‘কাগজে কলমে ঋণখেলাপি কমালে বিপদ আরও বাড়বে’

চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে শুরু হয় মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপ। এই সংকটকালে ঋণখেলাপিদের আরও সুবিধা দিয়েছে সরকার। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিস্তি না দিলেও খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে হবে না। এর আগে করোনাভাইরাসের কারণে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঋণ শ্রেণীকরণে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। মহামারীর প্রকোপ দীর্ঘায়িত হওয়ায় আরও তিন মাস বর্ধিত করা হয়েছে ওই সময়। এভাবে কাগজে-কলমে ঋণখেলাপি কমালে বিপদ আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, বছরের প্রথম তিন মাস জানুয়ারি-মার্চ সময়ে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা কমে ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে বলে তথ্য দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, খেলাপি ঋণের ‘প্রকৃত চিত্র এটা নয়’। বাংলাদেশ ব্যাংক ‘কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ কম দেখিয়ে’ ব্যাংক খাতের জন্য ‘বিপদ’ ডেকে আনছে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার খেলাপি ঋণের সর্বশেষ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ২৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপির পরিমাণ ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরে ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপির অংক ছিল ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ কমেছে ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের মার্চে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। ওই সময়ে বিতরণ করা ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ ছিল খেলাপি। এ হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ কমেছে ১৮ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। অথচ গত এক বছরে প্রকৃতপক্ষে কোন খেলাপি ঋণ আদায় হয়নি। গত বছরের ১৬ মে ঋণখেলাপিদের মোট ঋণের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সুদে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরে পরিশোধের সুযোগ দেয় সরকার। ‘বিশেষ’ এই সুবিধার আওতায় মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলো নবায়ন করেছে। এর অর্ধেকই করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েও গত বছর বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এর বাইরে মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন (রাইট অফ) করেছে ব্যাংকগুলো। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হিসাব থেকে এই অর্থ বাদ যাবে, যদিও তা আর ফেরত আসছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকই আরেক তথ্যে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০০ জন ঋণগ্রহীতা আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে রেখেছেন। ফলে ঋণখেলাপি হিসেবে তাদের নাম বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরোতে (সিআইবি) উল্লেখ করা হয় না। এ রকম ঋণের পরিমাণ এখন ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো। এই সব খেলাপি ঋণ যোগ করলে দেশে এখন খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে শুরু হয় মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপ। এই সংকটকালে ঋণখেলাপিদের আরও সুবিধা দিয়েছে সরকার। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিস্তি না দিলেও খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে হবে না। এর আগে করোনাভাইরাসের কারণে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঋণ শ্রেণীকরণে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। মহামারীর প্রকোপ দীর্ঘায়িত হওয়ায় আরও তিন মাস বর্ধিত করা হয়েছে ওই সময়। অর্থাৎ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন ঋণের শ্রেণীমান পরিবর্তন করা যাবে না। যে ঋণ যে শ্রেণীতে আছে, সে অবস্থাতেই থাকবে। গত ১৫ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে তথ্য দিচ্ছে, আসল অংক এর তিনগুণ বেশি। এ ধরনের মিনিংলেস তথ্য দিয়ে কেন্দ্রীয়ব্যাংক দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করছে। এতে আমাদের ব্যাংকিং খাতের ভয়ানক ক্ষতি হচ্ছে। ঋণ আদায় না করে, ঋণখেলাপিদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যয় কি মজা পাচ্ছে তা আমার মাথায় ঢোকে না। ঋণ খেলাপিদের বার বার ছাড় দিয়ে ‘ভালো’ ঋণ গ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে মন্তব্য করে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর বলেন, এই ভুল সিদ্ধান্ত গোটা ব্যাংকিং খাতের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনবে বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশের ব্যাংক খাত নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত বছরের নভেম্বরে যে প্রতিবেদন দিয়েছিল, তাতে ‘আসল জায়গায় আঘাত’ করা হয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেয়ার প্রবণতার শিকড় অত্যন্ত গভীরে। প্রভাবশালী, ওপর মহলে ভালো যোগাযোগ আছে এবং ধনী, এমন কিছু ব্যবসায়ী ঋণ ফেরত দেয়ার কোন তাগিদই অনুভব করেন না। এমনকি বাংলাদেশে আর্থিক খাতের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও এখন নিচ্ছেন প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান এসব ঋণ গ্রাহিতারা। আহসান মনসুর বলেন, আমি ভেবেছিলাম, আইএমএফের ওই রিপোর্টের পর সরকারের কিছুটা হলেও টনক নড়বে। কিন্তু এখন দেখছি, কিছুই হয়নি।

এপ্রিলে প্রজ্ঞাপন দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ঋণের টাকা ফেরত না দিলেও জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত গ্রাহককে নতুন করে খেলাপি হিসেবে দেখানো যাবে না। তাদের ঋণের মান ডিসেম্বরে যা ছিল তাই দেখাতে হবে। ওই ছাড়ের সময়কাল আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রাহক অর্থ শোধ অর্থ না দিলেও খাতাকলমে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বাড়বে না।

রবিবার, ২১ জুন ২০২০ , ৭ আষাঢ় ১৪২৭, ২৮ শাওয়াল ১৪৪১

‘কাগজে কলমে ঋণখেলাপি কমালে বিপদ আরও বাড়বে’

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে শুরু হয় মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপ। এই সংকটকালে ঋণখেলাপিদের আরও সুবিধা দিয়েছে সরকার। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিস্তি না দিলেও খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে হবে না। এর আগে করোনাভাইরাসের কারণে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঋণ শ্রেণীকরণে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। মহামারীর প্রকোপ দীর্ঘায়িত হওয়ায় আরও তিন মাস বর্ধিত করা হয়েছে ওই সময়। এভাবে কাগজে-কলমে ঋণখেলাপি কমালে বিপদ আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, বছরের প্রথম তিন মাস জানুয়ারি-মার্চ সময়ে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা কমে ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে বলে তথ্য দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, খেলাপি ঋণের ‘প্রকৃত চিত্র এটা নয়’। বাংলাদেশ ব্যাংক ‘কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ কম দেখিয়ে’ ব্যাংক খাতের জন্য ‘বিপদ’ ডেকে আনছে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার খেলাপি ঋণের সর্বশেষ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ২৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপির পরিমাণ ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরে ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপির অংক ছিল ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ কমেছে ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের মার্চে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। ওই সময়ে বিতরণ করা ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ ছিল খেলাপি। এ হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ কমেছে ১৮ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। অথচ গত এক বছরে প্রকৃতপক্ষে কোন খেলাপি ঋণ আদায় হয়নি। গত বছরের ১৬ মে ঋণখেলাপিদের মোট ঋণের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সুদে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরে পরিশোধের সুযোগ দেয় সরকার। ‘বিশেষ’ এই সুবিধার আওতায় মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলো নবায়ন করেছে। এর অর্ধেকই করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েও গত বছর বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এর বাইরে মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন (রাইট অফ) করেছে ব্যাংকগুলো। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হিসাব থেকে এই অর্থ বাদ যাবে, যদিও তা আর ফেরত আসছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকই আরেক তথ্যে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০০ জন ঋণগ্রহীতা আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে রেখেছেন। ফলে ঋণখেলাপি হিসেবে তাদের নাম বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরোতে (সিআইবি) উল্লেখ করা হয় না। এ রকম ঋণের পরিমাণ এখন ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো। এই সব খেলাপি ঋণ যোগ করলে দেশে এখন খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে শুরু হয় মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপ। এই সংকটকালে ঋণখেলাপিদের আরও সুবিধা দিয়েছে সরকার। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিস্তি না দিলেও খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে হবে না। এর আগে করোনাভাইরাসের কারণে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঋণ শ্রেণীকরণে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। মহামারীর প্রকোপ দীর্ঘায়িত হওয়ায় আরও তিন মাস বর্ধিত করা হয়েছে ওই সময়। অর্থাৎ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন ঋণের শ্রেণীমান পরিবর্তন করা যাবে না। যে ঋণ যে শ্রেণীতে আছে, সে অবস্থাতেই থাকবে। গত ১৫ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে তথ্য দিচ্ছে, আসল অংক এর তিনগুণ বেশি। এ ধরনের মিনিংলেস তথ্য দিয়ে কেন্দ্রীয়ব্যাংক দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করছে। এতে আমাদের ব্যাংকিং খাতের ভয়ানক ক্ষতি হচ্ছে। ঋণ আদায় না করে, ঋণখেলাপিদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যয় কি মজা পাচ্ছে তা আমার মাথায় ঢোকে না। ঋণ খেলাপিদের বার বার ছাড় দিয়ে ‘ভালো’ ঋণ গ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে মন্তব্য করে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর বলেন, এই ভুল সিদ্ধান্ত গোটা ব্যাংকিং খাতের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনবে বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশের ব্যাংক খাত নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত বছরের নভেম্বরে যে প্রতিবেদন দিয়েছিল, তাতে ‘আসল জায়গায় আঘাত’ করা হয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেয়ার প্রবণতার শিকড় অত্যন্ত গভীরে। প্রভাবশালী, ওপর মহলে ভালো যোগাযোগ আছে এবং ধনী, এমন কিছু ব্যবসায়ী ঋণ ফেরত দেয়ার কোন তাগিদই অনুভব করেন না। এমনকি বাংলাদেশে আর্থিক খাতের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও এখন নিচ্ছেন প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান এসব ঋণ গ্রাহিতারা। আহসান মনসুর বলেন, আমি ভেবেছিলাম, আইএমএফের ওই রিপোর্টের পর সরকারের কিছুটা হলেও টনক নড়বে। কিন্তু এখন দেখছি, কিছুই হয়নি।

এপ্রিলে প্রজ্ঞাপন দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ঋণের টাকা ফেরত না দিলেও জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত গ্রাহককে নতুন করে খেলাপি হিসেবে দেখানো যাবে না। তাদের ঋণের মান ডিসেম্বরে যা ছিল তাই দেখাতে হবে। ওই ছাড়ের সময়কাল আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রাহক অর্থ শোধ অর্থ না দিলেও খাতাকলমে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বাড়বে না।