ব্যাপকভাবে চলছে মাদকের কারবার

সাড়ে বিশ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার গ্রেফতার ৩ হাজারের বেশি ইয়াবা ব্যবসায়ী

রাজধানীসহ সারাদেশে মাদকের স্পটগুলোতে মাদকের ছড়াছড়ি। হঠাৎ করে স্রোতের মতো মাদক কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢুকছে। নতুন সংযোজন ফেনসিডিলের চালানও বাড়ছে। এক চালান মাদক ধরা পড়লে ১০ চালান মাদক ঢুকছে। টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপের একের পর এক অপকর্ম ফাঁস হওয়ার পর কক্সবাজারের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দুর্বল নিরাপত্তার কারণে মাদকের চালান দেশে আনার সুযোগ হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে, গভীর সমুদ্রে র‌্যাব-১৫ বিশেষ টিম অভিযান চালিয়ে ১৩ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ দুই মায়ানমার নাগরিককে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতাররা পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। এর আগে বর্ডার গার্ড বিজিবি ১ লাখ ৪০ হাজার পিস ইয়াবার চালান আটক করেছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কক্সবাজারসহ সীমান্ত এলাকা দিয়ে দেশে মাদকের চালান আনা হচ্ছে। সঙ্ঘবদ্ধ মাদক চোরাচালানি চক্র কোরবানির ঈদের আগ থেকে খোদ রাজধানীর মাদক স্পটগুলোতে মাদকের বেচাকেনা বেড়ে গেছে। ইয়াবার পাশাপাশি নতুন করে ফেনসিডিল সহজলভ্য হয়ে গেছে। এছাড়াও গাজাসহ অন্যান্য মাদকের চালান গোয়েন্দা পুলিশ, থানা পুলিশ আটক করছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ডিসি মো. মশিউর রহমান বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে ১ লাখের বেশি ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করছে। এছাড়াও গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকও উদ্ধার করছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে। ঈদের আগ থেকে গোয়েন্দা পুলিশ মাদক স্পটগুলোতে এ অভিযান চালিয়েছে।

এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, দেশে ইয়াবা তৈরি হয় না। ইয়াবা কক্সবাজারসহ সীমান্ত ও সমুদ্রপথ দিয়ে সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ীরা আনছে। কক্সবাজার যত দিন মাদকমুক্ত না হবে ততদিন ইয়াবার চাহিদা থাকবে। কক্সবাজারে ইয়াবার পিস ১২০ টাকা থেকে ১৯০ টাকা। রাজধানীতে পৌঁছার পর এক পিস ইয়াবা আড়াইশ’ থেকে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ডিসি মো. ওয়ালিদ হোসেন জানান, রাজধানীতে গত জুন ও জুলাই মাসে ৩ হাজারের বেশি মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে জুন মাসে ৭৫১ জন। আর জুলাই মাসে ২৩৬৯ জন। মাদক সংক্রান্ত অভিযানে গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে ১৮৮৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে জুন মাসে ৪৬৫টি মামলা আর জুলাই মাসে ১৪১৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

উদ্ধারকৃত মাদকের মধ্যে জুন মাসে ৬৮২ কেজি গাজা, ৩ কেজি ৮০৫ গ্রাম হেরোইন, ১ লাখ ৮১ হাজার ৮১১ পিস ইয়াবা, ৬ হাজার ৮৭১ বোতল ফেনসিডিল। জুলাই মাসে ৩৩৬ কেজি ৯১২ গ্রাম গাজা, ৫ কেজি হেরোইন, ৪ লাখ ৪৩ হাজার ২৯৮ পিস ইয়াবা, ফেনসিডিল ও ৭৫০১ বোতল ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।

গত ২৪ আগস্ট র‌্যাব সদর দফতর থেকে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার গভীর সমুদ্র এলাকা থেকে গোপন খবরের ভিত্তিতে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে ১৩ লাখ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ ২ মায়ানমার নাগরিককে গ্রেফতার করেছে। গত ২৩ আগস্ট সন্ধ্যায় কক্সবাজার গভীর সমুদ্র এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আয়াজ ও বিল্লাল নামে দুই মায়ানমার নাগরিক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে নানা তথ্য দিয়েছে। তাদের দেয়া তথ্যমতে, পলাতক মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে চলছে অভিযান। তারা দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মাদক পরিবহন ও পাচারের ঘটনায় ট্রলার মালিকদের একটি অংশ জড়িত বলে জানা গেছে। তারা নতুন করে ইয়াবা চালানের বিকল্প রুট হিসেবে সমুদ্রকে বেছে নিয়েছে। এর আগে বিজিবি গত ১৬ আগস্ট ১ লাখ ৪০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। এভাবে প্রতিদিন মাদক আসছে। অভিযোগ রয়েছে, সীমান্ত টহল ও আইন প্রয়োগে দুর্বলতার কারণে এখন আবার মাদকের চালান আনা হচ্ছে। আর মূল পথ টেকনাফ ও কক্সবাজার সীমান্ত। ওই সব পথ বন্ধ করা গেলে কমবে মাদক। আর মাদক সেবনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি মামলা অব্যাহত আছে। এরপরও থামছে না মাদক চোরাচালানি।

আরও খবর
ছয় দফা ছিল বঙ্গবন্ধুর একান্ত চিন্তার ফসল : প্রধানমন্ত্রী
জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের ১৪ দফা দাবি
শিশুকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ছাত্রলীগ নেতাকে জুতাপেটা
বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা বিবেচনার সুযোগ আছে যুক্তরাষ্ট্র
সংস্কার কাজে পাথরের পরিবর্তে ইটের ব্যবহার
সংবাদপত্র শিল্প অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে যাচ্ছে ফখরুল
জাল-জালিয়াতি প্রমাণিত হলেও বেঁকে বসেছেন সভাপতি
দেশে উন্মুক্ত পদ্ধতির কয়লাখনির ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে
শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণ গ্রেফতার ২

বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট ২০২০ , ৭ মহররম ১৪৪২, ২৭ আগস্ট ২০২০

রাজধানীতে

ব্যাপকভাবে চলছে মাদকের কারবার

সাড়ে বিশ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার গ্রেফতার ৩ হাজারের বেশি ইয়াবা ব্যবসায়ী

বাকী বিল্লাহ

রাজধানীসহ সারাদেশে মাদকের স্পটগুলোতে মাদকের ছড়াছড়ি। হঠাৎ করে স্রোতের মতো মাদক কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢুকছে। নতুন সংযোজন ফেনসিডিলের চালানও বাড়ছে। এক চালান মাদক ধরা পড়লে ১০ চালান মাদক ঢুকছে। টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপের একের পর এক অপকর্ম ফাঁস হওয়ার পর কক্সবাজারের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দুর্বল নিরাপত্তার কারণে মাদকের চালান দেশে আনার সুযোগ হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে, গভীর সমুদ্রে র‌্যাব-১৫ বিশেষ টিম অভিযান চালিয়ে ১৩ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ দুই মায়ানমার নাগরিককে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতাররা পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। এর আগে বর্ডার গার্ড বিজিবি ১ লাখ ৪০ হাজার পিস ইয়াবার চালান আটক করেছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কক্সবাজারসহ সীমান্ত এলাকা দিয়ে দেশে মাদকের চালান আনা হচ্ছে। সঙ্ঘবদ্ধ মাদক চোরাচালানি চক্র কোরবানির ঈদের আগ থেকে খোদ রাজধানীর মাদক স্পটগুলোতে মাদকের বেচাকেনা বেড়ে গেছে। ইয়াবার পাশাপাশি নতুন করে ফেনসিডিল সহজলভ্য হয়ে গেছে। এছাড়াও গাজাসহ অন্যান্য মাদকের চালান গোয়েন্দা পুলিশ, থানা পুলিশ আটক করছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ডিসি মো. মশিউর রহমান বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে ১ লাখের বেশি ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করছে। এছাড়াও গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকও উদ্ধার করছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে। ঈদের আগ থেকে গোয়েন্দা পুলিশ মাদক স্পটগুলোতে এ অভিযান চালিয়েছে।

এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, দেশে ইয়াবা তৈরি হয় না। ইয়াবা কক্সবাজারসহ সীমান্ত ও সমুদ্রপথ দিয়ে সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ীরা আনছে। কক্সবাজার যত দিন মাদকমুক্ত না হবে ততদিন ইয়াবার চাহিদা থাকবে। কক্সবাজারে ইয়াবার পিস ১২০ টাকা থেকে ১৯০ টাকা। রাজধানীতে পৌঁছার পর এক পিস ইয়াবা আড়াইশ’ থেকে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ডিসি মো. ওয়ালিদ হোসেন জানান, রাজধানীতে গত জুন ও জুলাই মাসে ৩ হাজারের বেশি মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে জুন মাসে ৭৫১ জন। আর জুলাই মাসে ২৩৬৯ জন। মাদক সংক্রান্ত অভিযানে গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে ১৮৮৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে জুন মাসে ৪৬৫টি মামলা আর জুলাই মাসে ১৪১৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

উদ্ধারকৃত মাদকের মধ্যে জুন মাসে ৬৮২ কেজি গাজা, ৩ কেজি ৮০৫ গ্রাম হেরোইন, ১ লাখ ৮১ হাজার ৮১১ পিস ইয়াবা, ৬ হাজার ৮৭১ বোতল ফেনসিডিল। জুলাই মাসে ৩৩৬ কেজি ৯১২ গ্রাম গাজা, ৫ কেজি হেরোইন, ৪ লাখ ৪৩ হাজার ২৯৮ পিস ইয়াবা, ফেনসিডিল ও ৭৫০১ বোতল ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।

গত ২৪ আগস্ট র‌্যাব সদর দফতর থেকে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার গভীর সমুদ্র এলাকা থেকে গোপন খবরের ভিত্তিতে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে ১৩ লাখ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ ২ মায়ানমার নাগরিককে গ্রেফতার করেছে। গত ২৩ আগস্ট সন্ধ্যায় কক্সবাজার গভীর সমুদ্র এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আয়াজ ও বিল্লাল নামে দুই মায়ানমার নাগরিক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে নানা তথ্য দিয়েছে। তাদের দেয়া তথ্যমতে, পলাতক মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে চলছে অভিযান। তারা দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মাদক পরিবহন ও পাচারের ঘটনায় ট্রলার মালিকদের একটি অংশ জড়িত বলে জানা গেছে। তারা নতুন করে ইয়াবা চালানের বিকল্প রুট হিসেবে সমুদ্রকে বেছে নিয়েছে। এর আগে বিজিবি গত ১৬ আগস্ট ১ লাখ ৪০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। এভাবে প্রতিদিন মাদক আসছে। অভিযোগ রয়েছে, সীমান্ত টহল ও আইন প্রয়োগে দুর্বলতার কারণে এখন আবার মাদকের চালান আনা হচ্ছে। আর মূল পথ টেকনাফ ও কক্সবাজার সীমান্ত। ওই সব পথ বন্ধ করা গেলে কমবে মাদক। আর মাদক সেবনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি মামলা অব্যাহত আছে। এরপরও থামছে না মাদক চোরাচালানি।