স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তায় বিক্ষোভ-স্মারকলিপি

স্বাস্থ্যখাতের উন্নতি ও জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতসহ সাত দফা দাবিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে গণসংহতি আন্দোলন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় এ কর্মসূচি পালিত হয়। পরে সিভিল সার্জনের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করে নেতারা।

গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়কারী তরিকুল সুজনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী সমন্বয়কারী অঞ্জন দাস, নারী সংহতি আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক পপি রাণী সরকার, জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি শুভ দেব, মহানগর ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক ফারহানা মানিক প্রমুখ।

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই করোনা মহামারীতে চিকিৎসাসেবা পেতে হাসপাতালে-হাসপাতালে ঘুরছে মানুষ কিন্তু কোন চিকিৎসা পাচ্ছে না। মায়ের চিকিৎসার জন্য ছেলের আকুতি দেখছি। হুইলচেয়ারে বসেই মানুষ মারা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী সারাদেশের ৪৭টি জেলায় কোন আইসিইউ নেই। স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। করোনার টেস্ট করতে গিয়ে নানা ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ। এরকম একটি দেশে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি আমরা।

তরিকুল সুজন বলেন, নারায়ণগঞ্জে ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের ১০টি আইসিইউ গত দুই মাসেও চালু হয়নি। সরকার জনগণের দায়িত্ব নেয়ার মতো সক্ষমতা রাখে না। কারণ তাদের জনগণের কাছে ভোটের জন্য যেতে হয় না। যখন করোনা ছিল না তখন দেশের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ আর এখন এই করোনা মহামারীতে বরাদ্দ করেছে ৭ দশমিক ২ ভাগ। এটা হাস্যকর বাজেট। আমরা স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ ২০ শতাংশে উন্নীত করার দাবি জানাই।

বিক্ষোভে সাত দাবি তুলে ধরে তরিকুল সুজন। দাবিগুলো হলো :

১. বাজেটের অন্তত ২০ ভাগ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ রাখতে হবে। সময়মতো অর্থ বরাদ্দ ও তার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

২. অবিলম্বে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিটের অনুমোদন দিয়ে গণটেস্টিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে দৈনিক অন্ততপক্ষে ৫০ হাজার পিসিআর টেস্টের সক্ষমতা তৈরি এবং জেলা ও থানা পর্যায়ের টেস্ট সুবিধা সম্প্রসারিত করতে হবে।

৩. শ্রমিক এলাকায় ও ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে পর্যাপ্ত কোয়ারেন্টিন/আইসোলেশন বা সঙ্গনিরোধের সুবিধা তৈরি করতে হবে।

৪. হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। পর্যাপ্ত বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি ও আনুপাতিক হিসাবে ভেন্টিলেটর সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। অবিলম্বে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, জীবাণু, জনস্বাস্থ্য ও মহামারী বিশেষজ্ঞ, নার্স ও টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দিতে হবে। সক্ষম অবসরপ্রাপ্তদেরও সাময়িকভাবে কাজে যোগ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বেচ্ছাসেবকদের দ্রুত প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগাতে হবে। সব হাসপাতালের সাধারণ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বেসরকারি হাসপাতাল সাময়িকভাবে অধিগ্রহণ করতে হবে।

৫. সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য হেলথ কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। খাদ্য, পানি, বায়ু, পরিবেশ দূষণ রোধের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে। স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরিকারী সব প্রকল্প বাতিল করতে হবে। রোগ নির্ণয়, চিকিৎসাসেবা, অবকাঠামো উন্নয়ন, জনবল বৃদ্ধি, মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণের ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা সুলভ ও স্বাস্থ্য বীমা চালু করতে হবে।

৬. স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে স্বাধীন সাংবিধানিক কমিশনের অধীনে পরিচালনা করে রেগুলাটরি অথরিটি বা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য কার্যক্রমের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জীবাণু বিশেষজ্ঞ, মহামারী বিশেষজ্ঞ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সিনিয়র চিকিৎসকদের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে।

৭. স্বাধীন বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও পণ্য ক্রয়ে সব দুর্নীতির তদন্ত ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-আমলাসহ সবার বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

বুধবার, ১৭ জুন ২০২০ , ৩ আষাঢ় ১৪২৭, ২৪ শাওয়াল ১৪৪১

না’গঞ্জে

স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তায় বিক্ষোভ-স্মারকলিপি

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

স্বাস্থ্যখাতের উন্নতি ও জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতসহ সাত দফা দাবিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে গণসংহতি আন্দোলন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় এ কর্মসূচি পালিত হয়। পরে সিভিল সার্জনের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করে নেতারা।

গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়কারী তরিকুল সুজনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী সমন্বয়কারী অঞ্জন দাস, নারী সংহতি আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক পপি রাণী সরকার, জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি শুভ দেব, মহানগর ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক ফারহানা মানিক প্রমুখ।

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই করোনা মহামারীতে চিকিৎসাসেবা পেতে হাসপাতালে-হাসপাতালে ঘুরছে মানুষ কিন্তু কোন চিকিৎসা পাচ্ছে না। মায়ের চিকিৎসার জন্য ছেলের আকুতি দেখছি। হুইলচেয়ারে বসেই মানুষ মারা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী সারাদেশের ৪৭টি জেলায় কোন আইসিইউ নেই। স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। করোনার টেস্ট করতে গিয়ে নানা ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ। এরকম একটি দেশে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি আমরা।

তরিকুল সুজন বলেন, নারায়ণগঞ্জে ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের ১০টি আইসিইউ গত দুই মাসেও চালু হয়নি। সরকার জনগণের দায়িত্ব নেয়ার মতো সক্ষমতা রাখে না। কারণ তাদের জনগণের কাছে ভোটের জন্য যেতে হয় না। যখন করোনা ছিল না তখন দেশের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ আর এখন এই করোনা মহামারীতে বরাদ্দ করেছে ৭ দশমিক ২ ভাগ। এটা হাস্যকর বাজেট। আমরা স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ ২০ শতাংশে উন্নীত করার দাবি জানাই।

বিক্ষোভে সাত দাবি তুলে ধরে তরিকুল সুজন। দাবিগুলো হলো :

১. বাজেটের অন্তত ২০ ভাগ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ রাখতে হবে। সময়মতো অর্থ বরাদ্দ ও তার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

২. অবিলম্বে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিটের অনুমোদন দিয়ে গণটেস্টিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে দৈনিক অন্ততপক্ষে ৫০ হাজার পিসিআর টেস্টের সক্ষমতা তৈরি এবং জেলা ও থানা পর্যায়ের টেস্ট সুবিধা সম্প্রসারিত করতে হবে।

৩. শ্রমিক এলাকায় ও ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে পর্যাপ্ত কোয়ারেন্টিন/আইসোলেশন বা সঙ্গনিরোধের সুবিধা তৈরি করতে হবে।

৪. হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। পর্যাপ্ত বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি ও আনুপাতিক হিসাবে ভেন্টিলেটর সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। অবিলম্বে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, জীবাণু, জনস্বাস্থ্য ও মহামারী বিশেষজ্ঞ, নার্স ও টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দিতে হবে। সক্ষম অবসরপ্রাপ্তদেরও সাময়িকভাবে কাজে যোগ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বেচ্ছাসেবকদের দ্রুত প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগাতে হবে। সব হাসপাতালের সাধারণ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বেসরকারি হাসপাতাল সাময়িকভাবে অধিগ্রহণ করতে হবে।

৫. সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য হেলথ কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। খাদ্য, পানি, বায়ু, পরিবেশ দূষণ রোধের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে। স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরিকারী সব প্রকল্প বাতিল করতে হবে। রোগ নির্ণয়, চিকিৎসাসেবা, অবকাঠামো উন্নয়ন, জনবল বৃদ্ধি, মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণের ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা সুলভ ও স্বাস্থ্য বীমা চালু করতে হবে।

৬. স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে স্বাধীন সাংবিধানিক কমিশনের অধীনে পরিচালনা করে রেগুলাটরি অথরিটি বা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য কার্যক্রমের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জীবাণু বিশেষজ্ঞ, মহামারী বিশেষজ্ঞ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সিনিয়র চিকিৎসকদের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে।

৭. স্বাধীন বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও পণ্য ক্রয়ে সব দুর্নীতির তদন্ত ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-আমলাসহ সবার বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।