ডাক্তার নেই, এক্সরে মেশিন নষ্ট : করোনা আক্রান্ত ৪৩৯

মৃত্যু ৮

লক্ষ্মীপুর জেলার জনসংখ্যা ১৬ লাখের বেশি। জনসংখ্যা দিন দিন বাড়লেও জেলায় চিকিৎসা সেবার মান বাড়েনি। জেলা সদরের একমাত্র হাসপাতালটি দৈন্যদশা বিরাজ করছে। ৫০ বেডের হাসপাতালকে ১শ’ বেড ঘোষণা দিলেও সেই অনুপাতে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা এখনও বাড়েনি। টানা হেঁচড়ার এই হাসপাতালে জোড়াতালি দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা চলছে। সেখানে ৩৫ জন ডাক্তার আছে। দরকার কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ জন। বেশির ভাগ মেডিকেল অফিসার। কনসালটেন্টের কাগজ-কলমে পদ আছে বাস্তবে নেই। এক্সরে মেশিন আছে ৫টা, চলে ২টা। তার মধ্যে একটা নষ্ট। অন্যটি ২টি নড়বড়ে। ফিল্মের অভাবে এক্সরে করা যায় না। সেখানে ডিজিটাল যুগের হাওয়া এখনও লাগেনি। উন্নত চিকিৎসার অভাবে মারাত্মক রোগীরা কেউ নোয়াখালী আবার কেউ ঢাকায় চিকিৎসা নেয়। গরিব রোগীদের কাহিল অবস্থা। সমস্যার কথা বললে বিপদে পড়তে হবে। এসব কারণে অনেকেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সাহস পান না। পরিচয় প্রকাশ করা হবে না এ শর্তে জেলা সদর হাসপাতালে এ সব তথ্য জানা গেছে। এটা আরও খারাপ হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের একাধিক সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুর জেলা শহরে এ হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ৩শ’ রোগী ভর্তি থাকে। আর বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেয় দিনে ১৫শ’ থেকে দুই হাজার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে কোন কনসালটেন্ট নেই। চক্ষু বিভাগে কোন কনসালটেন্ট নেই। নাক, কান, গলা বিভাগে একজন কনসালটেন্ট পোস্টিং দেয়া হলেও তিনি মারা গেছেন। অর্থপেডিক্স বিভাগে একজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। গাইনি ও মেডিসিন বিভাগে কনসালটেন্ট আছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য বর্তমান সরকারের ডিজিটালযুগে জেলার এই হাসপাতালে এক্সরে বিভাগ এখনও এনালগ হিসেবে চলছে।

এ হাসপাতালে অসংক্রামণ রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও নতুন করে সংক্রামণ রোগীর (করোনা রোগী) চিকিৎসা করতে গিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হিমসিম খাচ্ছে। জেলায় ৪৩৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে অনেকেই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে পালিয়ে জেলায় গেছে। তাদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাসবাড়িতে গতকাল পর্যন্ত ৮ জন মারা গেছে। এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আক্রান্ত রোগীরা অনেকেই ভয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছে না। আবার করোনা রোগী শুনলে সমস্যা হবে। এ জন্য অনেকেই ভয়ে প্রকাশও করে না।

জেলার একজন ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ বলেন, ৫০ বেডের হাসপাতাল থেকে ১শ’ বেড বাড়ানো হয়েছে। সামনে ২৫০ বেডে উন্নীত করার কাজ চলমান। কিন্তু সেখানে ডাক্তার, বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসা সরঞ্জামের অপ্রতুল অবস্থার কারণে রোগীদের উন্নত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর জেলায় মেডিকেল কলেজ না থাকায় সেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাব রয়েছে। করোনা শনাক্ত করতে নোয়াখালীতে গিয়ে টেস্ট করতে হয়। এতে গ্রামগঞ্জের দরিদ্র রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে। করোনার কারণে এখন জেলার গ্রামগঞ্জে দরিদ্র কৃষকসহ নানা পেশার মানুষ উদ্বেগ ও উৎকষ্ঠায় দিন কাটছে। প্রাথমিক চিকিৎসা চলে গ্রামের সেই পুরনো হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে। সপ্তাহে প্রতি শুক্রবার ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম থেকে কিছু ডাক্তার গিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিক ও চেম্বারে বসেন। জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর চিকিৎসা ব্যবস্থার করুণ দশা। এক্সরে মেশিন নেই। প্যাথলিজি বা পরীক্ষা নিরীক্ষার অবস্থা অপ্রতুল। জেলার রামগঞ্জ, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগরে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। চিকিৎসার উন্নত ব্যবস্থা করার আপাতত কোন সম্ভবনা নেই। জেলার ভরসা একমাত্র সদর হাসপাতাল। সেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় রোগীদের মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।

আরও খবর
ইস্পাত কঠিন ঐক্য ও সচেতনতার প্রাচীর গড়ে আমরা আবার ফিরে পাবো চিরচেনা জগৎ : কাদের
আস্থা রাখুন বাংলাদেশ হার মানবে না : প্রধানমন্ত্রী
একজন বিশ্বস্ত বন্ধুর বিদায়
সিলেটের সাবেক মেয়র কামরানের মৃত্যু
বন্দুকযুদ্ধে ধর্ষক নিহত
সৌদি থেকে ফিরতে আগ্রহীদের আনা হবে পর্যায়ক্রমে
এবারের বাজেট মানবিক বাজেট : সংসদে অর্থমন্ত্রী
যুবলীগের চেষ্টায় বদলে গেল আখাউড়া হাসপাতাল
নকল ওষুধ তৈরির কারখানা : দশ কোটি টাকার ওষুধ জব্দ
টিআইবির অনেক রিপোর্টই একপেশে তথ্যমন্ত্রী
করোনায় আরও দুই পুলিশ সদস্যের মৃত্যু
নমুনা পরীক্ষায় বিলম্ব ফলাফলে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত
একদিকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অন্যদিকে চলছে দখল প্রতিযোগিতা

মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০২০ , ২ আষাঢ় ১৪২৭, ২৩ শাওয়াল ১৪৪

লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতাল

ডাক্তার নেই, এক্সরে মেশিন নষ্ট : করোনা আক্রান্ত ৪৩৯

মৃত্যু ৮

বাকিবিল্লাহ |

লক্ষ্মীপুর জেলার জনসংখ্যা ১৬ লাখের বেশি। জনসংখ্যা দিন দিন বাড়লেও জেলায় চিকিৎসা সেবার মান বাড়েনি। জেলা সদরের একমাত্র হাসপাতালটি দৈন্যদশা বিরাজ করছে। ৫০ বেডের হাসপাতালকে ১শ’ বেড ঘোষণা দিলেও সেই অনুপাতে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা এখনও বাড়েনি। টানা হেঁচড়ার এই হাসপাতালে জোড়াতালি দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা চলছে। সেখানে ৩৫ জন ডাক্তার আছে। দরকার কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ জন। বেশির ভাগ মেডিকেল অফিসার। কনসালটেন্টের কাগজ-কলমে পদ আছে বাস্তবে নেই। এক্সরে মেশিন আছে ৫টা, চলে ২টা। তার মধ্যে একটা নষ্ট। অন্যটি ২টি নড়বড়ে। ফিল্মের অভাবে এক্সরে করা যায় না। সেখানে ডিজিটাল যুগের হাওয়া এখনও লাগেনি। উন্নত চিকিৎসার অভাবে মারাত্মক রোগীরা কেউ নোয়াখালী আবার কেউ ঢাকায় চিকিৎসা নেয়। গরিব রোগীদের কাহিল অবস্থা। সমস্যার কথা বললে বিপদে পড়তে হবে। এসব কারণে অনেকেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সাহস পান না। পরিচয় প্রকাশ করা হবে না এ শর্তে জেলা সদর হাসপাতালে এ সব তথ্য জানা গেছে। এটা আরও খারাপ হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের একাধিক সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুর জেলা শহরে এ হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ৩শ’ রোগী ভর্তি থাকে। আর বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেয় দিনে ১৫শ’ থেকে দুই হাজার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে কোন কনসালটেন্ট নেই। চক্ষু বিভাগে কোন কনসালটেন্ট নেই। নাক, কান, গলা বিভাগে একজন কনসালটেন্ট পোস্টিং দেয়া হলেও তিনি মারা গেছেন। অর্থপেডিক্স বিভাগে একজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। গাইনি ও মেডিসিন বিভাগে কনসালটেন্ট আছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য বর্তমান সরকারের ডিজিটালযুগে জেলার এই হাসপাতালে এক্সরে বিভাগ এখনও এনালগ হিসেবে চলছে।

এ হাসপাতালে অসংক্রামণ রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও নতুন করে সংক্রামণ রোগীর (করোনা রোগী) চিকিৎসা করতে গিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হিমসিম খাচ্ছে। জেলায় ৪৩৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে অনেকেই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে পালিয়ে জেলায় গেছে। তাদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাসবাড়িতে গতকাল পর্যন্ত ৮ জন মারা গেছে। এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আক্রান্ত রোগীরা অনেকেই ভয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছে না। আবার করোনা রোগী শুনলে সমস্যা হবে। এ জন্য অনেকেই ভয়ে প্রকাশও করে না।

জেলার একজন ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ বলেন, ৫০ বেডের হাসপাতাল থেকে ১শ’ বেড বাড়ানো হয়েছে। সামনে ২৫০ বেডে উন্নীত করার কাজ চলমান। কিন্তু সেখানে ডাক্তার, বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসা সরঞ্জামের অপ্রতুল অবস্থার কারণে রোগীদের উন্নত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর জেলায় মেডিকেল কলেজ না থাকায় সেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাব রয়েছে। করোনা শনাক্ত করতে নোয়াখালীতে গিয়ে টেস্ট করতে হয়। এতে গ্রামগঞ্জের দরিদ্র রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে। করোনার কারণে এখন জেলার গ্রামগঞ্জে দরিদ্র কৃষকসহ নানা পেশার মানুষ উদ্বেগ ও উৎকষ্ঠায় দিন কাটছে। প্রাথমিক চিকিৎসা চলে গ্রামের সেই পুরনো হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে। সপ্তাহে প্রতি শুক্রবার ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম থেকে কিছু ডাক্তার গিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিক ও চেম্বারে বসেন। জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর চিকিৎসা ব্যবস্থার করুণ দশা। এক্সরে মেশিন নেই। প্যাথলিজি বা পরীক্ষা নিরীক্ষার অবস্থা অপ্রতুল। জেলার রামগঞ্জ, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগরে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। চিকিৎসার উন্নত ব্যবস্থা করার আপাতত কোন সম্ভবনা নেই। জেলার ভরসা একমাত্র সদর হাসপাতাল। সেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় রোগীদের মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।