একজন বিশ্বস্ত বন্ধুর বিদায়

আকাশ চৌধুরী

ভোররাতে ইন্টারনেটে যখন খবরটি দেখছিলাম যে সিলেটের সাবেক মেয়র কামরান বেঁচে নেই সেটি কোনভাবেই যেনো বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ঘুমের চোখে বার বার একাধিক অনলাইন দেখার পর মনের অজান্তেই কেঁদে উঠি। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছিল।

দেখছিলাম সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের চির বিদায়ের খবর। যিনি কিনা মিনিটের মধ্যেই যে কাউকে আপন করে নিতে পারতেন। তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও গুণেই তিনি সারাদেশে একজন সজ্জন, মাটি ও মানুষের নেতা হিসেবে পরিচিত লাভ করেন। সেই মানুষটিকেই কেড়ে নিলো করোনাভাইরাস। তার মৃত্যুর খবর যখন ছড়িয়ে পড়ে তখন সিলেট তো বটেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেই শোকের ছায়া নেমে আসে। করোনাভাইরাসের মধ্যেই হাজার হাজার মানুষ শোক জানাতে ভিড় করেন সিলেট নগরের তার বাসভবন এলাকায়।

বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে কখনও পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অধুনালুপ্ত সিলেট পৌরসভার একজন ওয়ার্ড কমিশনার থেকেই তার উত্থান। এরপর একে একে পৌরসভার চেয়ারম্যান এবং পরবর্তিতে দুইবার সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। সদা হাস্যোজ্জ্বল কামরানের কাছে যেতে কারও কোন অনুমতি লাগতো না। রিকশাওয়ালা-ভিক্ষুক থেকে শুরু করে যে কেউ তার কাছে গিয়ে সমস্যার কথা বলতে পারতেন। সমাধানও পেয়ে যেতেন তারা। তার ‘শত্রু’ পক্ষও বলতে পারবে না যে কামরানের কাছে গিয়ে কেউ খালি হাতে ফিরে এসেছে। সিলেটসহ দেশের যে কোন অনুষ্ঠানে ডাক পেলেই কামরান ছুটে যেতেন। কখনও ভাবতেন না যে তিনি একজন মেয়র! আর এ কারণেই দিন দিন তার জনপ্রিয়তা হয়ে উঠে আকাশচুম্বি। তার ভালোবাসার কারণেই আজ আমার মতো অনেকের চোখেই পানি ঝরছে। কামরান যখন মেয়র ছিলেন তখন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ছিলেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তিনিও স্বীকার করেছেন, ‘বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের মতো একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ, দক্ষ জনপ্রতিনিধিকে হারিয়ে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তিনি সিলেট পৌরসভা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের বারবার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসাবে নাগরবাসীর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন’।

বদরউদ্দিন আহমদ কামরান একজন চৌকস রাজনীতিবিদ ছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ১৯৭২ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি হিসেবে টানা মানুষের সেবা করে গেছেন। পরবর্তি সময়ে জনপ্রতিনিধি না থাকলেও তার কাছে সাধারণ মানুষের যাতায়াত বন্ধ ছিল না। আমরা লক্ষ্য করেছি সিলেটের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে তার ভূমিকা ছিল অন্যতম। রাজনৈতিক ময়দানেও প্রতিপক্ষকে আপন করে নিতেন। দলীয় যেকোন কোন্দলও সামাল দিয়েছেন নিজ দক্ষতায়। ফলে তার কিছু রাজনৈতিক ‘শত্রুও’ সৃষ্টি হয়েছিল। কামরান জনপ্রিয়তায় যখন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছিলেন তখনই তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ফলে ২০১৩ ও ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে নিজ দলেরই দু’একজন নেতার বিশ্বাসঘাতকতার কারণে মেয়র পদে তাকে পরাজিত হতে হয়-এমন খবর গণমাধ্যমে এসেছে। তবুও ভেঙে পড়েননি তিনি। দলীয় কর্মকাণ্ডে সবসময় ছিলেন প্রথম সারিতে।

বদরউদ্দিন আহমদ কামরান আওয়ামী লীগের একজন বিশ্বস্ত নেতা ছিলেন। দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তবে তাকে মূল্যায়নও করা হয়েছে। দলীয় অনেকে বিশ্বাসঘাতকতা করলেও দলের প্রধান শেখ হাসিনা বার বার তাকে মূল্যায়ন করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্তও তাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। তাইতো করোনাভাইরাসে আক্রমণের পর উন্নত চিকিৎসায় তার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছিল বিমানবাহিনীর এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স। আর এটাই ছিল তার জীবনের জন্য নিজ দল বা সরকারের শেষ মূল্যায়ন। তবে সিলেটবাসীও তাকে ভুলে যাননি। এ ধরনের একজন বিশ্বস্ত বন্ধুর বিদায়ে কাঁদছে গোটা সিলেটেও। সাবেক প্রিয় প্রতিষ্ঠান সিলেট সিটি করপোরেশনও তার মৃত্যুতে তিন দিনের শোক পালন করছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন তাকে জান্নাতবাসী করুন-এই কামনা করি।

আরও খবর
ইস্পাত কঠিন ঐক্য ও সচেতনতার প্রাচীর গড়ে আমরা আবার ফিরে পাবো চিরচেনা জগৎ : কাদের
আস্থা রাখুন বাংলাদেশ হার মানবে না : প্রধানমন্ত্রী
সিলেটের সাবেক মেয়র কামরানের মৃত্যু
বন্দুকযুদ্ধে ধর্ষক নিহত
সৌদি থেকে ফিরতে আগ্রহীদের আনা হবে পর্যায়ক্রমে
এবারের বাজেট মানবিক বাজেট : সংসদে অর্থমন্ত্রী
যুবলীগের চেষ্টায় বদলে গেল আখাউড়া হাসপাতাল
নকল ওষুধ তৈরির কারখানা : দশ কোটি টাকার ওষুধ জব্দ
টিআইবির অনেক রিপোর্টই একপেশে তথ্যমন্ত্রী
ডাক্তার নেই, এক্সরে মেশিন নষ্ট : করোনা আক্রান্ত ৪৩৯
করোনায় আরও দুই পুলিশ সদস্যের মৃত্যু
নমুনা পরীক্ষায় বিলম্ব ফলাফলে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত
একদিকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অন্যদিকে চলছে দখল প্রতিযোগিতা

মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০২০ , ২ আষাঢ় ১৪২৭, ২৩ শাওয়াল ১৪৪

একজন বিশ্বস্ত বন্ধুর বিদায়

আকাশ চৌধুরী

ভোররাতে ইন্টারনেটে যখন খবরটি দেখছিলাম যে সিলেটের সাবেক মেয়র কামরান বেঁচে নেই সেটি কোনভাবেই যেনো বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ঘুমের চোখে বার বার একাধিক অনলাইন দেখার পর মনের অজান্তেই কেঁদে উঠি। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছিল।

দেখছিলাম সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের চির বিদায়ের খবর। যিনি কিনা মিনিটের মধ্যেই যে কাউকে আপন করে নিতে পারতেন। তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও গুণেই তিনি সারাদেশে একজন সজ্জন, মাটি ও মানুষের নেতা হিসেবে পরিচিত লাভ করেন। সেই মানুষটিকেই কেড়ে নিলো করোনাভাইরাস। তার মৃত্যুর খবর যখন ছড়িয়ে পড়ে তখন সিলেট তো বটেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেই শোকের ছায়া নেমে আসে। করোনাভাইরাসের মধ্যেই হাজার হাজার মানুষ শোক জানাতে ভিড় করেন সিলেট নগরের তার বাসভবন এলাকায়।

বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে কখনও পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অধুনালুপ্ত সিলেট পৌরসভার একজন ওয়ার্ড কমিশনার থেকেই তার উত্থান। এরপর একে একে পৌরসভার চেয়ারম্যান এবং পরবর্তিতে দুইবার সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। সদা হাস্যোজ্জ্বল কামরানের কাছে যেতে কারও কোন অনুমতি লাগতো না। রিকশাওয়ালা-ভিক্ষুক থেকে শুরু করে যে কেউ তার কাছে গিয়ে সমস্যার কথা বলতে পারতেন। সমাধানও পেয়ে যেতেন তারা। তার ‘শত্রু’ পক্ষও বলতে পারবে না যে কামরানের কাছে গিয়ে কেউ খালি হাতে ফিরে এসেছে। সিলেটসহ দেশের যে কোন অনুষ্ঠানে ডাক পেলেই কামরান ছুটে যেতেন। কখনও ভাবতেন না যে তিনি একজন মেয়র! আর এ কারণেই দিন দিন তার জনপ্রিয়তা হয়ে উঠে আকাশচুম্বি। তার ভালোবাসার কারণেই আজ আমার মতো অনেকের চোখেই পানি ঝরছে। কামরান যখন মেয়র ছিলেন তখন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ছিলেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তিনিও স্বীকার করেছেন, ‘বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের মতো একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ, দক্ষ জনপ্রতিনিধিকে হারিয়ে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তিনি সিলেট পৌরসভা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের বারবার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসাবে নাগরবাসীর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন’।

বদরউদ্দিন আহমদ কামরান একজন চৌকস রাজনীতিবিদ ছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ১৯৭২ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি হিসেবে টানা মানুষের সেবা করে গেছেন। পরবর্তি সময়ে জনপ্রতিনিধি না থাকলেও তার কাছে সাধারণ মানুষের যাতায়াত বন্ধ ছিল না। আমরা লক্ষ্য করেছি সিলেটের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে তার ভূমিকা ছিল অন্যতম। রাজনৈতিক ময়দানেও প্রতিপক্ষকে আপন করে নিতেন। দলীয় যেকোন কোন্দলও সামাল দিয়েছেন নিজ দক্ষতায়। ফলে তার কিছু রাজনৈতিক ‘শত্রুও’ সৃষ্টি হয়েছিল। কামরান জনপ্রিয়তায় যখন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছিলেন তখনই তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ফলে ২০১৩ ও ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে নিজ দলেরই দু’একজন নেতার বিশ্বাসঘাতকতার কারণে মেয়র পদে তাকে পরাজিত হতে হয়-এমন খবর গণমাধ্যমে এসেছে। তবুও ভেঙে পড়েননি তিনি। দলীয় কর্মকাণ্ডে সবসময় ছিলেন প্রথম সারিতে।

বদরউদ্দিন আহমদ কামরান আওয়ামী লীগের একজন বিশ্বস্ত নেতা ছিলেন। দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তবে তাকে মূল্যায়নও করা হয়েছে। দলীয় অনেকে বিশ্বাসঘাতকতা করলেও দলের প্রধান শেখ হাসিনা বার বার তাকে মূল্যায়ন করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্তও তাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। তাইতো করোনাভাইরাসে আক্রমণের পর উন্নত চিকিৎসায় তার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছিল বিমানবাহিনীর এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স। আর এটাই ছিল তার জীবনের জন্য নিজ দল বা সরকারের শেষ মূল্যায়ন। তবে সিলেটবাসীও তাকে ভুলে যাননি। এ ধরনের একজন বিশ্বস্ত বন্ধুর বিদায়ে কাঁদছে গোটা সিলেটেও। সাবেক প্রিয় প্রতিষ্ঠান সিলেট সিটি করপোরেশনও তার মৃত্যুতে তিন দিনের শোক পালন করছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন তাকে জান্নাতবাসী করুন-এই কামনা করি।