সংস্কার কাজে পাথরের পরিবর্তে ইটের ব্যবহার

রেল প্রকৌশল বিভাগ অভিযোগ আমলেই নেয়নি

ময়মনসিংহ রেলপথের সংস্কার কাজে পাথরের পরিবর্তে নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। তবে রেল কর্তৃপক্ষের প্রকৌশল বিভাগ অভিযোগটি আমলেই নেয়নি। জানা গেছে ঠিকাদারের পরিবর্তে রেলের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা নিজেরাই এই সংস্কার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ময়মনসিংহ স্টেশন থেকে নগরীর কেওয়াটখালি এলাকায় রেলওয়ের লোকশেড পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রেল পথের সংস্কার কাজ চলছে। এই সংস্কার কাজে যেখানে সাধারণত আস্ত পাথর অথবা বোল্ডার ভাঙা পাথরের খোয়া ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে। যেখানে ইট ও বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। যে ইট ও বালু ব্যবহার করা হচ্ছে সেটিও অত্যন্ত নিম্নমানের বলে স্থানীয়রা অভিযোগে উল্লেখ করেছেন। কাজ শুরুর আগে যখন ইট-বালু সাইটে এনে স্তূপ করা হচ্ছিল তখনই স্থানীয়রা এগুলো ব্যবহারে বাঁধা দিয়ে রেলওয়ের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করে। কিন্তু তারা অভিযোগটি আমলে নেয়নি। নিম্নমানের কাজের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি সবার নজরে আসে এবং মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে নগরের বিশিষ্ট নাগরিকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে বিষয়টি দেখে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে এদের কাজ নিয়ে সচ্ছতার প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, কোন দিন দেখিনি রেললাইনে পাথর ছাড়া ইটের খোয়া ব্যবহার করতে। এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, যেখানে পাথর ব্যবহার করার কথা সেখানে ইট বালু ব্যবহার করা হচ্ছে তাও অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কোনরকমের এই সংস্কার কাজ করে সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের পায়তারা হচ্ছে।

অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে রেলপথের সংস্কার কাজ পরিদর্শন করেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আয়শা হক। পরিদর্শন শেষে তিনি জানান, সরজমিনে এসে স্থানীয়দের সঙ্গে এবং রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে শীঘ্রই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অনিয়ম আছে কিনা তা যাচাই করে পরবর্তীতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। তবে যেহেতু এটি সরকারি কাজ তাই এখানে কাজের সমস্ত তথ্য উল্লেখ করে একটি সাইনবোর্ড প্রদর্শন করা উচিত ছিল কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ সেটি করেননি। এটিও একটি অনিয়ম।

স্থানীয় রেলওয়ে সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন ইয়ার্ড থেকে কেওয়াটখালি লোকোশেড পর্যন্ত দুই দশমিক এক কিলোমিটার রেললাইন সংস্কার ও মেরামত কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হলে মেসার্স প্রমা কনস্ট্রাকশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই কাজের কার্যাদেশ পায় গত জুন মাসে। পরে এই আগস্ট মাসের মাঝামাঝিতে এই কাজ শুরু করে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে এই সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রমা কনস্ট্রাকশন কার্যাদেশ পেলেও মূলত এই কাজ করছেন রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের স্থানীয় এক কর্মকর্তা।

ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন থেকে লোকোশেড পর্যন্ত এই রেললাইন দিয়ে কেবল ইঞ্জিন ও উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেন যাতায়াত করে থাকে। বর্ষায় রেললাইনের উপর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে রেললাইনের স্লিপার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর উপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে থাকে ইঞ্জিন ও রিলিফ ট্রেন। সাময়িকভাবে এই সমস্যা সমাধান করতেই লাইন সংস্কারের এই উদ্যোগ নেয়া হযেছে বলে জানান রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) রেজাউল করিম বলেন, ট্র্যাকটি বেশ কয়েক বছর সংস্কার না করার ফলে নাজুক হয়ে পড়ে। অনেক স্থানে স্লিপার নেই কিংবা কাঠের স্লিপারগুলো ফেটে গেছে। লাইনে পাথর ছিল না। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অস্থায়ীভাবে সাড়ে তিন ইঞ্চি উচ্চতায় ইট বালু দেয়া হয়েছে। মূলত এটি পাথর বিছানোর পূর্বে মজবুত ভিত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ভবিষ্যতে পাথর বরাদ্দ পাওয়া গেলে এই ভিতের উপর বিছানো হবে।

আরও খবর
ছয় দফা ছিল বঙ্গবন্ধুর একান্ত চিন্তার ফসল : প্রধানমন্ত্রী
জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের ১৪ দফা দাবি
শিশুকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ছাত্রলীগ নেতাকে জুতাপেটা
বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা বিবেচনার সুযোগ আছে যুক্তরাষ্ট্র
সংবাদপত্র শিল্প অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
ব্যাপকভাবে চলছে মাদকের কারবার
গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে যাচ্ছে ফখরুল
জাল-জালিয়াতি প্রমাণিত হলেও বেঁকে বসেছেন সভাপতি
দেশে উন্মুক্ত পদ্ধতির কয়লাখনির ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে
শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণ গ্রেফতার ২

বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট ২০২০ , ৭ মহররম ১৪৪২, ২৭ আগস্ট ২০২০

ময়মনসিংহ রেললাইন

সংস্কার কাজে পাথরের পরিবর্তে ইটের ব্যবহার

রেল প্রকৌশল বিভাগ অভিযোগ আমলেই নেয়নি

জেলা বার্তা পরিবেশক, ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ রেলপথের সংস্কার কাজে পাথরের পরিবর্তে নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। তবে রেল কর্তৃপক্ষের প্রকৌশল বিভাগ অভিযোগটি আমলেই নেয়নি। জানা গেছে ঠিকাদারের পরিবর্তে রেলের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা নিজেরাই এই সংস্কার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ময়মনসিংহ স্টেশন থেকে নগরীর কেওয়াটখালি এলাকায় রেলওয়ের লোকশেড পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রেল পথের সংস্কার কাজ চলছে। এই সংস্কার কাজে যেখানে সাধারণত আস্ত পাথর অথবা বোল্ডার ভাঙা পাথরের খোয়া ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে। যেখানে ইট ও বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। যে ইট ও বালু ব্যবহার করা হচ্ছে সেটিও অত্যন্ত নিম্নমানের বলে স্থানীয়রা অভিযোগে উল্লেখ করেছেন। কাজ শুরুর আগে যখন ইট-বালু সাইটে এনে স্তূপ করা হচ্ছিল তখনই স্থানীয়রা এগুলো ব্যবহারে বাঁধা দিয়ে রেলওয়ের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করে। কিন্তু তারা অভিযোগটি আমলে নেয়নি। নিম্নমানের কাজের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি সবার নজরে আসে এবং মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে নগরের বিশিষ্ট নাগরিকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে বিষয়টি দেখে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে এদের কাজ নিয়ে সচ্ছতার প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, কোন দিন দেখিনি রেললাইনে পাথর ছাড়া ইটের খোয়া ব্যবহার করতে। এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, যেখানে পাথর ব্যবহার করার কথা সেখানে ইট বালু ব্যবহার করা হচ্ছে তাও অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কোনরকমের এই সংস্কার কাজ করে সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের পায়তারা হচ্ছে।

অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে রেলপথের সংস্কার কাজ পরিদর্শন করেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আয়শা হক। পরিদর্শন শেষে তিনি জানান, সরজমিনে এসে স্থানীয়দের সঙ্গে এবং রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে শীঘ্রই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অনিয়ম আছে কিনা তা যাচাই করে পরবর্তীতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। তবে যেহেতু এটি সরকারি কাজ তাই এখানে কাজের সমস্ত তথ্য উল্লেখ করে একটি সাইনবোর্ড প্রদর্শন করা উচিত ছিল কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ সেটি করেননি। এটিও একটি অনিয়ম।

স্থানীয় রেলওয়ে সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন ইয়ার্ড থেকে কেওয়াটখালি লোকোশেড পর্যন্ত দুই দশমিক এক কিলোমিটার রেললাইন সংস্কার ও মেরামত কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হলে মেসার্স প্রমা কনস্ট্রাকশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই কাজের কার্যাদেশ পায় গত জুন মাসে। পরে এই আগস্ট মাসের মাঝামাঝিতে এই কাজ শুরু করে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে এই সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রমা কনস্ট্রাকশন কার্যাদেশ পেলেও মূলত এই কাজ করছেন রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের স্থানীয় এক কর্মকর্তা।

ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন থেকে লোকোশেড পর্যন্ত এই রেললাইন দিয়ে কেবল ইঞ্জিন ও উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেন যাতায়াত করে থাকে। বর্ষায় রেললাইনের উপর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে রেললাইনের স্লিপার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর উপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে থাকে ইঞ্জিন ও রিলিফ ট্রেন। সাময়িকভাবে এই সমস্যা সমাধান করতেই লাইন সংস্কারের এই উদ্যোগ নেয়া হযেছে বলে জানান রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) রেজাউল করিম বলেন, ট্র্যাকটি বেশ কয়েক বছর সংস্কার না করার ফলে নাজুক হয়ে পড়ে। অনেক স্থানে স্লিপার নেই কিংবা কাঠের স্লিপারগুলো ফেটে গেছে। লাইনে পাথর ছিল না। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অস্থায়ীভাবে সাড়ে তিন ইঞ্চি উচ্চতায় ইট বালু দেয়া হয়েছে। মূলত এটি পাথর বিছানোর পূর্বে মজবুত ভিত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ভবিষ্যতে পাথর বরাদ্দ পাওয়া গেলে এই ভিতের উপর বিছানো হবে।