২০২১ সাল নাগাদ প্রতিটি বাড়িই আলোকিত হবে

বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের ২০২১ সাল নাগাদ দেশের প্রতিটি বাড়ি আলোকিত করার লক্ষ্য পুনর্নিশ্চিত করে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি আর ২০২১ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি বাড়ি আলোকিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’

প্রধানমন্ত্রী গতকাল গণভবন থেকে ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে ১৮টি জেলার ৩১টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্বোধন করে একথা বলেন। এছাড়াও, তিনি এ সময় দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, ১১টি গ্রিড সাব-স্টেশন এবং ছয়টি নতুন ট্রান্সমিশন লাইনের উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বিদ্যুৎখাতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিচ্ছে। তিনি মানুষকে বিদ্যুতের অপচয় না করার জন্য আবারও আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনেই একটি মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়। আমরা এখন এলএনজি আমদানি করছি এবং এখনও বিদ্যুৎ খাতে বিরাট অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সবাইকে একথা মাথায় রাখতে হবে যে সরকারের পক্ষে সব সময় এই বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেয়া সম্ভব নয়।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই দেশের শতকরা ৯৭.৫ ভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি এবং আশা করছি ২০২১ সাল নাগাদ আমরা দেশের সব মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পারব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তার সরকার ২০২১ সাল নাগাদ ২৪ হাজার মেগাওয়াট ও ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ৪১ সাল নাগাদ ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অধিকতর শিল্পায়নের লক্ষ্যে সারাদেশে ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছি আর এভাবে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছি। এজন্য বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ স্থাপন করেছে। দেশে যত বেশি আইসিটি ব্যবহার বাড়বে, বিদ্যুতের চাহিদাও ততই বৃদ্ধি পাবে।’

এ সময় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তার মন্ত্রণালয়ের কার্যালয় থেকে অনুষ্ঠানে অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সংশ্লিষ্ট সচিবরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. সুলতান আহমেদ ‘বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত : বঙ্গবন্ধু থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা’ শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন। এতে বিগত ১১ বছর বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হয়।

পাশাপাশি, বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের উপর একটি প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে না, বিদ্যুৎকেন্দ্রও নির্মাণ করছে, একই সঙ্গে সঞ্চালন লাইনের ব্যবস্থা করছে।

তিনি বলেন, আমরা গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণ করছি এবং বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছি। এর ফলে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর হার মাত্র ৩৬ শতাংশ থেকে ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে এবং গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটি থেকে বেড়ে ৩ দশমিক ৭৪ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা সবার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সঞ্চালন এবং বিতরণ লাইন বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন করছি।

সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনের বহুমুখীতা উল্লেখ করে শেখ হাসিনার বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন এখন গ্যাস, কয়লা ও সৌর শক্তি প্যানেলের মাধ্যমে উৎপন্ন হচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশে প্রায় ৫৮ লাখ সৌর প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে এবং গ্রিড লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। যাতে সৌর শক্তি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ গ্রিড লাইনে যোগ করা যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাতে সব এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া যায় সে লক্ষ্যে সরকার সৌর প্যানেল স্থাপনের জন্য ত্রাণ সহায়তা ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির ৫০ শতাংশ এই খাতে বরাদ্দ ব্যয়ের ব্যবস্থা করেছে।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের উন্নয়ন শুধু রাজধানী বা শহরকেন্দ্রিক নয়। তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি গ্রামকে শহরের সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন রূপে গড়ে তুলে প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী জনগণকে বিদ্যুতের অপব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যদি তারা বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হয় তাহলে তারাই উপকৃত হবে।

বিদ্যুৎ অপব্যবহার পরিত্যাগে আন্তরিকভাবে অনুরোধ করে তিনি বলেন, কম বিদ্যুতের বিল এলে আপনিও উপকৃত হবেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, শিক্ষক, ছাত্র, ইমাম, গৃহিণীসহ নোয়াখালী, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, গোপালগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ পাঁচ জেলার বিদ্যুতের সুফলভোগীসহ জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্ব এখন এজন্য ভুগছে।

নোয়াখালীর এক ছাত্রের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা টেলিভিশন এবং অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করেছি।

এই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা ছাত্রদের তাদের বাড়িতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বলেন। তিনি বলেন, আমরা দেখি তাদের জন্য কি করতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী সবাইকে এই রোগের সংক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলার আহ্বান জানান। দেশ যাতে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পায় সে লক্ষ্যে তিনি তাদের প্রার্থনা করার অনুরোধ জানান।

জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বর্তমান সময় তরুণ প্রজন্মকে উৎসর্গ করছি, অন্যথায় ভবিষ্যতে কে দেশ পরিচালনা করবে।

প্রধানমন্ত্রীর নোয়াখালীর জনগণের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জেলার বাসিন্দা বেলাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি গান গেয়ে শোনান।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে ১৮টি জেলার ৩১টি উপজেলার শতভাগ বিদ্যুতায়ন, দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, ১১টি গ্রিড সাব স্টেশন ও ৬টি নতুন সঞ্চালন লাইনের উদ্বোধন করেন।

শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলাগুলো হলো : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর, সরাইল ও আশুগঞ্জ, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ ও কচুয়া, কুমিল্লা জেলার বরুড়া ও মুরাদনগর, ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা ও বোয়ালমারি, গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর, ঝিনাইদহ জেলার ঝিনাইদহ সদর।

এছাড়া, শতভাগ বিদ্যুতায়িত অন্যান্য উপজেলা হলো : মানিকগঞ্জ জেলার মানিকগঞ্জ সদর, দৌলতপুর, সিংগাইর ও শিবালয়, মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর, মান্দা, ধামৈরহাট ও নওগাঁ জেলার শাপাহার, নীলফামারী জেলার ডোমার, নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ, পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ, রাজবাড়ী জেলার রাজবাড়ী সদর, পাংশা ও বালিয়াকান্দী, রাজশাহী জেলার বাগমারা, সাতক্ষীরা জেলার সাতক্ষীরা সদর, সিলেট জেলার জকিগঞ্জ ও ওসমানী নগর, নরসিংদী জেলার রায়পুরা এবং মাদারীপুরের কালকিনী।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি হলো : কনফিডেন্স পাওয়ার বগুড়া-১ লিমিটেডের ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নোয়াখালীর এইচএফ পাওয়ার লিমিটেডের ১১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র।

প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মহাস্থানগড় ১৩২/৩৩ কেভি, রাজশাহী (উত্তর) ১৩২/৩৩ কেভি, চৌদ্দগ্রাম ১৩২/৩৩ কেভি, ভালুকা ১৩২/৩৩ কেভি, বেনাপোল ১৩২/৩৩ কেভি এবং শরীয়তপুর ১৩২/৩৩ কেভি সাব-স্টেশন উদ্বোধন করেন।

এছাড়া, তিনি ৪০০/২৩০/১৩ কেভি গ্রিড নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শ্যামপুর ২৩০/১৩২ কেভি সাব স্টেশন, পল্লী বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের আওতায় গ্রিড সাব স্টেশন এবং সঞ্চালন জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় শেরপুর ১৩২/৩ কেভি ও কুড়িগ্রাম ১৩২/৩৩ কেভি, পল্লী বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের আওতায় নড়াইল ১৩২/৩৩ কেভি এবং রাজেন্দ্রপুর ১৩২/৩৩ কেভি জিআইএস (গ্যাস ইনসুলেটেড সুইসগিয়ার) প্রকল্পের আওতায় রাজেন্দ্রপুর ১৩২/৩৩ সাব-স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী যে ৬টি সঞ্চালন লাইনের উদ্বোধন করেন সেগুলো হলো : পটুয়াখালী (পায়রা)-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন, যশোর-বেনাপোল ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন, শরীয়তপুর-মাদারীপুর ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন, তিস্তা-কুড়িগ্রাম ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন, মাগুরা-নড়াইল ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন এবং পটুয়াখালী-পায়রা ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন।

শুক্রবার, ২৮ আগস্ট ২০২০ , ৮ মহররম ১৪৪২, ২৮ আগস্ট ২০২০

২০২১ সাল নাগাদ প্রতিটি বাড়িই আলোকিত হবে

বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বাসস

image

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের ২০২১ সাল নাগাদ দেশের প্রতিটি বাড়ি আলোকিত করার লক্ষ্য পুনর্নিশ্চিত করে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি আর ২০২১ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি বাড়ি আলোকিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’

প্রধানমন্ত্রী গতকাল গণভবন থেকে ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে ১৮টি জেলার ৩১টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্বোধন করে একথা বলেন। এছাড়াও, তিনি এ সময় দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, ১১টি গ্রিড সাব-স্টেশন এবং ছয়টি নতুন ট্রান্সমিশন লাইনের উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বিদ্যুৎখাতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিচ্ছে। তিনি মানুষকে বিদ্যুতের অপচয় না করার জন্য আবারও আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনেই একটি মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়। আমরা এখন এলএনজি আমদানি করছি এবং এখনও বিদ্যুৎ খাতে বিরাট অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সবাইকে একথা মাথায় রাখতে হবে যে সরকারের পক্ষে সব সময় এই বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেয়া সম্ভব নয়।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই দেশের শতকরা ৯৭.৫ ভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি এবং আশা করছি ২০২১ সাল নাগাদ আমরা দেশের সব মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পারব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তার সরকার ২০২১ সাল নাগাদ ২৪ হাজার মেগাওয়াট ও ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ৪১ সাল নাগাদ ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অধিকতর শিল্পায়নের লক্ষ্যে সারাদেশে ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছি আর এভাবে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছি। এজন্য বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ স্থাপন করেছে। দেশে যত বেশি আইসিটি ব্যবহার বাড়বে, বিদ্যুতের চাহিদাও ততই বৃদ্ধি পাবে।’

এ সময় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তার মন্ত্রণালয়ের কার্যালয় থেকে অনুষ্ঠানে অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সংশ্লিষ্ট সচিবরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. সুলতান আহমেদ ‘বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত : বঙ্গবন্ধু থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা’ শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন। এতে বিগত ১১ বছর বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হয়।

পাশাপাশি, বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের উপর একটি প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে না, বিদ্যুৎকেন্দ্রও নির্মাণ করছে, একই সঙ্গে সঞ্চালন লাইনের ব্যবস্থা করছে।

তিনি বলেন, আমরা গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণ করছি এবং বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছি। এর ফলে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর হার মাত্র ৩৬ শতাংশ থেকে ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে এবং গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটি থেকে বেড়ে ৩ দশমিক ৭৪ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা সবার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সঞ্চালন এবং বিতরণ লাইন বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন করছি।

সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনের বহুমুখীতা উল্লেখ করে শেখ হাসিনার বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন এখন গ্যাস, কয়লা ও সৌর শক্তি প্যানেলের মাধ্যমে উৎপন্ন হচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশে প্রায় ৫৮ লাখ সৌর প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে এবং গ্রিড লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। যাতে সৌর শক্তি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ গ্রিড লাইনে যোগ করা যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাতে সব এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া যায় সে লক্ষ্যে সরকার সৌর প্যানেল স্থাপনের জন্য ত্রাণ সহায়তা ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির ৫০ শতাংশ এই খাতে বরাদ্দ ব্যয়ের ব্যবস্থা করেছে।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের উন্নয়ন শুধু রাজধানী বা শহরকেন্দ্রিক নয়। তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি গ্রামকে শহরের সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন রূপে গড়ে তুলে প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী জনগণকে বিদ্যুতের অপব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যদি তারা বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হয় তাহলে তারাই উপকৃত হবে।

বিদ্যুৎ অপব্যবহার পরিত্যাগে আন্তরিকভাবে অনুরোধ করে তিনি বলেন, কম বিদ্যুতের বিল এলে আপনিও উপকৃত হবেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, শিক্ষক, ছাত্র, ইমাম, গৃহিণীসহ নোয়াখালী, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, গোপালগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ পাঁচ জেলার বিদ্যুতের সুফলভোগীসহ জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্ব এখন এজন্য ভুগছে।

নোয়াখালীর এক ছাত্রের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা টেলিভিশন এবং অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করেছি।

এই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা ছাত্রদের তাদের বাড়িতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বলেন। তিনি বলেন, আমরা দেখি তাদের জন্য কি করতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী সবাইকে এই রোগের সংক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলার আহ্বান জানান। দেশ যাতে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পায় সে লক্ষ্যে তিনি তাদের প্রার্থনা করার অনুরোধ জানান।

জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বর্তমান সময় তরুণ প্রজন্মকে উৎসর্গ করছি, অন্যথায় ভবিষ্যতে কে দেশ পরিচালনা করবে।

প্রধানমন্ত্রীর নোয়াখালীর জনগণের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জেলার বাসিন্দা বেলাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি গান গেয়ে শোনান।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে ১৮টি জেলার ৩১টি উপজেলার শতভাগ বিদ্যুতায়ন, দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, ১১টি গ্রিড সাব স্টেশন ও ৬টি নতুন সঞ্চালন লাইনের উদ্বোধন করেন।

শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলাগুলো হলো : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর, সরাইল ও আশুগঞ্জ, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ ও কচুয়া, কুমিল্লা জেলার বরুড়া ও মুরাদনগর, ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা ও বোয়ালমারি, গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর, ঝিনাইদহ জেলার ঝিনাইদহ সদর।

এছাড়া, শতভাগ বিদ্যুতায়িত অন্যান্য উপজেলা হলো : মানিকগঞ্জ জেলার মানিকগঞ্জ সদর, দৌলতপুর, সিংগাইর ও শিবালয়, মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর, মান্দা, ধামৈরহাট ও নওগাঁ জেলার শাপাহার, নীলফামারী জেলার ডোমার, নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ, পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ, রাজবাড়ী জেলার রাজবাড়ী সদর, পাংশা ও বালিয়াকান্দী, রাজশাহী জেলার বাগমারা, সাতক্ষীরা জেলার সাতক্ষীরা সদর, সিলেট জেলার জকিগঞ্জ ও ওসমানী নগর, নরসিংদী জেলার রায়পুরা এবং মাদারীপুরের কালকিনী।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি হলো : কনফিডেন্স পাওয়ার বগুড়া-১ লিমিটেডের ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নোয়াখালীর এইচএফ পাওয়ার লিমিটেডের ১১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র।

প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মহাস্থানগড় ১৩২/৩৩ কেভি, রাজশাহী (উত্তর) ১৩২/৩৩ কেভি, চৌদ্দগ্রাম ১৩২/৩৩ কেভি, ভালুকা ১৩২/৩৩ কেভি, বেনাপোল ১৩২/৩৩ কেভি এবং শরীয়তপুর ১৩২/৩৩ কেভি সাব-স্টেশন উদ্বোধন করেন।

এছাড়া, তিনি ৪০০/২৩০/১৩ কেভি গ্রিড নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শ্যামপুর ২৩০/১৩২ কেভি সাব স্টেশন, পল্লী বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের আওতায় গ্রিড সাব স্টেশন এবং সঞ্চালন জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় শেরপুর ১৩২/৩ কেভি ও কুড়িগ্রাম ১৩২/৩৩ কেভি, পল্লী বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের আওতায় নড়াইল ১৩২/৩৩ কেভি এবং রাজেন্দ্রপুর ১৩২/৩৩ কেভি জিআইএস (গ্যাস ইনসুলেটেড সুইসগিয়ার) প্রকল্পের আওতায় রাজেন্দ্রপুর ১৩২/৩৩ সাব-স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী যে ৬টি সঞ্চালন লাইনের উদ্বোধন করেন সেগুলো হলো : পটুয়াখালী (পায়রা)-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন, যশোর-বেনাপোল ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন, শরীয়তপুর-মাদারীপুর ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন, তিস্তা-কুড়িগ্রাম ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন, মাগুরা-নড়াইল ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন এবং পটুয়াখালী-পায়রা ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন।