সিলেটের লোভাছড়া পাথর কোয়ারিতে অবিক্রিত শত কোটি টাকার পাথর নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, শুকনো মৌসুমে উত্তোলিত এসব পাথর চলমান বর্ষায় পরিবহনের কথা থাকলেও লকডাউনের কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এরইমধ্যে ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ায় প্রশাসন পাথর পরিবহন বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে। এ অবস্থায় তারা আদালতের শরণাপন্ন হলে ব্যবসায়ীদের পাথর পরিবহনে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দেন আদালত। সে সময়ও শেষ হচ্ছে আজ। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে পাথরের সিংহভাগই স্থানান্তর করতে পারেননি তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের অন্যান্য পাথর কোয়ারি থেকে সারাবছর পাথর সরবরাহের সুযোগ থাকলেও ব্যতিক্রম লোভাছড়া কোয়ারি। এখানে শুকনো মৌসুমে ব্যবসায়ীরা পাথর উত্তোলন ও মজুদ করেন। সড়ক যোগাযোগ না থাকায় বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি আসলে নৌপথে সেগুলো পরিবহন করা হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এবার বর্ষার শুরুতে পাথর পরিবহন করা সম্ভব হয়নি। এখন পাথর পরিবহনে ব্যর্থ হলে নিঃস্ব হবেন শত শত ব্যবসায়ী। কর্মহীন হবে এখানে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার শ্রমিক। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, বিষয়টি মানবিক হলেও আদালতের সিদ্ধান্তের বাইরে তাদের কিছু করার নেই।
মুলাগুল পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘নদীর পানি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিভিন্ন দফতরে আবেদন করেও ফল পাইনি।
লোভাছড়া আদর্শ পাথর ব্যবসায়ি সমবায় সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সব রয়েলিটি প্রদান করে প্রায় ১ হাজার ব্যবসায়ি পাথর মজুদ করি। বাড়ি ও জমিজমা বন্ধক রেখে কোটি কোটি টাকা এখানে বিনিয়োগ করেছি। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে গত আড়াই মাস আমরা পাথর সরবরাহ করতে পারিনি। সরকার যদি প্রকৃত অবস্থা বুঝে আমাদের পাথর সরবরাহের করার জন্য সময় না দেয় তাহলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব।’ খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে লোভাছড়া পাথর কোয়ারির দুই বছর মেয়াদি লিজ শেষ হয় গত ১৩ এপ্রিল। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ব্যবসায়ী ইজারার শর্ত মেনে সরকারের রয়েলিটি প্রদান করে বর্ষা মৌসুমে পরিবহনের জন্য কোটি কোটি টাকার পাথর মজুদ করেন। তাদের অনেকে বাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থায় বন্ধক দিয়ে পুঁজি সংগ্রহ করেন।
ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ৩১ মে ব্যবসায়ীরা জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে পাথর সরবরাহের সময় বাড়িয়ে দিতে আবেদন করে। তবে এ ব্যাপারে সাড়া না পাওয়ায় পরবর্তীতে মানবিক দিক বিবেচনায় হাইকোর্ট ১৫ জুন পর্যন্ত ১৫ দিনের সময় দিয়ে পাথর সরবরাহ সম্পন্ন করতে আদেশ দেন।
কিন্তু দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়া ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে নদীপথের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় স্বল্প সময়ে ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় শ্রমিক সংগ্রহ ও নৌকা জোগাড় করতে ব্যর্থ হন। লোভাছড়া পাথর কোয়ারি শ্রমিক সমবায় সমিতির সভাপতি আজাদুর রহমান বতা বলেন, ‘এখানে প্রায় ১০ হাজারের ওপরে শ্রমিক কর্ম করে সংসার চালান। আমাদের পাথর লোডের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। অনেক আশা নিয়ে লকডাউনের মধ্যেই কষ্ট করে এসেছে। অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে পথে রয়েছেন। কিন্তু আজ থেকে পাথর পরিবহন বন্ধ হলে আমাদের অনাহারে মরতে হবে।’ এ বিষয়ে কথা হলে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসলাম উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি মানবিক হলেও আদালতের সিদ্ধান্তের বাইরে আমাদের কিছু করার নেই। আদালতের বেঁধে দেয়া সময় শেষ হলে কোনো কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বা সরবরাহ করার কোন সুযোগ নেই’।
বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন ২০২০ , ৪ আষাঢ় ১৪২৭, ২৫ শাওয়াল ১৪৪১
বিশেষ প্রতিনিধি
সিলেটের লোভাছড়া পাথর কোয়ারিতে অবিক্রিত শত কোটি টাকার পাথর নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, শুকনো মৌসুমে উত্তোলিত এসব পাথর চলমান বর্ষায় পরিবহনের কথা থাকলেও লকডাউনের কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এরইমধ্যে ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ায় প্রশাসন পাথর পরিবহন বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে। এ অবস্থায় তারা আদালতের শরণাপন্ন হলে ব্যবসায়ীদের পাথর পরিবহনে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দেন আদালত। সে সময়ও শেষ হচ্ছে আজ। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে পাথরের সিংহভাগই স্থানান্তর করতে পারেননি তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের অন্যান্য পাথর কোয়ারি থেকে সারাবছর পাথর সরবরাহের সুযোগ থাকলেও ব্যতিক্রম লোভাছড়া কোয়ারি। এখানে শুকনো মৌসুমে ব্যবসায়ীরা পাথর উত্তোলন ও মজুদ করেন। সড়ক যোগাযোগ না থাকায় বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি আসলে নৌপথে সেগুলো পরিবহন করা হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এবার বর্ষার শুরুতে পাথর পরিবহন করা সম্ভব হয়নি। এখন পাথর পরিবহনে ব্যর্থ হলে নিঃস্ব হবেন শত শত ব্যবসায়ী। কর্মহীন হবে এখানে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার শ্রমিক। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, বিষয়টি মানবিক হলেও আদালতের সিদ্ধান্তের বাইরে তাদের কিছু করার নেই।
মুলাগুল পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘নদীর পানি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিভিন্ন দফতরে আবেদন করেও ফল পাইনি।
লোভাছড়া আদর্শ পাথর ব্যবসায়ি সমবায় সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সব রয়েলিটি প্রদান করে প্রায় ১ হাজার ব্যবসায়ি পাথর মজুদ করি। বাড়ি ও জমিজমা বন্ধক রেখে কোটি কোটি টাকা এখানে বিনিয়োগ করেছি। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে গত আড়াই মাস আমরা পাথর সরবরাহ করতে পারিনি। সরকার যদি প্রকৃত অবস্থা বুঝে আমাদের পাথর সরবরাহের করার জন্য সময় না দেয় তাহলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব।’ খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে লোভাছড়া পাথর কোয়ারির দুই বছর মেয়াদি লিজ শেষ হয় গত ১৩ এপ্রিল। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ব্যবসায়ী ইজারার শর্ত মেনে সরকারের রয়েলিটি প্রদান করে বর্ষা মৌসুমে পরিবহনের জন্য কোটি কোটি টাকার পাথর মজুদ করেন। তাদের অনেকে বাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থায় বন্ধক দিয়ে পুঁজি সংগ্রহ করেন।
ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ৩১ মে ব্যবসায়ীরা জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে পাথর সরবরাহের সময় বাড়িয়ে দিতে আবেদন করে। তবে এ ব্যাপারে সাড়া না পাওয়ায় পরবর্তীতে মানবিক দিক বিবেচনায় হাইকোর্ট ১৫ জুন পর্যন্ত ১৫ দিনের সময় দিয়ে পাথর সরবরাহ সম্পন্ন করতে আদেশ দেন।
কিন্তু দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়া ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে নদীপথের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় স্বল্প সময়ে ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় শ্রমিক সংগ্রহ ও নৌকা জোগাড় করতে ব্যর্থ হন। লোভাছড়া পাথর কোয়ারি শ্রমিক সমবায় সমিতির সভাপতি আজাদুর রহমান বতা বলেন, ‘এখানে প্রায় ১০ হাজারের ওপরে শ্রমিক কর্ম করে সংসার চালান। আমাদের পাথর লোডের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। অনেক আশা নিয়ে লকডাউনের মধ্যেই কষ্ট করে এসেছে। অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে পথে রয়েছেন। কিন্তু আজ থেকে পাথর পরিবহন বন্ধ হলে আমাদের অনাহারে মরতে হবে।’ এ বিষয়ে কথা হলে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসলাম উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি মানবিক হলেও আদালতের সিদ্ধান্তের বাইরে আমাদের কিছু করার নেই। আদালতের বেঁধে দেয়া সময় শেষ হলে কোনো কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বা সরবরাহ করার কোন সুযোগ নেই’।