করোনা সংকটের সময়ে কর্মীদের বেতন ১৫ শতাংশ কমানোর পরামর্শ দিয়ে সব ব্যাংকে চিঠি দিয়েছিল বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে কর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন মহল থেকেও নানা ধরনের সমালোচনা শুরু হয়। এরপর তাদের এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সংগঠনটি।
জানা যায়, সংগঠনটি ব্যাংক কর্মীদের বেতন-ভাতা কমানোসহ পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্ট, ইনসেন্টিভ বোনাস বন্ধ করাসহ ১৩ দফা সুপারিশ করেছিল। এ বিষয়ে বিএবি ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানরা একসঙ্গে বসেছিলাম। একটি ইনফরমাল আলোচনা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করা যায় তার একটা সম্ভাব্য উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে কোন ব্যাংককে এ চিঠি বা নির্দেশনা দেয়া হয়নি। কারণ, ব্যাংক কীভাবে চলবে সেটা ব্যাংকের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা রয়েছে। তাদের বিনিয়োগ ও স্যালারির ধরনও ভিন্ন। ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলবে। এক্ষেত্রে বিএবি কোন হস্তক্ষেপ করবে না।
এমটিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসে অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন, অনেক ব্যাংকার মারা গেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এই সময় বেতন-ভাতা কমানো কোনমতেই ঠিক হবে না। এতে তাদের মনোবল ভেঙে যাবে। কর্মস্পৃহাও কমে যাবে
এদিকে ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকরা বেতন কমাতে চায় এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় গতকাল বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একাধিক ব্যাংকারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার মহামারীতে এমনিতেই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। যেকোন সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। এখন যদি ব্যাংক বেতন-ভাতা কমায় তাহলে তাদের ওপর এটি বাড়তি মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপ ছাড়া কিছুই না। তারা আরও জানান, মাসিক বেতন একটা বাজেটের মধ্য দিয়ে খরচ করতে হয়। এখন হঠাৎ করে বেতন কমানো হলে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হবে। ব্যাংকগুলো প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার মুনাফা করে যার পেছনে কাজ করেন কর্মীরাই। ব্যাংক তো লসে নেই যে কর্মীর বেতন-ভাতা কমাতে হবে। মহামারীর কারণে ব্যবসা কিছুটা কমবে। তবে লোকসান হবে না। তাই এ ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত এ খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। এই মুহূর্তে কর্মী ছাঁটাই বা বেতন-ভাতা না কমানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বেতন-ভাতা কমানোসহ ১৩ দফা সুপারিশ করে বিএবির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়। সংগঠনটির সেক্রেটারি জেনারেল স্বাক্ষরিত চিঠিতে ব্যাংকগুলোতে চলমান নিয়োগসহ সব নিয়োগ বন্ধ রাখার সুপারিশও করা হয়েছে। এছাড়া নতুন শাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং ও উপশাখা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। বিএবি বলেছে, করোনাভাইরাসে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মী ছাঁটাই না করে ব্যাংককে সচল রাখার জন্য প্রস্তাবগুলো দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সুপারিশ বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে বিএবি।
১৩ দফা সুপারিশ সম্বলিত চিঠিতে আরও আছে, সব প্রকার স্থায়ী সম্পদ ক্রয় বন্ধ রাখা, কর্মীদের লোকাল ও বিদেশি প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখা, সব বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ রাখা, সব রকম সিএসআর, ডোনেশন, চ্যারিটি বন্ধ রাখা, পত্রিকা (প্রিন্ট ও অনলাইন) ও টেলিভিশনে সব বিজ্ঞাপন প্রদান বন্ধ রাখা, সব কাস্টমার গেট-টুগেদার বন্ধ রাখা। কর্মকর্তাদের গেট-টুগেদার ও ব্যবস্থাপক সম্মেলন বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে এসব সম্মেলন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে নিজস্ব পরিম-লে করতে হবে। এ ছাড়া বড় ধরনের ব্যয় (আইটি সম্পর্কিত, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ক্রয়) আপাতত সীমিত রাখা এবং অন্য সব ব্যয় কমিয়ে আনা। ব্যাংকের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। কমে গেছে বিনিয়োগের ওপর সুদের হারও। ব্যাংকের ঋণ আদায় প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। এমন পরিস্থিতির কারণে এ সুপারিশ করা হয়েছে- বলছে বিএবি।
এদিকে বেতন-ভাতা কমাতে বেসরকারি সব ব্যাংকের ওপর বিএবি তার নির্দেশনা চাপানোর চেষ্টা করছিল। তবে এতে ব্যাংক কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হওয়ায় সে অবস্থা থেকে পিছু হটে ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের সংগঠনটি। বিএবি এমন নির্দেশনা দিতে পারে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলার পর তারা এমন সিদ্ধান্ত থেকে বিরত রয়েছে। যদিও ব্যয় কমাতে বিভিন্ন ব্যাংক ইতোমধ্যে কর্মীদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাবে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কর্মীদের ১৬ শতাংশ বেতন-ভাতা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসরকারি খাতের দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড। এতে কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০২০ , ২ আষাঢ় ১৪২৭, ২৩ শাওয়াল ১৪৪
অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |
করোনা সংকটের সময়ে কর্মীদের বেতন ১৫ শতাংশ কমানোর পরামর্শ দিয়ে সব ব্যাংকে চিঠি দিয়েছিল বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে কর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন মহল থেকেও নানা ধরনের সমালোচনা শুরু হয়। এরপর তাদের এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সংগঠনটি।
জানা যায়, সংগঠনটি ব্যাংক কর্মীদের বেতন-ভাতা কমানোসহ পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্ট, ইনসেন্টিভ বোনাস বন্ধ করাসহ ১৩ দফা সুপারিশ করেছিল। এ বিষয়ে বিএবি ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানরা একসঙ্গে বসেছিলাম। একটি ইনফরমাল আলোচনা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করা যায় তার একটা সম্ভাব্য উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে কোন ব্যাংককে এ চিঠি বা নির্দেশনা দেয়া হয়নি। কারণ, ব্যাংক কীভাবে চলবে সেটা ব্যাংকের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা রয়েছে। তাদের বিনিয়োগ ও স্যালারির ধরনও ভিন্ন। ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলবে। এক্ষেত্রে বিএবি কোন হস্তক্ষেপ করবে না।
এমটিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসে অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন, অনেক ব্যাংকার মারা গেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এই সময় বেতন-ভাতা কমানো কোনমতেই ঠিক হবে না। এতে তাদের মনোবল ভেঙে যাবে। কর্মস্পৃহাও কমে যাবে
এদিকে ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকরা বেতন কমাতে চায় এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় গতকাল বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একাধিক ব্যাংকারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার মহামারীতে এমনিতেই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। যেকোন সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। এখন যদি ব্যাংক বেতন-ভাতা কমায় তাহলে তাদের ওপর এটি বাড়তি মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপ ছাড়া কিছুই না। তারা আরও জানান, মাসিক বেতন একটা বাজেটের মধ্য দিয়ে খরচ করতে হয়। এখন হঠাৎ করে বেতন কমানো হলে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হবে। ব্যাংকগুলো প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার মুনাফা করে যার পেছনে কাজ করেন কর্মীরাই। ব্যাংক তো লসে নেই যে কর্মীর বেতন-ভাতা কমাতে হবে। মহামারীর কারণে ব্যবসা কিছুটা কমবে। তবে লোকসান হবে না। তাই এ ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত এ খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। এই মুহূর্তে কর্মী ছাঁটাই বা বেতন-ভাতা না কমানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বেতন-ভাতা কমানোসহ ১৩ দফা সুপারিশ করে বিএবির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়। সংগঠনটির সেক্রেটারি জেনারেল স্বাক্ষরিত চিঠিতে ব্যাংকগুলোতে চলমান নিয়োগসহ সব নিয়োগ বন্ধ রাখার সুপারিশও করা হয়েছে। এছাড়া নতুন শাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং ও উপশাখা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। বিএবি বলেছে, করোনাভাইরাসে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মী ছাঁটাই না করে ব্যাংককে সচল রাখার জন্য প্রস্তাবগুলো দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সুপারিশ বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে বিএবি।
১৩ দফা সুপারিশ সম্বলিত চিঠিতে আরও আছে, সব প্রকার স্থায়ী সম্পদ ক্রয় বন্ধ রাখা, কর্মীদের লোকাল ও বিদেশি প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখা, সব বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ রাখা, সব রকম সিএসআর, ডোনেশন, চ্যারিটি বন্ধ রাখা, পত্রিকা (প্রিন্ট ও অনলাইন) ও টেলিভিশনে সব বিজ্ঞাপন প্রদান বন্ধ রাখা, সব কাস্টমার গেট-টুগেদার বন্ধ রাখা। কর্মকর্তাদের গেট-টুগেদার ও ব্যবস্থাপক সম্মেলন বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে এসব সম্মেলন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে নিজস্ব পরিম-লে করতে হবে। এ ছাড়া বড় ধরনের ব্যয় (আইটি সম্পর্কিত, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ক্রয়) আপাতত সীমিত রাখা এবং অন্য সব ব্যয় কমিয়ে আনা। ব্যাংকের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। কমে গেছে বিনিয়োগের ওপর সুদের হারও। ব্যাংকের ঋণ আদায় প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। এমন পরিস্থিতির কারণে এ সুপারিশ করা হয়েছে- বলছে বিএবি।
এদিকে বেতন-ভাতা কমাতে বেসরকারি সব ব্যাংকের ওপর বিএবি তার নির্দেশনা চাপানোর চেষ্টা করছিল। তবে এতে ব্যাংক কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হওয়ায় সে অবস্থা থেকে পিছু হটে ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের সংগঠনটি। বিএবি এমন নির্দেশনা দিতে পারে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলার পর তারা এমন সিদ্ধান্ত থেকে বিরত রয়েছে। যদিও ব্যয় কমাতে বিভিন্ন ব্যাংক ইতোমধ্যে কর্মীদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাবে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কর্মীদের ১৬ শতাংশ বেতন-ভাতা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসরকারি খাতের দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড। এতে কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।