চট্টগ্রামে হোমিও দোকানগুলোতে ভিড়

করোনাভাইরাস ঠেকাবে ‘আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০’ নামের এক ধরনের হোমিওপ্যাথি ওষুধ। এমন ধারণায় চট্টগ্রামের লালদিঘী এলাকার কে সি দে রোডের হোমিওপ্যাথি ওষুধের দোকানগুলোতে উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত কয়েকদিন সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেছে। করোনা চিকিৎসায় কার্যকর কিনা তা নিশ্চিত না হলেও অনেকেই তা সেবন করছেন করোনা প্রতিরোধের আশায়। এখানে বলা হচ্ছে করোনা থেকে মুক্তি পেতে এ হোমিওপ্যাথি ওষুধ অনেকটায় কার্যকর। আরও বলা হচ্ছে-এটি সেবন করলে সংক্রমণ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়! বিশেষ করে এই ‘আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০’ নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে। করোনার চিকিৎসা উদ্ভাবন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাঝেই নতুন করে আলোচনায় হোমিওপ্যাথি ওষুধ ‘আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০’। পুলিশের একটি অংশ এ ওষুধ সেবন করছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে বিভিন্ন কারখানাতেও শ্রমিকদের বিনামূল্যে তা বিলি করা হচ্ছে। এসব দেখাদেখিতে সাধারণ মানুষজনও লাইন ধরে কিনছে এ ওষুধ।

হোমিও চিকিৎসক ডা. আন্না রাণী বিশ্বাস বলেন, আমরা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকতা/কর্মচারীদের ‘ইমিউনিটি’ বৃদ্ধির জন্য ‘আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০’ বিতরণ করেছি। এছাড়া নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে এটি বিতরণ করেছি। এছাড়া প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। বঙ্গবন্ধু হোমিওপ্যাথিক ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন ও হোমিওপ্যাথিক গবেষণা পরিষদের পক্ষ থেকে এটি বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, করোনা মানে মৃত্যু নয়। নিয়ম মেনে চলতে হবে, সচেতনতা বাড়াতে হবে। শান্ত মাথায় চিকিৎসা নিয়ে করোনা কে করতে হবে জয়। তিনি বলেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যই সাধারণ মানুষ এটি কিনছেন। যাদের মধ্যে জ্বর, সর্দি ও কাশি রয়েছে তারাও এটি নিচ্ছেন। এছাড়া করোনা সংক্রমণ রয়েছে বা করোনা পজেটিভ হয়েছে এমন রোগীদের জন্যও তাদের স্বজনরা এটি নিয়ে যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোস্তাফা খালেদ আহমেদ বলেন, বিষয়টি আমাদের নলেজে নেই। একই বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রধান ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবদুর সাত্তার বলেন, যেহেতু হোমিওপ্যাথিও আমাদের চিকিৎসা পদ্ধিতিতে নেই তাই সে সম্পর্কে আমি মন্তব্য করতে পারব না। এখন যারা খাচ্ছেন তারা ভালো বলতে পারবেন।

এদিকে কিছুদিন আগে ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে করোনা চিকিৎসায় এ ওষুধ সুপারিশ করা হয়েছে। এর আগে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও একে করোনার অন্যতম প্রতিষেধক হিসেবে তালিকায় রাখে। যদিও করোনার চিকিৎসায় আর্সেনিকাম কার্যকর, এমন বৈজ্ঞানিক তথ্য, প্রমাণ মেলেনি।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, ভারতের সেন্ট্রাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ ইন হোমিওপ্যাথি’র (ঈঈজঐ) সায়েন্টিফিক অ্যডভাইজরি বোর্ডের ৬৪তম সভায় মতো প্রকাশ করা হয় , আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০ করোনা প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কাউন্সিল একটি ফ্যাক্ট শিট প্রকাশ করে জানায়, এই ওষুধটি কেবলমাত্র ফ্লুর সম্ভাব্য প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০’ হোমিওপ্যাথি ওষুধেই সারবে করোনাভাইরাস। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এটি খুবই কার্যকর একটি ওষুধ। এটি ইনফ্লুয়েঞ্জা জাতীয় রোগ প্রতিরোধেও কার্যকর। তবে ডোজ মেনে খালি পেটে এটি সেবন করতে হবে। সূত্র আরও জানান, আর্সেনিকাম অ্যালবাম নামের এ ওষুধটি ফ্লু বা ঠাণ্ডা প্রতিরোধে খুবই কার্যকর একটি ওষুধ।

গতকাল কে সি দে রোডের হোমিও ফার্মেসিগুলোতে সরেজমিনে দেখা যায়, অনেকে এসেছেন ‘আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০’ নামের হোমিও ওষুধটি কিনতে। তারা কেউ কেউ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন নিয়ে এসেছেন। অনেকে প্রেসক্রিপশন ছাড়াও এসেছেন। সবাই কিনছেন এই ওষুধটি। ২১০ টাকা, ১২০ টাকা, ১০০ টাকা ও ৬০ টাকায় এই ওষুধটি ক্রয় করছেন সাধারণ মানুষ। ডোজভেদেই ওষুধের দামের এই বৈচিত্র্য বলছেন ফার্মেসি মালিকরা।

সেন্ট্রাল হোমিও ফার্মেসির রতন বড়ুয়া জানান, তারা আর্সেনিকাম অ্যালবাম বিক্রিতে খুবই সাড়া পাচ্ছেন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যই সাধারণ মানুষ এটি কিনছেন। যাদের মধ্যে জ্বর, সর্দি ও কাশি রয়েছে তারাও এটি নিচ্ছেন। এছাড়া করোনা সংক্রমণ রয়েছে বা করোনা পজেটিভ হয়েছে এমন রোগীদের জন্যও তাদের স্বজনরা এটি নিয়ে যাচ্ছেন।

বুধবার, ১৭ জুন ২০২০ , ৩ আষাঢ় ১৪২৭, ২৪ শাওয়াল ১৪৪১

করোনা মুক্তির আশায়

চট্টগ্রামে হোমিও দোকানগুলোতে ভিড়

চট্টগ্রাম ব্যুরো

করোনাভাইরাস ঠেকাবে ‘আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০’ নামের এক ধরনের হোমিওপ্যাথি ওষুধ। এমন ধারণায় চট্টগ্রামের লালদিঘী এলাকার কে সি দে রোডের হোমিওপ্যাথি ওষুধের দোকানগুলোতে উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত কয়েকদিন সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেছে। করোনা চিকিৎসায় কার্যকর কিনা তা নিশ্চিত না হলেও অনেকেই তা সেবন করছেন করোনা প্রতিরোধের আশায়। এখানে বলা হচ্ছে করোনা থেকে মুক্তি পেতে এ হোমিওপ্যাথি ওষুধ অনেকটায় কার্যকর। আরও বলা হচ্ছে-এটি সেবন করলে সংক্রমণ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়! বিশেষ করে এই ‘আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০’ নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে। করোনার চিকিৎসা উদ্ভাবন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাঝেই নতুন করে আলোচনায় হোমিওপ্যাথি ওষুধ ‘আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০’। পুলিশের একটি অংশ এ ওষুধ সেবন করছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে বিভিন্ন কারখানাতেও শ্রমিকদের বিনামূল্যে তা বিলি করা হচ্ছে। এসব দেখাদেখিতে সাধারণ মানুষজনও লাইন ধরে কিনছে এ ওষুধ।

হোমিও চিকিৎসক ডা. আন্না রাণী বিশ্বাস বলেন, আমরা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকতা/কর্মচারীদের ‘ইমিউনিটি’ বৃদ্ধির জন্য ‘আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০’ বিতরণ করেছি। এছাড়া নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে এটি বিতরণ করেছি। এছাড়া প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। বঙ্গবন্ধু হোমিওপ্যাথিক ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন ও হোমিওপ্যাথিক গবেষণা পরিষদের পক্ষ থেকে এটি বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, করোনা মানে মৃত্যু নয়। নিয়ম মেনে চলতে হবে, সচেতনতা বাড়াতে হবে। শান্ত মাথায় চিকিৎসা নিয়ে করোনা কে করতে হবে জয়। তিনি বলেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যই সাধারণ মানুষ এটি কিনছেন। যাদের মধ্যে জ্বর, সর্দি ও কাশি রয়েছে তারাও এটি নিচ্ছেন। এছাড়া করোনা সংক্রমণ রয়েছে বা করোনা পজেটিভ হয়েছে এমন রোগীদের জন্যও তাদের স্বজনরা এটি নিয়ে যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোস্তাফা খালেদ আহমেদ বলেন, বিষয়টি আমাদের নলেজে নেই। একই বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রধান ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবদুর সাত্তার বলেন, যেহেতু হোমিওপ্যাথিও আমাদের চিকিৎসা পদ্ধিতিতে নেই তাই সে সম্পর্কে আমি মন্তব্য করতে পারব না। এখন যারা খাচ্ছেন তারা ভালো বলতে পারবেন।

এদিকে কিছুদিন আগে ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে করোনা চিকিৎসায় এ ওষুধ সুপারিশ করা হয়েছে। এর আগে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও একে করোনার অন্যতম প্রতিষেধক হিসেবে তালিকায় রাখে। যদিও করোনার চিকিৎসায় আর্সেনিকাম কার্যকর, এমন বৈজ্ঞানিক তথ্য, প্রমাণ মেলেনি।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, ভারতের সেন্ট্রাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ ইন হোমিওপ্যাথি’র (ঈঈজঐ) সায়েন্টিফিক অ্যডভাইজরি বোর্ডের ৬৪তম সভায় মতো প্রকাশ করা হয় , আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০ করোনা প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কাউন্সিল একটি ফ্যাক্ট শিট প্রকাশ করে জানায়, এই ওষুধটি কেবলমাত্র ফ্লুর সম্ভাব্য প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০’ হোমিওপ্যাথি ওষুধেই সারবে করোনাভাইরাস। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এটি খুবই কার্যকর একটি ওষুধ। এটি ইনফ্লুয়েঞ্জা জাতীয় রোগ প্রতিরোধেও কার্যকর। তবে ডোজ মেনে খালি পেটে এটি সেবন করতে হবে। সূত্র আরও জানান, আর্সেনিকাম অ্যালবাম নামের এ ওষুধটি ফ্লু বা ঠাণ্ডা প্রতিরোধে খুবই কার্যকর একটি ওষুধ।

গতকাল কে সি দে রোডের হোমিও ফার্মেসিগুলোতে সরেজমিনে দেখা যায়, অনেকে এসেছেন ‘আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০’ নামের হোমিও ওষুধটি কিনতে। তারা কেউ কেউ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন নিয়ে এসেছেন। অনেকে প্রেসক্রিপশন ছাড়াও এসেছেন। সবাই কিনছেন এই ওষুধটি। ২১০ টাকা, ১২০ টাকা, ১০০ টাকা ও ৬০ টাকায় এই ওষুধটি ক্রয় করছেন সাধারণ মানুষ। ডোজভেদেই ওষুধের দামের এই বৈচিত্র্য বলছেন ফার্মেসি মালিকরা।

সেন্ট্রাল হোমিও ফার্মেসির রতন বড়ুয়া জানান, তারা আর্সেনিকাম অ্যালবাম বিক্রিতে খুবই সাড়া পাচ্ছেন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যই সাধারণ মানুষ এটি কিনছেন। যাদের মধ্যে জ্বর, সর্দি ও কাশি রয়েছে তারাও এটি নিচ্ছেন। এছাড়া করোনা সংক্রমণ রয়েছে বা করোনা পজেটিভ হয়েছে এমন রোগীদের জন্যও তাদের স্বজনরা এটি নিয়ে যাচ্ছেন।