কণ্ঠ দিয়ে কোটি হৃদয় জয়

মাজহারুল ইসলাম তার কণ্ঠ দিয়ে এদেশের কোটি কোটি মানুষকে মুগ্ধ করেছেন। ‘জি¦ হ্যাঁ ভাই, আমি আপনাদের বিনোদন বন্ধু মাজহারুল ইসলাম’ এই সংলাপটি এখনও বাংলাদেশ বেতারে প্রচার চলতি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শোনা যায়। ভরাট কণ্ঠের এই নন্দিত উপস্থাপকের উপস্থাপনা জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন ছিলো দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশ বেতারে জাতীয় সংবাদ প্রচারের আগে ‘বজ্রকণ্ঠ’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করা। ‘বজ্রকণ্ঠ’ অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ পাঁচ মিনিট ধরে প্রচার করা হতো। ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত এই অনুষ্ঠানে বেতারে নিয়মিত প্রচার হতো। কিন্তু পরবর্তীতে আর প্রচার হয়নি। সেই সময়কার পরিস্থিতি তুলে ধরে মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে খুন করার পর বেতারের ট্রান্সক্রিপসন সার্ভিসে যারা কর্মরত ছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই সেই সময় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সংরক্ষণ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত শ্রদ্ধেয় আশরাফুল আলম ও শহীদুল ইসলাম।’ মাজহারুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। তার বাবা মরহুম আবদুস সাত্তার মা আফিয়া সাত্তার। দেশ স্বাধীনের আগে ১৯৬৯ সালে বেতারে তার যাত্রা স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে। পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে উপস্থাপক এবং নাট্যশিল্পী হিসেবে কাজ করেন। যে কারণে মাজহারুল ইসলামকে একজন শব্দ সৈনিক হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের জুলাই মাস থেকে বেতারের ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিসে কাজ শুরু করেন। এই সার্ভিসের অধীনে তারই উপস্থাপনায় সেই সময় ‘রঙধনু’, ‘ বন্ধন’, ‘ অন্তরঙ্গ সংলাপ’ অনুষ্ঠান তিনটি দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৭৩/৭৪ সালে দুটি ফোক ফ্যাস্টিভ্যাললের উপস্থাপক ছিলেন মাজহারুল ইসলামই। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীন বাংলা বেতারে মাজহারুল ইসলামের নায়ক হিসেবে প্রথম নাটক ছিল ‘মৃত্যুহীন প্রাণ’। তবে বেতারে তার প্রথম নাটক ছিল আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘জল্লাদের ফাঁসি’। টেলিভিশনে মাজহারুল ইসলাম অভিনীত প্রথম নাটক ছিল আতিকুল হক চৌধুরীর ‘দূরের পাখিরা’। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’র অনেক জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘বিক্ষুব্ধ বাংলা’র উপস্থ্পকও ছিলেন তিনি। অনেক সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন মাজহারুল ইসলাম। তার অভিনীত প্রথম সিনেমা ছিল তারই ফুফাতো ভাই আজিজ মেহের পরিচালিত ‘বিচার’। তবে এই সিনেমার আগে কবির আনোয়ার পরিচালিত ‘সেøাগান’ সিনেমাটি মুক্তি পায়। মাজহারুল ইসলামের ভাষ্যমতে বেতারে তিন শো’রও বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। বেতারের এই সময় পর্যন্ত আলোচিত গীতিনকশা কাজী নজরুল ইসলামের ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শিশুতীর্থ’ এবং সুকান্ত’র ‘হে মহামানব’ তারই কণ্ঠে। তিনটিই গ্রন্থনা এবং প্রযোজনা করেছিলেন মুস্তাফা আনোয়ার। বিভিন্ন কোম্পানি প্রযোজিত বিভিন্ন জনপ্রিয় সংগীতমালা’র উপস্থাপনা করেছেন মাজহারুল ইসলাম, এখনো করছেন। এখন পর্যন্ত মাজহারুল ইসলামের কোন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা মিলেনি। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক অনুষ্ঠানে আমাকে বিশেষ অতিথি কিংবা উপস্থাপক হিসেবে রাখা হয়। সেসব অনুষ্ঠানে তিন/চার শো টাকার একটি পুতুল ধরিয়ে দেয়া হয়। এই ধরনের সম্মাননা একজন শিল্পীকে আনন্দিত বা গর্বিত করে না।’

রবিবার, ২৩ আগস্ট ২০২০ , ৩ মহররম ১৪৪২, ২৩ আগস্ট ২০২০

কণ্ঠ দিয়ে কোটি হৃদয় জয়

বিনোদন প্রতিবেদক |

image

মাজহারুল ইসলাম তার কণ্ঠ দিয়ে এদেশের কোটি কোটি মানুষকে মুগ্ধ করেছেন। ‘জি¦ হ্যাঁ ভাই, আমি আপনাদের বিনোদন বন্ধু মাজহারুল ইসলাম’ এই সংলাপটি এখনও বাংলাদেশ বেতারে প্রচার চলতি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শোনা যায়। ভরাট কণ্ঠের এই নন্দিত উপস্থাপকের উপস্থাপনা জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন ছিলো দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশ বেতারে জাতীয় সংবাদ প্রচারের আগে ‘বজ্রকণ্ঠ’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করা। ‘বজ্রকণ্ঠ’ অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ পাঁচ মিনিট ধরে প্রচার করা হতো। ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত এই অনুষ্ঠানে বেতারে নিয়মিত প্রচার হতো। কিন্তু পরবর্তীতে আর প্রচার হয়নি। সেই সময়কার পরিস্থিতি তুলে ধরে মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে খুন করার পর বেতারের ট্রান্সক্রিপসন সার্ভিসে যারা কর্মরত ছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই সেই সময় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সংরক্ষণ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত শ্রদ্ধেয় আশরাফুল আলম ও শহীদুল ইসলাম।’ মাজহারুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। তার বাবা মরহুম আবদুস সাত্তার মা আফিয়া সাত্তার। দেশ স্বাধীনের আগে ১৯৬৯ সালে বেতারে তার যাত্রা স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে। পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে উপস্থাপক এবং নাট্যশিল্পী হিসেবে কাজ করেন। যে কারণে মাজহারুল ইসলামকে একজন শব্দ সৈনিক হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের জুলাই মাস থেকে বেতারের ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিসে কাজ শুরু করেন। এই সার্ভিসের অধীনে তারই উপস্থাপনায় সেই সময় ‘রঙধনু’, ‘ বন্ধন’, ‘ অন্তরঙ্গ সংলাপ’ অনুষ্ঠান তিনটি দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৭৩/৭৪ সালে দুটি ফোক ফ্যাস্টিভ্যাললের উপস্থাপক ছিলেন মাজহারুল ইসলামই। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীন বাংলা বেতারে মাজহারুল ইসলামের নায়ক হিসেবে প্রথম নাটক ছিল ‘মৃত্যুহীন প্রাণ’। তবে বেতারে তার প্রথম নাটক ছিল আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘জল্লাদের ফাঁসি’। টেলিভিশনে মাজহারুল ইসলাম অভিনীত প্রথম নাটক ছিল আতিকুল হক চৌধুরীর ‘দূরের পাখিরা’। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’র অনেক জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘বিক্ষুব্ধ বাংলা’র উপস্থ্পকও ছিলেন তিনি। অনেক সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন মাজহারুল ইসলাম। তার অভিনীত প্রথম সিনেমা ছিল তারই ফুফাতো ভাই আজিজ মেহের পরিচালিত ‘বিচার’। তবে এই সিনেমার আগে কবির আনোয়ার পরিচালিত ‘সেøাগান’ সিনেমাটি মুক্তি পায়। মাজহারুল ইসলামের ভাষ্যমতে বেতারে তিন শো’রও বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। বেতারের এই সময় পর্যন্ত আলোচিত গীতিনকশা কাজী নজরুল ইসলামের ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শিশুতীর্থ’ এবং সুকান্ত’র ‘হে মহামানব’ তারই কণ্ঠে। তিনটিই গ্রন্থনা এবং প্রযোজনা করেছিলেন মুস্তাফা আনোয়ার। বিভিন্ন কোম্পানি প্রযোজিত বিভিন্ন জনপ্রিয় সংগীতমালা’র উপস্থাপনা করেছেন মাজহারুল ইসলাম, এখনো করছেন। এখন পর্যন্ত মাজহারুল ইসলামের কোন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা মিলেনি। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক অনুষ্ঠানে আমাকে বিশেষ অতিথি কিংবা উপস্থাপক হিসেবে রাখা হয়। সেসব অনুষ্ঠানে তিন/চার শো টাকার একটি পুতুল ধরিয়ে দেয়া হয়। এই ধরনের সম্মাননা একজন শিল্পীকে আনন্দিত বা গর্বিত করে না।’