বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সইয়ের আহ্বান

বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তিখাতে সম্ভাবনাময় তরুণ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে ব্রিটিশ তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে, যা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে পাশাপাশি তরুণদের দক্ষতাও বৃদ্ধি করবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এছাড়াও ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের জন্য দুদেশের সরকারের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।

গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের সম্ভাবনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ২০২৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা নিয়ে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে, যা আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক একটি বিষয়। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দুদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক ডায়ালগ আয়োজন, দুদেশের বাণিজ্য সংগঠনসমূহের মধ্যে যোগাযোগ আরও সুদৃঢ়করণ, কোভিড উত্তর বাণিজ্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় ‘মার্কেট স্ট্রাটেজি’ প্রণয়ন এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের আরও বেশি হারে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহী করার প্রস্তাব করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুক্তারাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বলেন, ব্রিটিশ বাণিজ্য সংগঠনসমূহ বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য খাত বিষয়ে খুব বেশি অবগত নয় এবং এ অবস্থা উত্তরণে বাংলাদেশের চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ই-কমার্স বাজার রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশি তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারে। হাইকমিশনার বলেন, ব্রিটেনে হালাল পণ্য এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে বিশাল বাজার রয়েছে এবং বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা সহজেই এ সুযোগ গ্রহণ করে আরও বেশি হারে পণ্য যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করতে পারে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রাবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ একান্ত আবশ্যক। তিনি জানান, বাংলাদেশের ওষুধ, তথ্য-প্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সেবা এবং আর্থিক খাতসমূহে ব্রিটিশ বিনিয়োগ আকর্ষণে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় হ্রাস, প্রয়োজনীয় নীতিমালার সংস্কার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। হাইকমিশনার বলেন, সম্প্রতি ব্রিটেনে ‘বাংলা বন্ড’ চালু হয়েছে, যা দুদেশের উদ্যোক্তাদের আত্মবিশ^াস ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি দুদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে বাংলাদেশস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশন হতে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ^াসও দেন।

স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বন্ধুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে এবং বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের অবস্থান দ্বিতীয়। ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশে ২.৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া প্রায় ২০০টি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৩.৪৫ বিলিয়ন মূল্যের পণ্য যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করে যেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এর পরিমাণ ছিল ৪.৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ব্রিটিশ বিনিয়োগ আকর্ষণে তিনি নতুন পণ্যের উদ্ভাবন এবং পণ্যের বহুমুখীকরণে ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বাংলাদেশের অবকাঠামোখাতে বৃহৎ প্রকল্পসমূহে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ আকর্ষণে ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার বন্ড’ চালুর প্রস্তাব করেন। বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিকে চলমান রাখা, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং কোডিভ পরবর্তী অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানিতে শুল্ক ও কোটা মুক্ত সুবিধা আরো দীর্ঘ সময়ের জন্য বলবদ রাখা একান্ত প্রয়োজন বলেও জানান ডিসিসিআই সভাপতি। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার বাণিজ্য সম্প্রসারণে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের জন্য দুদেশের সরকারের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।

ওয়েবিনার ডায়ালগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেম’র নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। মূল প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক বিনিয়োগের ১০ শতাংশ। যদিও ২০১৮ সালে এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোতে যুক্তরাজ্যের সর্বমোট বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিল ১৮৬.৪৬ বিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড, কিন্তু বাংলাদেশে এসেছে মাত্র ০.৩৭ শতাংশ। তিনি জানান, বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধিতে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ, যথাযথ নীতিমালা ও কৌশল প্রণয়ন, ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় হ্রাস, দ্রুততম সময়ে অবকাঠামো এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)গুলোর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা জরুরি। এছাড়াও সেলিম রায়হান বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব করেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) শরীফা খান জানান, ব্রিটিশ সরকার ২০২৭ পর্যন্ত বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটা মুক্ত সুবিধা প্রদান করছে এবং বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে বিদ্যমান শুল্ক কাঠামোর বিষয়টি আলোচনাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য পণ্যের বহুমুখীকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ-জ¦ালানি, পর্যটন, স্বাস্থ্য ও নার্সিং প্রভৃতি খাতে ব্রিটিশ বিনিয়োগের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

রহিমআফরোজ স্টোরেজ পাওয়ার বিজনেস-এর নির্বাহী পরিচালক ফারাজ এ রহিম, ব্রিটেনে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের পণ্য রপ্তানির উপর জোরারোপ করেন এবং বাংলাদেশে ব্রিটিশ বিনিয়োগ আকর্ষণে আমাদের স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলোকে যৌথ বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

ইনস্পেটা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মোক্তাদির ব্রিটেনে বাংলাদেশি ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের নিবন্ধন পেতে সে দেশের এমএইচআরএ-এর সঙ্গে বাংলাদেশি ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার যোগাযোগ স্থাপনে বাংলাদেশস্থ ব্রিটেনের দূতাবাসকে সহযোগিতার আহ্বান জানান। তিনি জানান, যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪-৫ বিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ডের জেনেরিক বাজার রয়েছে, যা আমাদের ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। এছাড়াও তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিজ্ঞান বিষয়ে বাংলাদেশের মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে ব্রিটিশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের বাংলাদেশে শাখা ক্যাম্পাস খোলার প্রস্তাব করেন।

আলোচনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) শরীফা খান, ডিসিসিআই’র প্রাক্তন সভাপতি ও আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসেন খালেদ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে’র চেয়ারম্যান ও ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম, বেসিস’র সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির, ইনস্পেটা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মোক্তাদির, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সিইও আহসান খান চৌধুরী এবং রহিমআফরোজ স্টোরেজ পাওয়ার বিজনেসের নির্বাহী পরিচালক ফারাজ এ রহিম অংশগ্রহণ করেন।

বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট ২০২০ , ২৯ জিলহজ ১৪৪১, ০৫ ভাদ্র ১৪২৭

বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সইয়ের আহ্বান

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তিখাতে সম্ভাবনাময় তরুণ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে ব্রিটিশ তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে, যা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে পাশাপাশি তরুণদের দক্ষতাও বৃদ্ধি করবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এছাড়াও ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের জন্য দুদেশের সরকারের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।

গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের সম্ভাবনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ২০২৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা নিয়ে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে, যা আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক একটি বিষয়। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দুদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক ডায়ালগ আয়োজন, দুদেশের বাণিজ্য সংগঠনসমূহের মধ্যে যোগাযোগ আরও সুদৃঢ়করণ, কোভিড উত্তর বাণিজ্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় ‘মার্কেট স্ট্রাটেজি’ প্রণয়ন এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের আরও বেশি হারে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহী করার প্রস্তাব করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুক্তারাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বলেন, ব্রিটিশ বাণিজ্য সংগঠনসমূহ বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য খাত বিষয়ে খুব বেশি অবগত নয় এবং এ অবস্থা উত্তরণে বাংলাদেশের চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ই-কমার্স বাজার রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশি তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারে। হাইকমিশনার বলেন, ব্রিটেনে হালাল পণ্য এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে বিশাল বাজার রয়েছে এবং বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা সহজেই এ সুযোগ গ্রহণ করে আরও বেশি হারে পণ্য যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করতে পারে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রাবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ একান্ত আবশ্যক। তিনি জানান, বাংলাদেশের ওষুধ, তথ্য-প্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সেবা এবং আর্থিক খাতসমূহে ব্রিটিশ বিনিয়োগ আকর্ষণে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় হ্রাস, প্রয়োজনীয় নীতিমালার সংস্কার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। হাইকমিশনার বলেন, সম্প্রতি ব্রিটেনে ‘বাংলা বন্ড’ চালু হয়েছে, যা দুদেশের উদ্যোক্তাদের আত্মবিশ^াস ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি দুদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে বাংলাদেশস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশন হতে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ^াসও দেন।

স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বন্ধুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে এবং বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের অবস্থান দ্বিতীয়। ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশে ২.৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া প্রায় ২০০টি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৩.৪৫ বিলিয়ন মূল্যের পণ্য যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করে যেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এর পরিমাণ ছিল ৪.৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ব্রিটিশ বিনিয়োগ আকর্ষণে তিনি নতুন পণ্যের উদ্ভাবন এবং পণ্যের বহুমুখীকরণে ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বাংলাদেশের অবকাঠামোখাতে বৃহৎ প্রকল্পসমূহে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ আকর্ষণে ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার বন্ড’ চালুর প্রস্তাব করেন। বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিকে চলমান রাখা, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং কোডিভ পরবর্তী অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানিতে শুল্ক ও কোটা মুক্ত সুবিধা আরো দীর্ঘ সময়ের জন্য বলবদ রাখা একান্ত প্রয়োজন বলেও জানান ডিসিসিআই সভাপতি। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার বাণিজ্য সম্প্রসারণে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের জন্য দুদেশের সরকারের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।

ওয়েবিনার ডায়ালগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেম’র নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। মূল প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক বিনিয়োগের ১০ শতাংশ। যদিও ২০১৮ সালে এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোতে যুক্তরাজ্যের সর্বমোট বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিল ১৮৬.৪৬ বিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড, কিন্তু বাংলাদেশে এসেছে মাত্র ০.৩৭ শতাংশ। তিনি জানান, বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধিতে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ, যথাযথ নীতিমালা ও কৌশল প্রণয়ন, ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় হ্রাস, দ্রুততম সময়ে অবকাঠামো এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)গুলোর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা জরুরি। এছাড়াও সেলিম রায়হান বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব করেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) শরীফা খান জানান, ব্রিটিশ সরকার ২০২৭ পর্যন্ত বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটা মুক্ত সুবিধা প্রদান করছে এবং বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে বিদ্যমান শুল্ক কাঠামোর বিষয়টি আলোচনাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য পণ্যের বহুমুখীকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ-জ¦ালানি, পর্যটন, স্বাস্থ্য ও নার্সিং প্রভৃতি খাতে ব্রিটিশ বিনিয়োগের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

রহিমআফরোজ স্টোরেজ পাওয়ার বিজনেস-এর নির্বাহী পরিচালক ফারাজ এ রহিম, ব্রিটেনে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের পণ্য রপ্তানির উপর জোরারোপ করেন এবং বাংলাদেশে ব্রিটিশ বিনিয়োগ আকর্ষণে আমাদের স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলোকে যৌথ বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

ইনস্পেটা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মোক্তাদির ব্রিটেনে বাংলাদেশি ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের নিবন্ধন পেতে সে দেশের এমএইচআরএ-এর সঙ্গে বাংলাদেশি ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার যোগাযোগ স্থাপনে বাংলাদেশস্থ ব্রিটেনের দূতাবাসকে সহযোগিতার আহ্বান জানান। তিনি জানান, যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪-৫ বিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ডের জেনেরিক বাজার রয়েছে, যা আমাদের ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। এছাড়াও তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিজ্ঞান বিষয়ে বাংলাদেশের মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে ব্রিটিশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের বাংলাদেশে শাখা ক্যাম্পাস খোলার প্রস্তাব করেন।

আলোচনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) শরীফা খান, ডিসিসিআই’র প্রাক্তন সভাপতি ও আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসেন খালেদ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে’র চেয়ারম্যান ও ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম, বেসিস’র সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির, ইনস্পেটা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মোক্তাদির, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সিইও আহসান খান চৌধুরী এবং রহিমআফরোজ স্টোরেজ পাওয়ার বিজনেসের নির্বাহী পরিচালক ফারাজ এ রহিম অংশগ্রহণ করেন।