ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন

আটলান্টায় কৃষ্ণাঙ্গ তরুণকে পুলিশই গুলি করে হত্যা করে

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী আটলান্টার ওয়েন্ডি শহরে কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন তরুণ রেইশার্ড ব্রুকসের মৃত্যু পেছন দিক থেকে লাগা গুলির আঘাতে হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ফুলটন কাউন্টি মেডিকেল এক্সামিনারের দফতরের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে এটি নিশ্চিত করা হয়েছে। গত শুক্রবার স্থানীয় সময় মধ্যরাতে নগরীর একটি ফাস্ট ফুড রেস্তোরাঁর কাছের গাড়ি পার্কিং লটের সামনে শ্বেতাঙ্গ এক পুলিশ কর্মকর্তার গুলিতে ২৭ বছর বয়সী ব্রুকস নিহত হন। রয়টার্স ।

বার্তা সংস্থাটি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলেছে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে (২৫ মে) দেশটির মিনেসোটার নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিন। এর জেরে ওইদিন রাত থেকে টানা বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ আন্দোলনে রূপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অব্যাহত রয়েছে। এই উত্তাল আন্দোলনের মধ্যে মাত্র ১৮ দিনের মাথায় আটলান্টার ওয়েন্ডি শহরে গত শুক্রবার রাতে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশের গুলিতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন রেইশার্ড ব্রুকস। এ ঘটনার পর আটলান্টাজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এর জেরে নগরীর পুলিশ প্রধান পদত্যাগ করেন। এদিকে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহভাজন পুলিশ কর্মকর্তাকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে হত্যাকাণ্ডের দু’দিন পর রোববার ব্রুকসের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এ তদন্ত প্রতিবেদনে আগ্নেয়াস্ত্রের দুটি গুলিতে হওয়া ক্ষত থেকে রক্তপাত ও দেহের ভেতরে হওয়া জখমের কারণে ব্রুকসের মৃত্যু হয় বলে জানানো হয়েছে। যেভাবে ব্রুকসের মৃত্যু হয়েছে তা হত্যাকাণ্ড বলে ফুলটন কাউন্টি মেডিকেল এক্সামিনারের দফতর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়েছে। এদিকে রয়টার্স জানিয়েছে, ব্রুকসের মৃত্যুতে আটলান্টায় আবারও বর্ণবাদ ও পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। আটলান্টায় ফাস্ট ফুড চেইনশপ ওয়েন্ডির একটি রেস্তোরাঁর সামনে পুলিশের গুলিতে ব্রুকসের মৃত্যু হয়। তাদের রেস্তোরাঁর সামনে রাস্তায় কেউ একজন গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েছে, ওয়েন্ডির এক কর্মী ফোনে কর্তৃপক্ষকে এমনটি জানানোর পর পুলিশ সেখানে যায়।

পুলিশ কর্মকর্তার শরীরে লাগানো ক্যামেরা ও একটি নজরদারি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, প্রথমে বন্ধুত্বপূর্ণভাবেই তারা কথাবার্তা বলছিলেন, অ্যালকোহল (অথবা মাদক) পরীক্ষার সময় ব্রুকস সহযোগিতা করেন এবং তার কন্যার জন্মদিন নিয়ে কথাবার্তা বলেন।

কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা যখন ব্রুকসকে গ্রেপ্তার করতে যান, তখন ব্রুকস তার সঙ্গে ও ঘটনাস্থলে থাকা আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ধস্তাধ্বস্তিতে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে মুক্ত হয়ে গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান দিয়ে দৌঁড় দেন, এ সময় তার হাতে পুলিশের একটি টেইজার গান ছিল বলে মনে হয়েছে। রেস্তোরাঁর সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দৌঁড়ানো অবস্থায়ই ব্রুকস পেছন দিকে ঘুরে তার পেছনে আসা পুলিশ কর্মকর্তার দিকে টেইজার গান তাক করছেন। আর ওই সময় দুই পুলিশের মধ্যে কোন একজন গুলি করলে ব্রুকস সেখানেই পড়ে যান। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আটলান্টার মেয়র কেইশা লান্স বটমস বলেছে, ‘ব্রুকসের সঙ্গে ঘটা এ ঘটনাটির ভিডিও দেখে আমার মন ভেঙে গেছে। এখানে আক্রমণাত্মক কিছু ছিল না।’

এদিকে গুলিবর্ষণের এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আটলান্টার পুলিশ প্রধান এরিকা শিল্ডস পদত্যাগ করেছেন। সন্দেহভাজন যে পুলিশ কর্মকর্তা ব্রুকসকে গুলি করেছেন তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনার সময় উপস্থিত অপর পুলিশ কর্মকর্তাকেও বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে আটলান্টার রাস্তায় নেমে আসা প্রতিবাদকারীরা দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনার দাবি তুলেছে।

মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০২০ , ২ আষাঢ় ১৪২৭, ২৩ শাওয়াল ১৪৪

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন

আটলান্টায় কৃষ্ণাঙ্গ তরুণকে পুলিশই গুলি করে হত্যা করে

সংবাদ ডেস্ক |

image

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী আটলান্টার ওয়েন্ডি শহরে কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন তরুণ রেইশার্ড ব্রুকসের মৃত্যু পেছন দিক থেকে লাগা গুলির আঘাতে হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ফুলটন কাউন্টি মেডিকেল এক্সামিনারের দফতরের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে এটি নিশ্চিত করা হয়েছে। গত শুক্রবার স্থানীয় সময় মধ্যরাতে নগরীর একটি ফাস্ট ফুড রেস্তোরাঁর কাছের গাড়ি পার্কিং লটের সামনে শ্বেতাঙ্গ এক পুলিশ কর্মকর্তার গুলিতে ২৭ বছর বয়সী ব্রুকস নিহত হন। রয়টার্স ।

বার্তা সংস্থাটি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলেছে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে (২৫ মে) দেশটির মিনেসোটার নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিন। এর জেরে ওইদিন রাত থেকে টানা বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ আন্দোলনে রূপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অব্যাহত রয়েছে। এই উত্তাল আন্দোলনের মধ্যে মাত্র ১৮ দিনের মাথায় আটলান্টার ওয়েন্ডি শহরে গত শুক্রবার রাতে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশের গুলিতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন রেইশার্ড ব্রুকস। এ ঘটনার পর আটলান্টাজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এর জেরে নগরীর পুলিশ প্রধান পদত্যাগ করেন। এদিকে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহভাজন পুলিশ কর্মকর্তাকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে হত্যাকাণ্ডের দু’দিন পর রোববার ব্রুকসের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এ তদন্ত প্রতিবেদনে আগ্নেয়াস্ত্রের দুটি গুলিতে হওয়া ক্ষত থেকে রক্তপাত ও দেহের ভেতরে হওয়া জখমের কারণে ব্রুকসের মৃত্যু হয় বলে জানানো হয়েছে। যেভাবে ব্রুকসের মৃত্যু হয়েছে তা হত্যাকাণ্ড বলে ফুলটন কাউন্টি মেডিকেল এক্সামিনারের দফতর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়েছে। এদিকে রয়টার্স জানিয়েছে, ব্রুকসের মৃত্যুতে আটলান্টায় আবারও বর্ণবাদ ও পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। আটলান্টায় ফাস্ট ফুড চেইনশপ ওয়েন্ডির একটি রেস্তোরাঁর সামনে পুলিশের গুলিতে ব্রুকসের মৃত্যু হয়। তাদের রেস্তোরাঁর সামনে রাস্তায় কেউ একজন গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েছে, ওয়েন্ডির এক কর্মী ফোনে কর্তৃপক্ষকে এমনটি জানানোর পর পুলিশ সেখানে যায়।

পুলিশ কর্মকর্তার শরীরে লাগানো ক্যামেরা ও একটি নজরদারি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, প্রথমে বন্ধুত্বপূর্ণভাবেই তারা কথাবার্তা বলছিলেন, অ্যালকোহল (অথবা মাদক) পরীক্ষার সময় ব্রুকস সহযোগিতা করেন এবং তার কন্যার জন্মদিন নিয়ে কথাবার্তা বলেন।

কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা যখন ব্রুকসকে গ্রেপ্তার করতে যান, তখন ব্রুকস তার সঙ্গে ও ঘটনাস্থলে থাকা আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ধস্তাধ্বস্তিতে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে মুক্ত হয়ে গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান দিয়ে দৌঁড় দেন, এ সময় তার হাতে পুলিশের একটি টেইজার গান ছিল বলে মনে হয়েছে। রেস্তোরাঁর সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দৌঁড়ানো অবস্থায়ই ব্রুকস পেছন দিকে ঘুরে তার পেছনে আসা পুলিশ কর্মকর্তার দিকে টেইজার গান তাক করছেন। আর ওই সময় দুই পুলিশের মধ্যে কোন একজন গুলি করলে ব্রুকস সেখানেই পড়ে যান। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আটলান্টার মেয়র কেইশা লান্স বটমস বলেছে, ‘ব্রুকসের সঙ্গে ঘটা এ ঘটনাটির ভিডিও দেখে আমার মন ভেঙে গেছে। এখানে আক্রমণাত্মক কিছু ছিল না।’

এদিকে গুলিবর্ষণের এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আটলান্টার পুলিশ প্রধান এরিকা শিল্ডস পদত্যাগ করেছেন। সন্দেহভাজন যে পুলিশ কর্মকর্তা ব্রুকসকে গুলি করেছেন তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনার সময় উপস্থিত অপর পুলিশ কর্মকর্তাকেও বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে আটলান্টার রাস্তায় নেমে আসা প্রতিবাদকারীরা দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনার দাবি তুলেছে।