উত্তেজনা-শোরগোল

অবশেষে সোনিয়ার নেতৃত্বেই কংগ্রেসের আস্থা

ওয়ার্কিং কমিটির দিনভর বৈঠক অতঃপর উত্তেজনা এবং শোরগোল। শেষে সোনিয়া গান্ধীই ভারতের কংগ্রেস পার্টির অন্তর্বর্তী সভাপতি থাকছেন। দলীয় জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনুরোধে তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। দলীয় নেতৃত্ব নিয়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে অসন্তোষের জেরে সোমবার বেলা ১১টার দিকে কংগ্রেস পার্টির ওয়ার্কিং কমিটি অনলাইনে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে। শুরু থেকেই নানা পক্ষের বক্তব্য নিয়ে বৈঠকে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ভারতীয় উপমহাদেশের শতাব্দীর প্রাচীন দল কংগ্রেস পার্টির অন্তর্দ্বন্দ্ব এখন আর গোপন নেই। সম্প্রতি দলের ২৩ জ্যেষ্ঠ নেতা ‘দলীয় নেতৃত্বে’ পরিবর্তন চেয়ে চিঠি লেখার পর দলের শীর্ষ পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে ‘পূর্ণ সময়ের সভাপতি’ মনোনয়নের সুপারিশ করেছিলেন সোনিয়া গান্ধী। এনডিটিভি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

২৫ আগস্ট বহুল প্রচারিত গণমাধ্যম এ প্রকাশিত তথ্যের বরাতে জানা যায়, পরিস্থিতি বিবেচনায় কংগ্রেসের হাল কে ধরছেন? ৭৩ বছরের সোনিয়া শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কত দিন দল চালাতে পারবেন? সোনিয়া পদ থেকে অব্যাহতি চাওয়ায় তার উত্তরসূরি মনোনয়নই ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গতবছর জাতীয় নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর নেতাদের শত অনুরোধ উপেক্ষা করে সভাপতির পদ থেকে রাহুল গান্ধী সরে দাঁড়ানোর পর নেতৃত্ব নিয়েছিলেন সোনিয়া। রাহুল দায়িত্ব ছাড়ার সময় ওয়ার্কিং কমিটিকে গান্ধী পরিবারের বাইরে থেকে নেতা খুঁজে নেয়ার কথাও বলেছিলেন। তখন দলীয় নেতাদের অনুরোধেই অন্তর্বর্তী সভাপতি হতে রাজি হন সোনিয়া। একপর্যায়ে গতকালের বৈঠকে শোরগোল শুরু হলে সোনিয়া বা রাহুল কাউকেই তেমন স্বতঃস্ফূর্তভাবে দলের দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক বলে মনে হয়নি। বৈঠকে রাহুলের একটি মন্তব্য নিয়ে তুমুল শোরগোল হয়। সোনিয়াকে চিঠি লিখে কার্যত দল পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ‘২৩ নেতার অনেকের সঙ্গেই ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সম্পর্ক রয়েছে’ অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাহুলÑ স্থানীয় গণমাধ্যমে এ ধরনের তথ্য প্রকাশ পেলে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন জ্যেষ্ঠ বেশির ভাগ নেতা। সোমবার জরুরি ভিত্তিতে ডাকা কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে রীতিমতো শোরগোল বেধে যায়। জানা যায়, যে ২৩ নেতা সোনিয়াকে চিঠি লিখেছিলেন তাদের মধ্যে গোলাম নবী আজাদ, কপিল সিব্বল, আনন্দ শর্মার মতো রাজ্যসভার সদস্য, শশী থারুর, মনীশ তিওয়ারির মতো লোকসভার সদস্য, বীরাপ্পা মইলি, রেনুকা চৌধুরীর মতো সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, জিতেন প্রসাদ, মিলিন্দ দেওরা, সন্দীপ দীক্ষিতের মতো তরুণ নেতা, ভূপিন্দ্র সিংহ হুড়া, পৃথ্বীরাজ চোহান, রাজেন্দর কউর ভট্টলদের মতো সাবেক মুখ্যমন্ত্রীরা রয়েছেন। যারা দলের নেতৃত্বে থাকবেন তাদের সবসময় জনগণের সামনে এবং সক্রিয় ভূমিকায় থাকতে হবে। তারাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দল চালাবেন।

আর সিব্বল বৈঠক চলার সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে টুইট বার্তায় লেখেন, ‘রাহুল গান্ধী বিজেপির সঙ্গে আমাদের যোগসাজশ থাকার কথা বলছেন। রাজস্থান হাইকোর্টে কংগ্রেসকে রক্ষায় সাফল্য পেয়েছি। মনিপুরে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে দলের লড়াইয়ে সঙ্গ দিয়েছি। গত ৩০ বছর বিজেপির সমর্থনে একটা কথাও বলিনি। তবুও বিজেপির সঙ্গে আমাদের আঁতাত!’ তবে পরে ওই টুইট খুঁজে পাওয়া যায়নি। সিব্বল দ্রুত সেটি সরিয়ে নিয়ে নতুন পোস্টে লেখেন, ‘রাহুল গান্ধী ব্যক্তিগতভাবে আমাকে জানিয়েছেন, আমাকে দায়ী করে তিনি কখনও কিছু বলেননি। তাই আমি আমার টুইট প্রত্যাহার করে নিয়েছি।’

কংগ্রেসের গঠনতন্ত্রের বর্তমান অবস্থার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ভারতের সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে দলের ভরাডুবির পর গতবছর ২৫ মে সভাপতির পদ ছাড়েন রাহুল গান্ধী। তারপর নেতাদের অনুরোধে অনেকটা বাধ্য হয়েই গত বছর ১০ আগস্ট সোনিয়া দলের অন্তর্বর্তী সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কংগ্রেসের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সভাপতির মেয়াদ সর্বোচ্চ এক বছর। এরই মধ্যে সোনিয়ার সেই মেয়াদ পার হয়ে গেছে। এছাড়া, যদি সভাপতির মৃত্যু হয় বা তিনি পদত্যাগ করেন তবে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির (এআইসিসি) সবচেয়ে প্রবীণ সাধারণ সম্পাদক অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব নিয়ে একজন সভাপতি নির্বাচন করবেন।

বুধবার, ২৬ আগস্ট ২০২০ , ৬ মহররম ১৪৪২, ২৬ আগস্ট ২০২০

উত্তেজনা-শোরগোল

অবশেষে সোনিয়ার নেতৃত্বেই কংগ্রেসের আস্থা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

ওয়ার্কিং কমিটির দিনভর বৈঠক অতঃপর উত্তেজনা এবং শোরগোল। শেষে সোনিয়া গান্ধীই ভারতের কংগ্রেস পার্টির অন্তর্বর্তী সভাপতি থাকছেন। দলীয় জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনুরোধে তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। দলীয় নেতৃত্ব নিয়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে অসন্তোষের জেরে সোমবার বেলা ১১টার দিকে কংগ্রেস পার্টির ওয়ার্কিং কমিটি অনলাইনে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে। শুরু থেকেই নানা পক্ষের বক্তব্য নিয়ে বৈঠকে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ভারতীয় উপমহাদেশের শতাব্দীর প্রাচীন দল কংগ্রেস পার্টির অন্তর্দ্বন্দ্ব এখন আর গোপন নেই। সম্প্রতি দলের ২৩ জ্যেষ্ঠ নেতা ‘দলীয় নেতৃত্বে’ পরিবর্তন চেয়ে চিঠি লেখার পর দলের শীর্ষ পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে ‘পূর্ণ সময়ের সভাপতি’ মনোনয়নের সুপারিশ করেছিলেন সোনিয়া গান্ধী। এনডিটিভি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

২৫ আগস্ট বহুল প্রচারিত গণমাধ্যম এ প্রকাশিত তথ্যের বরাতে জানা যায়, পরিস্থিতি বিবেচনায় কংগ্রেসের হাল কে ধরছেন? ৭৩ বছরের সোনিয়া শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কত দিন দল চালাতে পারবেন? সোনিয়া পদ থেকে অব্যাহতি চাওয়ায় তার উত্তরসূরি মনোনয়নই ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গতবছর জাতীয় নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর নেতাদের শত অনুরোধ উপেক্ষা করে সভাপতির পদ থেকে রাহুল গান্ধী সরে দাঁড়ানোর পর নেতৃত্ব নিয়েছিলেন সোনিয়া। রাহুল দায়িত্ব ছাড়ার সময় ওয়ার্কিং কমিটিকে গান্ধী পরিবারের বাইরে থেকে নেতা খুঁজে নেয়ার কথাও বলেছিলেন। তখন দলীয় নেতাদের অনুরোধেই অন্তর্বর্তী সভাপতি হতে রাজি হন সোনিয়া। একপর্যায়ে গতকালের বৈঠকে শোরগোল শুরু হলে সোনিয়া বা রাহুল কাউকেই তেমন স্বতঃস্ফূর্তভাবে দলের দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক বলে মনে হয়নি। বৈঠকে রাহুলের একটি মন্তব্য নিয়ে তুমুল শোরগোল হয়। সোনিয়াকে চিঠি লিখে কার্যত দল পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ‘২৩ নেতার অনেকের সঙ্গেই ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সম্পর্ক রয়েছে’ অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাহুলÑ স্থানীয় গণমাধ্যমে এ ধরনের তথ্য প্রকাশ পেলে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন জ্যেষ্ঠ বেশির ভাগ নেতা। সোমবার জরুরি ভিত্তিতে ডাকা কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে রীতিমতো শোরগোল বেধে যায়। জানা যায়, যে ২৩ নেতা সোনিয়াকে চিঠি লিখেছিলেন তাদের মধ্যে গোলাম নবী আজাদ, কপিল সিব্বল, আনন্দ শর্মার মতো রাজ্যসভার সদস্য, শশী থারুর, মনীশ তিওয়ারির মতো লোকসভার সদস্য, বীরাপ্পা মইলি, রেনুকা চৌধুরীর মতো সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, জিতেন প্রসাদ, মিলিন্দ দেওরা, সন্দীপ দীক্ষিতের মতো তরুণ নেতা, ভূপিন্দ্র সিংহ হুড়া, পৃথ্বীরাজ চোহান, রাজেন্দর কউর ভট্টলদের মতো সাবেক মুখ্যমন্ত্রীরা রয়েছেন। যারা দলের নেতৃত্বে থাকবেন তাদের সবসময় জনগণের সামনে এবং সক্রিয় ভূমিকায় থাকতে হবে। তারাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দল চালাবেন।

আর সিব্বল বৈঠক চলার সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে টুইট বার্তায় লেখেন, ‘রাহুল গান্ধী বিজেপির সঙ্গে আমাদের যোগসাজশ থাকার কথা বলছেন। রাজস্থান হাইকোর্টে কংগ্রেসকে রক্ষায় সাফল্য পেয়েছি। মনিপুরে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে দলের লড়াইয়ে সঙ্গ দিয়েছি। গত ৩০ বছর বিজেপির সমর্থনে একটা কথাও বলিনি। তবুও বিজেপির সঙ্গে আমাদের আঁতাত!’ তবে পরে ওই টুইট খুঁজে পাওয়া যায়নি। সিব্বল দ্রুত সেটি সরিয়ে নিয়ে নতুন পোস্টে লেখেন, ‘রাহুল গান্ধী ব্যক্তিগতভাবে আমাকে জানিয়েছেন, আমাকে দায়ী করে তিনি কখনও কিছু বলেননি। তাই আমি আমার টুইট প্রত্যাহার করে নিয়েছি।’

কংগ্রেসের গঠনতন্ত্রের বর্তমান অবস্থার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ভারতের সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে দলের ভরাডুবির পর গতবছর ২৫ মে সভাপতির পদ ছাড়েন রাহুল গান্ধী। তারপর নেতাদের অনুরোধে অনেকটা বাধ্য হয়েই গত বছর ১০ আগস্ট সোনিয়া দলের অন্তর্বর্তী সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কংগ্রেসের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সভাপতির মেয়াদ সর্বোচ্চ এক বছর। এরই মধ্যে সোনিয়ার সেই মেয়াদ পার হয়ে গেছে। এছাড়া, যদি সভাপতির মৃত্যু হয় বা তিনি পদত্যাগ করেন তবে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির (এআইসিসি) সবচেয়ে প্রবীণ সাধারণ সম্পাদক অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব নিয়ে একজন সভাপতি নির্বাচন করবেন।