আগে মানুষ বাঁচানো, পরে আয়ের চিন্তা : অর্থমন্ত্রী

করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে এবার জাতীয় বাজেটে আগে মানুষ বাঁচাতে খরচ করে পরে আয়ের বিষয়ে চিন্তা করার কথা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন। গতকাল সংসদে সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অর্থমন্ত্রী বলেন, অন্যবার আমরা রেভিনিউ অর্জন করি এবং রেভিনিউ খরচ করি। এবার আমরা রেভিনিউ আগে খরচ করব তারপরে রেভিনিউ অর্জন করব। আমরা এখন খরচ না করলে মানুষ বাঁচবে কী করে আর মানুষ বাঁচাতে না পারলে দেশ কার জন্য দেশের বাজেট কার জন্য কাজেই এই বিবেচনা মাথায় রেখে আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আসুন সবাই আমরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই বাজেট যেন পরিচালনা করি। এই বছরটি একটি ভিন্ন বছর। করোনাভাইরাসের দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হলে সবাইকে নিয়ে কাজটি করতে হবে।

অর্থমন্ত্রী ছাড়াও সম্পূরক বাজেট নিয়ে পাঁচজন সংসদ সদস্য আলোচনায় অংশ নেন। তারা হলেন, সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবুল হাসান মাহমুদ আলী, তাহজীব আলম সিদ্দিকী ও ওয়াসিকা আয়েশা খান এবং বিএনপির হারুন-অর-রশিদ। এবার সম্পূরক বাজেট নিয়ে মোট ৭০ মিনিট আলোচনা হয়। সোমবার একদিনই সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা করে এটি পাস করা হয়।

এবারের বাজেটকে ‘মানবিক বাজেট’ অভিহিত করে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, এবারের বাজেটে মানুষকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। মানুষ না থাকলে বাজেট কার জন্য বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে দেশের মানুষকে আমাদের বাঁচাতে হবে। এবছর বাজেটের সংযোজন-বিয়োজন বা সমন্বয়ের কারণটি আমাদের সকলের জানা। বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এর বিবেচনায় আমরা সম্পূরক বাজেটে রাজস্ব আয় ও ব্যয় কিছু সমন্বয় করার চিন্তা করেছি। সম্পূরক বাজেট করোনা দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্যসেবা খাত, স্বাস্থ্য চিকিৎসা বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে অতিরিক্ত তিন হাজার ৬০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

বাজেট না দেয়া হলে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ তোলার কোন ব্যবস্থা নেই উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের এবারের (আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছর) বাজেটে সব প্রাধিকার পাচ্ছে দেশের মানুষ। দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। এই করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে আমাদের চেষ্টা থাকবে মানুষকে যতটা সম্ভব রক্ষা করা। আল্লাহর অশেষ রহমত থেকে আমরা সেই কাজটি করব। সব সময় আমাদের বাজেটে অর্থনৈতিক উন্নয়নগুলোর কম্পোনেন্ট প্রাধিকার পায়, কিন্তু এবার আমরা তা করিনি। এবার মানুষকে প্রাধিকার দিয়েছি। এটা কেবল অর্থনৈতিক বাজেট নয়। এটা একদিকে অর্থনৈতিক বাজেট পাশাপাশি মানবিক বাজেট।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী উপস্থাপন করেছেন, তাতে অর্থনীতিতে মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার ওপর জোর দেয়ার কথা বলা হয়েছে, বরাদ্দে মনোযাগ পেয়েছে স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা আর কৃষি খাত। মহামারীর মধ্যে গত তিন মাস ধরেই ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় স্থবির, শিল্প উৎপাদনও গতিহারা। আমদানি-রপ্তানি, রেমিট্যান্সসহ অর্থনীতির সব সূচকই বাজে অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যের চেয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছে এনবিআর। তারপরও অর্থমন্ত্রী বাজেটের পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় নির্বাহের জন্য ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হিসেবে আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন, যার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।

তবে বাজেটকে ‘মানুষকে রক্ষা করার’ বাজেট হিসেবে বর্ণনা করে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে মুস্তফা কামাল বলেন, সেই চিন্তা থেকেই আমরা প্রথমে টাকা খরচ করব। পরে আয় করব। আগে মানুষকে বাঁচাতে হবে। তারপর টাকা জোগাড় করব। আগের দিন সংসদে দেয়া বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, এবার দেশের অর্থনীতিতে ‘সেরা প্রবৃদ্ধিটি’ উপহার দেয়ার প্রত্যয় তার ছিল। সরকারের ইপ্সিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ২ থেকে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু করোনার প্রভাব সারাবিশ্বের অর্থনীতির হিসাব-নিকাশকে সম্পূর্ণভাবে ওলটপালট করে দিয়েছে। তারপরও ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করার কথা জানিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, ইকোনমিস্ট গত ২ মে ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে নবম স্থানে রেখেছে। তাদের হিসাবে আমরা অন্যদের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছি। তবে তার ওই লক্ষ্যের সঙ্গে একমত হতে পারেননি অর্থনীতিবিদদের অনেকেই। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ওই লক্ষ্যকে বলেছেন ‘অবাস্তব’। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর প্রশ্ন করেছেন- ৮.২% প্রবৃদ্ধি ‘কোন যাদুবলে আসবে’

মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০২০ , ২ আষাঢ় ১৪২৭, ২৩ শাওয়াল ১৪৪

আগে মানুষ বাঁচানো, পরে আয়ের চিন্তা : অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে এবার জাতীয় বাজেটে আগে মানুষ বাঁচাতে খরচ করে পরে আয়ের বিষয়ে চিন্তা করার কথা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন। গতকাল সংসদে সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অর্থমন্ত্রী বলেন, অন্যবার আমরা রেভিনিউ অর্জন করি এবং রেভিনিউ খরচ করি। এবার আমরা রেভিনিউ আগে খরচ করব তারপরে রেভিনিউ অর্জন করব। আমরা এখন খরচ না করলে মানুষ বাঁচবে কী করে আর মানুষ বাঁচাতে না পারলে দেশ কার জন্য দেশের বাজেট কার জন্য কাজেই এই বিবেচনা মাথায় রেখে আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আসুন সবাই আমরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই বাজেট যেন পরিচালনা করি। এই বছরটি একটি ভিন্ন বছর। করোনাভাইরাসের দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হলে সবাইকে নিয়ে কাজটি করতে হবে।

অর্থমন্ত্রী ছাড়াও সম্পূরক বাজেট নিয়ে পাঁচজন সংসদ সদস্য আলোচনায় অংশ নেন। তারা হলেন, সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবুল হাসান মাহমুদ আলী, তাহজীব আলম সিদ্দিকী ও ওয়াসিকা আয়েশা খান এবং বিএনপির হারুন-অর-রশিদ। এবার সম্পূরক বাজেট নিয়ে মোট ৭০ মিনিট আলোচনা হয়। সোমবার একদিনই সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা করে এটি পাস করা হয়।

এবারের বাজেটকে ‘মানবিক বাজেট’ অভিহিত করে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, এবারের বাজেটে মানুষকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। মানুষ না থাকলে বাজেট কার জন্য বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে দেশের মানুষকে আমাদের বাঁচাতে হবে। এবছর বাজেটের সংযোজন-বিয়োজন বা সমন্বয়ের কারণটি আমাদের সকলের জানা। বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এর বিবেচনায় আমরা সম্পূরক বাজেটে রাজস্ব আয় ও ব্যয় কিছু সমন্বয় করার চিন্তা করেছি। সম্পূরক বাজেট করোনা দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্যসেবা খাত, স্বাস্থ্য চিকিৎসা বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে অতিরিক্ত তিন হাজার ৬০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

বাজেট না দেয়া হলে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ তোলার কোন ব্যবস্থা নেই উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের এবারের (আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছর) বাজেটে সব প্রাধিকার পাচ্ছে দেশের মানুষ। দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। এই করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে আমাদের চেষ্টা থাকবে মানুষকে যতটা সম্ভব রক্ষা করা। আল্লাহর অশেষ রহমত থেকে আমরা সেই কাজটি করব। সব সময় আমাদের বাজেটে অর্থনৈতিক উন্নয়নগুলোর কম্পোনেন্ট প্রাধিকার পায়, কিন্তু এবার আমরা তা করিনি। এবার মানুষকে প্রাধিকার দিয়েছি। এটা কেবল অর্থনৈতিক বাজেট নয়। এটা একদিকে অর্থনৈতিক বাজেট পাশাপাশি মানবিক বাজেট।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী উপস্থাপন করেছেন, তাতে অর্থনীতিতে মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার ওপর জোর দেয়ার কথা বলা হয়েছে, বরাদ্দে মনোযাগ পেয়েছে স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা আর কৃষি খাত। মহামারীর মধ্যে গত তিন মাস ধরেই ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় স্থবির, শিল্প উৎপাদনও গতিহারা। আমদানি-রপ্তানি, রেমিট্যান্সসহ অর্থনীতির সব সূচকই বাজে অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যের চেয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছে এনবিআর। তারপরও অর্থমন্ত্রী বাজেটের পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় নির্বাহের জন্য ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হিসেবে আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন, যার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।

তবে বাজেটকে ‘মানুষকে রক্ষা করার’ বাজেট হিসেবে বর্ণনা করে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে মুস্তফা কামাল বলেন, সেই চিন্তা থেকেই আমরা প্রথমে টাকা খরচ করব। পরে আয় করব। আগে মানুষকে বাঁচাতে হবে। তারপর টাকা জোগাড় করব। আগের দিন সংসদে দেয়া বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, এবার দেশের অর্থনীতিতে ‘সেরা প্রবৃদ্ধিটি’ উপহার দেয়ার প্রত্যয় তার ছিল। সরকারের ইপ্সিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ২ থেকে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু করোনার প্রভাব সারাবিশ্বের অর্থনীতির হিসাব-নিকাশকে সম্পূর্ণভাবে ওলটপালট করে দিয়েছে। তারপরও ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করার কথা জানিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, ইকোনমিস্ট গত ২ মে ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে নবম স্থানে রেখেছে। তাদের হিসাবে আমরা অন্যদের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছি। তবে তার ওই লক্ষ্যের সঙ্গে একমত হতে পারেননি অর্থনীতিবিদদের অনেকেই। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ওই লক্ষ্যকে বলেছেন ‘অবাস্তব’। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর প্রশ্ন করেছেন- ৮.২% প্রবৃদ্ধি ‘কোন যাদুবলে আসবে’