ভগ্নিপতির ওপর ক্ষোভ থেকে শিফা ও কামরুলকে হত্যা করে বাদল

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে স্কুলপড়ুয়া ভাইবোনকে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে মামা বাদল মিয়া (৩৬)। গতকাল দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহিদ হোসেনের আদালতে এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে।

এর আগে বুধবার ঢাকার সবুজবাগ এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে তাকে। ওইদিনই বাঞ্ছারামপুর থানায় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়।

বাঞ্ছারামপুরের সলিমাবাদ ইউনিয়নের সাহেবনগর গ্রামের কামাল উদ্দিনের বসত ঘরের দুটি কক্ষের খাটের নিচ থেকে ২৪ আগস্ট রাতে তার দু-সন্তান শিফা আক্তার (১৪) ও মেহেদী হাসান কামরুল (১০)-এর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শিফা বাঞ্ছারামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে এবং কামরুল সলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়তো।

এ ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন মামা বাদল মিয়া। জেলা পুলিশের এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কুমিল্লার হোমনা উপজেলার খোদে দাউদপুর গ্রামের আবদুর রবের ছেলে বাদল বাঞ্ছারামপুরে বোনের বাড়িতে ছিল গত জুন মাস থেকে। মার্চ মাসে বাহরাইন থেকে দেশে আসে সে। করোনা মহামারীর কারণে আর বিদেশ যেতে পারেনি। এরমধ্যে নিজের এলাকায় গোষ্ঠীগত দাঙ্গায় তার বিরুদ্ধে মামলা হলে সে বাঞ্ছারামপুর বোনের বাড়িতে চলে আসে। বাহরাইন থাকাকালে ৩ বছর আগে দোকান করার জন্য বাদল বোন জামাই কামাল উদ্দিনের কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা ধার নেয়। এ থেকে ৩ লাখ টাকা ফেরত দেয়। বাকি ১০ লাখ টাকা ফেরত না দেয়ায় বোন জামাইয়ের সঙ্গে মনোমালিন্য চলছিল তার। সপ্তাহ খানেক আগে বাদলকে এজন্য থাপ্পরও মারেন কামাল। এই ক্ষোভে ভাগ্নেকে হত্যা করে সে। ভাগ্নের মরদেহ দেখে ফেলায় ভাগ্নিকেও খুন করে ফেলে। তাদের দুজনকেই জবাই করে হত্যা করা হয়। হত্যার বর্ণনায় বাদল পুলিশকে জানায়, ২৪ আগস্ট দুপুরে ভগ্নিপতির বাড়িতে তার থাকার কক্ষে উচ্চস্বরে গান শুনছিল সে। ওইসময় ভাগ্নে মেহেদী হাসান কামরুল (১০) তার মায়ের কাছ থেকে মজা খাওয়ার কথা বলে ৫০ টাকা নিয়ে তার রুমে আসে। এরপরই সে তার হাত-পা বেঁধে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। পরে লাশ খাটের নিচে রেখে দেয়। ভাগ্নি শিফা ঘর ঝাড়ু দিতে গিয়ে তা দেখে ফেললে তাকেও মারতে উদ্যত হয়। জোরাজুরির একপর্যায়ে শিফাকে ধাক্কা মেরে বাথরুমে ফেলে গলা কেটে হত্যা করে। তার লাশও খাটের নিচে রেখে দেয়। এদিকে মাগরিবের আজান হওয়ার পরও কামরুল ঘরে না ফেরায় সবাই তার খোঁজে বের হয়। তাকে খুঁজতে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় শিফাকে ঘরে রেখে যান তার মা হাসিনা আক্তার। পরে আবার ঘরে এসে দেখেন শিফাও নেই। নিখোঁজ দু’জনের খোঁজ পেতে এলাকায় মাইকিং করা হয় এবং রাত সাড়ে ৮ টায় থানায় গিয়ে পুলিশের সহায়তা চান তাদের বাবা-মাসহ স্বজনরা। কামাল উদ্দিন তার শ্যালক বাদল মিয়াকে নিয়ে বাঞ্ছারামপুর ফেরিঘাট এলাকায় তাদের খোঁজে গেলে বাদল মিয়া কাউকে কিছু না বলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

বাঞ্ছারামপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রাজু আহমেদ চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্ত করছেন।

শুক্রবার, ২৮ আগস্ট ২০২০ , ৮ মহররম ১৪৪২, ২৮ আগস্ট ২০২০

ভগ্নিপতির ওপর ক্ষোভ থেকে শিফা ও কামরুলকে হত্যা করে বাদল

জেলা বার্তা পরিবেশক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে স্কুলপড়ুয়া ভাইবোনকে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে মামা বাদল মিয়া (৩৬)। গতকাল দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহিদ হোসেনের আদালতে এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে।

এর আগে বুধবার ঢাকার সবুজবাগ এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে তাকে। ওইদিনই বাঞ্ছারামপুর থানায় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়।

বাঞ্ছারামপুরের সলিমাবাদ ইউনিয়নের সাহেবনগর গ্রামের কামাল উদ্দিনের বসত ঘরের দুটি কক্ষের খাটের নিচ থেকে ২৪ আগস্ট রাতে তার দু-সন্তান শিফা আক্তার (১৪) ও মেহেদী হাসান কামরুল (১০)-এর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শিফা বাঞ্ছারামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে এবং কামরুল সলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়তো।

এ ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন মামা বাদল মিয়া। জেলা পুলিশের এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কুমিল্লার হোমনা উপজেলার খোদে দাউদপুর গ্রামের আবদুর রবের ছেলে বাদল বাঞ্ছারামপুরে বোনের বাড়িতে ছিল গত জুন মাস থেকে। মার্চ মাসে বাহরাইন থেকে দেশে আসে সে। করোনা মহামারীর কারণে আর বিদেশ যেতে পারেনি। এরমধ্যে নিজের এলাকায় গোষ্ঠীগত দাঙ্গায় তার বিরুদ্ধে মামলা হলে সে বাঞ্ছারামপুর বোনের বাড়িতে চলে আসে। বাহরাইন থাকাকালে ৩ বছর আগে দোকান করার জন্য বাদল বোন জামাই কামাল উদ্দিনের কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা ধার নেয়। এ থেকে ৩ লাখ টাকা ফেরত দেয়। বাকি ১০ লাখ টাকা ফেরত না দেয়ায় বোন জামাইয়ের সঙ্গে মনোমালিন্য চলছিল তার। সপ্তাহ খানেক আগে বাদলকে এজন্য থাপ্পরও মারেন কামাল। এই ক্ষোভে ভাগ্নেকে হত্যা করে সে। ভাগ্নের মরদেহ দেখে ফেলায় ভাগ্নিকেও খুন করে ফেলে। তাদের দুজনকেই জবাই করে হত্যা করা হয়। হত্যার বর্ণনায় বাদল পুলিশকে জানায়, ২৪ আগস্ট দুপুরে ভগ্নিপতির বাড়িতে তার থাকার কক্ষে উচ্চস্বরে গান শুনছিল সে। ওইসময় ভাগ্নে মেহেদী হাসান কামরুল (১০) তার মায়ের কাছ থেকে মজা খাওয়ার কথা বলে ৫০ টাকা নিয়ে তার রুমে আসে। এরপরই সে তার হাত-পা বেঁধে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। পরে লাশ খাটের নিচে রেখে দেয়। ভাগ্নি শিফা ঘর ঝাড়ু দিতে গিয়ে তা দেখে ফেললে তাকেও মারতে উদ্যত হয়। জোরাজুরির একপর্যায়ে শিফাকে ধাক্কা মেরে বাথরুমে ফেলে গলা কেটে হত্যা করে। তার লাশও খাটের নিচে রেখে দেয়। এদিকে মাগরিবের আজান হওয়ার পরও কামরুল ঘরে না ফেরায় সবাই তার খোঁজে বের হয়। তাকে খুঁজতে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় শিফাকে ঘরে রেখে যান তার মা হাসিনা আক্তার। পরে আবার ঘরে এসে দেখেন শিফাও নেই। নিখোঁজ দু’জনের খোঁজ পেতে এলাকায় মাইকিং করা হয় এবং রাত সাড়ে ৮ টায় থানায় গিয়ে পুলিশের সহায়তা চান তাদের বাবা-মাসহ স্বজনরা। কামাল উদ্দিন তার শ্যালক বাদল মিয়াকে নিয়ে বাঞ্ছারামপুর ফেরিঘাট এলাকায় তাদের খোঁজে গেলে বাদল মিয়া কাউকে কিছু না বলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

বাঞ্ছারামপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রাজু আহমেদ চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্ত করছেন।