কার্যকর পদক্ষেপ নিলে ৫ জনের জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো প্রতিবেদন

রাজধানীর গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুন লাগার পেছনে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি যেমন ছিল তেমনি হাসপাতালটির অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামাদির বেশিরভাগই ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ ও অকেজো। অগ্নি-দুর্ঘটনা চলাকালে আগুন নেভাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে নিহত পাঁচজনের জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো।

এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও রাজউকের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে মোট তিনটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ফায়ার সার্ভিস ছাড়াও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও রাজউকের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। অন্যদিকে হাসপাতালের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান। আর রিটকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ ও অ্যাডভোকেট নিয়াজ মাহমুদ। ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে কর্মরত ব্যক্তিরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র থেকে ধোঁয়া দেখামাত্র প্রাথমিকভাবে আগুন নেভানোর চেষ্টা, ইমার্জেন্সি এলার্ম বাজানো, রোগী অপসারণ ও হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ দলকে উপস্থিত হতে জরুরি অনুরোধ করলে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড ও রোগীদের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব  হতো। এছাড়া, ওই এসি হতে আগুনের স্ফূলিঙ্গ নির্গত হতে দেখেও কর্মরত উপস্থিত ব্যক্তিদের (ডাক্তার, তিনজন নার্স ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী) আগুন নেভানোর ব্যাপারে ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা অন্যান্য আগুন নেভানোর সরঞ্জামাদি ব্যবহারে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। ফলে অগ্নিকাণ্ডের সময় আগুন নেভাতে উপস্থিত ব্যক্তিদের গাফিলতির কারণে ঘটনাটি ঘটে বলে তদন্ত কমিটি মনে করে। অগ্নিকাণ্ডের সময় অগ্নি-নিরাপত্তা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক ফায়ার সেফটি অফিসার ও অগ্নি-নির্বাপণ দলের সদস্যদের উপস্থিত থাকা বাঞ্ছনীয় ছিল। আইসোলেশন সেন্টারে সব ধরনের অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্থাপন করা দরকার ছিল। ইউনাইটেড হাসপাতালটি স্পর্শকাতর এলাকায় অবস্থিত। সেখানে দেশি-বিদেশি গণ্যমান্য ব্যক্তিরা চিকিৎসা নিতে আসেন। এ ধরনের স্পর্শকাতর এলাকায় সেবা প্রদানে পর্যাপ্ত অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া এ ধরনের আইসোলেশন সেন্টার নির্মাণ ঠিক হয়নি। অস্থায়ী সরঞ্জামাদি দিয়ে তৈরি না করে স্থায়ী অথবা অগ্নি-প্রতিরোধযোগ্য নির্মাণসামগ্রী দিয়ে এ ধরনের আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করা উচিত ছিল। কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, ইউনাইটেড হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে সার্বক্ষণিক ফায়ার সেফটি অফিসার, কার্যকরী অগ্নিনির্বাপণকারী দলের সদস্যদের সরঞ্জামসহ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। নিয়মিত অগ্নিনির্বাপণ প্রশিক্ষণ ও ফায়ার অ্যান্ড ইভাকুয়েশন ড্রিল করা এবং যথাযথভাবে রেজিস্ট্রার রক্ষণাবেক্ষণ করার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এছাড়া, হাসপাতালে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা রোগীর সঙ্গে অবস্থান করেন, তাদের মধ্য হতে ২৫ ভাগ জনবলকে অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এছাড়া বিএনএসবির আলোকে ভবনের বেজমেন্টে কোন স্থাপনা যেমন- অফিস, স্টোর, কিচেন, ডাইনিং ইত্যাদি স্থাপন করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং বেজমেন্ট শুধুমাত্র গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে।

রাজউকের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ‘স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসোলেশন সেন্টার নির্মাণ করে। কিন্তু রাজউকের কোন ধরনের অনুমোদন তারা নেয়নি।’

ডিএমপির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘অগ্নিকাণ্ড সংঘটন ও তা প্রতিরোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল।’

 নিয়াজ মাহমুদ বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ তিনটি সংস্থার তদন্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করেছে। এসব রিপোর্ট পর্যালোচনা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যাখ্যা দাখিল করবে বলে আদালতকে জানিয়েছে। তবে তিনটি রিপোর্টেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা পাওয়া গেছে। তাই আমরা আদালতের কাছে আজই  প্রয়োজনীয় আদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আদালত আদেশের জন্য আগামী ২২ জুন দিন ধার্য করেন।

গত ২৭ মে রাতে রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে আগুনে পাঁচ রোগীর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন সরকারি সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

আরও খবর
আ’লীগ তথ্য গোপনের রাজনীতি করে না : কাদের
বাজেটে লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে বাস্তবের ফারাক রয়েছে : আতিউর
চট্টগ্রামে করোনা আইসোলেশন সেন্টার
শিবলী রুবাইয়াতসহ তিনজন হলেন ঢাবি সিন্ডিকেট সদস্য
মৃত্যুর মিছিলে সাবেক সেনাসদস্য, চিকিৎসক আ’লীগ নেতা
মায়ের কবরে শায়িত মোহাম্মদ নাসিম
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহর দাফন সম্পন্ন
করোনাযুদ্ধে মৃত পুলিশ সদস্যের ছেলের জন্মদিনে সহকর্মীরা
বরিশাল জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে মহাসড়কে বাজার
যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
মাউন্ট এডোরায় প্লাজমা থেরাপি শুরু
নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান আইজিপির
৫ ডাকাত গ্রেফতার ৩০ লাখ টাকা উদ্ধার
অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে শত শত গরুর মৃত্যু

সোমবার, ১৫ জুন ২০২০ , ১ আষাঢ় ১৪২৭, ২২ শাওয়াল ১৪৪১

ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুন

কার্যকর পদক্ষেপ নিলে ৫ জনের জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো প্রতিবেদন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

রাজধানীর গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুন লাগার পেছনে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি যেমন ছিল তেমনি হাসপাতালটির অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামাদির বেশিরভাগই ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ ও অকেজো। অগ্নি-দুর্ঘটনা চলাকালে আগুন নেভাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে নিহত পাঁচজনের জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো।

এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও রাজউকের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে মোট তিনটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ফায়ার সার্ভিস ছাড়াও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও রাজউকের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। অন্যদিকে হাসপাতালের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান। আর রিটকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ ও অ্যাডভোকেট নিয়াজ মাহমুদ। ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে কর্মরত ব্যক্তিরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র থেকে ধোঁয়া দেখামাত্র প্রাথমিকভাবে আগুন নেভানোর চেষ্টা, ইমার্জেন্সি এলার্ম বাজানো, রোগী অপসারণ ও হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ দলকে উপস্থিত হতে জরুরি অনুরোধ করলে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড ও রোগীদের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব  হতো। এছাড়া, ওই এসি হতে আগুনের স্ফূলিঙ্গ নির্গত হতে দেখেও কর্মরত উপস্থিত ব্যক্তিদের (ডাক্তার, তিনজন নার্স ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী) আগুন নেভানোর ব্যাপারে ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা অন্যান্য আগুন নেভানোর সরঞ্জামাদি ব্যবহারে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। ফলে অগ্নিকাণ্ডের সময় আগুন নেভাতে উপস্থিত ব্যক্তিদের গাফিলতির কারণে ঘটনাটি ঘটে বলে তদন্ত কমিটি মনে করে। অগ্নিকাণ্ডের সময় অগ্নি-নিরাপত্তা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক ফায়ার সেফটি অফিসার ও অগ্নি-নির্বাপণ দলের সদস্যদের উপস্থিত থাকা বাঞ্ছনীয় ছিল। আইসোলেশন সেন্টারে সব ধরনের অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্থাপন করা দরকার ছিল। ইউনাইটেড হাসপাতালটি স্পর্শকাতর এলাকায় অবস্থিত। সেখানে দেশি-বিদেশি গণ্যমান্য ব্যক্তিরা চিকিৎসা নিতে আসেন। এ ধরনের স্পর্শকাতর এলাকায় সেবা প্রদানে পর্যাপ্ত অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া এ ধরনের আইসোলেশন সেন্টার নির্মাণ ঠিক হয়নি। অস্থায়ী সরঞ্জামাদি দিয়ে তৈরি না করে স্থায়ী অথবা অগ্নি-প্রতিরোধযোগ্য নির্মাণসামগ্রী দিয়ে এ ধরনের আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করা উচিত ছিল। কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, ইউনাইটেড হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে সার্বক্ষণিক ফায়ার সেফটি অফিসার, কার্যকরী অগ্নিনির্বাপণকারী দলের সদস্যদের সরঞ্জামসহ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। নিয়মিত অগ্নিনির্বাপণ প্রশিক্ষণ ও ফায়ার অ্যান্ড ইভাকুয়েশন ড্রিল করা এবং যথাযথভাবে রেজিস্ট্রার রক্ষণাবেক্ষণ করার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এছাড়া, হাসপাতালে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা রোগীর সঙ্গে অবস্থান করেন, তাদের মধ্য হতে ২৫ ভাগ জনবলকে অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এছাড়া বিএনএসবির আলোকে ভবনের বেজমেন্টে কোন স্থাপনা যেমন- অফিস, স্টোর, কিচেন, ডাইনিং ইত্যাদি স্থাপন করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং বেজমেন্ট শুধুমাত্র গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে।

রাজউকের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ‘স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসোলেশন সেন্টার নির্মাণ করে। কিন্তু রাজউকের কোন ধরনের অনুমোদন তারা নেয়নি।’

ডিএমপির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘অগ্নিকাণ্ড সংঘটন ও তা প্রতিরোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল।’

 নিয়াজ মাহমুদ বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ তিনটি সংস্থার তদন্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করেছে। এসব রিপোর্ট পর্যালোচনা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যাখ্যা দাখিল করবে বলে আদালতকে জানিয়েছে। তবে তিনটি রিপোর্টেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা পাওয়া গেছে। তাই আমরা আদালতের কাছে আজই  প্রয়োজনীয় আদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আদালত আদেশের জন্য আগামী ২২ জুন দিন ধার্য করেন।

গত ২৭ মে রাতে রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে আগুনে পাঁচ রোগীর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন সরকারি সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।