নদীভাঙন স্থানে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণের তোড়জোড়!

ঝুকিপূর্ণ স্থানে সরকারি কোন স্থাপনা নির্মাণ করা নিষেধ থাকলেও তা মানছেনা রাজিবপুর প্রশাসন। সরকারি আইন অমান্য করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে নির্মাণ করছে গুচ্ছগ্রাম। তিন পাশে নদী । গুচ্ছগ্রামের জন্য মাটি ভরাট করার পর পরই ভিটের তিন পাশে নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এমন জায়গায দেখানো হয়েছে গুচ্ছ গ্রাম প্রকল্প। এতে সরকারের গচ্চা যাচ্ছে প্রায় কোটি টাকা। ফায়দা লুটছে চেয়ারম্যানসহ প্রশাসন কয়েকটি বিভাগ।

প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে অবগত করার পরই সেখানে তড়িঘড়ি করে তৈরি করা হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের কাজ। নদী ভাঙন এলাকায় কেন দেওয়া হল প্রকল্পটি। আবার কেন সেটি মেরামত না করে তড়িঘড়ি করে গৃহনির্মাণ করা হচ্ছে এ নিয়ে এলাকায় সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ নেই। পদক্ষেপ নিলে, কেমন করে টাকা উপার্জন করবে। তাদের আচরনে মনে হচ্ছে সরকারি মাল দরিয়ামে ঢাল। এমনই একটি প্রকল্প দেখিয়ে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের চড়ই হাটি গুচ্ছ গ্রামের অর্থ হরিলুটের পাঁয়তারা করছে। চড়ই হাটি ৩নং ওয়াডের ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলাম সবুজ অভিযোগ করে বলেন, গুচ্ছগ্রামের ভিটে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে এমন জায়গায় আবার ঘর তৈরি করছে, বিয়ষটি ইউএনও ও পিআইওকে জানানোর পরও সেখানে তড়িঘড়ি করে ঘর নির্মাণ করছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, ইউএনও সাহেব এলাকার কোন মিস্ত্রি দিয়ে কাজ না করিয়ে, পূর্বে কর্মরত বদরগঞ্জ উপজেলা থেকে নির্মাণ মিস্ত্রি এনে নিজেই ঠিকাদারের কাজ করছে। মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের নয়াচর ফকিরপাড়া গ্রামের পল্লী চিকিৎসক বাবুল মিয়া, কৃষক শমসের আলী ও লাল মিয়া জানান, যে জায়গায় গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পটি দেওয়া হয়েছে তা আগামী ২ মাসের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে। অথচ উক্ত প্রকল্পটি নদীর পূর্বপাড়ে দিলে সরকারি টাকা কাজে লাগত। উপকৃত হতো আমার মতো নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া পরিবারগুলো। অফিযোগে আরও জানা গেছে, প্রকল্পটি করার পূর্বে বেশ কয়েকটি সরকারি দপ্তরের প্রধানগণ সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার পর তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে অনুমোদন পেয়েছে। প্রথম ধাপে মাটি ভরাট প্রকল্পের জন্য ১২৬ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল; যা জুনের মধ্যে সমাপ্ত দেখানো হয়েছে। ১২৬ টন চাল বিক্রি করে যার টাকার মূল্য হয়েছিল ৪০ লাখ ৩২ হাজার টাকা। শেষ বিল উত্তোলনের পূবেই ভিটার ৩ দিক থেকে বন্যায় ভেঙ্গে যায়। তবু প্রশাসন সরেজমিন পরিদর্শন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে শেষ বিল পাস করে দেন। তবে কোন জমির উপর গুচ্ছগ্রাম হচ্ছে তেমন কোন তথ্য নেই মোহনগঞ্জ ভূমি অফিসে। সেটি জানালেন মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা খালেকুজ্জামান। গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প সরেজমিন দেখা গেছে, পশ্চিম-উত্তর, উত্তর-পূর্বদিকে নদী ভেঙে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে।

তিন পাশে প্রবহমান ব্রহ্মপুত্র নদ। সেখানে ৩ একর জমির মধ্যে দেড় একর জমিতে মাটি ভরাট করা হয়েছে। বাকি দেড় একর জমিতে দ্বিতীয় দফায় মাটি ভরাট করা হবে। বর্তমানে ভিটের উপর ৮টি নদীভাঙ্গা পরিবারে ২৫ জন সদস্য অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে। সেখানে বসবাসরত চান মিয়া, মধূ মিয়া, ওয়াসিম, মোতালেব, মহর আলী, ইব্রাহিম ও মাইদুল জানান, আমরা ৩ মাস আগে থেকে এখানে বসবাস করছি। এখানে এসেই দেখি ভিটের মাটি নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, যখন প্রকল্পটি দেয়া হয়েছিল তখন সেখানে নদী ছিল না। বন্যার কারণে একটি খাল বের হয়ে আসছে।

এ ব্যাপারে রাজিবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান জানান, কিছু অংশ বন্যার কারণে ভেঙে গেছে। আর প্রকল্পটি করার আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রাম ও রংপুর গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প কর্মকর্তার অনুমতিতেই প্রকল্পটি পাস হয়েছে। আর যেটুকু ভেঙে গেছে তার মেরামত করা হবে। তাছাড়া বর্তমানে ৩০টি ঘর তৈরির মালসামানা ক্রয় করা হয়েছে। উপজেলাতে ঘর তৈরির কাজ চলছে। যার বরাদ্দ প্রায় পৌনে ৩ কোটি টাকা। কেন নদীভাঙন এলাকায় গুচ্ছগ্রাম দেয়া হল এবং কেনই বা পুনরায় কাজ হচ্ছে। তার সদুত্তর মেলেনি কোন প্রশ্নের উত্তর। এ ব্যাপারে রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নবীউল ইসলাম জানান, বন্যার কারণে কিছু অংশ ধসে গেছে। তা পূরণ করে দেয়া হবে। আপনারা যা তথ্য নেবেন পিআইও সাহেবের কাছ থেকে নেবেন। এ ব্যাপারে রাজিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো জানান, কোথায় গুচ্ছগ্রাম হচ্ছে তা আমি জানি না। তবে এলাকার লোকজন অভিযোগ করছে, সেটি নাকি ভেঙে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার সাথে বারবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পটি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সরেজমিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এলাকাবাসী জোর দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তা না হলে উক্ত ইউনিয়নের নাওশাল আশ্রয়ণ প্রকল্পের মতো নদীগর্ভে বিলীন হবে। সরকারের গচ্চা যাবে কোটি টাকা।

বুধবার, ২৬ আগস্ট ২০২০ , ৬ মহররম ১৪৪২, ২৬ আগস্ট ২০২০

নদীভাঙন স্থানে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণের তোড়জোড়!

প্রতিনিধি, রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম)

image

ঝুকিপূর্ণ স্থানে সরকারি কোন স্থাপনা নির্মাণ করা নিষেধ থাকলেও তা মানছেনা রাজিবপুর প্রশাসন। সরকারি আইন অমান্য করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে নির্মাণ করছে গুচ্ছগ্রাম। তিন পাশে নদী । গুচ্ছগ্রামের জন্য মাটি ভরাট করার পর পরই ভিটের তিন পাশে নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এমন জায়গায দেখানো হয়েছে গুচ্ছ গ্রাম প্রকল্প। এতে সরকারের গচ্চা যাচ্ছে প্রায় কোটি টাকা। ফায়দা লুটছে চেয়ারম্যানসহ প্রশাসন কয়েকটি বিভাগ।

প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে অবগত করার পরই সেখানে তড়িঘড়ি করে তৈরি করা হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের কাজ। নদী ভাঙন এলাকায় কেন দেওয়া হল প্রকল্পটি। আবার কেন সেটি মেরামত না করে তড়িঘড়ি করে গৃহনির্মাণ করা হচ্ছে এ নিয়ে এলাকায় সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ নেই। পদক্ষেপ নিলে, কেমন করে টাকা উপার্জন করবে। তাদের আচরনে মনে হচ্ছে সরকারি মাল দরিয়ামে ঢাল। এমনই একটি প্রকল্প দেখিয়ে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের চড়ই হাটি গুচ্ছ গ্রামের অর্থ হরিলুটের পাঁয়তারা করছে। চড়ই হাটি ৩নং ওয়াডের ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলাম সবুজ অভিযোগ করে বলেন, গুচ্ছগ্রামের ভিটে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে এমন জায়গায় আবার ঘর তৈরি করছে, বিয়ষটি ইউএনও ও পিআইওকে জানানোর পরও সেখানে তড়িঘড়ি করে ঘর নির্মাণ করছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, ইউএনও সাহেব এলাকার কোন মিস্ত্রি দিয়ে কাজ না করিয়ে, পূর্বে কর্মরত বদরগঞ্জ উপজেলা থেকে নির্মাণ মিস্ত্রি এনে নিজেই ঠিকাদারের কাজ করছে। মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের নয়াচর ফকিরপাড়া গ্রামের পল্লী চিকিৎসক বাবুল মিয়া, কৃষক শমসের আলী ও লাল মিয়া জানান, যে জায়গায় গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পটি দেওয়া হয়েছে তা আগামী ২ মাসের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে। অথচ উক্ত প্রকল্পটি নদীর পূর্বপাড়ে দিলে সরকারি টাকা কাজে লাগত। উপকৃত হতো আমার মতো নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া পরিবারগুলো। অফিযোগে আরও জানা গেছে, প্রকল্পটি করার পূর্বে বেশ কয়েকটি সরকারি দপ্তরের প্রধানগণ সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার পর তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে অনুমোদন পেয়েছে। প্রথম ধাপে মাটি ভরাট প্রকল্পের জন্য ১২৬ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল; যা জুনের মধ্যে সমাপ্ত দেখানো হয়েছে। ১২৬ টন চাল বিক্রি করে যার টাকার মূল্য হয়েছিল ৪০ লাখ ৩২ হাজার টাকা। শেষ বিল উত্তোলনের পূবেই ভিটার ৩ দিক থেকে বন্যায় ভেঙ্গে যায়। তবু প্রশাসন সরেজমিন পরিদর্শন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে শেষ বিল পাস করে দেন। তবে কোন জমির উপর গুচ্ছগ্রাম হচ্ছে তেমন কোন তথ্য নেই মোহনগঞ্জ ভূমি অফিসে। সেটি জানালেন মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা খালেকুজ্জামান। গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প সরেজমিন দেখা গেছে, পশ্চিম-উত্তর, উত্তর-পূর্বদিকে নদী ভেঙে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে।

তিন পাশে প্রবহমান ব্রহ্মপুত্র নদ। সেখানে ৩ একর জমির মধ্যে দেড় একর জমিতে মাটি ভরাট করা হয়েছে। বাকি দেড় একর জমিতে দ্বিতীয় দফায় মাটি ভরাট করা হবে। বর্তমানে ভিটের উপর ৮টি নদীভাঙ্গা পরিবারে ২৫ জন সদস্য অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে। সেখানে বসবাসরত চান মিয়া, মধূ মিয়া, ওয়াসিম, মোতালেব, মহর আলী, ইব্রাহিম ও মাইদুল জানান, আমরা ৩ মাস আগে থেকে এখানে বসবাস করছি। এখানে এসেই দেখি ভিটের মাটি নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, যখন প্রকল্পটি দেয়া হয়েছিল তখন সেখানে নদী ছিল না। বন্যার কারণে একটি খাল বের হয়ে আসছে।

এ ব্যাপারে রাজিবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান জানান, কিছু অংশ বন্যার কারণে ভেঙে গেছে। আর প্রকল্পটি করার আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রাম ও রংপুর গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প কর্মকর্তার অনুমতিতেই প্রকল্পটি পাস হয়েছে। আর যেটুকু ভেঙে গেছে তার মেরামত করা হবে। তাছাড়া বর্তমানে ৩০টি ঘর তৈরির মালসামানা ক্রয় করা হয়েছে। উপজেলাতে ঘর তৈরির কাজ চলছে। যার বরাদ্দ প্রায় পৌনে ৩ কোটি টাকা। কেন নদীভাঙন এলাকায় গুচ্ছগ্রাম দেয়া হল এবং কেনই বা পুনরায় কাজ হচ্ছে। তার সদুত্তর মেলেনি কোন প্রশ্নের উত্তর। এ ব্যাপারে রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নবীউল ইসলাম জানান, বন্যার কারণে কিছু অংশ ধসে গেছে। তা পূরণ করে দেয়া হবে। আপনারা যা তথ্য নেবেন পিআইও সাহেবের কাছ থেকে নেবেন। এ ব্যাপারে রাজিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো জানান, কোথায় গুচ্ছগ্রাম হচ্ছে তা আমি জানি না। তবে এলাকার লোকজন অভিযোগ করছে, সেটি নাকি ভেঙে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার সাথে বারবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পটি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সরেজমিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এলাকাবাসী জোর দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তা না হলে উক্ত ইউনিয়নের নাওশাল আশ্রয়ণ প্রকল্পের মতো নদীগর্ভে বিলীন হবে। সরকারের গচ্চা যাবে কোটি টাকা।