আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে হবে

দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের সংকট চলছে বহুদিন ধরে। গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী আমানত না পেয়ে অন্য ব্যাংকের আমানত ভাগানোর প্রতিযোগিতা চলছে ব্যাংকগুলোয়। এ পরিস্থিতির মধ্যেই ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। বছরে ১০ লাখ টাকার বেশি লেনদেন হয়- এমন হিসাবগুলোর ওপর ২০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।

ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর খবরটি দুর্ভাগ্যজনক। কয়েক বছর ধরেই দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানত প্রবৃদ্ধি কমছে। নেতিবাচক প্রচার ও সব লেনদেনে শুল্ক আদায়ের কারণে মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। ব্যাংকে টাকা রেখে মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে নামমাত্র। তার ওপর নানা ধরনের ফি ও ভ্যাট কেটে রাখছে ব্যাংক ও সরকার। দুই বছর আগে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে হুলস্থুল কা- ঘটেছে। এরপরও প্রস্তাবিত বাজেটে কেন আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, তা বোধগম্য নয়। এর মাধ্যমে মানুষের কাছে ব্যাংকিং লেনদেন ও আমানত নিয়ে নেতিবাচক বার্তা যাবে। ব্যাংক থেকে মানুষ টাকা তুলে নেয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

ঋণের সুদহার কমানোর জন্য দেশের সব ব্যাংকই আমানতের সুদহার সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনছে। এ অবস্থায় আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব যুক্তিসংগত নয়। এ অবস্থায় অপ্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে লেনদেন বেড়ে গেলে সেটি দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্যও খারাপ হবে। আবগারি শুল্ক আরোপের দর্শন হলো কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রিকে নিরুৎসাহিত করা। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যাংকে টাকা রাখা ও লেনদেনের ওপরই আবগারি শুল্ক কাটা হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে এ শুল্ক বাড়ানোও হচ্ছে। তার মানে ব্যাংকে টাকা রাখা এক ধরনের অপরাধ। এ অপরাধের জন্য আর্থিক শাস্তি বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। ব্যাংকে টাকা রেখে এখন যে হারে মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে, তার চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি। তার মানে ব্যাংকে টাকা রাখলে তার ক্ষয় হচ্ছে। এ সিদ্ধান্তে মানুষ ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেনে যে নিরুৎসাহিত হবে- সেটা চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। ব্যাংকে টাকা না রেখে মানুষ নিজেদের ঘরে জমা রাখবে। এতে দেশের ব্যাংকিং খাতে বিদ্যমান তারল্য সংকট আরো বহুগুণ বাড়বে।

ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট দেখা দিলে উদ্যোক্তারা যেমন প্রয়োজনের সময় অর্থ পাবে না, তেমনি আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সরকারও ব্যাংক ঋণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। আমরা আশা করব, সার্বিক বিবেচনায় ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর মতো সর্বনাশা পথ থেকে সরে আসা হবে। এ ধরনের অবাস্তব এবং অগ্রহণযোগ্য প্রস্তাব অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত।

সোমবার, ১৫ জুন ২০২০ , ১ আষাঢ় ১৪২৭, ২২ শাওয়াল ১৪৪১

আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে হবে

দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের সংকট চলছে বহুদিন ধরে। গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী আমানত না পেয়ে অন্য ব্যাংকের আমানত ভাগানোর প্রতিযোগিতা চলছে ব্যাংকগুলোয়। এ পরিস্থিতির মধ্যেই ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। বছরে ১০ লাখ টাকার বেশি লেনদেন হয়- এমন হিসাবগুলোর ওপর ২০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।

ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর খবরটি দুর্ভাগ্যজনক। কয়েক বছর ধরেই দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানত প্রবৃদ্ধি কমছে। নেতিবাচক প্রচার ও সব লেনদেনে শুল্ক আদায়ের কারণে মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। ব্যাংকে টাকা রেখে মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে নামমাত্র। তার ওপর নানা ধরনের ফি ও ভ্যাট কেটে রাখছে ব্যাংক ও সরকার। দুই বছর আগে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে হুলস্থুল কা- ঘটেছে। এরপরও প্রস্তাবিত বাজেটে কেন আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, তা বোধগম্য নয়। এর মাধ্যমে মানুষের কাছে ব্যাংকিং লেনদেন ও আমানত নিয়ে নেতিবাচক বার্তা যাবে। ব্যাংক থেকে মানুষ টাকা তুলে নেয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

ঋণের সুদহার কমানোর জন্য দেশের সব ব্যাংকই আমানতের সুদহার সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনছে। এ অবস্থায় আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব যুক্তিসংগত নয়। এ অবস্থায় অপ্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে লেনদেন বেড়ে গেলে সেটি দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্যও খারাপ হবে। আবগারি শুল্ক আরোপের দর্শন হলো কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রিকে নিরুৎসাহিত করা। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যাংকে টাকা রাখা ও লেনদেনের ওপরই আবগারি শুল্ক কাটা হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে এ শুল্ক বাড়ানোও হচ্ছে। তার মানে ব্যাংকে টাকা রাখা এক ধরনের অপরাধ। এ অপরাধের জন্য আর্থিক শাস্তি বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। ব্যাংকে টাকা রেখে এখন যে হারে মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে, তার চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি। তার মানে ব্যাংকে টাকা রাখলে তার ক্ষয় হচ্ছে। এ সিদ্ধান্তে মানুষ ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেনে যে নিরুৎসাহিত হবে- সেটা চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। ব্যাংকে টাকা না রেখে মানুষ নিজেদের ঘরে জমা রাখবে। এতে দেশের ব্যাংকিং খাতে বিদ্যমান তারল্য সংকট আরো বহুগুণ বাড়বে।

ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট দেখা দিলে উদ্যোক্তারা যেমন প্রয়োজনের সময় অর্থ পাবে না, তেমনি আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সরকারও ব্যাংক ঋণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। আমরা আশা করব, সার্বিক বিবেচনায় ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর মতো সর্বনাশা পথ থেকে সরে আসা হবে। এ ধরনের অবাস্তব এবং অগ্রহণযোগ্য প্রস্তাব অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত।