যে চীনা সেনারা তিন কিলোমিটার ‘পিছু হটেছে’। ভারতের পক্ষ থেকে কিছু সেনাকে ফেরানো হয়েছে। সোমবার ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, যত দ্রুত সম্ভব চীনের সঙ্গে কয়েক দশকের পুরনো সীমান্ত সমস্যার সমাধান চায় ভারত। উত্তেজনা কমাতে চীন-ভারত যে বৈঠক হয় তার একদিন পরই ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বৈঠকটি ‘সৌহার্দপূর্ণ ও ইতিবাচক পরিবেশে’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উভয়পক্ষই একমত হয়েছে, সংকটের প্রাথমিক সমাধানের লক্ষ্যে দুই দেশই আরও চেষ্টা করবে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই দেশই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) ধরে শান্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে আলোচনা করেছে। সমস্যা সমাধানে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধান এমন মন্তব্য করলেও আগের বৈঠকে চীনা বাহিনী লাদাখ নিয়ে অনড় মনোভাব দেখিয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের সেনা সূত্র। পাহাড়ের যে অংশগুলো প্যাংগং লেকের মধ্যে ঢুকে রয়েছে সেগুলোকেই ফিঙ্গার বলা হয়। ৫ মে থেকে চীন ওই এলাকা দখল করে বসে থাকায় ফিঙ্গার-ফোর থেকে ফিঙ্গার-এইট পর্যন্ত ভারতীয় বাহিনীর নজরদারি বন্ধ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে চীনা বাহিনী সেখানে পাথরের বাঙ্কার এবং কাঁচা ঘর তৈরি করেছে। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে মোদি সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছে দেশটির বিরোধী দলের রাজনীতিবিদরা।

সোমবার, ১৫ জুন ২০২০ , ১ আষাঢ় ১৪২৭, ২২ শাওয়াল ১৪৪১

রাশিয়ার মধ্যস্থতা

সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে আলোচনায় বসছে চীন-ভারত

সংবাদ ডেস্ক |

গত মাসের শুরুর দিকে লাদাখ নিয়ে সৃষ্ট সংকট কাটতে না কাটতেই চীন-ভারতের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় আলোচনার টেবিলে বসতে যাচ্ছে বেইজিং ও নয়াদিল্লি। আগামী ২২ জুন এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে দেশ দুটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভও এতে অংশ নেবেন। এদিকে চীনের সঙ্গে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে বলে দাবি করেছেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নরবণে। আনন্দবাজার, এনডিটিভি।

দেশটির সংবাদ মাধ্যমটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মহামারী করোনার সংক্রমণ নিয়ে বিপর্যস্ত ভারত। এ মহামারী মোকাবিলার কৌশল নিয়ে ত্রিপাক্ষিক আলোচনার (ভারত-চীন-রাশিয়া) কথা বলা হচ্ছে। এরই মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে বেইজিং-নয়াদিল্লির মধ্যকার উত্তেজনা নতুন চাপ তৈরি করেছে ভারতের জন্য। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাইে দিল্লির পক্ষ থেকে আসন্ন বৈঠকে একটি আস্থার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা থাকবে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো। বেশ কিছু দিন ধরেই রাশিয়ার পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, তারা চায় চীন-ভারত উত্তেজনা নিরসন হোক। দিল্লিও বিষয়টি নিয়ে মস্কোর সঙ্গে কথা বলেছে। ফলে সরাসরি মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা না নিলেও রাশিয়া যে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিচ্ছে তা এ বৈঠকের উদ্যোগেই স্পষ্ট। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, দিল্লি যাতে ওয়াশিংটনের দিকে বেশি ঝুঁকে না পড়ে- এ বিষয়েই অগ্রাধিকার দিচ্ছে মস্কো।

এদিকে গত শনিবার দেশটির সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, লাদাখে চীনের সঙ্গে ভারতীয় সেনাদের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। দেশ দুটির সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তা মেটানোর জোর চেষ্টাও চলছে। এরই অংশ হিসেবে গত ৫ জুন কোর কমান্ডার স্তরে বৈঠক হয়েছে। তারপর এ প্রথম বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন ভারতের সেনাপ্রধান। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘চীনের সঙ্গে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নিরন্তর আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য মিটিয়ে ফেলা যাবে বলে তিনি আশাবাদী।’

ভারতীয় এ সংবাদ মাধ্যটির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান জেনারেল এমএম নারাভানে বলেছেন, জেনারেল এমএম নারাভানে বলেন, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দুই দেশেরই জ্যেষ্ঠ মিলিটারি কমান্ডারদের মধ্যে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। তার ফলে যে যে বিষয়ে মতবিরোধ ছিল তা আপাতত সমঝোতা করে একটা ফয়সালায় আসা গেছে। আমি সবাইকে একথা বলে আশ্বস্ত করতে চাই, চীনের সঙ্গে আমাদের সীমান্তের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা একাধিক বার আলোচনা করেছি, কর্পস কমান্ডার স্তরের সঙ্গে কথা থেকে শুরু করে সমমানের কমান্ডারদের মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ইদানীং বেশ কয়েকটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। আমরা আশাবাদী যে, এই চলতি সংলাপের মধ্য দিয়ে আমাদের (ভারত ও চীন) সমস্যাগুলোর উত্তরণ ঘটবে।’

শুক্রবার উভয় দেশের মধ্যে মেজর জেনারেল পর্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। মে মাসের শুরুর দিকে লাদাখের প্যানগং লেক অঞ্চলে চীনা হেলিকপ্টার উড্ডয়নের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। তারপরই সমাধান খুঁজতে বৈঠকে বসে দুই দেশ। সরকারি সূত্রের বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে, লাদাখের কিছু অংশে ভারতীয় ও চীনা সেনারা পারস্পরিক নিষ্পত্তির পথে হেঁটেছে। একটি ‘উল্লেখযোগ্য’ সমাধানের লক্ষ্যে চীনা সেনারা তিন কিলোমিটার ‘পিছু হটেছে’। ভারতের পক্ষ থেকে কিছু সেনাকে ফেরানো হয়েছে। সোমবার ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, যত দ্রুত সম্ভব চীনের সঙ্গে কয়েক দশকের পুরনো সীমান্ত সমস্যার সমাধান চায় ভারত। উত্তেজনা কমাতে চীন-ভারত যে বৈঠক হয় তার একদিন পরই ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বৈঠকটি ‘সৌহার্দপূর্ণ ও ইতিবাচক পরিবেশে’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উভয়পক্ষই একমত হয়েছে, সংকটের প্রাথমিক সমাধানের লক্ষ্যে দুই দেশই আরও চেষ্টা করবে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই দেশই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) ধরে শান্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে আলোচনা করেছে। সমস্যা সমাধানে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধান এমন মন্তব্য করলেও আগের বৈঠকে চীনা বাহিনী লাদাখ নিয়ে অনড় মনোভাব দেখিয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের সেনা সূত্র। পাহাড়ের যে অংশগুলো প্যাংগং লেকের মধ্যে ঢুকে রয়েছে সেগুলোকেই ফিঙ্গার বলা হয়। ৫ মে থেকে চীন ওই এলাকা দখল করে বসে থাকায় ফিঙ্গার-ফোর থেকে ফিঙ্গার-এইট পর্যন্ত ভারতীয় বাহিনীর নজরদারি বন্ধ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে চীনা বাহিনী সেখানে পাথরের বাঙ্কার এবং কাঁচা ঘর তৈরি করেছে। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে মোদি সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছে দেশটির বিরোধী দলের রাজনীতিবিদরা।