জাপানে বিশাল পদযাত্রায় কয়েক হাজার মানুষ

উত্তর আমেরিকার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় পুলিশের নিপীড়নে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড হত্যা ঘিরে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে ফুঁসে ওঠা বিশ্বে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের ঢেউ লেগেছে পূর্ব এশিয়ার দেশ জাপানেও। রয়টার্স। বার্তা সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, গত রোববার বর্ণবাদী বৈষম্য ও পুলিশের বর্বরতা অবসানের দাবিতে রাজধানী টোকিওর বড় ধরনের পদযাত্রায় অংশ নিয়েছে দেশটির কয়েক হাজার মানুষ। শিবুয়া ও হারাজুকু এলাকার রাস্তায় পদযাত্রা করে এ বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তারা ‘বর্ণবাদ বিশ্ব মহামারী’, ‘ন্যায়বিচার নেই শান্তি নেই’ বলে স্লোগান দেয়। এ পদযাত্রার আয়োজকরা জানিয়েছেন, প্রায় ৩ হাজার ৫শ’ মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। তবে দেশটির পুলিশ বিক্ষোভকারী সংখ্যার বিষয়ে কোন হিসাব দেয়নি। পদযাত্রায় অংশ নেয়া এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘কেবল আমাদের প্রার্থনা জানানোটাই যথেষ্ট নয়। আমাদের সমাজে পরিবর্তন আনতে হবে। কেবল জর্জ ফ্লয়েডের জন্য না, তার আগে আরও যারা মারা গেছে তাদের জন্যও।’

গত ২৫ মে মিনেসোটার মিনেপোলিস শহরে প্রকাশ্যে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার হাঁটুর চাপে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান ৪৬ বছর বয়সী কৃষাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড। ওই ঘটনার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে পুলিশি নির্যাতন, বর্ণবাদ ও অসাম্যের বিরুদ্ধে উত্তাল বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ বিক্ষোভের আগুনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা শহরে পুলিশের গুলিতে আরেক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু। বিক্ষোভকারীরা বড় বড় মহাসড়ক অবরোধ করেছে এবং ওই কৃষ্ণাঙ্গ গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থান ওয়েন্ডি রেস্তোরাঁতেও আগুন দেয় ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা।

এরই ধারাবাহিকতায় জাপানের টোকিওতে রোববার বিক্ষোভে নামা অনেকেই নিজ দেশেও জাতিগত সমস্যার বিরুদ্ধে সরব হওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে। এক বিক্ষোভকারীর ভাষায়, ‘জাপানে কট্টর-ডানপন্থিদের কাছে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে অন্য সব জাতিগোষ্ঠী। জাপানে কোরীয় এবং চীনারা অনেক বেশি বিদ্বেষের শিকার হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। আমাদের এর বিরোধিতা করতে হবে।’

‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনকে

সিউলের মার্কিন দূতাবাসের সমর্থন

এর আগের দিন শনিবার দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের মার্কিন দূতাবাস ভবনে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলমান বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভের সমর্থনে বিশাল একটি ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া হয়। পরে টুইটারে এর ছবিও পোস্ট করা হয়েছে। গত রোববার দূতাবাসের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের অপর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের নিপীড়নে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী সমাজে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে মানুষ প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে। তবে মার্কিন দূতাবাসে ব্যানার টাঙানোর এমন পদক্ষেপকে দেশটির প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিপরীতে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়ার এক বিরল দৃষ্টান্ত হিসেবেই দেখা হচ্ছে। যে বিক্ষোভকারীদের ট্রাম্প ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়েছেন। শনিবার সাদা-কালোয় বড় বড় হরফে লেখা ওই ব্যানারের ছবি দিয়ে এক টুইটার বার্তায় সিউলের মার্কিন দূতাবাস লিখেছে, ‘ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য সোচ্চার হওয়া আমেরিকান বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসও একাত্ম হয়েছে।’

‘আরও বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ ব্যবস্থার দাবিতে এবং বর্ণবাদী অন্যায়, অবিচার ও পুলিশের বর্বরতার বিরুদ্ধে সংগ্রামের পাশে দাঁড়ানোরই প্রতীক আমাদের এই ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার ব্যানার।’

এরপর দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হ্যারি হ্যারিস এই বার্তা রিটুইট করে লিখেছেন, ‘মার্কিনীরা একটি মুক্ত এবং বৈচিত্র্যময় জাতি। এই বৈচিত্র্যই আমাদের শক্তি জোগায়।’

প্রসঙ্গত, তবে এর আগেও গত বছর সিউলের মার্কিন দূতাবাস এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের জন্য রেইনবো ব্যানার টাঙায়। এদিকে সিউলের মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারিসকে ২০১৮ সালে সিউলে নিয়োগ করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। চলতি বছর শেষের আগেই তিনি পদ থেকে সরে দাঁড়াতে চান বলে ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০২০ , ২ আষাঢ় ১৪২৭, ২৩ শাওয়াল ১৪৪

‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’

জাপানে বিশাল পদযাত্রায় কয়েক হাজার মানুষ

সংবাদ ডেস্ক |

উত্তর আমেরিকার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় পুলিশের নিপীড়নে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড হত্যা ঘিরে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে ফুঁসে ওঠা বিশ্বে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের ঢেউ লেগেছে পূর্ব এশিয়ার দেশ জাপানেও। রয়টার্স। বার্তা সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, গত রোববার বর্ণবাদী বৈষম্য ও পুলিশের বর্বরতা অবসানের দাবিতে রাজধানী টোকিওর বড় ধরনের পদযাত্রায় অংশ নিয়েছে দেশটির কয়েক হাজার মানুষ। শিবুয়া ও হারাজুকু এলাকার রাস্তায় পদযাত্রা করে এ বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তারা ‘বর্ণবাদ বিশ্ব মহামারী’, ‘ন্যায়বিচার নেই শান্তি নেই’ বলে স্লোগান দেয়। এ পদযাত্রার আয়োজকরা জানিয়েছেন, প্রায় ৩ হাজার ৫শ’ মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। তবে দেশটির পুলিশ বিক্ষোভকারী সংখ্যার বিষয়ে কোন হিসাব দেয়নি। পদযাত্রায় অংশ নেয়া এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘কেবল আমাদের প্রার্থনা জানানোটাই যথেষ্ট নয়। আমাদের সমাজে পরিবর্তন আনতে হবে। কেবল জর্জ ফ্লয়েডের জন্য না, তার আগে আরও যারা মারা গেছে তাদের জন্যও।’

গত ২৫ মে মিনেসোটার মিনেপোলিস শহরে প্রকাশ্যে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার হাঁটুর চাপে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান ৪৬ বছর বয়সী কৃষাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড। ওই ঘটনার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে পুলিশি নির্যাতন, বর্ণবাদ ও অসাম্যের বিরুদ্ধে উত্তাল বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ বিক্ষোভের আগুনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা শহরে পুলিশের গুলিতে আরেক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু। বিক্ষোভকারীরা বড় বড় মহাসড়ক অবরোধ করেছে এবং ওই কৃষ্ণাঙ্গ গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থান ওয়েন্ডি রেস্তোরাঁতেও আগুন দেয় ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা।

এরই ধারাবাহিকতায় জাপানের টোকিওতে রোববার বিক্ষোভে নামা অনেকেই নিজ দেশেও জাতিগত সমস্যার বিরুদ্ধে সরব হওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে। এক বিক্ষোভকারীর ভাষায়, ‘জাপানে কট্টর-ডানপন্থিদের কাছে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে অন্য সব জাতিগোষ্ঠী। জাপানে কোরীয় এবং চীনারা অনেক বেশি বিদ্বেষের শিকার হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। আমাদের এর বিরোধিতা করতে হবে।’

‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনকে

সিউলের মার্কিন দূতাবাসের সমর্থন

এর আগের দিন শনিবার দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের মার্কিন দূতাবাস ভবনে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলমান বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভের সমর্থনে বিশাল একটি ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া হয়। পরে টুইটারে এর ছবিও পোস্ট করা হয়েছে। গত রোববার দূতাবাসের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের অপর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের নিপীড়নে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী সমাজে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে মানুষ প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে। তবে মার্কিন দূতাবাসে ব্যানার টাঙানোর এমন পদক্ষেপকে দেশটির প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিপরীতে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়ার এক বিরল দৃষ্টান্ত হিসেবেই দেখা হচ্ছে। যে বিক্ষোভকারীদের ট্রাম্প ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়েছেন। শনিবার সাদা-কালোয় বড় বড় হরফে লেখা ওই ব্যানারের ছবি দিয়ে এক টুইটার বার্তায় সিউলের মার্কিন দূতাবাস লিখেছে, ‘ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য সোচ্চার হওয়া আমেরিকান বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসও একাত্ম হয়েছে।’

‘আরও বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ ব্যবস্থার দাবিতে এবং বর্ণবাদী অন্যায়, অবিচার ও পুলিশের বর্বরতার বিরুদ্ধে সংগ্রামের পাশে দাঁড়ানোরই প্রতীক আমাদের এই ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার ব্যানার।’

এরপর দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হ্যারি হ্যারিস এই বার্তা রিটুইট করে লিখেছেন, ‘মার্কিনীরা একটি মুক্ত এবং বৈচিত্র্যময় জাতি। এই বৈচিত্র্যই আমাদের শক্তি জোগায়।’

প্রসঙ্গত, তবে এর আগেও গত বছর সিউলের মার্কিন দূতাবাস এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের জন্য রেইনবো ব্যানার টাঙায়। এদিকে সিউলের মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারিসকে ২০১৮ সালে সিউলে নিয়োগ করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। চলতি বছর শেষের আগেই তিনি পদ থেকে সরে দাঁড়াতে চান বলে ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছেন।