দশ দিনে মৃত্যু তিনশ’ আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে দিশেহারা কৃষক
রংপুরসহ বিভাগের ৮ জেলায় অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১০ দিনে ৩শ’ গরু ও বাছুর মারা গেছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। রংপুর প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের রংপুর বিভাগের উপ-পরিচালক ডা, হাবিবুল ইসলাম মহামারী আকারে রোগ ছড়িয়ে পড়ার কথা স্বীকার করে প্রাথমিকভাবে এ রোগের নাম লাম্পি স্কিন ডিজিস বলে জানিয়েছেন।
এদিকে কোরবানি ঈদের আগে আকস্মিকভাবে অজ্ঞাত রোগে হাজার হাজার গরু আক্রান্ত হয়ে পড়ায় গরু খামারীসহ কৃষকদের মাঝে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিন রংপুরের বদরগজ্ঞ উপজেলার কৃষ্ণপুর, রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর তারাগজ্ঞ উপজেলার কুর্শা, ইকরচালি সয়ারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খামারী ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে প্রথমে গরুর তীব্র মাত্রার জ্বর আসে এরপর আস্তে আস্তে সারা শরীরে চামড়ায় গোটা গোটা হয়ে যায়। গলা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পানি নামে ফলে গরু ঘাস বা পোয়াল ও ভূষি কিছুই খেতে পারে না। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে গিয়ে কোন প্রতিকার পাচ্ছে না তারা। ফলে পল্লী চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হয়ে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ও ইনজেকশন দিলে কিছুটা উপকার হলেও তেমন কোন উল্লেখযোগ্য উপকার হচ্ছে না।
তারাগজ্ঞের ইকরচালির কৃষক খলিল অভিযোগ করেন, তার ৩টি গরু অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আসন্ন কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে যতœ করে গরু বড় করেছি একটু বেশি দাম পাবার আশায় কিন্তু গরুর সারা শরীরে গোটা গোটা দানার মতো ফুলে যাওয়ায় কোরবানির হাটে দাম পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা তার। একই কথা জানালেন সয়ার এলাকার কৃষক সালাম, আবদুল বাকীসহ অনেকে। তারা জানালো বাছুরগুলো আক্রান্ত হলে ২/৩ দিনের মধ্যেই মারা যাচ্ছে। তাদের এলাকায় গত ৭ দিনে ৭টি গরু ও বাছুর মারা গেছে।
অন্যদিকে রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর এলাকার গিয়ে দেখা গেছে শত শত গরু গোয়াল ঘরে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়ছে। কৃষক সখিনা বেগম জানান, তার ৪টি বলদ গরু কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে তৈরি করেছিলাম। কিন্তু ২টি গরু অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ায় চাহিদার অর্ধেক দামও পাবেনা বলে আশঙ্কা তার। একই কথা জানালেন কৃষক সোলায়মান আলী।
বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, উত্তরের আটটি জেলার প্রতিটি উপজেলায় এখন গরুর এই দূরারোগ্য ব্যাধি দেখা দিয়েছে। কোন প্রতিষেধক না থাকায় পালিত গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন এই অঞ্চলের মানুষ। অনেকে না বুঝেই পল্লী চিকিৎসককে মোটা অংকের টাকা দিয়ে হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত। তবে প্রাণী সম্পদ অধিদফতর বলছে, একমাত্র সচেতন থাকাই এই রোগের প্রতিকার। রংপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এএসএম সাদেকুর রহমান জানান তাদের অফিসে প্রতিদিনই অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত গরু নিয়ে আসছেন চিকিৎসার জন্য খামার মালিক ও কৃষকরা। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। তবে মশা-মাছির আক্রমণ থেকে রক্ষা ও পরিচর্যা করলে কিছুটা হলেও রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে জানান তিনি। বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, সংক্রামক ব্যাধি লাম্পি রোধে গোয়াল ঘরের মশা-মাছি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সচেতন থাকতে হবে। সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক ডা. মো. হাবিবুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান এ রোগের প্রকৃত কোন ওষুধ নেই। এ রোগটি ইতিপূর্বে ঝিনাইদহে দেখা দিয়েছিল এখন রংপুর বিভাগের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ গরুকে আমরা প্রতিষেধক ইনজেকশন দিয়েছি। তবে কৃষকদের সচেতনতা বাড়াতে হবে আক্রান্ত হবার সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসা দিলে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
সোমবার, ১৫ জুন ২০২০ , ১ আষাঢ় ১৪২৭, ২২ শাওয়াল ১৪৪১
দশ দিনে মৃত্যু তিনশ’ আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে দিশেহারা কৃষক
লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
রংপুরসহ বিভাগের ৮ জেলায় অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১০ দিনে ৩শ’ গরু ও বাছুর মারা গেছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। রংপুর প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের রংপুর বিভাগের উপ-পরিচালক ডা, হাবিবুল ইসলাম মহামারী আকারে রোগ ছড়িয়ে পড়ার কথা স্বীকার করে প্রাথমিকভাবে এ রোগের নাম লাম্পি স্কিন ডিজিস বলে জানিয়েছেন।
এদিকে কোরবানি ঈদের আগে আকস্মিকভাবে অজ্ঞাত রোগে হাজার হাজার গরু আক্রান্ত হয়ে পড়ায় গরু খামারীসহ কৃষকদের মাঝে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিন রংপুরের বদরগজ্ঞ উপজেলার কৃষ্ণপুর, রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর তারাগজ্ঞ উপজেলার কুর্শা, ইকরচালি সয়ারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খামারী ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে প্রথমে গরুর তীব্র মাত্রার জ্বর আসে এরপর আস্তে আস্তে সারা শরীরে চামড়ায় গোটা গোটা হয়ে যায়। গলা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পানি নামে ফলে গরু ঘাস বা পোয়াল ও ভূষি কিছুই খেতে পারে না। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে গিয়ে কোন প্রতিকার পাচ্ছে না তারা। ফলে পল্লী চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হয়ে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ও ইনজেকশন দিলে কিছুটা উপকার হলেও তেমন কোন উল্লেখযোগ্য উপকার হচ্ছে না।
তারাগজ্ঞের ইকরচালির কৃষক খলিল অভিযোগ করেন, তার ৩টি গরু অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আসন্ন কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে যতœ করে গরু বড় করেছি একটু বেশি দাম পাবার আশায় কিন্তু গরুর সারা শরীরে গোটা গোটা দানার মতো ফুলে যাওয়ায় কোরবানির হাটে দাম পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা তার। একই কথা জানালেন সয়ার এলাকার কৃষক সালাম, আবদুল বাকীসহ অনেকে। তারা জানালো বাছুরগুলো আক্রান্ত হলে ২/৩ দিনের মধ্যেই মারা যাচ্ছে। তাদের এলাকায় গত ৭ দিনে ৭টি গরু ও বাছুর মারা গেছে।
অন্যদিকে রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর এলাকার গিয়ে দেখা গেছে শত শত গরু গোয়াল ঘরে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়ছে। কৃষক সখিনা বেগম জানান, তার ৪টি বলদ গরু কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে তৈরি করেছিলাম। কিন্তু ২টি গরু অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ায় চাহিদার অর্ধেক দামও পাবেনা বলে আশঙ্কা তার। একই কথা জানালেন কৃষক সোলায়মান আলী।
বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, উত্তরের আটটি জেলার প্রতিটি উপজেলায় এখন গরুর এই দূরারোগ্য ব্যাধি দেখা দিয়েছে। কোন প্রতিষেধক না থাকায় পালিত গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন এই অঞ্চলের মানুষ। অনেকে না বুঝেই পল্লী চিকিৎসককে মোটা অংকের টাকা দিয়ে হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত। তবে প্রাণী সম্পদ অধিদফতর বলছে, একমাত্র সচেতন থাকাই এই রোগের প্রতিকার। রংপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এএসএম সাদেকুর রহমান জানান তাদের অফিসে প্রতিদিনই অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত গরু নিয়ে আসছেন চিকিৎসার জন্য খামার মালিক ও কৃষকরা। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। তবে মশা-মাছির আক্রমণ থেকে রক্ষা ও পরিচর্যা করলে কিছুটা হলেও রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে জানান তিনি। বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, সংক্রামক ব্যাধি লাম্পি রোধে গোয়াল ঘরের মশা-মাছি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সচেতন থাকতে হবে। সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক ডা. মো. হাবিবুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান এ রোগের প্রকৃত কোন ওষুধ নেই। এ রোগটি ইতিপূর্বে ঝিনাইদহে দেখা দিয়েছিল এখন রংপুর বিভাগের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ গরুকে আমরা প্রতিষেধক ইনজেকশন দিয়েছি। তবে কৃষকদের সচেতনতা বাড়াতে হবে আক্রান্ত হবার সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসা দিলে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে জানান তিনি।