নার্সদের সংক্রমণ ব্যাধিসংক্রান্ত উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন

দেশের ৮৬ শতাংশ নার্সের করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক ‘আইপিসি’ প্রশিক্ষণ নেই বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বিবিজিএনএস ও এসএনএসআর নামক নার্সদের দুটি সংগঠনের জরিপের ভিত্তিতে দুর্নীতি বিরোধী সংগঠনটি এ তথ্য জানিয়েছে। এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে ৭৪ দশমিক ৫০ শতাংশ দক্ষ জনবলের ঘাটতি রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণের ৫৯ দশমিক ৬০ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছে টিআইবি। গত সোমবার ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

দেশের বেশিরভাগ নার্সের ‘আইপিসি’ প্রশিক্ষণ না থাকার খবরটি হতাশাজনক। আইপিসি ট্রেনিং হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবার সর্বজনীন শৃঙ্খলা, যা রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করে। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সংক্রমণের শৃঙ্খল, সংক্রমণভিত্তিক সতর্কতা ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের (পিপিই) ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে সহায়তা করে। অথচ তেমন কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই ছোঁয়াচে কোভিড-১৯ রোগীকে সেবা দিচ্ছেন দেশের অধিকাংশ স্বাস্থ্যকর্মী। এমনকি বেসরকারি কিছু হাসপাতালে নার্সদের আইপিসি পদ থাকলেও সরকারি হাসপাতালগুলোয় তা একেবারেই নেই। ফলে ক্রমেই বাড়ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমিত হওয়ার সংখ্যা।

দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ। এর অনেক আগে থেকেই বিশ্বে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়েছে এবং এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সবাই সতর্ক হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তখন থেকেই বারবার বলা হচ্ছিল যে, তারা করোনা মোকাবিলায় শতভাগ প্রস্তুত। কিন্তু সংক্রমণের শুরু থেকেই পদে পদে প্রস্তুতির সঙ্গিন দশা দৃশ্যমান হয়েছে। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর জন্য জাতীয় প্রস্তুতি ও সাড়া দান পরিকল্পনা প্রণয়নে প্রায় দেড় মাস বিলম্ব করা হয়েছে। এর কারণে সংক্রমণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ ছুটি দিয়ে মানুষকে ঘরে রেখে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যায়নি, প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী দেয়া হয়নি, অপরিহার্য অক্সিজেন সরবরাহে অপ্রতুলতা ছিল। এখন দেখা গেল, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়াই নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা যুদ্ধে নামিয়ে দেয়া হয়েছে এবং এর ফলে কার্যত তাদের সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক।

এ অব্যবস্থাপনার অবসান হওয়া দরকার। আমরা মনে করি, প্রত্যেক নার্সেরই আইপিসি প্রশিক্ষণ থাকা উচিত। আইপিসির গাইডলাইন অনুযায়ী, হ্যান্ড হাইজিনিং, রেসপিরেটরি হাইজিনিং, পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই), সেফ ইনজেকশন প্র্যাকটিস, অকুপেশনাল হেলথ সেফটি, পোস্ট-এক্সপোজার ম্যানেজমেন্ট, পেশেন্ট কেয়ার ইকুইপমেন্ট ও এনভায়রনমেন্টাল কন্ট্রোলের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মাধ্যমে সর্বজনীন সতর্কতা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে চলমান করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অবশ্যই এ প্রশিক্ষণ থাকা জরুরি। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতর দায়িত্বশীল ভূমিকা না রাখলে ভবিষ্যতে চরম বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

বুধবার, ১৭ জুন ২০২০ , ৩ আষাঢ় ১৪২৭, ২৪ শাওয়াল ১৪৪১

নার্সদের সংক্রমণ ব্যাধিসংক্রান্ত উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন

দেশের ৮৬ শতাংশ নার্সের করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক ‘আইপিসি’ প্রশিক্ষণ নেই বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বিবিজিএনএস ও এসএনএসআর নামক নার্সদের দুটি সংগঠনের জরিপের ভিত্তিতে দুর্নীতি বিরোধী সংগঠনটি এ তথ্য জানিয়েছে। এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে ৭৪ দশমিক ৫০ শতাংশ দক্ষ জনবলের ঘাটতি রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণের ৫৯ দশমিক ৬০ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছে টিআইবি। গত সোমবার ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

দেশের বেশিরভাগ নার্সের ‘আইপিসি’ প্রশিক্ষণ না থাকার খবরটি হতাশাজনক। আইপিসি ট্রেনিং হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবার সর্বজনীন শৃঙ্খলা, যা রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করে। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সংক্রমণের শৃঙ্খল, সংক্রমণভিত্তিক সতর্কতা ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের (পিপিই) ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে সহায়তা করে। অথচ তেমন কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই ছোঁয়াচে কোভিড-১৯ রোগীকে সেবা দিচ্ছেন দেশের অধিকাংশ স্বাস্থ্যকর্মী। এমনকি বেসরকারি কিছু হাসপাতালে নার্সদের আইপিসি পদ থাকলেও সরকারি হাসপাতালগুলোয় তা একেবারেই নেই। ফলে ক্রমেই বাড়ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমিত হওয়ার সংখ্যা।

দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ। এর অনেক আগে থেকেই বিশ্বে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়েছে এবং এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সবাই সতর্ক হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তখন থেকেই বারবার বলা হচ্ছিল যে, তারা করোনা মোকাবিলায় শতভাগ প্রস্তুত। কিন্তু সংক্রমণের শুরু থেকেই পদে পদে প্রস্তুতির সঙ্গিন দশা দৃশ্যমান হয়েছে। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর জন্য জাতীয় প্রস্তুতি ও সাড়া দান পরিকল্পনা প্রণয়নে প্রায় দেড় মাস বিলম্ব করা হয়েছে। এর কারণে সংক্রমণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ ছুটি দিয়ে মানুষকে ঘরে রেখে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যায়নি, প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী দেয়া হয়নি, অপরিহার্য অক্সিজেন সরবরাহে অপ্রতুলতা ছিল। এখন দেখা গেল, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়াই নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা যুদ্ধে নামিয়ে দেয়া হয়েছে এবং এর ফলে কার্যত তাদের সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক।

এ অব্যবস্থাপনার অবসান হওয়া দরকার। আমরা মনে করি, প্রত্যেক নার্সেরই আইপিসি প্রশিক্ষণ থাকা উচিত। আইপিসির গাইডলাইন অনুযায়ী, হ্যান্ড হাইজিনিং, রেসপিরেটরি হাইজিনিং, পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই), সেফ ইনজেকশন প্র্যাকটিস, অকুপেশনাল হেলথ সেফটি, পোস্ট-এক্সপোজার ম্যানেজমেন্ট, পেশেন্ট কেয়ার ইকুইপমেন্ট ও এনভায়রনমেন্টাল কন্ট্রোলের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মাধ্যমে সর্বজনীন সতর্কতা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে চলমান করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অবশ্যই এ প্রশিক্ষণ থাকা জরুরি। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতর দায়িত্বশীল ভূমিকা না রাখলে ভবিষ্যতে চরম বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।