ব্যাংকারদের বেতন না কমানোর আহ্বান বিডব্লিউএবি’র

ব্যাংক কর্মকর্তাদের বেতন ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা না কমানোর দাবি জানিয়েছে ব্যাংকার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (বিডব্লিউএবি)। গতকাল এ বিষয়ে ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) কাছে পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিডব্লিউএবির প্রেসিডেন্ট কাজী মো. শফিকুর রহমান।

বিডব্লিউএবির প্রেসিডেন্ট জানান, বিএবি সম্প্রতি ব্যাংক কর্মীদের বেতন-ভাতা কমানোসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে পাঠিয়েছে। মহামারীর সময়ে ব্যাংকাররা এখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। এ সময় কর্মীদের ব্যাংকারদের বেতন-ভাতা কমানো মানে তাদের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করা। এতে করে কর্মস্পৃহা কমে যাবে। বিডব্লিউএবি মনে করে, চলমান সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্যাংকের কর্মচাঞ্চল্য অব্যাহত রাখার জন্য কর্মকর্তাদের মনোবল ও দক্ষতা অটুট রাখা এবং অনুপ্রেরণা ও উদ্দীপনা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এর বিপরীতে কোন সিদ্ধান্ত নিলে ব্যাংকিং কার্যক্রমে স্বভাবতই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে।

এসব বিবেচনায় বিডব্লিউএবির পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে : কোন অবস্থাতেই ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রাপ্ত বেতন ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা না কমানো। সাধারণভাবে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট চালু রাখা। ব্যাংকের বাৎসরিক মুনাফার ভিত্তিতে ইনসেন্টিভ বোনাস চালু রাখা। ব্যাংকের প্রণীত ক্রাইটেরিয়া অনুসরণ করে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বিবেচনা করা এবং সব ব্যাংক যেন একই ধরনের পদোন্নতি ক্রাইটেরিয়া অনুসরণ করে তার ব্যবস্থা গ্রহণ। কর্মকর্তাদের একই গ্রেডে বিভিন্ন ধরনের ডেজিগনেশনের পরিবর্তে সব ব্যাংকে একই ধরনের (যেমন- অফিসার, সিনিয়র অফিসার, প্রিন্সিপাল অফিসার, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার, এভিপি, ভিপি ইত্যাদি) ডেজিগনেশন নির্ধারণ ও অনুসরণ করার ব্যবস্থা নেয়া।

এদিকে সম্প্রতি বেতন-ভাতা কমানোসহ ১৩ দফা সুপারিশ করে বিএবির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়। সংগঠনটির সেক্রেটারি জেনারেল স্বাক্ষরিত চিঠিতে ব্যাংকগুলোতে চলমান নিয়োগসহ সব নিয়োগ বন্ধ রাখার সুপারিশও করা হয়। এছাড়া নতুন শাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং ও উপ-শাখা খোলা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। করোনাভাইরাসে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মী ছাঁটাই না করে ব্যাংক সচল রাখার জন্য প্রস্তাবগুলো দেয়া হয়েছে বলে বিএবি পক্ষ থেকে বলা হয়। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সুপারিশ বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে বিএবি।

১৩ দফা সুপারিশ সম্বলিত চিঠিতে আরও আছে, সব প্রকার স্থায়ী সম্পদ ক্রয় বন্ধ রাখা, কর্মীদের লোকাল ও বিদেশি প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখা, সব বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ রাখা, সব প্রকার সিএসআর, ডোনেশন, চ্যারিটি বন্ধ রাখা, পত্রিকা (প্রিন্ট ও অনলাইন) ও টেলিভিশনে সব প্রকার বিজ্ঞাপন প্রদান বন্ধ রাখা, সব কাস্টমার গেট-টুগেদার বন্ধ রাখা।

এরপর বিভিন্ন মহল থেকে নানা রকম সমালোচনা শুরু হয়। এরপর বেতন কমানোর বিষয়টি ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দিয়েছে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। বিএবি নেতারা জানিয়েছেন, ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সুদ ৯ শতাংশ নামিয়ে আনায় ব্যাংকের আয় কমে গেছে। এছাড়া করোনার কারণে ঋণের কিস্তি আদায় না হওয়ায় ব্যাংকগুলো বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই না করে বেতন কমানোসহ বিভিন্নভাবে ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে ব্যাংকগুলো। বিএবির সদস্যরাও এমন পদক্ষেপে সম্মতি জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।

গতকাল এ বিষয়ে বিএবি ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, এটা কোন প্রজ্ঞাপন বা প্রস্তাব নয়। কোন সিদ্ধান্তও জানাইনি আমরা। আর্থিক খাতে বর্তমানে যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে তাতে টিকে থাকতে হলে ব্যাংকগুলো হয়তো খরচ কমাবে। কোন কোন ব্যাংক হয়তো জনবলের খরচ কমাবে, কোন ব্যাংক হয়তো অন্য কোন প্রক্রিয়ায় ব্যয় কমাবে। যে যেভাবে পারে সেভাবে ব্যয় কমাবে। ব্যাংকের মূল আয় হচ্ছে সুদ থেকে। কিন্তু ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনায় ব্যাংকগুলোর আয় কমে গেছে। এরমধ্যে করোনা পরিস্থিতির কারণে ঋণ ও সুদ আদায় বন্ধ থাকায় ব্যাংকগুলোর আয় একেবারেই নেই। যেখানে কোন আয় নেই, সেখানে কীভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেব। এখন কি গ্রাহকের আমানত থেকে আমরা বেতনভাতা বহন করব। করোনার কারণে ঋণের টাকা ফেরত আসছে না।

এরমধ্যে ঋণের কিস্তি না দিয়ে কাউকে খেলাপি করা যাবে না। এটি জুন পর্যন্ত ছিল, যা এখন সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আমরা আশঙ্কা করছি, কিস্তি না দিলে খেলাপি না করার সুবিধা ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়তে পারে। এ কারণে ব্যবসা আরও খারাপ হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে ব্যয় কমানোর খাত নিয়ে আমরা ব্যাংক মালিকরা আলোচনা করেছিলাম, যার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি এসেছে। ইতোমধ্যেই ব্র্যাক, সিটি, এবিসহ কয়েকটি ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কমিয়েছে। আমরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ৪০ হাজার টাকার ওপরে যাদের বেতন তাদের ১৫ শতাংশ কমানো হবে। ছাঁটাইয়ের চেয়ে বেতন কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হয়ে যাবে, তখন আবার বেতন কাঠামো ঠিক করা হবে। এ বিষয়ে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, বেতন কমাতে হবে। এ বিষয়ে বিএবির সব সদস্যই একমত। এখন কে কত শতাংশ কমাবে সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা হচ্ছে। এটা না করলে আমাদের ব্যাংক তো চলবে না। কারণ যেভাবে ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে তাতে করে ব্যাংকগুলোর আয়ে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এরমধ্যে করোনাভাইরাসের কারণে এখন কোন আয় নেই বললেই চলে। তবে এই বিষয়ে ব্যাংক খাতের বিশেষজ্ঞরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ব্যাংকের মালিকরা বিভিন্ন সুযোগ নিলেও কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে একটি মহল। আমার মনে হয়, সরকার এই বিষয়ে নজর দিবে। এমন সীদ্ধান্ত নেয়া হলে ব্যাংকিং খাতে মেধাবিদের আগ্রহ কমে আসবে। এর কারণে ব্যংকারদের মাঝে হতাশা দেখা দিবে এবং এই খাতে আরও বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।

বুধবার, ১৭ জুন ২০২০ , ৩ আষাঢ় ১৪২৭, ২৪ শাওয়াল ১৪৪১

ব্যাংকারদের বেতন না কমানোর আহ্বান বিডব্লিউএবি’র

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

ব্যাংক কর্মকর্তাদের বেতন ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা না কমানোর দাবি জানিয়েছে ব্যাংকার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (বিডব্লিউএবি)। গতকাল এ বিষয়ে ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) কাছে পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিডব্লিউএবির প্রেসিডেন্ট কাজী মো. শফিকুর রহমান।

বিডব্লিউএবির প্রেসিডেন্ট জানান, বিএবি সম্প্রতি ব্যাংক কর্মীদের বেতন-ভাতা কমানোসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে পাঠিয়েছে। মহামারীর সময়ে ব্যাংকাররা এখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। এ সময় কর্মীদের ব্যাংকারদের বেতন-ভাতা কমানো মানে তাদের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করা। এতে করে কর্মস্পৃহা কমে যাবে। বিডব্লিউএবি মনে করে, চলমান সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্যাংকের কর্মচাঞ্চল্য অব্যাহত রাখার জন্য কর্মকর্তাদের মনোবল ও দক্ষতা অটুট রাখা এবং অনুপ্রেরণা ও উদ্দীপনা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এর বিপরীতে কোন সিদ্ধান্ত নিলে ব্যাংকিং কার্যক্রমে স্বভাবতই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে।

এসব বিবেচনায় বিডব্লিউএবির পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে : কোন অবস্থাতেই ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রাপ্ত বেতন ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা না কমানো। সাধারণভাবে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট চালু রাখা। ব্যাংকের বাৎসরিক মুনাফার ভিত্তিতে ইনসেন্টিভ বোনাস চালু রাখা। ব্যাংকের প্রণীত ক্রাইটেরিয়া অনুসরণ করে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বিবেচনা করা এবং সব ব্যাংক যেন একই ধরনের পদোন্নতি ক্রাইটেরিয়া অনুসরণ করে তার ব্যবস্থা গ্রহণ। কর্মকর্তাদের একই গ্রেডে বিভিন্ন ধরনের ডেজিগনেশনের পরিবর্তে সব ব্যাংকে একই ধরনের (যেমন- অফিসার, সিনিয়র অফিসার, প্রিন্সিপাল অফিসার, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার, এভিপি, ভিপি ইত্যাদি) ডেজিগনেশন নির্ধারণ ও অনুসরণ করার ব্যবস্থা নেয়া।

এদিকে সম্প্রতি বেতন-ভাতা কমানোসহ ১৩ দফা সুপারিশ করে বিএবির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়। সংগঠনটির সেক্রেটারি জেনারেল স্বাক্ষরিত চিঠিতে ব্যাংকগুলোতে চলমান নিয়োগসহ সব নিয়োগ বন্ধ রাখার সুপারিশও করা হয়। এছাড়া নতুন শাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং ও উপ-শাখা খোলা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। করোনাভাইরাসে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মী ছাঁটাই না করে ব্যাংক সচল রাখার জন্য প্রস্তাবগুলো দেয়া হয়েছে বলে বিএবি পক্ষ থেকে বলা হয়। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সুপারিশ বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে বিএবি।

১৩ দফা সুপারিশ সম্বলিত চিঠিতে আরও আছে, সব প্রকার স্থায়ী সম্পদ ক্রয় বন্ধ রাখা, কর্মীদের লোকাল ও বিদেশি প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখা, সব বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ রাখা, সব প্রকার সিএসআর, ডোনেশন, চ্যারিটি বন্ধ রাখা, পত্রিকা (প্রিন্ট ও অনলাইন) ও টেলিভিশনে সব প্রকার বিজ্ঞাপন প্রদান বন্ধ রাখা, সব কাস্টমার গেট-টুগেদার বন্ধ রাখা।

এরপর বিভিন্ন মহল থেকে নানা রকম সমালোচনা শুরু হয়। এরপর বেতন কমানোর বিষয়টি ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দিয়েছে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। বিএবি নেতারা জানিয়েছেন, ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সুদ ৯ শতাংশ নামিয়ে আনায় ব্যাংকের আয় কমে গেছে। এছাড়া করোনার কারণে ঋণের কিস্তি আদায় না হওয়ায় ব্যাংকগুলো বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই না করে বেতন কমানোসহ বিভিন্নভাবে ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে ব্যাংকগুলো। বিএবির সদস্যরাও এমন পদক্ষেপে সম্মতি জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।

গতকাল এ বিষয়ে বিএবি ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, এটা কোন প্রজ্ঞাপন বা প্রস্তাব নয়। কোন সিদ্ধান্তও জানাইনি আমরা। আর্থিক খাতে বর্তমানে যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে তাতে টিকে থাকতে হলে ব্যাংকগুলো হয়তো খরচ কমাবে। কোন কোন ব্যাংক হয়তো জনবলের খরচ কমাবে, কোন ব্যাংক হয়তো অন্য কোন প্রক্রিয়ায় ব্যয় কমাবে। যে যেভাবে পারে সেভাবে ব্যয় কমাবে। ব্যাংকের মূল আয় হচ্ছে সুদ থেকে। কিন্তু ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনায় ব্যাংকগুলোর আয় কমে গেছে। এরমধ্যে করোনা পরিস্থিতির কারণে ঋণ ও সুদ আদায় বন্ধ থাকায় ব্যাংকগুলোর আয় একেবারেই নেই। যেখানে কোন আয় নেই, সেখানে কীভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেব। এখন কি গ্রাহকের আমানত থেকে আমরা বেতনভাতা বহন করব। করোনার কারণে ঋণের টাকা ফেরত আসছে না।

এরমধ্যে ঋণের কিস্তি না দিয়ে কাউকে খেলাপি করা যাবে না। এটি জুন পর্যন্ত ছিল, যা এখন সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আমরা আশঙ্কা করছি, কিস্তি না দিলে খেলাপি না করার সুবিধা ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়তে পারে। এ কারণে ব্যবসা আরও খারাপ হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে ব্যয় কমানোর খাত নিয়ে আমরা ব্যাংক মালিকরা আলোচনা করেছিলাম, যার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি এসেছে। ইতোমধ্যেই ব্র্যাক, সিটি, এবিসহ কয়েকটি ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কমিয়েছে। আমরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ৪০ হাজার টাকার ওপরে যাদের বেতন তাদের ১৫ শতাংশ কমানো হবে। ছাঁটাইয়ের চেয়ে বেতন কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হয়ে যাবে, তখন আবার বেতন কাঠামো ঠিক করা হবে। এ বিষয়ে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, বেতন কমাতে হবে। এ বিষয়ে বিএবির সব সদস্যই একমত। এখন কে কত শতাংশ কমাবে সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা হচ্ছে। এটা না করলে আমাদের ব্যাংক তো চলবে না। কারণ যেভাবে ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে তাতে করে ব্যাংকগুলোর আয়ে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এরমধ্যে করোনাভাইরাসের কারণে এখন কোন আয় নেই বললেই চলে। তবে এই বিষয়ে ব্যাংক খাতের বিশেষজ্ঞরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ব্যাংকের মালিকরা বিভিন্ন সুযোগ নিলেও কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে একটি মহল। আমার মনে হয়, সরকার এই বিষয়ে নজর দিবে। এমন সীদ্ধান্ত নেয়া হলে ব্যাংকিং খাতে মেধাবিদের আগ্রহ কমে আসবে। এর কারণে ব্যংকারদের মাঝে হতাশা দেখা দিবে এবং এই খাতে আরও বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।