চাঁদপুরের কয়েক হাজার খণ্ডকালীন শিক্ষক পাথরচাপা কষ্ট বুকে নিয়ে দিনপার করছেন। করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় জুটছে না নূন্যতম সম্মানী। কাউকে বলতে পারছেন না কষ্ট আর আর্থিক সঙ্কটের কথা। দাবি বা প্রতিবাদের ভাষাও যেন ভুলে গেছেন তারা। চাঁদপুরে ৫৮৩ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই দুই বা ততোধিক খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছে। করোনাকালীন সময়ে তাদের জীবন চলছে টানাপোড়নে। কিন্তু মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতেও পারছেন না। স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের সামন্য প্রাপ্তিটুকুও পরিশোধ করতে পারছে না। এছাড়াও চাঁদপুরে চারটি প্রাইভেট কলেজ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও পাচ্ছে না বেতন বা সামন্যতম প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা। অবশ্য আশার কথা হচ্ছে চাঁদপুর জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নন-এমপিও শিক্ষকদের একটা তালিকা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সে তালিকা পাঠানো হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দফতরে। বিশেষ করে নন এমপিও শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের তালিকা করে পাঠানো হয়েছে। জানা যায়, চাঁদপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কয়েক হাজার খণ্ডকালীন শিক্ষক পাঠদান করান। সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক মহামারী করোনায় বন্ধ রয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সাথে বন্ধ হয়ে আছে এসব চুক্তিকালীন কাজ করা শিক্ষকদের আয় রোজগারের পথ। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে এসব শিক্ষকরা সম্মানী পান ক্লাসের ওপর নির্ভর করে। আবার কিছু কিছু শিক্ষক মাসিক নূন্যতম সম্মানীতে নিয়োগ পান। প্রায় তিন মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় এসব শিক্ষকদের আয় বন্ধ হয়ে আছে। তারা বলেন, সরকার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে মহামারীতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে অন্তরালে থেকে গেছে আলোর পথ দেখানো এ মানুষজন। শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, চাঁদপুরে স্নœাতকোত্তর বা ডিগ্রি কলেজ রয়েছে ২৫টি। এর মধ্যে দুইটি সরকারি ২৩টি বেসরকারি। উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ রয়েছে ১০টি, স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১৬টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৫৬টি (এর মধ্যে সরকারি ৭ আর বেসরকারি ২৪৯টি), নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১০টি, কামিল মাদ্রসা ৭টি, ফাজিল ৪৯টি, আলিম ৩৯, দাখিল ১০১টি, এবতেদায়ি ১৪ ও কাওমি মাদ্রাসা ৬৫টি। এছাড়া চারটি প্রাইভেট কলেজও রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন খণ্ডকালীন শিক্ষক বলেন, জীবন যাপনে অসুবিধা হলেও চক্ষুলজ্জায় কষ্টের কথা বলতে পারি না। চাইতেও পারি না।
বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজেই ১৭ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছে। এ শিক্ষকদের বিষয়ে অধ্যক্ষ মো. মোশারফ হোসেন জানান, আমরা গত মাস পর্যন্ত বেতন চালিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি। ভবিষ্যতে পারব কী না ভাবনার বিষয়। শহরের গণি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ১৪জন খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছেন। এসব শিক্ষকদের গতমাস পর্যন্ত সম্মানী দেয়া সম্ভব হলেও আগামী মাস নিয়ে অনিশ্চয়তা পড়েছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মো. আব্বাস উদ্দিন জানান, গত মাসেও তাদের সম্মানি দিয়েছি। অন্তত পার্টটাইম টিচারদের টাকা দেয়া দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভিন্ন ফান্ড থেকে এ টাকা ম্যানেজ করেছি। কিন্তু এভাবে কতদিন চালাতে পারি জানি না। অনেক প্রতিষ্ঠান মার্চ পর্যন্তও চালাতে পারেনি। মূলত এসব শিক্ষকরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। চাঁদপুর রেসিডেন্সিয়াল কলেজ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওমর ফারুক জানান, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত বেতনই হলো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান আয়। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত খরচের পাশাপাশি শিক্ষকদের বেতন চালিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রথম মাস শিক্ষক বেতনসহ বিবিধ খরচ কোনো মতে মেটানো সম্ভভ হলেও পরে আর সম্ভব হয়ে উঠেনি। এ দুর্যোগে সরকারি কোনো সহায়তাও পায়নি প্রতিষ্ঠানগুলো। চাঁদপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মো. গিয়াসউদ্দিন পাটওয়ারী জানান, নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নন-এমপিও শিক্ষকদের একটা তালিকা করে জেলা প্রশাসনের কাছে দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার, ২৬ জুন ২০২০ , ১২ আষাঢ় ১৪২৭, ৪ জিলকদ ১৪৪১
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, চাঁদপুর
চাঁদপুরের কয়েক হাজার খণ্ডকালীন শিক্ষক পাথরচাপা কষ্ট বুকে নিয়ে দিনপার করছেন। করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় জুটছে না নূন্যতম সম্মানী। কাউকে বলতে পারছেন না কষ্ট আর আর্থিক সঙ্কটের কথা। দাবি বা প্রতিবাদের ভাষাও যেন ভুলে গেছেন তারা। চাঁদপুরে ৫৮৩ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই দুই বা ততোধিক খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছে। করোনাকালীন সময়ে তাদের জীবন চলছে টানাপোড়নে। কিন্তু মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতেও পারছেন না। স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের সামন্য প্রাপ্তিটুকুও পরিশোধ করতে পারছে না। এছাড়াও চাঁদপুরে চারটি প্রাইভেট কলেজ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও পাচ্ছে না বেতন বা সামন্যতম প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা। অবশ্য আশার কথা হচ্ছে চাঁদপুর জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নন-এমপিও শিক্ষকদের একটা তালিকা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সে তালিকা পাঠানো হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দফতরে। বিশেষ করে নন এমপিও শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের তালিকা করে পাঠানো হয়েছে। জানা যায়, চাঁদপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কয়েক হাজার খণ্ডকালীন শিক্ষক পাঠদান করান। সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক মহামারী করোনায় বন্ধ রয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সাথে বন্ধ হয়ে আছে এসব চুক্তিকালীন কাজ করা শিক্ষকদের আয় রোজগারের পথ। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে এসব শিক্ষকরা সম্মানী পান ক্লাসের ওপর নির্ভর করে। আবার কিছু কিছু শিক্ষক মাসিক নূন্যতম সম্মানীতে নিয়োগ পান। প্রায় তিন মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় এসব শিক্ষকদের আয় বন্ধ হয়ে আছে। তারা বলেন, সরকার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে মহামারীতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে অন্তরালে থেকে গেছে আলোর পথ দেখানো এ মানুষজন। শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, চাঁদপুরে স্নœাতকোত্তর বা ডিগ্রি কলেজ রয়েছে ২৫টি। এর মধ্যে দুইটি সরকারি ২৩টি বেসরকারি। উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ রয়েছে ১০টি, স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১৬টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৫৬টি (এর মধ্যে সরকারি ৭ আর বেসরকারি ২৪৯টি), নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১০টি, কামিল মাদ্রসা ৭টি, ফাজিল ৪৯টি, আলিম ৩৯, দাখিল ১০১টি, এবতেদায়ি ১৪ ও কাওমি মাদ্রাসা ৬৫টি। এছাড়া চারটি প্রাইভেট কলেজও রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন খণ্ডকালীন শিক্ষক বলেন, জীবন যাপনে অসুবিধা হলেও চক্ষুলজ্জায় কষ্টের কথা বলতে পারি না। চাইতেও পারি না।
বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজেই ১৭ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছে। এ শিক্ষকদের বিষয়ে অধ্যক্ষ মো. মোশারফ হোসেন জানান, আমরা গত মাস পর্যন্ত বেতন চালিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি। ভবিষ্যতে পারব কী না ভাবনার বিষয়। শহরের গণি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ১৪জন খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছেন। এসব শিক্ষকদের গতমাস পর্যন্ত সম্মানী দেয়া সম্ভব হলেও আগামী মাস নিয়ে অনিশ্চয়তা পড়েছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মো. আব্বাস উদ্দিন জানান, গত মাসেও তাদের সম্মানি দিয়েছি। অন্তত পার্টটাইম টিচারদের টাকা দেয়া দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভিন্ন ফান্ড থেকে এ টাকা ম্যানেজ করেছি। কিন্তু এভাবে কতদিন চালাতে পারি জানি না। অনেক প্রতিষ্ঠান মার্চ পর্যন্তও চালাতে পারেনি। মূলত এসব শিক্ষকরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। চাঁদপুর রেসিডেন্সিয়াল কলেজ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওমর ফারুক জানান, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত বেতনই হলো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান আয়। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত খরচের পাশাপাশি শিক্ষকদের বেতন চালিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রথম মাস শিক্ষক বেতনসহ বিবিধ খরচ কোনো মতে মেটানো সম্ভভ হলেও পরে আর সম্ভব হয়ে উঠেনি। এ দুর্যোগে সরকারি কোনো সহায়তাও পায়নি প্রতিষ্ঠানগুলো। চাঁদপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মো. গিয়াসউদ্দিন পাটওয়ারী জানান, নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নন-এমপিও শিক্ষকদের একটা তালিকা করে জেলা প্রশাসনের কাছে দেয়া হয়েছে।