সাময়িকী কবিতা

ফিরিয়ে দাও

রাহমান ওয়াহিদ

রাষ্ট্রকে সব ঘাম জমা দিয়ে ঘরে ফিরেছি।

আমার হাতগুলো আর তোমাদের ময়লা ধোবে না।

আমার ধুলোস্বপ্নগুলো প্রাচীরের ওপারে দাঁড়িয়ে কেন?

আমরা আর কোনো অপেক্ষার লাইনে দাঁড়াবো না।

আমার বৃষ্টির আকাশ জোছনার আকাশ কোথায় রেখেছো?

হাহাকার ধ্বনিত শব্দ মঞ্জরিত আমার পৃথিবী কই?

সমুদ্র মন্থিত মানুষেরা সব শাদা কাফনে কই যায়, কই?

সেইসব বেণী দোলানো সজল কিশোরীরা

কোন্ বনে পথ হারালো?

আমার শৈশবী মাঠের ঘাসগুলো আর হলুদ ফোটাবে না।

বকুলগন্ধী বাতাস আমার কোনো ভাইরাস ছড়াবে না।

আমার প্রেমজ হৃদয় শিরিন শেলীকে বন্দি করেছে কে?

ফুসফুসে আমার পাথর চাতাল বসিয়েছে কে? কে? কে?

আর নয়, আমার আকাশ ভরা নক্ষত্রপ্রেম ফিরিয়ে দাও

তোমাদের ঘরে তোমরাই থাকো, আমাদের ছেড়ে দাও।

দর্শক

রহমান মুজিব

ভোর পাঁচটার বাগানে আমি একমাত্র দর্শক

ব্যথার রঙ দেখাবে বলে ফুটলো নীল অপরাজিতা

ফুটলো কালো গোলাপ আরো কিছু

বিধবা রঙয়ের গন্ধরাজ

বললাম- এবার আমাকে দেখবো দেখাবে

সহসা আষাঢ় আর শ্রাবণ ভারাক্রান্ত মেঘের

গ্যালন হতে ঢালতে লাগল চোখের দীর্ঘ নামতা

না দেখা আমার আরো আছে কী

ঐ দেখো নুন চোখে তুমি এক ফিনিক্স পাখি

চল্লিশের কাছাকাছি এসে

তৃণা চক্রবর্তী

চল্লিশের কাছাকাছি এসে

শর্ট সাইট একটু কমে যায়

কাছের দৃষ্টি কমে যায় বলে

পরিবর্তে বাড়ে দূরের দৃষ্টি

যেগুলো কাছের জিনিস বলে মনে হতো

সেসব ঝাপসা হতে শুরু করে

কাছের মানুষেরাও একটু দূর থেকে স্পষ্ট দেখায়

ফলে কাছের সম্পর্ক আর

দূরের সম্পর্ক বলে কিছু থাকে না

দূরের টেবিলে চিকেন তন্দুরি নিয়ে বসা লোক

আর পাশের চেয়ারে কোল্ডকফি

একই রকম দূরত্বের বলে মনে হয়

চল্লিশের কাছে এসে

কাছের বা দূরের সমস্ত সম্পর্কই

একটু দূর থেকে দেখলে ঠিকমতো ঠাহর হয়

চল্লিশের পরে

কাছে দূরে বলে কিছু থাকে না

দূরত্ব যে আসলেই আপেক্ষিক তা বোঝার জন্য

চোখের ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট কেবলই পিছিয়ে দিতে থাকি

বসরার গোলাপ

ফরিদা ইয়াসমিন সুমি

দৃষ্টি সরিয়ে নাও

অতো মজো না ওতে!

হোক হৃদয়াকৃতি,

টইটম্বুর রসে,

এতো সঁপে দিলে

সমর্পিত হলে,

শেষতক আবার

ফসকে যাবার

খেদ রয়ে যাবে!

দৃষ্টি সরিয়ে নাও

যেখানে শেষ

ওখান থেকে ঠিক

উত্তরপশ্চিম কোণে!

নদী ভরভর আষাঢ়ী তিথিতে

বজরা ভাসাবো বলে

সাজিয়ে রেখেছি

বসরার গোলাপ-

দৃষ্টি নিবদ্ধ করো

ভ্রমর হয়ে বসো

কুঁচবরণ তিলে

চলুক

আলাপের প্রলাপ...

সর্বভেদী

শ্যামল নাথ

আলোর অধিক আঁধার দিও যদি পারো,

যদি পারো, সুখের চে’ অধিক দুঃখ দিও

চোখের ইশারাতে দিও স্থান, করো আহবান;

আর তো কিছু চাইনে, চাইনে এরচে’ অধিক কোনো মহান!

এটুকু পেলে আমার মৃত্যুহীন সমাধিতে রচিত হবে ঘাস

আকাশে বাতাসে পাতালে লতায় দেখবো, দোলাবো তোমার শ্বাস।

কিন্তু কিছুই থাকবে না এমন, যেমন থাকার কথা থাকে,

তবু ওটুকু পেলে যমুনার জলে কাঁপতে পারি, খেতে পারি অজস্র পাক।

তুমি বৃষ্টিহীন মাটির প্রান্তরে শব্দ করে ঝরে যাও যখন,

স্বপ্নের ঘোরে হাঁটুজল নদী পেরিয়ে বছরের দু’শত দিন

ঢাকা থাকি কুয়াশায় তখন

এমন করে যতবার অনিচ্ছায় মেলে রাখি তৃষ্ণার প্রহর,

ঝরে যায়, ঝরে যেতে থাকে হতাশার চাকুর ফলক;

অবশেষে ঝরে পড়ো, ঝরে পড়ি আমি,

এখন কে কোথায় আছে? কে লিখে রেখেছে কার নামখানি?

ওসব হবে না, হবে না জেনেও স্নেহের মতন দিলেম ডুব

তুমিই সর্বভেদী, সর্বভেদী ছেয়ে আছে সবুজে নিশ্চুপ।

ক্যালকুলাস

রিকি দাশ

ক্যালকুলাস তুমি চোখের ভাষা বোঝ না,

একটি ঘড়ির উঠোনে রাত নেমে যায় ক্রমাগত;

অথচ তুমি নির্বিকার!

ল্যাবের বিক্রিয়ায় যত অভিমান,

বুদ্বুদের মতন উপচে পড়া আধার।

চোখের মায়ায় জমে থাকা ফর্মুলা,

একটি আকাশ, রঙিন মেঘজল,

জলপ্রপাতের মতন রোমাঞ্চিত!

পদ্মপাতায় মুক্তোশ্রাবণ,

চিরহরিৎ রৌদ্ররং!

ক্যালকুলাস তুমি এতকিছু বোঝ না;

তুমি বোঝ,

লোডশেডিং, সামনে মৃত্যুকূপ!

জিলাপীর খাঁজ ও মোড়ক উন্মোচনের দিন

দ্বীপ সরকার

আমার প্রথম বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের দিনে-

তখন দেখেছি জিলাপীর খাঁজ কাটা শরীরে কত যে নিখাদ স্বাদ!

খাচ্ছি চেটেপুটে, ঠোঁটে লেগে যাচ্ছে শিল্পের বৈভব

জিলাপীকে মুখরোচক ভাবি- খাঁজে ভরে থাকা রসকে গোলাপজল

অথচ মিষ্টির কারিগরকে কে কতোটা চিনি জানি, বলো

আগুনের তাপ খেয়ে খেয়ে যারা কুড়িয়ে আনে শিল্পের সংজ্ঞা

এইসব নকশা কাঁটা হরেক রকমের জিলাপীর কারিগর ওরাই-

আমরা নাক ডুবিয়ে খাই-আত্মীয়তা করি,

হোটেলে বসি, টাকা দেই

পিছনের ঘরে কারা থাকে, ঘর্মাক্ত শরীরে- তাদের চিনি কী আদৌ?

আমার প্রথম বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের দিনে

জিলাপীকে ভেবেছি- ‘এটাও একটা সাংঘাতিক শিল্প হতে পারতো’।

জিলাপীর খাঁজ ও মোড়ক উন্মোচনের দিন

দ্বীপ সরকার

আমার প্রথম বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের দিনে-

তখন দেখেছি জিলাপীর খাঁজ কাটা শরীরে কত যে নিখাদ স্বাদ!

খাচ্ছি চেটেপুটে, ঠোঁটে লেগে যাচ্ছে শিল্পের বৈভব

জিলাপীকে মুখরোচক ভাবি- খাঁজে ভরে থাকা রসকে গোলাপজল

অথচ মিষ্টির কারিগরকে কে কতোটা চিনি জানি, বলো

আগুনের তাপ খেয়ে খেয়ে যারা কুড়িয়ে আনে শিল্পের সংজ্ঞা

এইসব নকশা কাঁটা হরেক রকমের জিলাপীর কারিগর ওরাই-

আমরা নাক ডুবিয়ে খাই-আত্মীয়তা করি,

হোটেলে বসি, টাকা দেই

পিছনের ঘরে কারা থাকে, ঘর্মাক্ত শরীরে- তাদের চিনি কী আদৌ?

আমার প্রথম বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের দিনে

জিলাপীকে ভেবেছি- ‘এটাও একটা সাংঘাতিক শিল্প হতে পারতো’।

জীবননদী

তারিকুল ফেরদৌস

কর্মব্যস্ততায় চলতে চলতে

কোনো দমকা হাওয়া যখন হৃদয়ে

কড়া নাড়ে, তোমাকে কিছুটা ভুলে যাই।

শরৎ ও হেমন্তের সন্ধিক্ষণে মনে

পড়ে তোমার কথা। আমার

খাদহীন ভালোবাসা। আমার প্রেম।

সংসারচক্র পাথরের মতোই

শক্ত হলেও ঝর্ণাধারার মতো

থাকে প্রবহমান।

একটি বীজ থেকে জন্ম নেয়া

বটবৃক্ষ অনেক তরুলতাকে

আঁকড়ে ধরে আমৃত্যু।

বৃক্ষ যায়, বৃক্ষ আসে, বয়ে চলে

জীবননদী অনন্তকাল।

ওষ্ঠ হননের গান

গাফফার মাহমুদ

রোমান্টিকতা কখনো কি ফুরোবার হয়?

ষোড়শীতমা, আমার চল্লিশ পেরোলেও

এখনও জিভে লেগে থাকে প্রেম তেষ্টার জল!

তুমি নেশাতুর তমা চোখ রাখো এ চোখে

ওষ্ঠ অধরে ঘষে দেই এসো কামনার শিহরন!

কবিতা শুনছো কখনও? ওষ্ঠ হননে শিস দিয়ে গান?

রোমান্টিকতা ঝড় তুলবে কথা খইফোটা প্রহরে

আমি শিস দিলেই তুমি চলে এসো ষোড়শী তমা...

বয়স কতোটা আর? ছত্রিশ-চুয়াল্লিশ?

বয়স মানে কি রোমান্টিক কোন যৌবনা পুরুষ?

আঙুলে আঙুলে হারমোনিয়াম সুর তুলি দু’জনা!

বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট ২০২০ , ৭ মহররম ১৪৪২, ২৭ আগস্ট ২০২০

সাময়িকী কবিতা

ফিরিয়ে দাও

রাহমান ওয়াহিদ

রাষ্ট্রকে সব ঘাম জমা দিয়ে ঘরে ফিরেছি।

আমার হাতগুলো আর তোমাদের ময়লা ধোবে না।

আমার ধুলোস্বপ্নগুলো প্রাচীরের ওপারে দাঁড়িয়ে কেন?

আমরা আর কোনো অপেক্ষার লাইনে দাঁড়াবো না।

আমার বৃষ্টির আকাশ জোছনার আকাশ কোথায় রেখেছো?

হাহাকার ধ্বনিত শব্দ মঞ্জরিত আমার পৃথিবী কই?

সমুদ্র মন্থিত মানুষেরা সব শাদা কাফনে কই যায়, কই?

সেইসব বেণী দোলানো সজল কিশোরীরা

কোন্ বনে পথ হারালো?

আমার শৈশবী মাঠের ঘাসগুলো আর হলুদ ফোটাবে না।

বকুলগন্ধী বাতাস আমার কোনো ভাইরাস ছড়াবে না।

আমার প্রেমজ হৃদয় শিরিন শেলীকে বন্দি করেছে কে?

ফুসফুসে আমার পাথর চাতাল বসিয়েছে কে? কে? কে?

আর নয়, আমার আকাশ ভরা নক্ষত্রপ্রেম ফিরিয়ে দাও

তোমাদের ঘরে তোমরাই থাকো, আমাদের ছেড়ে দাও।

দর্শক

রহমান মুজিব

ভোর পাঁচটার বাগানে আমি একমাত্র দর্শক

ব্যথার রঙ দেখাবে বলে ফুটলো নীল অপরাজিতা

ফুটলো কালো গোলাপ আরো কিছু

বিধবা রঙয়ের গন্ধরাজ

বললাম- এবার আমাকে দেখবো দেখাবে

সহসা আষাঢ় আর শ্রাবণ ভারাক্রান্ত মেঘের

গ্যালন হতে ঢালতে লাগল চোখের দীর্ঘ নামতা

না দেখা আমার আরো আছে কী

ঐ দেখো নুন চোখে তুমি এক ফিনিক্স পাখি

চল্লিশের কাছাকাছি এসে

তৃণা চক্রবর্তী

চল্লিশের কাছাকাছি এসে

শর্ট সাইট একটু কমে যায়

কাছের দৃষ্টি কমে যায় বলে

পরিবর্তে বাড়ে দূরের দৃষ্টি

যেগুলো কাছের জিনিস বলে মনে হতো

সেসব ঝাপসা হতে শুরু করে

কাছের মানুষেরাও একটু দূর থেকে স্পষ্ট দেখায়

ফলে কাছের সম্পর্ক আর

দূরের সম্পর্ক বলে কিছু থাকে না

দূরের টেবিলে চিকেন তন্দুরি নিয়ে বসা লোক

আর পাশের চেয়ারে কোল্ডকফি

একই রকম দূরত্বের বলে মনে হয়

চল্লিশের কাছে এসে

কাছের বা দূরের সমস্ত সম্পর্কই

একটু দূর থেকে দেখলে ঠিকমতো ঠাহর হয়

চল্লিশের পরে

কাছে দূরে বলে কিছু থাকে না

দূরত্ব যে আসলেই আপেক্ষিক তা বোঝার জন্য

চোখের ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট কেবলই পিছিয়ে দিতে থাকি

বসরার গোলাপ

ফরিদা ইয়াসমিন সুমি

দৃষ্টি সরিয়ে নাও

অতো মজো না ওতে!

হোক হৃদয়াকৃতি,

টইটম্বুর রসে,

এতো সঁপে দিলে

সমর্পিত হলে,

শেষতক আবার

ফসকে যাবার

খেদ রয়ে যাবে!

দৃষ্টি সরিয়ে নাও

যেখানে শেষ

ওখান থেকে ঠিক

উত্তরপশ্চিম কোণে!

নদী ভরভর আষাঢ়ী তিথিতে

বজরা ভাসাবো বলে

সাজিয়ে রেখেছি

বসরার গোলাপ-

দৃষ্টি নিবদ্ধ করো

ভ্রমর হয়ে বসো

কুঁচবরণ তিলে

চলুক

আলাপের প্রলাপ...

সর্বভেদী

শ্যামল নাথ

আলোর অধিক আঁধার দিও যদি পারো,

যদি পারো, সুখের চে’ অধিক দুঃখ দিও

চোখের ইশারাতে দিও স্থান, করো আহবান;

আর তো কিছু চাইনে, চাইনে এরচে’ অধিক কোনো মহান!

এটুকু পেলে আমার মৃত্যুহীন সমাধিতে রচিত হবে ঘাস

আকাশে বাতাসে পাতালে লতায় দেখবো, দোলাবো তোমার শ্বাস।

কিন্তু কিছুই থাকবে না এমন, যেমন থাকার কথা থাকে,

তবু ওটুকু পেলে যমুনার জলে কাঁপতে পারি, খেতে পারি অজস্র পাক।

তুমি বৃষ্টিহীন মাটির প্রান্তরে শব্দ করে ঝরে যাও যখন,

স্বপ্নের ঘোরে হাঁটুজল নদী পেরিয়ে বছরের দু’শত দিন

ঢাকা থাকি কুয়াশায় তখন

এমন করে যতবার অনিচ্ছায় মেলে রাখি তৃষ্ণার প্রহর,

ঝরে যায়, ঝরে যেতে থাকে হতাশার চাকুর ফলক;

অবশেষে ঝরে পড়ো, ঝরে পড়ি আমি,

এখন কে কোথায় আছে? কে লিখে রেখেছে কার নামখানি?

ওসব হবে না, হবে না জেনেও স্নেহের মতন দিলেম ডুব

তুমিই সর্বভেদী, সর্বভেদী ছেয়ে আছে সবুজে নিশ্চুপ।

ক্যালকুলাস

রিকি দাশ

ক্যালকুলাস তুমি চোখের ভাষা বোঝ না,

একটি ঘড়ির উঠোনে রাত নেমে যায় ক্রমাগত;

অথচ তুমি নির্বিকার!

ল্যাবের বিক্রিয়ায় যত অভিমান,

বুদ্বুদের মতন উপচে পড়া আধার।

চোখের মায়ায় জমে থাকা ফর্মুলা,

একটি আকাশ, রঙিন মেঘজল,

জলপ্রপাতের মতন রোমাঞ্চিত!

পদ্মপাতায় মুক্তোশ্রাবণ,

চিরহরিৎ রৌদ্ররং!

ক্যালকুলাস তুমি এতকিছু বোঝ না;

তুমি বোঝ,

লোডশেডিং, সামনে মৃত্যুকূপ!

জিলাপীর খাঁজ ও মোড়ক উন্মোচনের দিন

দ্বীপ সরকার

আমার প্রথম বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের দিনে-

তখন দেখেছি জিলাপীর খাঁজ কাটা শরীরে কত যে নিখাদ স্বাদ!

খাচ্ছি চেটেপুটে, ঠোঁটে লেগে যাচ্ছে শিল্পের বৈভব

জিলাপীকে মুখরোচক ভাবি- খাঁজে ভরে থাকা রসকে গোলাপজল

অথচ মিষ্টির কারিগরকে কে কতোটা চিনি জানি, বলো

আগুনের তাপ খেয়ে খেয়ে যারা কুড়িয়ে আনে শিল্পের সংজ্ঞা

এইসব নকশা কাঁটা হরেক রকমের জিলাপীর কারিগর ওরাই-

আমরা নাক ডুবিয়ে খাই-আত্মীয়তা করি,

হোটেলে বসি, টাকা দেই

পিছনের ঘরে কারা থাকে, ঘর্মাক্ত শরীরে- তাদের চিনি কী আদৌ?

আমার প্রথম বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের দিনে

জিলাপীকে ভেবেছি- ‘এটাও একটা সাংঘাতিক শিল্প হতে পারতো’।

জিলাপীর খাঁজ ও মোড়ক উন্মোচনের দিন

দ্বীপ সরকার

আমার প্রথম বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের দিনে-

তখন দেখেছি জিলাপীর খাঁজ কাটা শরীরে কত যে নিখাদ স্বাদ!

খাচ্ছি চেটেপুটে, ঠোঁটে লেগে যাচ্ছে শিল্পের বৈভব

জিলাপীকে মুখরোচক ভাবি- খাঁজে ভরে থাকা রসকে গোলাপজল

অথচ মিষ্টির কারিগরকে কে কতোটা চিনি জানি, বলো

আগুনের তাপ খেয়ে খেয়ে যারা কুড়িয়ে আনে শিল্পের সংজ্ঞা

এইসব নকশা কাঁটা হরেক রকমের জিলাপীর কারিগর ওরাই-

আমরা নাক ডুবিয়ে খাই-আত্মীয়তা করি,

হোটেলে বসি, টাকা দেই

পিছনের ঘরে কারা থাকে, ঘর্মাক্ত শরীরে- তাদের চিনি কী আদৌ?

আমার প্রথম বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের দিনে

জিলাপীকে ভেবেছি- ‘এটাও একটা সাংঘাতিক শিল্প হতে পারতো’।

জীবননদী

তারিকুল ফেরদৌস

কর্মব্যস্ততায় চলতে চলতে

কোনো দমকা হাওয়া যখন হৃদয়ে

কড়া নাড়ে, তোমাকে কিছুটা ভুলে যাই।

শরৎ ও হেমন্তের সন্ধিক্ষণে মনে

পড়ে তোমার কথা। আমার

খাদহীন ভালোবাসা। আমার প্রেম।

সংসারচক্র পাথরের মতোই

শক্ত হলেও ঝর্ণাধারার মতো

থাকে প্রবহমান।

একটি বীজ থেকে জন্ম নেয়া

বটবৃক্ষ অনেক তরুলতাকে

আঁকড়ে ধরে আমৃত্যু।

বৃক্ষ যায়, বৃক্ষ আসে, বয়ে চলে

জীবননদী অনন্তকাল।

ওষ্ঠ হননের গান

গাফফার মাহমুদ

রোমান্টিকতা কখনো কি ফুরোবার হয়?

ষোড়শীতমা, আমার চল্লিশ পেরোলেও

এখনও জিভে লেগে থাকে প্রেম তেষ্টার জল!

তুমি নেশাতুর তমা চোখ রাখো এ চোখে

ওষ্ঠ অধরে ঘষে দেই এসো কামনার শিহরন!

কবিতা শুনছো কখনও? ওষ্ঠ হননে শিস দিয়ে গান?

রোমান্টিকতা ঝড় তুলবে কথা খইফোটা প্রহরে

আমি শিস দিলেই তুমি চলে এসো ষোড়শী তমা...

বয়স কতোটা আর? ছত্রিশ-চুয়াল্লিশ?

বয়স মানে কি রোমান্টিক কোন যৌবনা পুরুষ?

আঙুলে আঙুলে হারমোনিয়াম সুর তুলি দু’জনা!