শিশুকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ছাত্রলীগ নেতাকে জুতাপেটা

দল থেকে বহিষ্কার

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও পল্লী চিকিৎসক জয়নাল আবেদীন জয়কে (৪০) জুতাপেটা করেছেন জেলার লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান রকেট। ব্যক্তিগত চেম্বারে নিয়ে ৪র্থ শ্রেণীর এক শিশু ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গত সোমবার দুপুরে লালমাই উপজেলার চেঙ্গাহাটা চৌমুহনীতে গ্রাম্য সালিস বৈঠকে জয়কে জুতাপেটা করা হয়। এরই মধ্যে জুতাপেটার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর দল থেকে জয়কে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করেন ওই ছাত্রলীগ নেতা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতা জয়নাল আবেদীন জয় একজন পল্লী চিকিৎসক এবং তিনি কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকের লালমাই উপজেলা প্রতিনিধি। তার বাড়ি ওই উপজেলার বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের পাইকপাড়ায়। চেঙ্গাহাটা চৌমুহনীতে তার ব্যক্তিগত চেম্বার রয়েছে। সোমবার দুপুরে জয় স্থানীয় মাতৃছায়া মডেল একাডেমির এক শিশু ছাত্রীকে নিজের চেম্বারে ডেকে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করে বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনার কিছুক্ষণ পর ওই শিশুর বাবার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত সোমবার দুপুরে চেঙ্গাহাটা চৌমুহনীর একটি ওয়ার্কশপে বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ওয়ার্ড মেম্বার রতন মজুমদারের সভাপতিত্বে এক সালিস বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে জয়কে লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান রকেট জুতাপেটা করেন। এ সময় অনেকেই মোবাইলে জুতা পেটার দৃশ্য ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। এদিকে ছাত্রলীগ নেতাকে জুতাপেটার এমন ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাগমারা ইউপি আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী বলেন, ‘যৌন নিপীড়ন একটি ধর্তব্য অপরাধ। এমন অপরাধের বিচার হবে আদালতে, তা সালিস বৈঠকে হতে পারে বলে জানা নেই। জয়কে পুলিশেও সোপর্দ করা যেত। কিন্তু একজন আওয়ামী লীগ নেতা কর্তৃক ছাত্রলীগ নেতাকে জুতাপেটার ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। এজন্য ওই জুতাপেটাকারী বিচারকেরও বিচার হওয়া প্রয়োজন।’ এ বিষয়ে জুতা পেটাকারী লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান রকেট সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতা জয় আমাদের দলীয় লোক। ঘটনার পর থেকে এলাকার লোকজন তার উপর খুব ক্ষিপ্ত ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে এমন বিচার না করলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যেত না। এছাড়া জয় তো নিজের দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছে। যৌন নিপীড়নের অভিযোগে এলাকাবাসী জয়কে আটক করে মারধর করেছে। আমার গ্রামের ছেলে হওয়ায় অভিভাবক হিসেবে জুতাপেটা করে আমি তাকে ছাড়িয়ে এনেছি।’ তবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা জয়নাল আবেদীন জয় বলেন, ‘আমি কোন অপরাধ করিনি। সালিস বৈঠকে আমার কোন প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি। রকেট ভাই আমাকে ডেকে নিয়ে জুতাপেটা করবেন আগে থেকে তা বুঝতে পারিনি। আমার ওপর অন্যায় হয়েছে।’ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন রুবেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ অভিযোগ দলের বিরুদ্ধে নয়, একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তাই দলের শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত পত্রে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির পদ থেকে জয়নাল আবেদীন জয়কে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।’ এ বিষয়ে লালমাই থানার ওসি মোহাম্মদ আইয়ুব জানান, ‘এ বিষয়ে কোন পক্ষই এখন পর্যন্ত থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট ২০২০ , ৭ মহররম ১৪৪২, ২৭ আগস্ট ২০২০

কুমিল্লায়

শিশুকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ছাত্রলীগ নেতাকে জুতাপেটা

দল থেকে বহিষ্কার

প্রতিনিধি, কুমিল্লা

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও পল্লী চিকিৎসক জয়নাল আবেদীন জয়কে (৪০) জুতাপেটা করেছেন জেলার লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান রকেট। ব্যক্তিগত চেম্বারে নিয়ে ৪র্থ শ্রেণীর এক শিশু ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গত সোমবার দুপুরে লালমাই উপজেলার চেঙ্গাহাটা চৌমুহনীতে গ্রাম্য সালিস বৈঠকে জয়কে জুতাপেটা করা হয়। এরই মধ্যে জুতাপেটার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর দল থেকে জয়কে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করেন ওই ছাত্রলীগ নেতা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতা জয়নাল আবেদীন জয় একজন পল্লী চিকিৎসক এবং তিনি কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকের লালমাই উপজেলা প্রতিনিধি। তার বাড়ি ওই উপজেলার বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের পাইকপাড়ায়। চেঙ্গাহাটা চৌমুহনীতে তার ব্যক্তিগত চেম্বার রয়েছে। সোমবার দুপুরে জয় স্থানীয় মাতৃছায়া মডেল একাডেমির এক শিশু ছাত্রীকে নিজের চেম্বারে ডেকে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করে বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনার কিছুক্ষণ পর ওই শিশুর বাবার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত সোমবার দুপুরে চেঙ্গাহাটা চৌমুহনীর একটি ওয়ার্কশপে বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ওয়ার্ড মেম্বার রতন মজুমদারের সভাপতিত্বে এক সালিস বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে জয়কে লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান রকেট জুতাপেটা করেন। এ সময় অনেকেই মোবাইলে জুতা পেটার দৃশ্য ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। এদিকে ছাত্রলীগ নেতাকে জুতাপেটার এমন ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাগমারা ইউপি আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী বলেন, ‘যৌন নিপীড়ন একটি ধর্তব্য অপরাধ। এমন অপরাধের বিচার হবে আদালতে, তা সালিস বৈঠকে হতে পারে বলে জানা নেই। জয়কে পুলিশেও সোপর্দ করা যেত। কিন্তু একজন আওয়ামী লীগ নেতা কর্তৃক ছাত্রলীগ নেতাকে জুতাপেটার ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। এজন্য ওই জুতাপেটাকারী বিচারকেরও বিচার হওয়া প্রয়োজন।’ এ বিষয়ে জুতা পেটাকারী লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান রকেট সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতা জয় আমাদের দলীয় লোক। ঘটনার পর থেকে এলাকার লোকজন তার উপর খুব ক্ষিপ্ত ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে এমন বিচার না করলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যেত না। এছাড়া জয় তো নিজের দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছে। যৌন নিপীড়নের অভিযোগে এলাকাবাসী জয়কে আটক করে মারধর করেছে। আমার গ্রামের ছেলে হওয়ায় অভিভাবক হিসেবে জুতাপেটা করে আমি তাকে ছাড়িয়ে এনেছি।’ তবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা জয়নাল আবেদীন জয় বলেন, ‘আমি কোন অপরাধ করিনি। সালিস বৈঠকে আমার কোন প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি। রকেট ভাই আমাকে ডেকে নিয়ে জুতাপেটা করবেন আগে থেকে তা বুঝতে পারিনি। আমার ওপর অন্যায় হয়েছে।’ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন রুবেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ অভিযোগ দলের বিরুদ্ধে নয়, একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তাই দলের শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত পত্রে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির পদ থেকে জয়নাল আবেদীন জয়কে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।’ এ বিষয়ে লালমাই থানার ওসি মোহাম্মদ আইয়ুব জানান, ‘এ বিষয়ে কোন পক্ষই এখন পর্যন্ত থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’