বাউফলের অকুতোভয় করোনাযোদ্ধা মাহবুব

কেউ বিদেশ বা অন্য এলাকা থেকে এসেছেন, কিংবা কারো করোনাভাইরাসের উপসর্গ আছে এমন খবর পেলেই সেখানেই ছুটছেন তিনি। গত ২ মার্চ থেকে তার ছুটে চলা শুরু। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও তাকে যেতে হয় প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের বাড়ি বাড়ি। এ ছুটে চলার শেষ কবে হবে তাও তিনি জানেন না।

যিনি এ কাজটি করছেন তার নাম মো. মাহবুব আলম (৪৪)। তিনি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরেটরি)। এ উপজেলায় সাড়ে চার লাখ মানুষের বসবাস। এলাকায় তিনি এখন ‘করোনা যোদ্ধা’ হিসেবে পরিচিত।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের প্যাথলজিক্যাল বিভিন্ন ধরণের ৩০ টি পরীক্ষার বাইরেও গত সাড়ে তিন মাসে বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা পরীক্ষায় নমুনা সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণের খুবই স্পর্শকাতর ওই কাজটিও করছেন তিনি। গত বুধবার পর্যন্ত তার সংগ্রহ করা তিনশ’ ৪৪ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সূত্রে জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাউফলের তিন ব্যক্তি মারা গেলেও তাদের নমুনা সংগ্রহ এবং চিকিৎসা কোনটাই বাউফলে হয়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে গেলে তাকে পরের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়। কিন্তু মাহাবুবের সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষায় ২২ জনের করোনা পজেটিভ এলেও তিনি কোয়ারেন্টিনে থাকতে পারছেন না। কারণ তিনি যে এ উপজেলার করোনা শনাক্তকরণের নমুনা সংগ্রহের প্রধান যোদ্ধা।

ব্যক্তি জীবনে তিনি বিবাহিত। স্ত্রী আসমা বেগম (৪০) গৃহিনী। তার ছেলে মো. আশরাফুল আলম (২০)একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিষয়ে সম্মান শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষে ও মেয়ে আরফা মেহজামিন (১৩) অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে। মাহবুব জানান, একমাত্র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হওয়ার কারণেই মহামারী করোনাযুদ্ধে নমুনা সংগ্রহের জন্য তাকে এ উপজেলার প্রধান যোদ্ধার ভূমিকায় অংশ নিতে হচ্ছে। তাই স্ত্রী, সন্তান এমনকি নিজের জীবনের কথা বিবেচনা করারও অবকাশ নেই। মেয়ে আরফা মেহজামিন বলেন, সব সময় বাবার সঙ্গে দুপুরে ও রাতের খাবার খেতাম। দীর্ঘদিন পর্যন্ত আমাদের সংস্পর্শে না আসার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু তাতে কোনো দুঃখ কিংবা কষ্ট নেই। সবাই দোয়া করবেন বাবা যেন সুস্থ থাকেন, আরও বেশি বেশি মানবসেবা করতে পারেন। বাবাকে মানুষ করোনা যোদ্ধা হিসেবে চিনে এটাই আমাদের বড় শান্তি।’ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাহবুবের সাহসী ভূমিকায় আমরা মুগ্ধ। করোনার দিনে এ উপজেলার প্রধান সম্মুখ যোদ্ধা তিনি। ঝুঁকি রয়েছে তা জেনেও একটানা কাজ করছেন। বিশ্রাম তো দূরে থাক, সাপ্তাহিক-সরকারি ছুটিও ভোগ করছেন না। জেলার মধ্যে নমুনা সংগ্রহকারী হিসেবে তিনি অন্যতম যোদ্ধা। তার এই প্রচেষ্টা সত্যি অভাবনীয়।’

সোমবার, ২২ জুন ২০২০ , ৮ আষাঢ় ১৪২৭, ২৯ শাওয়াল ১৪৪১

বাউফলের অকুতোভয় করোনাযোদ্ধা মাহবুব

আল মামুন, বাউফল (পটুয়াখালী)

image

বাউফল (পটুয়াখালী) : নমুনা সংগ্রহ করছেন টেকনোলজিস্ট মাহবুব -সংবাদ

কেউ বিদেশ বা অন্য এলাকা থেকে এসেছেন, কিংবা কারো করোনাভাইরাসের উপসর্গ আছে এমন খবর পেলেই সেখানেই ছুটছেন তিনি। গত ২ মার্চ থেকে তার ছুটে চলা শুরু। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও তাকে যেতে হয় প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের বাড়ি বাড়ি। এ ছুটে চলার শেষ কবে হবে তাও তিনি জানেন না।

যিনি এ কাজটি করছেন তার নাম মো. মাহবুব আলম (৪৪)। তিনি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরেটরি)। এ উপজেলায় সাড়ে চার লাখ মানুষের বসবাস। এলাকায় তিনি এখন ‘করোনা যোদ্ধা’ হিসেবে পরিচিত।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের প্যাথলজিক্যাল বিভিন্ন ধরণের ৩০ টি পরীক্ষার বাইরেও গত সাড়ে তিন মাসে বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা পরীক্ষায় নমুনা সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণের খুবই স্পর্শকাতর ওই কাজটিও করছেন তিনি। গত বুধবার পর্যন্ত তার সংগ্রহ করা তিনশ’ ৪৪ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সূত্রে জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাউফলের তিন ব্যক্তি মারা গেলেও তাদের নমুনা সংগ্রহ এবং চিকিৎসা কোনটাই বাউফলে হয়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে গেলে তাকে পরের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়। কিন্তু মাহাবুবের সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষায় ২২ জনের করোনা পজেটিভ এলেও তিনি কোয়ারেন্টিনে থাকতে পারছেন না। কারণ তিনি যে এ উপজেলার করোনা শনাক্তকরণের নমুনা সংগ্রহের প্রধান যোদ্ধা।

ব্যক্তি জীবনে তিনি বিবাহিত। স্ত্রী আসমা বেগম (৪০) গৃহিনী। তার ছেলে মো. আশরাফুল আলম (২০)একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিষয়ে সম্মান শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষে ও মেয়ে আরফা মেহজামিন (১৩) অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে। মাহবুব জানান, একমাত্র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হওয়ার কারণেই মহামারী করোনাযুদ্ধে নমুনা সংগ্রহের জন্য তাকে এ উপজেলার প্রধান যোদ্ধার ভূমিকায় অংশ নিতে হচ্ছে। তাই স্ত্রী, সন্তান এমনকি নিজের জীবনের কথা বিবেচনা করারও অবকাশ নেই। মেয়ে আরফা মেহজামিন বলেন, সব সময় বাবার সঙ্গে দুপুরে ও রাতের খাবার খেতাম। দীর্ঘদিন পর্যন্ত আমাদের সংস্পর্শে না আসার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু তাতে কোনো দুঃখ কিংবা কষ্ট নেই। সবাই দোয়া করবেন বাবা যেন সুস্থ থাকেন, আরও বেশি বেশি মানবসেবা করতে পারেন। বাবাকে মানুষ করোনা যোদ্ধা হিসেবে চিনে এটাই আমাদের বড় শান্তি।’ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাহবুবের সাহসী ভূমিকায় আমরা মুগ্ধ। করোনার দিনে এ উপজেলার প্রধান সম্মুখ যোদ্ধা তিনি। ঝুঁকি রয়েছে তা জেনেও একটানা কাজ করছেন। বিশ্রাম তো দূরে থাক, সাপ্তাহিক-সরকারি ছুটিও ভোগ করছেন না। জেলার মধ্যে নমুনা সংগ্রহকারী হিসেবে তিনি অন্যতম যোদ্ধা। তার এই প্রচেষ্টা সত্যি অভাবনীয়।’