৫ ডাকাত গ্রেফতার ৩০ লাখ টাকা উদ্ধার

গাজীপুরে একটি গার্মেন্ট কোম্পানির গাড়িতে গুলি চালিয়ে ৮০ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় ৫ ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন র‌্যাব-১। গতকাল ডেমরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ এ চক্রকে গ্রেফতার হয়। এ সময় ডাকাতি হওয়া ৮০ লাখ টাকার মধ্যে ৩০ লাখ টাকার বেশি উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো. রিয়াজ (৩৬), মো. সাগর মাহমুদ (৪০), মো. জলিল (৪০), মো. ইসমাইল হোসেন ওরফে মামুন (৪৫), মনোরঞ্জন মন্ডল ওরফে বাবু (৪১)।

র‌্যাব জানায়, গত ৭ জুন গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সুরিচালা এলাকার ইনক্রেডিবল ফ্যাশনস্ লিমিটেড গার্মেন্টের মাইক্রোবাস যোগে বহনকৃত প্রায় ৮০ লাখ ২২ হাজার টাকা ডাকাতি হয়। এ ঘটনায় জেনারেল ম্যানেজার (প্রোডাকশন) মো. খোরশেদ আলম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশের পাশাপাশি মামলাটি ছায়াতদন্ত শুরু করে র‌্যাব। র‌্যাব জানায়, ছায়াতদন্ত করে গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দল রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত মো. রিয়াজ, মো. সাগর মাহমুদ, মো. জলিল, মো. ইসমাইল হোসেন মামুন, মনোরঞ্জন মন্ডল বাবুকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে নগদ ৩০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, ১১০০ ইউএস ডলার, ১টি প্রিমিও প্রাইভেট কার ৩টি মোটরসাইকেল ১টি বিদেশি রিভলবার, ১টি বিদেশি পিস্তল, ২১ রাউন্ড গোলাবারুদ, ২টি ম্যাগজিন, ৩টি পাসপোর্ট এবং ৩৮টি মোবাইল ফোন।

গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, প্রায় ৪-৫ মাস পূর্বে চক্রটির মূল হোতা গ্রেফতারকৃত জলিলের পরিকল্পনায় ঈসমাইল হোসেন ওরফে মামুন এবং মনোরঞ্জন মন্ডল ওরফে বাবু টার্গেট সিলেকশনের কাজ শুরু করে। তারা গাজীপুর, আশুলিয়া, কালিয়াকৈর এলাকায় বেশকিছু গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি শ্রমিকদের বেতন সংগ্রহ প্রক্রিয়া যাচাই-বাছাই করে ইনক্রেডিবল গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিকে টার্গেট করে। তাদের পর্যবেক্ষণে উদঘাটিত হয় যে, ফ্যাক্টরি শ্রমিকদের বেতন ক্যাশে প্রদান করা হয়। এছাড়া ব্যাংক হতে টাকা সংগ্রহের সময় কোন অস্ত্রধারী নিরাপত্তা প্রহরী থাকে না। পরিকল্পনা মোতাবেক গ্রেফতারকৃত মনোরঞ্জন মন্ডল বাবু গার্মেন্টে একজন সাব-কন্টাক্টরের কর্মী হিসেবে মার্চের ২য় সপ্তাহ থেকে আসা যাওয়া শুরু করে। সে গার্মেন্টসের অন্য কর্মী, নিরাপত্তা প্রহরী, পার্শ্ববর্তী দোকান ও অন্য সূত্র থেকে কৌশলে যাবতীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করে। চক্রটি প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাতির পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। গ্রেফতারকৃতরা আরও জানায় যে, তাদের এপ্রিল এবং মে মাসের ডাকাতির পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। কারণ এপ্রিল মাসের বেতন দেয়া হয়েছিল মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে এবং মে মাসের বেতন সংগ্রহ করা হয়েছিল পুলিশ স্কটের মাধ্যমে। এরপর তারা জুনের বেতন সংগ্রহকে টার্গেট করে। তারা জানতে পারে যে, জুন মাসের বেতন সংগ্রহের সময় পুলিশ স্কট থাকবে না। এই তথ্য অনুযায়ী তারা ৭ জুন ডাকাতির মূল পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ঘটনার প্রায় ১২-১৫ দিন আগে গ্রেফতারকৃত মো. ঈসমাইল হোসেন মামুন, মো. জলিল এবং মনোরঞ্জন মন্ডল বাবু মাঠপর্যায়ে রেকী করে ডাকাতির জন্য সুবিধাজনক বিভিন্ন স্থান নির্বাচন করে। গ্রেফতারকৃতরা জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন মূল দলটি প্রথমে ৩টি মোটরসাইকেল যোগে একটি সুবিধাজনক স্থানে মিলিত হয়। মোটরযানের পেছনের আরোহীরা সবাই অস্ত্র বহন করেছিল। এছাড়া সাগর মাহমুদ একটি বড় হ্যামার সঙ্গে নেয়। অন্যদিকে টাকা বহনের জন্য একটি প্রাইভেটকার জামগড়া নামক স্থানে অপেক্ষা করছিল। গ্রেফতারকৃত মনোরঞ্জন মন্ডল বাবু গার্মেন্টসের নিকটবর্তী স্থান থেকে হালনাগাদ তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করছিল। সংঘবদ্ধ গ্রুপ মোটরসাইকেল দিয়ে মাইক্রোবাসের গড়িরোধ করে। পরে ডাকাত দলের সদস্যরা লোহার হ্যামার দিয়ে মাইক্রোবাসের গ্লাস ভেঙে ফেলে এবং গুলিবর্ষণ করে। এতে ফ্যাক্টরির সহকারী মার্চেন্ডাইজার রাজীব মজুমদার শুভ জখম হয়। পরে তারা অস্ত্রের মুখে সব অর্থ ডাকাতি করে চলে যায়। মাইক্রোবাস অনুসরণ, আটকানো এবং গুলি চালিয়ে ডাকাতি করে অর্থ লুট করে পালিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ৫ থেকে ১০ মিনিট সময় নিয়েছে চক্রটি। এই দলের মূল হোতা গ্রেফতারকৃত জলিলের বিরুদ্ধে বরিশালের বাবুগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা, ছিনতাই, প্রতারণাসহ নানা অপরাধের মামলা রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকায় গ্রেফতার এড়াতে ২০১৬ সালে সে প্রবাসে পাড়ি জমায়। সে বিগত ৭-৮ মাস পূর্বে দেশে ফিরে আসে আবার দল গঠন করে। এই সিন্ডিকেটে ডাকাতি, ছিনতাই ছাড়াও সদস্যরা নিজে বা বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মাদক, চাঁদাবাজি ও পতিতাবৃত্তির ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে।

আরও খবর
আ’লীগ তথ্য গোপনের রাজনীতি করে না : কাদের
বাজেটে লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে বাস্তবের ফারাক রয়েছে : আতিউর
চট্টগ্রামে করোনা আইসোলেশন সেন্টার
শিবলী রুবাইয়াতসহ তিনজন হলেন ঢাবি সিন্ডিকেট সদস্য
মৃত্যুর মিছিলে সাবেক সেনাসদস্য, চিকিৎসক আ’লীগ নেতা
মায়ের কবরে শায়িত মোহাম্মদ নাসিম
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহর দাফন সম্পন্ন
করোনাযুদ্ধে মৃত পুলিশ সদস্যের ছেলের জন্মদিনে সহকর্মীরা
বরিশাল জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে মহাসড়কে বাজার
যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
মাউন্ট এডোরায় প্লাজমা থেরাপি শুরু
নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান আইজিপির
কার্যকর পদক্ষেপ নিলে ৫ জনের জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো প্রতিবেদন
অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে শত শত গরুর মৃত্যু

সোমবার, ১৫ জুন ২০২০ , ১ আষাঢ় ১৪২৭, ২২ শাওয়াল ১৪৪১

গাজীপুরে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতনের টাকা লুট

৫ ডাকাত গ্রেফতার ৩০ লাখ টাকা উদ্ধার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

গাজীপুরে একটি গার্মেন্ট কোম্পানির গাড়িতে গুলি চালিয়ে ৮০ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় ৫ ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন র‌্যাব-১। গতকাল ডেমরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ এ চক্রকে গ্রেফতার হয়। এ সময় ডাকাতি হওয়া ৮০ লাখ টাকার মধ্যে ৩০ লাখ টাকার বেশি উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো. রিয়াজ (৩৬), মো. সাগর মাহমুদ (৪০), মো. জলিল (৪০), মো. ইসমাইল হোসেন ওরফে মামুন (৪৫), মনোরঞ্জন মন্ডল ওরফে বাবু (৪১)।

র‌্যাব জানায়, গত ৭ জুন গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সুরিচালা এলাকার ইনক্রেডিবল ফ্যাশনস্ লিমিটেড গার্মেন্টের মাইক্রোবাস যোগে বহনকৃত প্রায় ৮০ লাখ ২২ হাজার টাকা ডাকাতি হয়। এ ঘটনায় জেনারেল ম্যানেজার (প্রোডাকশন) মো. খোরশেদ আলম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশের পাশাপাশি মামলাটি ছায়াতদন্ত শুরু করে র‌্যাব। র‌্যাব জানায়, ছায়াতদন্ত করে গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দল রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত মো. রিয়াজ, মো. সাগর মাহমুদ, মো. জলিল, মো. ইসমাইল হোসেন মামুন, মনোরঞ্জন মন্ডল বাবুকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে নগদ ৩০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, ১১০০ ইউএস ডলার, ১টি প্রিমিও প্রাইভেট কার ৩টি মোটরসাইকেল ১টি বিদেশি রিভলবার, ১টি বিদেশি পিস্তল, ২১ রাউন্ড গোলাবারুদ, ২টি ম্যাগজিন, ৩টি পাসপোর্ট এবং ৩৮টি মোবাইল ফোন।

গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, প্রায় ৪-৫ মাস পূর্বে চক্রটির মূল হোতা গ্রেফতারকৃত জলিলের পরিকল্পনায় ঈসমাইল হোসেন ওরফে মামুন এবং মনোরঞ্জন মন্ডল ওরফে বাবু টার্গেট সিলেকশনের কাজ শুরু করে। তারা গাজীপুর, আশুলিয়া, কালিয়াকৈর এলাকায় বেশকিছু গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি শ্রমিকদের বেতন সংগ্রহ প্রক্রিয়া যাচাই-বাছাই করে ইনক্রেডিবল গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিকে টার্গেট করে। তাদের পর্যবেক্ষণে উদঘাটিত হয় যে, ফ্যাক্টরি শ্রমিকদের বেতন ক্যাশে প্রদান করা হয়। এছাড়া ব্যাংক হতে টাকা সংগ্রহের সময় কোন অস্ত্রধারী নিরাপত্তা প্রহরী থাকে না। পরিকল্পনা মোতাবেক গ্রেফতারকৃত মনোরঞ্জন মন্ডল বাবু গার্মেন্টে একজন সাব-কন্টাক্টরের কর্মী হিসেবে মার্চের ২য় সপ্তাহ থেকে আসা যাওয়া শুরু করে। সে গার্মেন্টসের অন্য কর্মী, নিরাপত্তা প্রহরী, পার্শ্ববর্তী দোকান ও অন্য সূত্র থেকে কৌশলে যাবতীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করে। চক্রটি প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাতির পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। গ্রেফতারকৃতরা আরও জানায় যে, তাদের এপ্রিল এবং মে মাসের ডাকাতির পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। কারণ এপ্রিল মাসের বেতন দেয়া হয়েছিল মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে এবং মে মাসের বেতন সংগ্রহ করা হয়েছিল পুলিশ স্কটের মাধ্যমে। এরপর তারা জুনের বেতন সংগ্রহকে টার্গেট করে। তারা জানতে পারে যে, জুন মাসের বেতন সংগ্রহের সময় পুলিশ স্কট থাকবে না। এই তথ্য অনুযায়ী তারা ৭ জুন ডাকাতির মূল পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ঘটনার প্রায় ১২-১৫ দিন আগে গ্রেফতারকৃত মো. ঈসমাইল হোসেন মামুন, মো. জলিল এবং মনোরঞ্জন মন্ডল বাবু মাঠপর্যায়ে রেকী করে ডাকাতির জন্য সুবিধাজনক বিভিন্ন স্থান নির্বাচন করে। গ্রেফতারকৃতরা জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন মূল দলটি প্রথমে ৩টি মোটরসাইকেল যোগে একটি সুবিধাজনক স্থানে মিলিত হয়। মোটরযানের পেছনের আরোহীরা সবাই অস্ত্র বহন করেছিল। এছাড়া সাগর মাহমুদ একটি বড় হ্যামার সঙ্গে নেয়। অন্যদিকে টাকা বহনের জন্য একটি প্রাইভেটকার জামগড়া নামক স্থানে অপেক্ষা করছিল। গ্রেফতারকৃত মনোরঞ্জন মন্ডল বাবু গার্মেন্টসের নিকটবর্তী স্থান থেকে হালনাগাদ তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করছিল। সংঘবদ্ধ গ্রুপ মোটরসাইকেল দিয়ে মাইক্রোবাসের গড়িরোধ করে। পরে ডাকাত দলের সদস্যরা লোহার হ্যামার দিয়ে মাইক্রোবাসের গ্লাস ভেঙে ফেলে এবং গুলিবর্ষণ করে। এতে ফ্যাক্টরির সহকারী মার্চেন্ডাইজার রাজীব মজুমদার শুভ জখম হয়। পরে তারা অস্ত্রের মুখে সব অর্থ ডাকাতি করে চলে যায়। মাইক্রোবাস অনুসরণ, আটকানো এবং গুলি চালিয়ে ডাকাতি করে অর্থ লুট করে পালিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ৫ থেকে ১০ মিনিট সময় নিয়েছে চক্রটি। এই দলের মূল হোতা গ্রেফতারকৃত জলিলের বিরুদ্ধে বরিশালের বাবুগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা, ছিনতাই, প্রতারণাসহ নানা অপরাধের মামলা রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকায় গ্রেফতার এড়াতে ২০১৬ সালে সে প্রবাসে পাড়ি জমায়। সে বিগত ৭-৮ মাস পূর্বে দেশে ফিরে আসে আবার দল গঠন করে। এই সিন্ডিকেটে ডাকাতি, ছিনতাই ছাড়াও সদস্যরা নিজে বা বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মাদক, চাঁদাবাজি ও পতিতাবৃত্তির ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে।