জাল-জালিয়াতি প্রমাণিত হলেও বেঁকে বসেছেন সভাপতি

সংকট নিরসন হয়নি

যশোর সদর উপজেলার বলরামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এমপিওভুক্তি (মান্থলি পে অর্ডার) নিয়ে জটিলতার নিরসন হয়নি। খুলনা অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা উপ-পরিচালক নিভা রাণী পাঠক স্কুল পরিদর্শন করে তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত দিলেও বেঁকে বসেছেন সভাপতি। তিনি মামলা প্রত্যাহার, ১৫ লাখ টাকা এবং তার লোকের নিয়োগ বৈধতা ছাড়া কোন কাগজপত্রে স্বাক্ষর করবেন না বলে বৈধ শিক্ষকদের জানিয়ে দিয়েছেন। গত দু’দিন ধরে গ্রামবাসী স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এমএম আকরাম বিশ্বাসকে সংকট নিরসনে চাপ দিলেও তিনি তার বক্তব্যে অনঢ় রয়েছেন। খুলনা অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা উপ-পরিচালক নিভা রাণী পাঠক জানান, বলরামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তি নিয়ে অভিযোগ-মামলার পর দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। দুই কমিটিই ১৮ জনের তালিকার মধ্যে ৭জনকে বৈধ শিক্ষক-কর্মচারী বলে রিপোর্ট দেন। এর প্রেক্ষিতে গত ২৩ আগস্ট স্কুল পরিদর্শন করে তিনি (নিভা রাণী পাঠক) বৈধ ৭ জনকে এমপিওভুক্তি এবং যাদের এমপিও-নিয়োগ নিয়ে মামলা রয়েছে; আদালতের রায় সাপেক্ষে তাদের ব্যাপারে পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু ওই দিনই প্রধান শিক্ষক দাবি করে অলিউল্লাহ নামে একজন আদালতে মামলা করেন।

এর প্রেক্ষিতে নিভা রাণী পাঠক জানিয়েছেন, যেহেতু নতুন করে মামলা হয়েছে, তাই বিষয়টি সমাধানের জন্য মহাপরিচালক বরাবর প্রেরণ করবেন। তবে সভাপতি চাইলে বৈধ শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারেন। বলরামপুর গ্রামবাসী সভাপতি এমএম আকরাম বিশ্বাসকে সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নেয়ার চাপ দিচ্ছেন। গত দু’দিন কয়েকশ’ গ্রামবাসী সভাপতির বাড়িতে গিয়ে তাকে বৈধ কাগজপত্রে স্বাক্ষরের অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি তিনি মামলা প্রত্যাহার, ১৫ লাখ টাকা এবং তার লোকের নিয়োগবৈধতা ছাড়া কোন কাগজপত্রে স্বাক্ষর করবেন না বলে বৈধ শিক্ষকদের জানিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি উল্লেখ করে বৈধ শিক্ষক লায়লা পারভীন অভিযোগ করেন, সর্বশেষ মামলার বাদী অলিউল্লাহ সভাপতির আজ্ঞাবহ লোক। জাল-জালিয়াতি করে একটি তালিকায় সভাপতি তাকে প্রধান শিক্ষক দেখিয়েছেন। অন্য একটি স্কুল থেকেও তার এমপিওভুক্তির আবেদন রয়েছে। সমাধান যাতে না হয় সেজন্যই এই মামলা করানো হয়েছে।

আর স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এমএম আকরাম বিশ্বাস বলেন, শিক্ষকদের উপস্থিতিতে মাহিদিয়ার ফারুক চুক্তি করেছিলেন তার চারজন লোক নিয়োগ দিলে স্কুল এমপিওর জন্য তিনি যাবতীয় কাজ করে দেবেন। ফারুকের লোকের নিয়োগ হয়নি। এখন সে দাবি করছে, তার ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আর ডিডি ম্যাডাম (উপ-পরিচালক নিভা রাণী পাঠক) সিদ্ধান্ত দেয়ার পর নতুন মামলা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে এখন দুটি মামলা। এই মামলা ও সমস্যার নিষ্পত্তি না হলে আমি কাগজে সই করব না।’

এর প্রেক্ষিতে খুলনা অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা উপ-পরিচালক নিভা রাণী পাঠক আরও জানিয়েছেন, দ্রুত সংকট নিরসন না হলে স্কুলের এমপিও স্থগিত হয়ে যেতে পারে। যশোর সদর উপজেলার বলরামপুর গ্রামে ১৯৯৭ সালে বলরামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হওয়ার পর এখানে ১১ জন শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত ছিলেন।

এরমধ্যে প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক আজগর আলীসহ চার শিক্ষক-কর্মচারীকে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর বরখাস্ত করা হয়। জালিয়াতি ও নিয়োগ বাণিজ্য করে বাকি ৭ শিক্ষকের সঙ্গে আরও ১১ জন শিক্ষক-কর্মচারীর নাম যুক্ত করে ১৮ জনের তালিকা এমপিওভুক্তির জন্য প্রেরণ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই ১১ জন শিক্ষক-কর্মচারীর কেউই বৈধভাবে প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হননি। স্কুল এমপিওভুক্ত হওয়ার পর চলতি বছর ‘ব্যাকডেটেড’ বিভিন্ন সময়ে এদের নিয়োগ দেখিয়ে জাল কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে। শুধু এদেরই নয়, বাকি বৈধ ৭ শিক্ষক-কর্মচারী কাগজপত্রেও জাল-জালিয়াতি করা হয়েছে। আর জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া ওই ১১ শিক্ষক কর্মচারীর কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকার অর্থবাণিজ্য করা হয়েছে। সূত্র আরও জানিয়েছে, এসব অভিযোগে প্রেক্ষিতে গঠিত দুটি তদন্ত কমিটিই ভুয়া নিয়োগ ও এমপিওভুক্তি নিয়ে জাল-জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে। প্রতিবেদনে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের চিহ্নিত করা হয়েছে। বৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত ও এমপিওভুক্তির যোগ্যদেরও নির্ধারণ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

আরও খবর
ছয় দফা ছিল বঙ্গবন্ধুর একান্ত চিন্তার ফসল : প্রধানমন্ত্রী
জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের ১৪ দফা দাবি
শিশুকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ছাত্রলীগ নেতাকে জুতাপেটা
বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা বিবেচনার সুযোগ আছে যুক্তরাষ্ট্র
সংস্কার কাজে পাথরের পরিবর্তে ইটের ব্যবহার
সংবাদপত্র শিল্প অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
ব্যাপকভাবে চলছে মাদকের কারবার
গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে যাচ্ছে ফখরুল
দেশে উন্মুক্ত পদ্ধতির কয়লাখনির ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে
শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণ গ্রেফতার ২

বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট ২০২০ , ৭ মহররম ১৪৪২, ২৭ আগস্ট ২০২০

যশোরে বলরামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়

জাল-জালিয়াতি প্রমাণিত হলেও বেঁকে বসেছেন সভাপতি

সংকট নিরসন হয়নি

যশোর অফিস

যশোর সদর উপজেলার বলরামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এমপিওভুক্তি (মান্থলি পে অর্ডার) নিয়ে জটিলতার নিরসন হয়নি। খুলনা অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা উপ-পরিচালক নিভা রাণী পাঠক স্কুল পরিদর্শন করে তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত দিলেও বেঁকে বসেছেন সভাপতি। তিনি মামলা প্রত্যাহার, ১৫ লাখ টাকা এবং তার লোকের নিয়োগ বৈধতা ছাড়া কোন কাগজপত্রে স্বাক্ষর করবেন না বলে বৈধ শিক্ষকদের জানিয়ে দিয়েছেন। গত দু’দিন ধরে গ্রামবাসী স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এমএম আকরাম বিশ্বাসকে সংকট নিরসনে চাপ দিলেও তিনি তার বক্তব্যে অনঢ় রয়েছেন। খুলনা অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা উপ-পরিচালক নিভা রাণী পাঠক জানান, বলরামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তি নিয়ে অভিযোগ-মামলার পর দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। দুই কমিটিই ১৮ জনের তালিকার মধ্যে ৭জনকে বৈধ শিক্ষক-কর্মচারী বলে রিপোর্ট দেন। এর প্রেক্ষিতে গত ২৩ আগস্ট স্কুল পরিদর্শন করে তিনি (নিভা রাণী পাঠক) বৈধ ৭ জনকে এমপিওভুক্তি এবং যাদের এমপিও-নিয়োগ নিয়ে মামলা রয়েছে; আদালতের রায় সাপেক্ষে তাদের ব্যাপারে পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু ওই দিনই প্রধান শিক্ষক দাবি করে অলিউল্লাহ নামে একজন আদালতে মামলা করেন।

এর প্রেক্ষিতে নিভা রাণী পাঠক জানিয়েছেন, যেহেতু নতুন করে মামলা হয়েছে, তাই বিষয়টি সমাধানের জন্য মহাপরিচালক বরাবর প্রেরণ করবেন। তবে সভাপতি চাইলে বৈধ শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারেন। বলরামপুর গ্রামবাসী সভাপতি এমএম আকরাম বিশ্বাসকে সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নেয়ার চাপ দিচ্ছেন। গত দু’দিন কয়েকশ’ গ্রামবাসী সভাপতির বাড়িতে গিয়ে তাকে বৈধ কাগজপত্রে স্বাক্ষরের অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি তিনি মামলা প্রত্যাহার, ১৫ লাখ টাকা এবং তার লোকের নিয়োগবৈধতা ছাড়া কোন কাগজপত্রে স্বাক্ষর করবেন না বলে বৈধ শিক্ষকদের জানিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি উল্লেখ করে বৈধ শিক্ষক লায়লা পারভীন অভিযোগ করেন, সর্বশেষ মামলার বাদী অলিউল্লাহ সভাপতির আজ্ঞাবহ লোক। জাল-জালিয়াতি করে একটি তালিকায় সভাপতি তাকে প্রধান শিক্ষক দেখিয়েছেন। অন্য একটি স্কুল থেকেও তার এমপিওভুক্তির আবেদন রয়েছে। সমাধান যাতে না হয় সেজন্যই এই মামলা করানো হয়েছে।

আর স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এমএম আকরাম বিশ্বাস বলেন, শিক্ষকদের উপস্থিতিতে মাহিদিয়ার ফারুক চুক্তি করেছিলেন তার চারজন লোক নিয়োগ দিলে স্কুল এমপিওর জন্য তিনি যাবতীয় কাজ করে দেবেন। ফারুকের লোকের নিয়োগ হয়নি। এখন সে দাবি করছে, তার ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আর ডিডি ম্যাডাম (উপ-পরিচালক নিভা রাণী পাঠক) সিদ্ধান্ত দেয়ার পর নতুন মামলা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে এখন দুটি মামলা। এই মামলা ও সমস্যার নিষ্পত্তি না হলে আমি কাগজে সই করব না।’

এর প্রেক্ষিতে খুলনা অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা উপ-পরিচালক নিভা রাণী পাঠক আরও জানিয়েছেন, দ্রুত সংকট নিরসন না হলে স্কুলের এমপিও স্থগিত হয়ে যেতে পারে। যশোর সদর উপজেলার বলরামপুর গ্রামে ১৯৯৭ সালে বলরামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হওয়ার পর এখানে ১১ জন শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত ছিলেন।

এরমধ্যে প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক আজগর আলীসহ চার শিক্ষক-কর্মচারীকে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর বরখাস্ত করা হয়। জালিয়াতি ও নিয়োগ বাণিজ্য করে বাকি ৭ শিক্ষকের সঙ্গে আরও ১১ জন শিক্ষক-কর্মচারীর নাম যুক্ত করে ১৮ জনের তালিকা এমপিওভুক্তির জন্য প্রেরণ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই ১১ জন শিক্ষক-কর্মচারীর কেউই বৈধভাবে প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হননি। স্কুল এমপিওভুক্ত হওয়ার পর চলতি বছর ‘ব্যাকডেটেড’ বিভিন্ন সময়ে এদের নিয়োগ দেখিয়ে জাল কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে। শুধু এদেরই নয়, বাকি বৈধ ৭ শিক্ষক-কর্মচারী কাগজপত্রেও জাল-জালিয়াতি করা হয়েছে। আর জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া ওই ১১ শিক্ষক কর্মচারীর কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকার অর্থবাণিজ্য করা হয়েছে। সূত্র আরও জানিয়েছে, এসব অভিযোগে প্রেক্ষিতে গঠিত দুটি তদন্ত কমিটিই ভুয়া নিয়োগ ও এমপিওভুক্তি নিয়ে জাল-জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে। প্রতিবেদনে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের চিহ্নিত করা হয়েছে। বৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত ও এমপিওভুক্তির যোগ্যদেরও নির্ধারণ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।