জোনভিত্তিক লকডাউন এবার অন্তত সঠিকভাবে কার্যকর করুন

ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৪৫টি এলাকাকে রেডজোনে চিহ্নিত করা হয়েছে। করোনা প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির গত শনিবারের সভায় এসব এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়। এদিকে প্রশাসন এসব এলাকা লকডাউনের কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মোট ৪৫টি এলাকাকে ‘রেডজোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির ১৭ এবং দক্ষিণ সিটির ২৮টি এলাকা আছে। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১১টি এলাকা রেডজোনের মধ্যে পড়েছে। সিটি করপোরেশনের বাইরে তিন জেলার মধ্যে গাজীপুরের সবকটি উপজেলাকে রেডজোনের আওতার মধ্যে আনা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, সদর এবং পুরো সিটি এলাকাকে রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

গোটা দেশকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে লকডাউন ব্যবস্থা কার্যকরের সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক। দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে এখন এমন প্রচেষ্টা বিপদ কিছুটা হলেও কমাতে পারে। করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায় যে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে সেটা বলাবাহুল্য। গত রোববার সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনাভাইরাস আতঙ্কটা এখন এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যেটা খুব দুঃখজনক। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন। এ আতঙ্ক দূর করতে হলে এবারের লকডাউন দ্রুত কার্যকর করতে হবে এবং এক্ষেত্রে সময় নষ্ট করা যাবে না। করোনাযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে আমরা যে ব্যর্থ হয়েছি এতে কোন সন্দেহ নেই। প্রায় আড়াই মাস গোটা দেশ লকডাউনে রেখে শুধুমাত্র কার্যকারিতার অভাবে সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো যায়নি। লকডাউনের সময় মানুষকে ঘরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সাধারণ ছুটির পুরো সময়টাই বিফলে গেছে। এবারের জোনভিত্তিক লকডাউন যেন আগের মতো ব্যর্থ না হয়, যেন কঠোরভাবে কার্যকর হয় সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। মানুষকে যেভাবেই হোক, ঘরে রাখতে হবে। উদারনীতিতে নয়, কঠোরতম প্রক্রিয়া অবলম্বন করেই এ লকডাউন কার্যকর করতে হবে এবং এক্ষেত্রে কোনরকম ছাড় দেয়া যাবে না। শুরুতেই রেডজোনে থাকা রাজধানীর কয়েকটি এলাকা পরীক্ষামূলকভাবে লকডাউন করা উচিত। সংক্রমিত এলাকায় করোনা পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে যায় তা দেখে পর্যায়ক্রমে দেশের অতি ঝুঁকিপূর্ণ অন্য এলাকাগুলোতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।

লকডাউন যেন কার্যকর হয় সেজন্য জনসচেতনতা যেমন দরকার তেমনি প্রশাসনকেও এ ব্যাপারে নজরদারি বাড়াতে হবে। মানুষকে ঘরে থাকতে বাধ্য করতে হবে। এবং এটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, লকডাউন এলাকায় যেন খাদ্য ও অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো সঠিক সময়ে সরবরাহ করা হয়। কারণ যদি খাবারের অভাব হয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য যদি না পাওয়া যায়, তাহলে মানুষ লকডাউন মানবে না। অতীতে আমরা সেটির প্রমাণ পেয়েছি। তাই আমাদের প্রস্তুত হয়ে এবং দ্রুত এ প্রস্তুতিগুলো নিয়ে লকডাউন দিতে হবে।

এবার যে লকডাউন হবে সেই লকডাউন যেন সত্যিকার অর্থেই লকডাউন হয়, কার্যকর লকডাউন হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের যেমন দায়িত্ব আছে লকডাউন প্রতিপালন করা, কার্যকর করা, তেমনি নাগরিকের দায়িত্ব হলো লকডাউন মানা। কাজেই সবাইকে ঘরে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা মোকাবিলায় সচেষ্ট হতে হবে। লকডাউনের লক্ষ্য মূলত সংক্রমিত লোকজনকে এক জায়গায় আটকে রাখা এবং ব্যাপক হারে পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের আলাদা করে ফেলা। কিন্তু দেশে পরীক্ষার হার অনেক কম। এ সংকট যত দ্রুত সম্ভব দূর করতে হবে। ব্যাপক হারে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হবে।

মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০২০ , ২ আষাঢ় ১৪২৭, ২৩ শাওয়াল ১৪৪

জোনভিত্তিক লকডাউন এবার অন্তত সঠিকভাবে কার্যকর করুন

ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৪৫টি এলাকাকে রেডজোনে চিহ্নিত করা হয়েছে। করোনা প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির গত শনিবারের সভায় এসব এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়। এদিকে প্রশাসন এসব এলাকা লকডাউনের কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মোট ৪৫টি এলাকাকে ‘রেডজোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির ১৭ এবং দক্ষিণ সিটির ২৮টি এলাকা আছে। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১১টি এলাকা রেডজোনের মধ্যে পড়েছে। সিটি করপোরেশনের বাইরে তিন জেলার মধ্যে গাজীপুরের সবকটি উপজেলাকে রেডজোনের আওতার মধ্যে আনা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, সদর এবং পুরো সিটি এলাকাকে রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

গোটা দেশকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে লকডাউন ব্যবস্থা কার্যকরের সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক। দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে এখন এমন প্রচেষ্টা বিপদ কিছুটা হলেও কমাতে পারে। করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায় যে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে সেটা বলাবাহুল্য। গত রোববার সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনাভাইরাস আতঙ্কটা এখন এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যেটা খুব দুঃখজনক। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন। এ আতঙ্ক দূর করতে হলে এবারের লকডাউন দ্রুত কার্যকর করতে হবে এবং এক্ষেত্রে সময় নষ্ট করা যাবে না। করোনাযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে আমরা যে ব্যর্থ হয়েছি এতে কোন সন্দেহ নেই। প্রায় আড়াই মাস গোটা দেশ লকডাউনে রেখে শুধুমাত্র কার্যকারিতার অভাবে সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো যায়নি। লকডাউনের সময় মানুষকে ঘরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সাধারণ ছুটির পুরো সময়টাই বিফলে গেছে। এবারের জোনভিত্তিক লকডাউন যেন আগের মতো ব্যর্থ না হয়, যেন কঠোরভাবে কার্যকর হয় সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। মানুষকে যেভাবেই হোক, ঘরে রাখতে হবে। উদারনীতিতে নয়, কঠোরতম প্রক্রিয়া অবলম্বন করেই এ লকডাউন কার্যকর করতে হবে এবং এক্ষেত্রে কোনরকম ছাড় দেয়া যাবে না। শুরুতেই রেডজোনে থাকা রাজধানীর কয়েকটি এলাকা পরীক্ষামূলকভাবে লকডাউন করা উচিত। সংক্রমিত এলাকায় করোনা পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে যায় তা দেখে পর্যায়ক্রমে দেশের অতি ঝুঁকিপূর্ণ অন্য এলাকাগুলোতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।

লকডাউন যেন কার্যকর হয় সেজন্য জনসচেতনতা যেমন দরকার তেমনি প্রশাসনকেও এ ব্যাপারে নজরদারি বাড়াতে হবে। মানুষকে ঘরে থাকতে বাধ্য করতে হবে। এবং এটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, লকডাউন এলাকায় যেন খাদ্য ও অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো সঠিক সময়ে সরবরাহ করা হয়। কারণ যদি খাবারের অভাব হয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য যদি না পাওয়া যায়, তাহলে মানুষ লকডাউন মানবে না। অতীতে আমরা সেটির প্রমাণ পেয়েছি। তাই আমাদের প্রস্তুত হয়ে এবং দ্রুত এ প্রস্তুতিগুলো নিয়ে লকডাউন দিতে হবে।

এবার যে লকডাউন হবে সেই লকডাউন যেন সত্যিকার অর্থেই লকডাউন হয়, কার্যকর লকডাউন হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের যেমন দায়িত্ব আছে লকডাউন প্রতিপালন করা, কার্যকর করা, তেমনি নাগরিকের দায়িত্ব হলো লকডাউন মানা। কাজেই সবাইকে ঘরে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা মোকাবিলায় সচেষ্ট হতে হবে। লকডাউনের লক্ষ্য মূলত সংক্রমিত লোকজনকে এক জায়গায় আটকে রাখা এবং ব্যাপক হারে পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের আলাদা করে ফেলা। কিন্তু দেশে পরীক্ষার হার অনেক কম। এ সংকট যত দ্রুত সম্ভব দূর করতে হবে। ব্যাপক হারে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হবে।