ব্যাপক চাপের মুখে বাশার সরকার
যুদ্ধবস্থার মধ্যেই করোনা মহামারীকে উপেক্ষা করে অর্থনৈতিক সংকটের জেরে চলমান খাদ্যাভাব নিয়ে বাশার সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমেছেন সিরিয়ার বাসিন্দারা। ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বাশারের বিরুদ্ধে সংঘটিত অভ্যুত্থানের সেই স্থান দক্ষিণাঞ্চলের শহরগুলোর রাস্তায়ই আবার ফিরে এসেছেন বিক্ষোভকারীরা। তবে এবারের বিক্ষোভ গণবিক্ষোভের রূপ না নিলেও বাশার সরকারের পতনের দাবির স্লোগানগুলো রয়েছে আগের মতোই। বিবিসি।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমটির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের ১৫ মার্চ শুরু হওয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ এখনও চলছে। দুটি বিশ্বযুদ্ধ যোগ করলে যতদিন ধরে চলেছিল-সিরিয়ার যুদ্ধ চলছে (৯ বছর ২ মাসেরও বেশি সময়) তার চেয়েও বেশি দিন ধরে। যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, এ গৃহযুদ্ধে প্রায় ৭ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। আর যারা বেঁচে আছে তাদের ৯০ ভাগই জীবন কাটাচ্ছেন চরম দারিদ্র্যের মধ্যে। সিরিয়ার অর্থনীতিতে এ যুদ্ধের জন্য ঠিক কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা কেউ জানে না। এক হিসাবে বলা হয়েছে, দেশটিতে যে ধ্বংসলীলা চলেছে তাতে ক্ষতির পরিমাণ ৬৩ হাজার কোটি ডলারের কাছাকাছি হবে। এখন যোগ হয়েছে নতুন সংকট- ক্ষুধা। পুরোনো ক্ষোভ আসলে কখনোই দূর হয়নি। দেশটির দরজা এখন সাংবাদিকদের জন্য আরও বেশি বন্ধ। কিন্তু নানা আভাস-ইঙ্গিতে বোঝা যায়, জীবনধারণ ক্রমশই আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়ছে। এবার বিক্ষোভ শুরু হয়েছে খাদ্যাভাব নিয়ে। গত বছরের তুলনায় সিরিয়ায় খাবারের দাম চলতি বছর দ্বিগুণ বেড়েছে।
অর্থনৈতিক সংকট গুরুতর আকার নিচ্ছে
সিরিয়ার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকট প্রসঙ্গে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় দফতরের প্রধান স্যার মার্ক লোকক বলেছেন, সিরিয়ার নাগরিকরা এখন গণক্ষুধার শিকার যা এক বা দু?ই বছর আগেও ছিল না। এ ঘটনা ঘটছে এমন সময় যখন বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারীর অর্থনৈতিক পরিণাম সবেমাত্র উপলব্ধি করতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে লেবাননে ব্যাংক ব্যবস্থায় ধস। এতদিন দামেস্ক বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বৈরুতকে কাজে লাগাত। তবে সম্প্রতি লেবাননের ব্যাংকগুলো পুরোপুরি বসে যাওয়া ঠেকাতে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। আর এতে করে সিরিয়ার মুদ্রার মান দ্রুত পড়ে যায়। সিরিয়ায় এখনও যারা চাকরি করছেন, তাদের গড় মাসিক বেতন ৫০ হাজার সিরিয়ান পাউন্ড। গত বছরের শেষ দিকে ?এর মূল্যমান ছিল ৫০ ব্রিটিশ পাউন্ডের সমান। আর এখন তা নেমে এসেছে ১২ ব্রিটিশ পাউন্ডে। এরপর আরেকটি নতুন আঘাত হয়তো শীঘ্রই আসছে। চলতি সপ্তাহেই সিজার অ্যাক্ট নামের আইনের আওতায় সিরিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে যাচ্ছে। তবে নতুন মার্কিন এ নিষেধাজ্ঞা সিরিয়ার অর্থনীতির যেটুকু অবশিষ্ট আছে সেটাকেও ধ্বংস করে দিতে পারে বলে অভিমত রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের। এসব নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য শুধু সিরিয়া নয়, তার প্রধান দুই মিত্র ইরান ও রাশিয়াও। যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে তার সবচেয়ে বড় শত্রু বলে মনে করে। আর এ ইরানই রাশিয়ার সহায়তা নিয়ে বাশার আল-আসাদকে এখনও পর্যন্ত টিকিয়ে রেখেছে।
বাশার ক্ষমতায় থাকলেও বিদ্রোহী তৎপরতা থামেনি
এদিকে রাশিয়ার সামরিক সহায়তায় সম্প্রতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কিছু সামরিক বিজয়ের কারণে ক্ষমতায় আগের চেয়ে অনেক বেশি সংহত দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার। তবে এখন এটা পরিষ্কার, এ যুদ্ধের শেষ পর্ব শান্তি নিয়ে আসতে পারবে না। উত্তর সিরিয়ার ভাগ্য এখন সিরিয়ানরা নির্ধারণ করবে না। করবে রাশিয়া, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ সিরিয়ার বিদ্রোহীরা ২০১৮ সালে আত্মসমর্পণ করেছে। তবে গোপনে তাদের বিদ্রোহী তৎপরতা চলছেই। এরই মধ্যে ইসলামপন্থি জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস এখন মধ্য সিরিয়ার মরুভূমিতে নিজেদের অবস্থান সংহত করার চেষ্টা করছে। তারা আকস্মিক নানা হামলা চালিয়ে সরকারি বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করছে।
এখন এ অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিক্ষোভকারীরা আবার ফিরে এসেছেন রাজপথে। তারা খোলাখুলিই ২০১১ সালের স্লোগানগুলো দিচ্ছে, যার মূল দাবি বাশার আল আসাদ সরকারের পতন।
আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো কী করতে পারবে
সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে সিরিয়ার যুদ্ধকে ব্যবহার করছেন। দেশটির বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহার করে বাশারের মতো প্রবল স্বৈরশাসককে তিনি টিকিয়ে রেখেছেন। তবে তার এ বিজয়ের মধ্যে অনেক গলদ রয়েছে। ঠিক বাশারের সাম্প্রতিক জয়ের মতোই। এ প্রসঙ্গে সিরিয়ায় নিযুক্ত শেষ মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট ফোর্ড বলেছেন, রাশিয়া মিত্র হিসেবে যে সিরিয়াকে পেয়েছে সেটি অর্থনৈতিকভাবে খুবই দুর্বল। এ বিষয়ে কিছু করার উপায় তাদের নেই। বিশাল একটা মৃত পাখির মতো সিরিয়া রাশিয়ার গলায় পেঁচিয়ে আছে। তবে ফোর্ড বিশ্বাস করেন, বাশার এখনও ক্ষমতাসীন থাকবেন তাকে কোথাও যেতে হবে না।
বুধবার, ১৭ জুন ২০২০ , ৩ আষাঢ় ১৪২৭, ২৪ শাওয়াল ১৪৪১
ব্যাপক চাপের মুখে বাশার সরকার
যুদ্ধবস্থার মধ্যেই করোনা মহামারীকে উপেক্ষা করে অর্থনৈতিক সংকটের জেরে চলমান খাদ্যাভাব নিয়ে বাশার সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমেছেন সিরিয়ার বাসিন্দারা। ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বাশারের বিরুদ্ধে সংঘটিত অভ্যুত্থানের সেই স্থান দক্ষিণাঞ্চলের শহরগুলোর রাস্তায়ই আবার ফিরে এসেছেন বিক্ষোভকারীরা। তবে এবারের বিক্ষোভ গণবিক্ষোভের রূপ না নিলেও বাশার সরকারের পতনের দাবির স্লোগানগুলো রয়েছে আগের মতোই। বিবিসি।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমটির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের ১৫ মার্চ শুরু হওয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ এখনও চলছে। দুটি বিশ্বযুদ্ধ যোগ করলে যতদিন ধরে চলেছিল-সিরিয়ার যুদ্ধ চলছে (৯ বছর ২ মাসেরও বেশি সময়) তার চেয়েও বেশি দিন ধরে। যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, এ গৃহযুদ্ধে প্রায় ৭ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। আর যারা বেঁচে আছে তাদের ৯০ ভাগই জীবন কাটাচ্ছেন চরম দারিদ্র্যের মধ্যে। সিরিয়ার অর্থনীতিতে এ যুদ্ধের জন্য ঠিক কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা কেউ জানে না। এক হিসাবে বলা হয়েছে, দেশটিতে যে ধ্বংসলীলা চলেছে তাতে ক্ষতির পরিমাণ ৬৩ হাজার কোটি ডলারের কাছাকাছি হবে। এখন যোগ হয়েছে নতুন সংকট- ক্ষুধা। পুরোনো ক্ষোভ আসলে কখনোই দূর হয়নি। দেশটির দরজা এখন সাংবাদিকদের জন্য আরও বেশি বন্ধ। কিন্তু নানা আভাস-ইঙ্গিতে বোঝা যায়, জীবনধারণ ক্রমশই আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়ছে। এবার বিক্ষোভ শুরু হয়েছে খাদ্যাভাব নিয়ে। গত বছরের তুলনায় সিরিয়ায় খাবারের দাম চলতি বছর দ্বিগুণ বেড়েছে।
অর্থনৈতিক সংকট গুরুতর আকার নিচ্ছে
সিরিয়ার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকট প্রসঙ্গে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় দফতরের প্রধান স্যার মার্ক লোকক বলেছেন, সিরিয়ার নাগরিকরা এখন গণক্ষুধার শিকার যা এক বা দু?ই বছর আগেও ছিল না। এ ঘটনা ঘটছে এমন সময় যখন বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারীর অর্থনৈতিক পরিণাম সবেমাত্র উপলব্ধি করতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে লেবাননে ব্যাংক ব্যবস্থায় ধস। এতদিন দামেস্ক বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বৈরুতকে কাজে লাগাত। তবে সম্প্রতি লেবাননের ব্যাংকগুলো পুরোপুরি বসে যাওয়া ঠেকাতে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। আর এতে করে সিরিয়ার মুদ্রার মান দ্রুত পড়ে যায়। সিরিয়ায় এখনও যারা চাকরি করছেন, তাদের গড় মাসিক বেতন ৫০ হাজার সিরিয়ান পাউন্ড। গত বছরের শেষ দিকে ?এর মূল্যমান ছিল ৫০ ব্রিটিশ পাউন্ডের সমান। আর এখন তা নেমে এসেছে ১২ ব্রিটিশ পাউন্ডে। এরপর আরেকটি নতুন আঘাত হয়তো শীঘ্রই আসছে। চলতি সপ্তাহেই সিজার অ্যাক্ট নামের আইনের আওতায় সিরিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে যাচ্ছে। তবে নতুন মার্কিন এ নিষেধাজ্ঞা সিরিয়ার অর্থনীতির যেটুকু অবশিষ্ট আছে সেটাকেও ধ্বংস করে দিতে পারে বলে অভিমত রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের। এসব নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য শুধু সিরিয়া নয়, তার প্রধান দুই মিত্র ইরান ও রাশিয়াও। যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে তার সবচেয়ে বড় শত্রু বলে মনে করে। আর এ ইরানই রাশিয়ার সহায়তা নিয়ে বাশার আল-আসাদকে এখনও পর্যন্ত টিকিয়ে রেখেছে।
বাশার ক্ষমতায় থাকলেও বিদ্রোহী তৎপরতা থামেনি
এদিকে রাশিয়ার সামরিক সহায়তায় সম্প্রতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কিছু সামরিক বিজয়ের কারণে ক্ষমতায় আগের চেয়ে অনেক বেশি সংহত দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার। তবে এখন এটা পরিষ্কার, এ যুদ্ধের শেষ পর্ব শান্তি নিয়ে আসতে পারবে না। উত্তর সিরিয়ার ভাগ্য এখন সিরিয়ানরা নির্ধারণ করবে না। করবে রাশিয়া, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ সিরিয়ার বিদ্রোহীরা ২০১৮ সালে আত্মসমর্পণ করেছে। তবে গোপনে তাদের বিদ্রোহী তৎপরতা চলছেই। এরই মধ্যে ইসলামপন্থি জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস এখন মধ্য সিরিয়ার মরুভূমিতে নিজেদের অবস্থান সংহত করার চেষ্টা করছে। তারা আকস্মিক নানা হামলা চালিয়ে সরকারি বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করছে।
এখন এ অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিক্ষোভকারীরা আবার ফিরে এসেছেন রাজপথে। তারা খোলাখুলিই ২০১১ সালের স্লোগানগুলো দিচ্ছে, যার মূল দাবি বাশার আল আসাদ সরকারের পতন।
আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো কী করতে পারবে
সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে সিরিয়ার যুদ্ধকে ব্যবহার করছেন। দেশটির বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহার করে বাশারের মতো প্রবল স্বৈরশাসককে তিনি টিকিয়ে রেখেছেন। তবে তার এ বিজয়ের মধ্যে অনেক গলদ রয়েছে। ঠিক বাশারের সাম্প্রতিক জয়ের মতোই। এ প্রসঙ্গে সিরিয়ায় নিযুক্ত শেষ মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট ফোর্ড বলেছেন, রাশিয়া মিত্র হিসেবে যে সিরিয়াকে পেয়েছে সেটি অর্থনৈতিকভাবে খুবই দুর্বল। এ বিষয়ে কিছু করার উপায় তাদের নেই। বিশাল একটা মৃত পাখির মতো সিরিয়া রাশিয়ার গলায় পেঁচিয়ে আছে। তবে ফোর্ড বিশ্বাস করেন, বাশার এখনও ক্ষমতাসীন থাকবেন তাকে কোথাও যেতে হবে না।